শিল্পীর মৃত্যু

 

কবি ফারহিন আক্তার ভূঁইয়া ন্যান্সি জন্মেছেন মরুভূমির দেশ আমিরাতের ফুজেরার দিব্বা শহরে। বাবা ফজলুল হক ভূঁইয়ার চাকুরি সূত্রে দুবাইতে অবস্থান করেছেন অর্ধেক জীবন। ফারহিন ন্যান্সি, দেশে এসে পড়াশুনা করছেন বর্তমানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। ছোটবেলা থেকে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত কবির বেশ কয়টি লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, লিটয় ম্যাগাজিনগুলো এবং সংকলনে। ইউএসএইড ২০১৯ - সেরা পঞ্চাশ গল্পরচিয়তার মধ্যে স্থান পেয়েছেন। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সাময়িকীসহ, ব্লগে নিয়মিত লেখেন। বাংলা-কবিতা ডটকমে বেশ সরব ছিলেন। দেশ্মাতৃকাকে ভালোবেসে, দেশ মাটির মানুষের জন্যে উনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দর্শনসমৃদ্ধ কবিতা রচয়ন করেন। মানুষের মুক্তি উত্তরণ তার লেখালেখির উদ্দেশ্য।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শিল্পীর মৃত্যু

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 শিল্পীর মৃত্যু।

 

 

এবং কেউ দেখল না একজন শিল্পীর অকাল মৃত্যু

প্রতিদিন শিল্পী হৃদপিন্ডে চাপ দিয়ে দিয়ে

রক্তের ওঠানামায় 

তৈরি করতে থাকল শিল্প

রোজ বেখায়ালে সময় যাপনে আর কিছু না করে,

একাকিত্বে যে রচিল শিল্পঃ কোনো সঙ্গ বিহনে

তেমন শিল্পের কদর শিল্পী নিজেও কখনও বুঝে নি

করে নি যতন সজিব থাকতে। 

এখন শিল্পী রোজ ধুঁকে ধুঁকে মরে

ভীষণ অসুখেঃ শ্বাসকষ্টে। 

বুকভরা উত্তাপ; চোখভরা জলের ছাপ ঢেলে দিল 

সব জীবন্ত শিল্পে অথবা শিল্পকে প্রাণ দিতে।

শহরে প্রচারিত হলো-

শিল্পী তার অবশিষ্ট প্রাণ ঢেলে দিল তার রচিত শিল্পে।

এখন, শিল্পীর প্রয়োজন নিরর্থক বড়,

শিল্পগুলো কথা বলে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তপোবন।

 

প্রিয় তপোবন,

তুমি কি গোধুলির আকাশে একটি বিষন্ন তারা দেখেছ?

সেটি আমি।

তোমার পানেচেয়ে আছি;

তোমাকেই হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছি,

তুমি বড় ব্যস্ত,

পৌষ অগ্রহায়ণ আসল বলে;

তুমি আজ বড় করিৎকর্মা, বেশ আশাবাদি।

তোমার ফসলের মাঠ ভরে আছে সোনালি ফসলে,

তোমার লতা-পাতা, অকুল পাথার ভরে আছে সম্পদে,

কিন্তু আমি যে জীর্ণ পাতা, সে খবর কি আছে?

একসময় তোমার বাগানে আমি রোজ ফুটতাম,

অসংখ্য পাপড়িমেলা সলাজ ফুল ছিলাম।

আজ অবসরে তুমি চলে গেলে আমায় না নিয়ে?

মেতে আছো অন্যসব ডালপালা নিয়ে?

কিন্তু ভুলে কি গেছ,

আমিই তোমাকে ঢেকেছিলাম সবুজ আভরণে?

এখন তুমি আমাজন,

আমি তাই দূর থেকে দেখে যাই;

তবুও দেখতে পাই না,

শুনেছি ঐদেশের গাছ গুলো অনেক বড়;

আলো ঢুকতে পারে না,

আমিও ঢুকতে পারি নাই তোমার ভিতর,

বাহিরে রয়ে গেলাম, খানিকটা প্রবেশ করতে

অন্দরে আসন পেলাম না,

সত্যি আমি এক অবহেলা,

কত কলম্বাস আমাকে দেখে পথ বানিয়ে যায়,

কতবার সে মুচকি হেসে আমায় স্বাগত জানায়,

আমার জন্য নিয়ে এসেছে নতুন দ্বীপের ঠিকানা,

ওখানে মাতাবো আমি নতুন দিকনির্দেশনা,

পাতবো আরেক সংসার অন্যরকম,

মখমলে দিগন্তে এক ছায়াপথের আশিয়ানা,

নীলাম্বরী হয়ে মিশে যাব,

চাইলেও আমাকে অদেখা করতে পারবে না;

সসীম ছিলাম বলে দূরে ঠেলে দিতে পেরেছ,

যখন যা ইচ্ছা তা করেছ, এখন আমি ডানা মেলেছি,

বিগত দিনের অবসান করে উড়াল দিয়েছি,

সব সত্য যখন আমি তোমার আকাশে না উড়ে নিজের আকাশ বানিয়েছি,

সব কল্পনা যখন আমার আকাশকে তোমার আকাশের সাথে মিলাতে চেয়েছি,

সব দারুন অভিসন্ধি যখন ঘুণে ধরা, পোকায় খাওয়া ক্ষেতের উপর সূর্যমুখী

 বীজ ঢেলেছি এবং হিসাবহীন হিসাব করে আমাদের অঙ্ক কষতে চেয়েছি,

প্রিয় তপোবন তুমি আয়োজন করে সব ভুলে বসো,

মৌচাক বিছিয়ে বিলাস করো আর আমি?

আয়োজন করে গীতবিতান, কাব্য এবং কালোত্তীর্ণ তোমাকে সৃষ্টি করে যাই।

এতেই সবাই বুঝে যাবে তোমাকে 

আমি কখনো পাই নাই।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 পরিণত ভালোবাসা।

 

 

তুমি আর আমি দুটি পরিবর্তিত আত্মা

সংশোধিত হবার জন্যে পরস্পরের কাছে এসেছি

আত্মিকতার দিক থেকে কে উচু কেবা নিচু ছিল সংযোগে

কথা কখন কে কোথায় জানে,

 জানত একমাত্র পরওয়ারদিগার

এখন, তুমি আর আমি সমান সমান

সেই একই আত্মিকতার দিক হতে

তাই হয়তবা এখন আমাদের ছন্দ মিলে সঠিক সুর-তাল-লয়ে

 

 

 

 

 

 

 

শেকড়। 

 

 

তুমি এক প্রাগৈতিহাসিক বিবর্তন,

এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য যার কাছে-

এই ভবঘুরে পর্যটক বারবার ঘুরে আসতে চায়

এবং, পর্যটকের মতই শুধু তোমার নিকটে বিশ্রাম নিতে চায়-

দিনশেষে সকল ধকলের পরে। 

তুমি এক প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস,

কারন দিনশেষে শেকড়েই মানুষ বারবার ফিরে!

