বিশ্বে কেন এত ডিসকোর্স চালু হয়েছে?

 




উত্তরাধুনিক যুগে এত এত ডিসকোর্স, এত এত মতবাদ, কিন্তু এত ডিসকোর্স থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিকে বেঁছে নিতে বলা হয় একটি মাত্র ডিসকোর্স । মানুষ কখনও একই সাথে অনেক গুলো ডিসকোর্সের আদ্যোপান্ত জানতে পারে না, একসাথে অনেক গুলো মতবাদে বিশ্বাসী হতে পারে না, কারন প্রতিটা মতবাদ একে অপর থেকে ভিন্ন আর তা সম্পর্কযুক্ত হলেও সাংঘর্ষিক।  কেন এত এত মতবাদ গড়ে উঠেছে? আর মতবাদের দ্বন্দ দিয়ে কেন মানুষকে শ্রেণিকরণ করা হয়?! 

উত্তর, মানুষের স্বাধীন হবার আকাঙ্খা। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের স্বাধীনতার জন্য মানুষ নিজের জন্য সুবিধাজনক মতবাদ তৈরি করে আর সমমনা অনুসারীর দল খুঁজে, সে মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলে, আর তাদের মত সঠিক অন্যদের ভুল বলে প্রচার করে একধরনের সুপেরিয়রিটি স্থাপন করে। এই সুপেরিয়রিটি বা আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে বিরোধী মতামতকে চাপিয়ে দেয়া হয়, শুধুমাত্র নিজের ডিসকোর্সকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসানো জন্যে! কারন যত বিরোধ কম তত স্বাধীনতা বেশি! 

তাই এত এত, মতবাদের ভিড়ে মানুষ প্রতিনিয়ত জড়িত হয় মতবাদের দ্বন্দে! কিন্তু দিন শেষে কে বেশি জ্ঞানী?! কার মতবাদ সঠিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ  ও সর্বব্যাপী? 

উত্তরঃ কারুর না। কারন, প্রকৃতির নিয়ম শ্রেষ্ঠত্ব বলতে কিছুই নাই। যাই শ্রেষ্ঠ তা পূর্ববর্তী বাতিলকৃত মতবাদের ত্রুটির জন্য সুন্দর। অথবা, বাদকৃত মতবাদের প্রয়োজন; সময়ের প্রয়োজনে ফুরিয়ে যাবার জন্যে তা শ্রেষ্ঠ! এখন, যেটা আকর্ষণীয় এবং মনঃপুত ; মানুষের মনস্তত্ব সেটা গ্রহন করে ও অন্যদের মধ্যে সম আদর্শ ছড়িয়ে দিতে শশব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারন, সে শুধু একক ভাবে নয় দলগতভাবে স্বাধীন হতে চায়, দলীয় প্রভাব দেখিয়ে নিজেকে বিরোধ ও বৈপরীত্য থেকে হেফাজত করতে চায়। 

তাই, দিন যত গড়াবে, জনসংখ্যা যত বাড়বে, প্রযুক্তিগত আধুনিকতা যত বাড়বে,  ভৌগলিক ইতিহাস যত পাল্টাবে ততই মানুষের জীবনযাত্রা ভিন্ন হতে ভিন্নতরো হতে থাকবে, সেই সাথে বিস্তার ঘটবে নানান মতবাদের, আবির্ভূত হবে নানান প্রদর্শক, তৈরি হবে আরো দ্বন্দ এবং শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই- শুধুমাত্র একটি কারনে - আর তা হলো মতবাদের পার্থক্যে- হোক সেটা ধর্মীয় মতবাদ অথবা রাজনৈতিক, অথবা ব্যক্তিগত কিংবা সামষ্টিক!! 

মতবাদের দ্বন্দ ছড়িয়ে পড়বে সবখানে, এ দ্বন্দে কেউই জয়ী হবে না, কেউই কখনও সম্পূর্ণার্থে জ্ঞানী হবে না। কারন,  সে শুধুমাত্র একটি মতবাদে দীক্ষিত হবে আর অন্যান্য মতবাদ গুলো তার দৃষ্টিগোচর হবে না বা হতে দেওয়া হবে না। 


লেখিকাঃ ফারহীন ন্যান্সি। 

সত্ত্বঃ লেখিকা। 

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পীর মৃত্যু

Alienation from the Roots, DNA race and Divine Masculinity-femininity: Super-ego and evolution of Moral Justice

Deconstructed love