 

 

 

 ভালবাসা।

 

 

যখন কেউ বলেছিল আমাকে ধ্বংসাবশেষ

তুমি বলেছিলে আমাকে রত্নের খনি। 

দেখেছিলে তুমি আমার ভেতরে অনিমেষ আলোক রশ্মি।

যখন আমি বললাম আমি পারব না,

 তুমি বলেছ ঠিকই পারব আমি,

স্থাপন করেছ আস্থা,

 দিয়েছ আমাকে সবরকমের ভরসা-যখন যা দরকার ছিল।

 

এতটাই আমার জীবন জুড়ে তুমি,

 তোমাকে ছাড়া জীবন 

অবর্ণনীয় কঠিন, এবং,

প্রতিটা স্তরে আমি তোমাকে ভাবি,

কারন তুমি ছাড়া- এই প্রত্যয়ী আমির পথচলা অকল্পনীয় কঠিন।

  

তুমি নেই, তুমি আছো- এই ভেবে দুর্বার মত হেলে যাই

নিঃশব্দ শিশিরের মত মিশে যাই ঘোলা জলে৷ 

তুমি নেই, তুমি আছো- এই করে সময়কে থামিয়ে দেই

অথচ, প্রতিটা গান, প্রতিটা ছবি, প্রতিটা মানুষ,

 প্রতিটা কন্ঠ, প্রতিটা ঘটনায়-শুধু তোমারি প্রতিচ্ছবি। 

ভীষণ ব্যস্ততায় অথবা ভীষণ অসুখে কিংবা

ভীষণ রোদ্রতাপে সকল কঠিনতায়,

তোমার কথা আরো বেশি ভাবি।

 

মনে পড়ে যায়

তোমাকে ভুলতে যে ব্যস্ততায় ডুব দেই,

সেই ব্যস্ততায় সাঁতার কেটেও আমি তোমাকেই খুঁজে পাই

আমার ভেতরের আমি তখন শুধু তড়পায়। 

 

বিকল্প।

 

বিকল্প খুঁজতে গেলেও -তোমার বিকল্প শুধু তুমি

অন্য কেউ নয়

বেশ কঠিন! তবে সহয হতো যদি,

এতটা না ভালবাসতাম,

ভালবাসার অভ্যাস ছেড়ে দেওয়া কঠিন। 

এতটা, অভ্যস্ততা ভালো নয়

 

তুমি আছো, তুমি নেই- এই করে যখন দূরে সরে যাই

তোমার থেকেও বেশি নিজেকে হারাই।

আদতে, তোমাকে চাই নাকি তোমার সাথে থাকা

এই আমিকে আমার মত করে চাই-বলতে পারি না,

কারনতোমার সাথেই আমাকে দারুন মানায়!

 

তোমার সাথেই আমার উচ্ছ্বসিত রূপ প্রকাশ পায়-

যা হারিয়ে যায় দৈনন্দিন ভেজালের আবহে৷ 

যা হারিয়ে যায় বৈশ্বিক উত্তাপের করাল গ্রাসে

অথবা, কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের আহাজারির

দীর্ঘশ্বাসের ভারে-হারিয়ে যায়-

নোনাজলে ভেসে যায়-সে প্রশস্ত হাসি। 

 

একটা তুমি শুধু থাকলে আমার আমিকে আমি নতুন করে খুঁজে পাই

একটা তুমি শুধু থাকলে আমার-

বিরুপ প্রতিপার্শ্বে মেঘলা আকাশে অপ্রতিম সূর্য জেগে উঠে যেন আরক্তিম

জানো বর্ষা আমার মোটেও লাগে না ভালো

জানো অন্ধকার ভয় পাই ভীষণ

আলোকিত হোক চারপাশ-পৃথিবী। 

 

পূর্ণতা পাক এবার দৈণ্যতা- ভিখিরির ঝোলা ভরে যাক রেশনে। 

মজলুম জনতা মুক্তি পাক-তারাও কৃপার ভালবাসা পাক 

কোনো এক বিভক্তিহীন সকালে

সবাইকে নিয়ে চলো আমরা সুখের অভিসারে ভাসি- ক্ষুদ্রতাকে পরাজিত করি।

সকল দৈন্য চাপিয়ে জোরে জোরে বলি ভালবাসি-ভালবাসি!

ভালবাসা ছড়িয়ে পরুক বিধ্বস্ত প্রান্তরে

ভালবাসা নিয়ে আসুক পবিত্রতা সকল অমলিন মনে!

 

 

 

 

 

 

 

 

অনুতপ্ত প্রেমিক। 

 

 

তোমাকে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পাই নিজেকে,

তোমার সাথে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে হেরে যাই আমি এই দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দে,

প্রতিরোধের সাথে আমি না করি এবং মতামতের মধ্যস্থতায় আসি

তবুও আমরা এক থাকি- বৈপরীত্যে!

অসারতায়ও অর্থ খুঁজি!

 অর্থময় বর্ণময় জীবন যেখানে-শুধুমাত্র জীবনের প্রয়োজনে। 

জীবনের প্রয়োজনেই আমরা জীবনকে গুরত্ব দেই!

যা কিছু মানুষ মহান মনে করে আদতে তা খুব সংকীর্ণ

যা কিছু খুব সহয মনে করে আদতে তাই পাওয়া খুব কঠিন,

সুচারুতোমাকে ভালবাসি প্রিয় বর্ণাঢ্য ফানুসের মত

দূরে উড়ে গেলেও তোমার তাপে উত্তপ্ত এবং

প্রতিটি যাত্রায় যে তোমাকে নিয়েই উড়াল দেয়

একলা উড়ে গেলে, ত্রিসীমানায় কখনও হারিয়ে গেলে,

তার একমাত্র যাত্রী বিহনে সেও হয় বড় অনুতপ্ত

অনুরণনে থাকে শুধু অনুশোচনা, সে রয় বড় অনুতপ্ত!  

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 দ্বৈত সত্ত্বা।

 

 

এবার পুরোপুরি ব্যবহার করব আমার দ্বৈত সত্ত্বাকে,  

একটি ভালো আরেকটি মন্দ কখনও হতে পারে না

একে অপরের পরিপূরক যখন- জীবনের অংশ-ঘটনার প্রবাহে

যে প্রবাহে তৈরি হয়েছে একটি সত্ত্বা নির্জন নির্ঝর হতে

প্রবল ঝড়ের ঝটিকা হাওয়ায় তবে তৈরি হয়েছে আরেকটি সত্ত্বা-

যে চিনেছে ঝড়কে

ছিন্নভিন্ন আবহাওয়াকে

তাই, সে নিশ্চুপ- দমন করে অপর বিদ্রোহী সত্ত্বাকে।

 

আবার, যে প্রবাহ চিরকাল বহমান আপন স্রোতে-

প্রবালও যে টপকে যায় নিদারুন বেদনায়,

কাঁপে সে দ্রোহের চোঁটে ভীষণ অপরাধে-

করুন অনুতাপে আনে ভোর

দরজায় কড়া নাড়ে বিবেক সজোরে-

 এবার দ্বন্দ গোছাও

মেলাও অপ্রতিদ্বন্দী দুটি সত্ত্বাকে

মেলাও-হতে অপ্রতিরোধ্য!  

মেলাও যুগান্তরে-

হতে অপ্রতিহত অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হতে নিহত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুঃখটাকেও ভাগ করি!

 

 

জ্বর, কাশি, সর্দি-হাঁড়কাপা শীতে আমার সোয়েটার লাগবে না,

তোমাকে লাগবে!! 

 

অথর্ব পরীক্ষায়-যেখানে আমার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী আমি নিজেই,

সে পরীক্ষা আজও শুরু করতে পারলাম না,

আটকা পড়ি আমরা সবাই আটপৌরে সিস্টেমে

 

তুমি থাকলে-ভয় ডর, কিছুই থাকে না আমার।

তুমি না থাকলে অসুরের ভয় পেয়ে বসে!

যেন দুনিয়ার তাবৎ অপশক্তি স্বর্গ-

নরকের দ্বন্দ্ব ছেড়ে আমার উঠানে যুদ্ধ করতে পাতালে নেমেছে

 

তুমি আছো বলেই-দূরত্বকেও এত সুন্দর মনে হয়!

তবে, আমিও চাই, একটু উষ্ণতা,

বারবার প্রত্যেকটা অসুখে-আমি তোমাকে চাই,

 সুখ অনেক ভাগ করে নিয়েছি আমরা তরুণ,

 চলো এবার দুঃখটাকেও ভাগ করি। 

                             

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রেমের ক্যাটাগরি। 

 

 

বেপারির সাথে মানুষ প্রেম করে কিভাবে, দেহবেপারি ছাড়া?!

নেতার সাথে মানুষ প্রেম করে ক্যামনে, সুবিধাবাদী ছাড়া?! 

কবির সাথে প্রেম করে কিভাবে, জ্ঞানপাপী ছাড়া?! 

ইঞ্জিনিয়ারের সাথে প্রেম করে ক্যামনে, মানুষ নির্মাণের আকর্ষণ ছাড়া?! 

ডাক্তারের সাথে প্রেম করে ক্যামনে- ক্যারিয়ারে ক্রাশ খাওয়া ছাড়া?! 

 

এজন্যে, পৃথিবীর সব উচ্চমার্গীয় পেশার লোকেরা

উচ্চমার্গীয় বেহায়াপনার প্রেমে পড়ে। 

বেশ্যাকে আর ছ্যাছড়াকে ভালোবাসে। 

ঘর পাঁতে। 

ঘর ভাঙ্গে। 

আবার ঘর পাঁতে। 

আবার ঘর ভাঙ্গে। 

তবুও খুঁজতে থাকে.... আরো খুঁজতে থাকে...

কারন ভেতর থেকে তারা রয় অসম্পূর্ণ- ভালবাসা পায় নি বলে। 

ভুল চেতনায় ভালোবাসে -ক্ষণিকের জন্যে ভালবাসা খুঁজে বলে।

ভেঙ্গে যায় তাদের তাসের ঘর- তাসেরই খেলাতে!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এখনও দ্রোহ যায় নি রক্ত হতে....

 

 

এখনো দ্রোহ যায় নি রক্ত হতে-

শিরায় যেখানে সাঁতার কাটে দ্রোহ,

জীবন হতে নেয়া জীবনের তাগিদে গড়া...

প্রেমময়ী আমি

লড়াকুও

কোন রূপটি আমার দেখতে চাও তরুন,

ঠিক করে নিও। 

 

শব্দপ্রেমিক। 

 

আমাকে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে দাও তরুন,

কবিতা আমার নেশা,

কবিতা আমার পেশা!

আমি শব্দপ্রেমিক,

 শব্দের সাথে আমাকে প্রেম করতে দাওঃ

 কথা দিলাম তোমার প্রেমে কোনো কমতি পড়বে না

 

 

অলংকার।

 

তরুণ, তীব্র প্রেমে আনে যে তীব্র ঘৃণা

তা কখনও ভুলবা না,

আমার ভালবাসার কখনও অমর্যাদা করবা না,

কারন, কোনো কিছুর তীব্রতাই ভালো না। 

না প্রেম, না অপ্রেম।

তুমি আমার সঞ্চিত কাব্যমালা

এবং আমার জীবনের মুক্তোবালা

আমি তোমাকে অলংকারের মত পরিধান করি

তাই, আমাকে শোভিত করো, অপদস্থ নয়,

কারন আমি কোনো সস্তা গহনা পরি না

অলংকার পরলে সৌন্দর্য বর্ধিত হয়

আর না পরলেও, যা সুন্দর তা সবসময় চিরসুন্দরই থাকে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 রাজনীতি।

 

 

রাজনীতি হইল গৃহের মত

একটি পারিবারিক শিক্ষা

যে যেমন যে পরিবারে বড় হয়

ভালো কি মন্দ তা না জেনেই বড়

হয় আর তার সবটুকু গ্রহণ করে,

ভালো অথবা মন্দ

নির্যাসটুকু।

 

তেমনি রাজনীতিও এমন একটা গৃহ,

যে গৃহে একবার প্রবেশ করলে-

দলীয় কর্মীরা হয়ে যায় পরিবার

অথবা পরিবারের মত শিক্ষণীয়।  

ভালো কি মন্দ

 

মন্দ হলেও কিছু করার নেই-

কারন ব্যক্তির কাছে পরিবার কখনও মন্দ নয়

এবং মন্দের মধ্যেই সে অভিযোযিত হয়ে উঠে মন্দ তরো!  

অথবা, পরিবারের মত, খারাপ হলেও ছাড়তে পারে না

খারাপের মধ্যে ভালো হয়ে কখনও কখনও সেখানে টিকে থাকা কঠিন।

এজন্যে কেউ কেউ দলত্যাগ করে

মতবিরোধ হলে, যেমনটা ব্যক্তি পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয় সময়ে সময়ে।

 

আদতে, কি পরিবার কি রাজনৈতিক দল

উভয়ই একই- একেকটা সামাজিক অঙ্গ

এজন্যে, কেউ কেউ থাকে গৃহহীন। দলবিহীন।

ভবঘুরে।

বাস্তুহারা।

কারন, সে জানে না ভালোর মধ্যে মন্দ হয়ে

কিভাবে থাকতে হয় অথবা মন্দের মধ্যে ভালো

হয়ে আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়। সে জানে না। 

এক উদাস সৈনিক। যুদ্ধ চালিয়ে যায়। 

নিজের সাথে আর সমাজের সাথে অনবরত যুদ্ধ করে যায়। 

 

শহীদ হয়।

একজন দেশপ্রেমিক।

মন থেকে স্বাধীন বলেই স্বাধীনতা আনতে পারে। 

প্রকৃতপক্ষে একজন দেশপ্রেমিকের কোনো দল থাকতে পারে না।

সে হয় নির্দলীয়।

নিরপেক্ষ।

নির্জন তাই। তার আওয়াজও কেউ শুনতে চায় না।

কারন, মানুষ বিভক্তি পছন্দ করে। 

দলীয়করণ পছন্দ করে৷ 

দলের পাল্লা ভারি করতে চায়। 

এককত্ব চায়, অখন্ডতা চায় না। 

বিভক্তির পুঁজিকরণে যে রাজনীতি-

একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক মানে না। 

কখনও মানতে পারে না। 

 

 

 

 

 

 

 

ইতিহাস। 

 

 

ইতিহাসকে আমি ভয় পাই

কারন ইতিহাস বারবার ফিরে আসে

ইতিহাস সাক্ষী-তোমার আমার পাপ-পূণ্যের

এবং আমাদেরও পূর্ব-প্রজন্মের

তাই, প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে ফিরে ফিরে আসে 

পাপ সুচারু ছলনার বেশে

ইতিহাস সাক্ষী-তাই সময় ইতিহাস হয়ে যায়৷ 

বর্তমান অতীত হয়ে যায়। 

অতীত বর্তমান। 

এবং ভবিষ্যত?! 

তা, কে দেখেছে?! 

অতীত-ইতিহাসই কেবল সত্য,

কারন ইতিহাস ভবিষ্যতেও অপরিবর্তিত থাকে। 

থাকে অমার্জিত,

যদিও কখনও কখনও হয় বিকৃত

তবুও, কোথাও না কোথাও রয়ে যায় তার প্রকৃত আবহ

ইতিহাস কখনও পালটানো যায় না। 

ইতিহাসই একমাত্র সত্য-

যদিও কখনও কখনও তা থাকে লুকায়িত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ব্যক্তির কাছে কর্মের মানে কি!

 

 

ব্যক্তির কাছে তার কৃত কর্ম মানেই-যৌক্তিক এবং যথাযথ। 

কর্ম তার স্বরূপ গড়ে

যে কর্মতে তার অস্তিত্ব আর পরিচয়ের বলয়

তা ভালো হোক, মন্দ হোক

সে কর্মে নিমজ্জিত হতেই থাকবে-কারন ব্যক্তি মাত্রই 

মনে করে কর্মই একমাত্র তার অবলম্বন। 

কর্ম তার-

স্বরূপ।

পরিচয়। 

দাপট। 

প্রভাব।

বলয়। 

 

আসলে কি এটা কর্ম নাকি অহম,

নাকি অহমের বর্ধনের জন্যে ক্রিয়ারত?

ব্যক্তির অহমকে সন্তুষ্ট করে যে কর্ম,

ব্যক্তির চিত্তে পৌছুয় বরফ শীতলতা যে কর্মে-

ব্যক্তি মনে করে তাই সঠিক।

তাই, তার জন্যে নির্ধারিত। 

এবং, তাতেই তার অর্জন- সন্তোষ এবং পরিতোষ!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সহনশীলতা।

 

যার নিজস্ব মতবাদ আছে

স্বকীয় এবং মননশীলতার দিক থেকে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ,

সে অন্যের মতাদর্শে চলতে পারে না। 

বড়জোর অন্যের মতামতকে সম্মান জানাতে পারে

এবং সম্মানের সহিত বৈপরীত্য প্রদর্শন করতে পারে

কিন্তু নিজের মতাদর্শের সাথে অন্যের মত মেলাতে পারে না।

সে খাপ খাওয়াতে জানে না। 

 

মৌলিকতা যেখানে প্রতিনিয়ত অনবদ্য

স্বকীয় যেখানে চিন্তাধারা

স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিন্ন সে,

সবার সাথে থেকেও একলা

সবার মত মেনে নিলেও সে পৃথক-

নিজস্ব চিন্তার জগতে যার কেবল পথচলা

একে, বলে ভদ্রতা

সহনশীলতা। 

এবং, সে স্বকীয় বলেই পরের মতাদর্শকে শ্রদ্ধা করতে জানে,

কারন, নিজের মতাদর্শে সে কোনো আঁচড় লাগতে দেয় না

 

তাহলে, পরের মতামতকেও কেন সে অগ্রাহ্য করবে?! 

যেখানে সবাই যার যার অবস্থানে সঠিক ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে

শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক

ফারাকটাও গুছে যেত-

যদি সবাই একইরকম সহিষ্ণু হত

যদি সবক্ষেত্রে সহনশীলতার চর্চা হত!

আফসোস, এটা একটি দিবাস্বপ্ন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 নীলপদ্ম।

 

 

আমি চাই পুরোনো স্মৃতিরা ফিরে আসুক

পুরোনো গন্ধ নিয়ে আবারো মাতাল করে দিক,

আমি চাই দিগ্বিদক ছড়িয়ে পড়ুক স্নেহের রোদ

কমলা আলো,

আমি চাই ফিরে আসুক সাম্যের দিন,

সুষ্ঠ একটি দিন,

যেদিন অনাহারী খাবারের উচ্ছিষ্ট খুঁজবে না,

যেদিন কৃষ বেদেনীরা অভাবে চন্দ্রিমায় নামবে না,

যেদিন ইতর হয়ে কেউ মানবিকতার গলা টিঁপে

ফাসির কাষ্ঠে ঝুলাবে না,

আমি চাই এমন একটি দিন আসুক,

যেদিন কেউ প্রিয় মানুষের বিচ্ছেদের বেদনা সইবে না,

কেউ যুদ্ধ করবে না,

কেউ হত্যা করবে না,

কেউ ধর্ষন করবে না,

কেউ অন্যায়ভাবে আরেকটি দেশের অভিবাসী হবে না,

আমি একটি ফুল দেখতে চাই,

ঠিক নীলপদ্ম,

বিষাদ সব নিক, সে হয়ে যাক নীল,

তবুও থাকুক জলের দিঘী সাদা অনিল,

আমি চাই একটি রক্তজবা,

ঝরাক সে রক্ত তবুও আরেকটি মানুষ

যেন না মরে,

আমি চাই একটি ঘুড়ি,

বিষাদেরা সব উড়ে যাক,

উড়ে যাবে,

আমি চাই একটি সুতো,

সবাইকে এক করে রাখবে,

আমি চাই একটি লাঠি,

সর্পকে মারবে,

আমি চাই একটি বৃক্ষ,

অজুত নিযুত লক্ষ কোটি ফল দিবে,

আমি চাই একটি সুষমার বদন,

মায়াতে সবাইকে জড়িয়ে নিবে,

আমি চাই একটি পিস্তল,

গুল্লি করবে অরাজকদের,

আমি চাই একটি মোহনীয় বিকেল,

তোমার সাথে হাঁটব বলে,

আমি চাই একটি কলম,

লেখকের অগ্নি-অশ্রু ঝরবে,

আমি চাই একটি জেট,

ধরাকে সরাজ্ঞান করবে,

আমি চাই একটি নতুন পৃথিবী

আমার স্বদেশ,

এবং আমি চাই একটি সুন্দর রাত,

ভোর হতেই এসব অধরা স্বপ্ন ভুলে যেতে।

 

 স্মৃতিচারণ।

তপ্ত মরুভূমি আবার দেখতে ইচ্ছা হয়

সোনালি ধুসর মাটি ছুঁতে আবারও মন চায়

সরু রাস্তা এঁকে বেঁকে যাওয়া

তার এক পাশে পাহাড়, এক পাশে মরুভূমি। 

আর উপরে ফ্যাকাসে নীলাকাশ

স্মৃতিচারণ করতে করতে টের পেলাম আমিই সে মরুভুমি-

তপ্ত আকাশ

হয়ে গেছি ধুসর

সোনালি মনের রঙ

আর পাহাড়সম সাহস লুকিয়ে রেখেছি-

ঠিক মরুভূমির মত

সাইমুম ঝড় উঠে যেমন আঁতকা-

তপ্ত দিনের পর মেরুকৃত শীত-

বরফের মত ঠান্ডা আবার বালির মত পিচ্ছিল

অস্তিত্ব বহন করে শিকড়।

 প্রাচ্যের-প্রতিচিত্র।

প্রাচীন -স্মৃতির প্রাচীর

উত্তরাধিকার।

 

এবং, উত্তরাধিকার কথা বলবে

অতীতের উত্তরণ

ফলময় বৃক্ষ সবসময় ভালো ফলের জন্ম দেয়

পোকা বিহীন!  

তবুও যে ফল সবচেয়ে মিষ্ট, সবচেয়ে পুষ্ট তাতে পোকে ধরে!! 

এবং, সারও প্রয়োগ করা হয় অতীতের ফলনের জন্যে

আশ্চর্যজনক সত্য হলো ফলবানদেরই যত্ন করা হয় অতি সন্তর্পণে

উত্তরাধিকার কথা বলে- আম গাছে আম হয়

জাম গাছে জাম,

গাভীতে গরু জন্ম দেয়, বলদে বলদ

উত্তরাধিকার কথা বলে- সুদূর সিংহল হতে হিমাচল

এবং, মাউন্ট এভারেস্ট থেকে তিব্বত

এক যে ছিল অঞ্চল- তার প্রথা, নিয়ম

এখন, বিভক্ত হলেও-

উত্তরাধিকারে রয়ে গেছে সেই একই মানসপট, বিবর্তন আর বিপ্লবেও যায় নি যা করা পরিশোধন!!  

তাই তো, শোধের ভাষায় সবাই কথা বলে- কারন উত্তরাধিকারের ঋণ যায় না মেটানো

ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ায় এক প্রজন্ম হতে অপর প্রজন্ম

এবং, প্রজন্ম হতে প্রজান্মন্তরে চলতে থাকবে সে প্রকরণ,

নিবিড় অচপল অপলকভাবে শোধ নিবে ইতিহাস-তারই চিরাচরিত ধর্মে৷ 

পানি বদলায় না তার গুন যদিও বদলাতে পারে তার স্বরূপ-শর্তসাপেক্ষে!  

কখনও নিম্নচাপে বরফ উচ্চতাপে বাষ্প

পানির মত সহয হয়ে যাবে মানুষ - উত্তরাধিকার কথা বলে

 

 প্রাচীনে ফিরে যাও তরুণ...

 

শেকড়ের টানে প্রাচীনে ফিরে যাও তরুণ

আধুনিকতা বড়ই বেমানান

সবকিছু সৃষ্টি হয় ইতিহাস হবার জন্যে- অতীতকে করো অতিক্রম

এবং, প্রাচীনকে ধ্বংস করবার জন্যে আধুনিকতার যে অভিযাত্রা-

 কয়দিন টেকে তা শুধু দেখবার পালা

সময়ক্ষেপণ -- এক দীর্ঘ অপেক্ষা

হয়তবা-- কয়েক যুগ অথবা এক শতাব্দী.......! 

এক শতাব্দী পর মানুষ আবার ফিরে যাবে গুহায়--টেকনোলজি ছাড়া

প্রাচীনে ফিরে যেতে হবে---- বুলায় বুলন্দ আওয়াজে প্রাচীন সত্ত্বা

প্রাচীনের ডাক পেছন হতে আসে, সামনে থেকে তুমি তা শুনতে পাবে না

পিছুটান নাকি অগ্রে অভিযান?! 

তরুন, কোনটি নির্বাচন করবে?! 

তরুন, এই অবলীলা থামবে একদিন- শেষ হবে যা কেবল হয়েছে শুরু

প্রাচীনকে আঁকড়ে ধরে অর্বাচীন হও-- প্রাচীনেই সব সত্য ছিল

 

 

 

 

 

আদর্শিক ব্যক্তি পাহাড়ের মত।

 

আদর্শিক ব্যক্তিকে দূর থেকে দেখো - ভালো লাগবে। 

যতবেশি কাছে আসবে--ততই উদ্ভট মনে হবে!! 

তাদেরকে পছন্দ করো-পাহাড়ের মত

কিন্তু অনুকরণ করতে যেও না

পাহাড়কে দূর থেকে দেখলেই ভালো লাগে

কাছে গেলে-শ্যাওলা, নুড়ি পাথর আর বাঁক ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না

উপরন্তু, সাপ-বিচ্ছুর বিপদ আছেই-পাহাড়ে চড়া চারটে খানি কথা নয়!

আবার, অণুকরণ করতে গিয়ে যে হোঁচট খায়-

রশি ছিঁড়ে যায়-আহত হয় যে অভিযাত্রী

ঠিক অভিযাত্রী নয় সে হলো পাহাড়ি

পাহাড়কে ভালবেসে, পাহাড়ের মর্ম বুঝে-

 পাহাড়েই অবস্থান করে যারা!

পাহাড়েই জীবিকা খুঁজে-কঠিন মেঝেতেও ফুটায় ফুল

কত সুমিষ্ট হয় জুমচাষে উৎপাদিত- আনারসের জুস

যেন অমৃত নয় কিন্তু পাহাড়িদের ঘামের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা-চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে অনর্গল!! 

উচুঁতে উঠতে চাইবা আর ঘাম ঝরবে না--তা কি করে হয় বন্ধু?! 

উচ্চতার প্রেমে পড়ে যারা উচুতে আরোহণ করে

তারা নিজেরাও পাহাড়ের সমতুল্য-কঠিন

উচ্চতাকে ভালোবেসে উচুতে চাষ করে!

উড়ার নেশা থাকলে-সে ভিন্ন কথা!! 

উচ্চতাই আর অনতিক্রম্যতা হয় তার ধ্যাণ-ধারণা!

 

এবং, সে হোঁচট খায়-আহত হয় তবুও রশি ছাড়ে না

রশি ছিঁড়ে গেলে সে ভিন্নকথা-উপরওয়ালা পাহাড়ের চেয়েও বড়,

 এটা প্রতিভূর ইচ্ছা!

পাহাড় মানেই হলো-উচ্চতা আর উচ্চতার ভয়!

 উচ্চতর দুরত্ব

উদ্ভট সরু রাস্তা!

এক জ্বলন্ত রহস্য!! 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সামুদ্রিক রহস্য। 

পবিত্রটাকে ধারণ করতে পারাটাও একটা সফলতা

এবং, ধরে রাখা, যেমন বিশাল বালির তট ধারণ করতে পারে সমুদ্রকে,

 বারবার জলতরঙ্গ আঁচড়ে আঁচড়ে পড়ে যে সামনে পিছনে।

বারবার তটকেই চুম্বন করে। তট যার কিনারা।

সমুদ্রের নিকটেই তটের সাহারা! আস্থা এবং ঠিকানা!

তেমন, পবিত্রতাকে ধারণ করবার জন্য সমুদ্র হতে হয়। 

সমুদ্রের মত--বিশাল এবং বিস্তৃত,

- জলতরঙ্গ যেখানে খেলা করে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে

আবার, সেতো এক নিরুদ্দেশ গন্তব্য

সমুদ্রের শেষ দেখেছে কে কবে?! 

একই রকম নীল নীল জলরাশি সবটুকু জুড়ে

কোথাও কোনো ভিন্নতা নেই-অভিন্ন বৈষম্যহীন সবখানে

এবং, ভয়ংকর-উত্তাল ঢেউয়ে ভাসিয়ে দিতে পারে-বিচ্ছিন্ন তোলপাড়ে

কোথাও লুকিয়ে রাখে ঝড় কোনো এক নিম্নচাপে-ভূতলে

সমুদ্রের স্রোতে ভাসে সবাই, তল ছুঁতে পারে কয়জনে?! 

একমাত্র, ডুবুরী ছাড়া-সমুদ্রকে যারা ভালবাসে!! 

তারাই, দেখতে পারে অভিন্ন সমুদ্রের বিভিন্ন রূপ-সময়ে অসময়ে!! 

দেখতে পারে কতটা যতনে লুকিয়ে রাখে ঝিনুক-সামুদ্রিক পাহাড়ের তলে!! 

আরো দেখে, অক্টোপাস, তিমি এবং সামুদ্রিক ক্যাকটাসকে

আচ্ছা, সমুদ্রের ক্যাকটাসেও কি কাঁটা থাকে?! 

যে সমুদ্র এত ভিন্ন ভিন্ন প্রাণী ধারণ করতে পারে তার বিভিন্ন অংশে,

 তা কি করে হয় অভিন্ন-উদাসীন-একঘেঁয়ে?!

সমুদ্রের মত পবিত্র হও তরুণ

হও অবিচল-সমুদ্রের মত গভীর হও

সমুদ্রের মত পুঁষো রতন-রহস্য!! 

রহস্যের মত হাসো- কোনো এক এলোমেলো দুর্দান্ত সকালে,

কেউ দেখবে না তোমার সে হাসি,

শুধু তুমি দেখবে-

হাসিটাও এক দুর্লভ বস্তু-কেন মুখে লেগে থাকে-কে জানে!

হয়তবা, সমুদ্রের ঢেউ!!

কিন্তু, কান্নার মত সত্য-সুন্দর আর কিছু হয় না

তাই চোখের জলও নোনা থাকে-ঠিক সমুদ্রের মত!

নোনতা আর বিস্বাদ কিন্তু খনিজ গুনসমৃদ্ধ!! 

আকরিক হও তরুন-ভূগর্ভস্থ!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পুরোনো শহরে... 

কোনো প্রাচীন শহরের মজবুত প্রাচীর হও তরুন,

 যেন কোনো আধুনিকতা তোমাকে ভাঙতে না পারে,

বাঁধভাঙ্গা স্রোত হও তরুন

যেন কোনো নদী তোমাকে ধারণ না করতে পারে। 

প্রাচীন সভ্যতায় ফিরে যাও, তরুন

প্রাচীনতম শিল্পে

প্রাচীন নিয়মে!! 

ভগ্ন নগরে তুমি কি দেখতে পাও-রুগ্ন শরীরে?! 

শোক-তাপ, আহাজারি?! 

করুণার পুঁজিকরণে যে ব্যবসা চলে

তারচেয়ে, তুমি শান্তির নগরী প্রতিষ্ঠা করো

এক প্রাচীন শহর তাদেরকে নিয়ে সাম্যের কথা যারা বলে

চোখ মেলে দেখ- সে প্রাচীন শহর হতে পারো তুমি নিজেই,

সাম্য-অসাম্য, ন্যায়-অন্যায়, প্রীতি-

 সব এখনও হারায় নি হয়তবা নগরায়নের বাস্তবায়নে,

আধুনিকতম যন্ত্রণার যাঁতাকলে

এখনও, হয়তবা তরুণ,

তোমার মন সতেজ-

পুরোনো জামার ঘ্রাণ এখনও তোমায় টানে

পুরোনো শহরে যেখানে তোমার বাস-

সে শহরের শুকনো মাটির আর

পুরোনো ভবনের আস্তরণের ঘ্রাণ

এখনও তোমাকে টানে-- অথবা,

মধ্যবিত্ত ভাত-ডাল-আলুভর্তার স্বাদ এখনও তোমার জিহবা খোঁজে

এখনও, হয়তবা তরুণ,

তুমি পোষাকি আধুনিকতার ছদ্মবেশে এক প্রাচীন সাধক,

তোমাকে পুরোনো শহর করুন বিলাপে ডাকে!

তোমার নাম ধরে ডাকে

 

 

পুঁজিবাদের যুগে।

পুঁজিবাদের যুগে স্বপ্ন গুলোকে পুঁজি করে,

হরদম ব্যবসা করা হয় নিত্যনতুন কৌশলে!

নতুন নতুন বাস্তবতা মোকাবেলার জন্যে,

 আশাজাগানিয়া গল্পে! ক্ষমতা প্রদর্শনীর মহড়ায়!

দাপটের মেলায় চলে স্বপ্ন কেনাবেচা চড়া দামে

একদিকে থাকবে অসীম নিরাপত্তা আর

নিরাপত্তার সাথে থাকবে দুর্দান্ত রকমের নমনীয়তা-

কমনীয়তা-পরাধীনতা

আর, অন্যদিকে থাকবে ভয়,

নতুনত্বের ভয়

জয়ের আশংকা আর অনাবিল স্বাধীনতা

তরুণ, তুমি কোনটি বেঁছে নিবে?! 

করুণা নাকি সক্ষমতা?! 

স্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্ন?! 

পরাধীনতা নাকি স্বাধীনতা?! 

প্রকৃতপক্ষে, স্বাধীন কে হয় কবে!?!

স্বাধীনতা একটা আপেক্ষিক বিষয়।

 মনের অবস্থা।

 যা করে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে মুক্ত মনে হবে-

তাই স্বাধীনতা-কিন্তু প্রত্যেকে ভুলে যায়-

সে এক অলীক অলিখিত-অবিদিত-চিরস্থায়ী-অপরিবর্তনশীল নিয়মে আটকা

তরুণ, সুসংবদ্ধ নিয়মের বাইরে চললে পেতে পারো উভয়ই-

ভয়কে জয় করার উপায় অথবা তৈরি হয় নতুন এক ব্যবস্থা

নিদেনপক্ষে, কেউই কখনও স্বাধীন না।

খোদার কাছে একদমই না।

এই নতুনত্ব বেশিদিন নতুন থাকবে না

সব নতুন পুরাতন হয়ে যায় পুরোনো নিয়মের বেড়াজালে

নতুন সিস্টেমকেও ধরে রাখার জন্যে ফিরে যেতে হয় পুরাতন কৌশলে-

যা থেকে রেহাই পেতে তরুণ তুমি স্বাধীনতা চেয়েছিলে!

প্রকৃতপক্ষে, মানুষ জন্ম নিয়েছিলই পরাধীন হিসেবে-

অন্যের ইচ্ছার বলি হয়ে, এখানে তার হাত নেই,

 নিজের কিছু ছিল না-থাকবেও না!! 

আর, জন্মতেই যখন কোনো ভূমিকা নাই মানুষের,

কতটা অনস্তিত্বশীল মানব--তখন বেঁছে থাকতে-

কর্মেই বা তার কতটুকু ভূমিকা থাকবে, থাকার কথা?! 

নিজের প্রয়োজনে কেউ কখনও কিছু করে না

মানবসমাজ আজন্মকাল হতেই প্রতিক্রিয়াশীল

এমনকি, মানুষ নিজের প্রয়োজনেও স্বাধীনতা খুঁজে না-

এটি একটি কন্ডিশন মাত্র! শর্তাধীন!!  

শর্তের অধীন স্বার্থের জন্যে মানুষ খুঁজে আবার স্বাধীনতা-অবাক দুনিয়ায় তরুণ তুমি বেবাক চাইয়া থাকো

তুমি হয়তবা জগতের যোগ্য না অথবা জগত তোমার যোগ্য না, কোনটি অধিক ভালো, ভেবে নাও

কিন্তু, জগতকে যোগ্য বানানোর জন্যেই কর্তা তোমাকে পাঠিয়েছেন-

হয় নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করো নতুবা অযোগ্যদের যোগ্য বানাও-

এক নতুন পৃথিবী বিনির্মাণ করো। 

কারন, মহামহিম যেমন সৃষ্টিশীল-

তেমনি তুমি তার সৃষ্টির অংশ এবং

তিনি তার প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন তার অস্তিত্ব! ক্বলব! রুহ!! 

তাই, তরুণ তুমিও হতে পারো সৃষ্টিশীল,

সৃষ্টি করতে পারো এক নতুন ধরা-এক নতুন প্যারাডাইম-নতুন সংজ্ঞা!! 

তমিও হতে পারো শিল্পী,

নিজেকে এজন্যে করতে হবে আবিষ্কার-

করো নিজের মধ্যে নতুন এক জগত সৃষ্টি-

নব ধারায় তৈরি করতে পারো এক নতুন ধরা-নতুন ডকট্রাইন-

নবচিন্তাধারা-যা হয়তবা শুধু তুমি চিনেছ,

অনুধাবন করেছ এবং তৈয়ার করে রেখেছ-

এবার শুধু জগতসংসারের চেনার পালা!! 

এক বিস্তর অপেক্ষা!! নিবিড় গোপন নির্মোহ পথচলা!! 

 

আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল নেই...

 

আমার শুধুমাত্র তুমি আছো যে আমার সব উদ্ভটচর্চায় অভ্যস্ত

শুধু তুমি আছো-যে আমাকে বুঝে এবং বিশ্বাস করে গভীরতরো,

বুঝ বলেই বিশ্বাস করতে পারো-একনিষ্ঠভাবে চেনো

যেমনটা মাছ চিনে জলকে-হোক না এন্টার্কটিক বরফ

তবুও , বরফ- শীতল ছাদের নিচে বেঁছে থাকে ইহজগত

আমার শুধুমাত্র তুমি আছো-

যে আমার দুরত্ব বুঝে এবং গুরত্ব দাও,

আমার দুরত্বকেও ভালোবাসো-

ভালোবেসেই সময় দাও।

আমাকে সময় দাও।

নিজের মত গোছাতে।

নিজেকে একবার নিজের মত পেতে,

তারপরই আমি তোমার হতে পারি-

তোমার হয়ে যাই; বারবার তোমারই হয়ে রই

আমার শুধু একটু সময় প্রয়োজন!

 বুঝার জন্যে!

ভাবার জন্যে!!!

তবেই আমি ভালবাসার মত মহৎ কর্ম করতে পারব।

যেটিতে তুমি স্বতঃস্ফূর্ত!! এবং, ধৈর্যশীল!! 

ধৈর্য একটি মারাত্মক অস্ত্র!! 

ধৈর্য বানায় তোমাকে মহার্ঘ্য!! 

আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল ছিল না

ভুল নাই তাই পাওয়ার মধ্যেও!! 

আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো ভুল নেই

তাই, ভুল নেই আমাদের আত্মার মধ্যেও!! 

ত্রুটিহীন

এবং, সম্পূর্ণ।

 

 জগত সংসার। 

 

জগতসংসারের এতো ঠুনকো বিষয়ে কেন এত ভাবনা

জগত, জগত করে আমরা তড়পাই!! 

হাপিত্যেশ করি, জালে আটকা মাছের মত ছটফট করি

অথচ এর বাইরেও রয়েছে এক বিস্তর জলতরঙ্গ

আমরা সেখানটায় না সাঁতরিয়ে, অনুসরণ করি শুধু অন্ধ মোহ।

এ অনুধাবনটা এক করুণ সত্য।

 

 

 

 

 

 

 

 

রোহিঙ্গা শিশু।

 

সীমান্ত পেরিয়ে বেঁচে থাকার মিছিলে 

তবুও আঘাত,

মেঘে মেঘের সংঘাতে বিপর্যস্ত আকাশ,

হিসাব খুঁজে তীক্ষ্ণ চোখে,

কোন ধর্ম, কোন মর্ম,

কিসে তোমার বিশ্বাস, কেন এত অভিলাষ?

হারিয়ে তোমার ঠিকানা, রোজকার জীবনের 

সংগ্রামের পাহারা,

সখিদের নিত্যকার জল্পনাকল্পনা,

বহুদিনের গোছানো একটি কুঁড়েঘর,

দুইটি শিশু, আধপেটা ভাত, এক ঘটি জল,

ফেলে তুমি এসেছ নাফের লাশ হয়ে,

তুমি জাতহীন, তুমি নষ্ট, তুমি শ্রেণীহীন,

তোমার ইতিহাস হয়নি রচিত কোনো

ইতিহাসের পাতায়, তোমার জায়গা হয়নি

আজো কোনো ভুমির রেখায়,

আটমাসি শিশু তুমি এখন টাইটানের নক্ষত্র,

মনভুলানো স্তবকে বেঁছে নিও তোমার অজানা স্বপ্ন,

বিভক্ত আকাশে তোমার আমার বসবাস,

তাইতো দরাজের ফুলেরা পাঁপড়ি মেলতে নারাজ।

 

 প্রজাপতি হব......

আমি মথের মত বের হচ্ছি-

ভ্রম থেকে এবং প্রজাপতির মত উড্ডীয়মান হচ্ছি অসীমের তরে গন্তব্যের জন্য

এবং, জানি সে যাত্রায় আমি ক্ষণস্থায়ী হব ঠিক প্রজাপতির মত। 

কয়েকদিন উড়েই ভূমিতে পতিত হব-ডানাবিহীন। 

রঙ্গিন পাখনা সব ঝরে গেলেও-মৃত্যুর সাকি পান করে হব সে প্রেমে ফানা!! 

এবং, মৃত্যুর মত সুন্দর সারাব পান করে আমি অমর হব

ধুসর দেহ আমার জ্বালানি হবে-

 যেমনটা হয় সব প্রজাপতিদের-

পরবর্তী রেশমের জন্যে-

অথবা, সে দেহ পুনরুত্থিত হয় আকরিক হয়ে,

 কিংবা হয় অতিব মুল্যবান খনিজ পদার্থ!! 

বর্জ্য নয়, আকরিক হব, প্রজাপতির মত!! 

প্রত্যেক জন্মেই -উত্থানে-পুনরুত্থানে-মুক্তি চাইব!

অথবা, মথের মতই বিবর্তিত হব!!

 

 

 

 

 

 

 

 

সত্যকে বেছে নিব।  

 

এবং, সত্য বলে, আমি এসেছি

ধীরগতিতে-তোমার পাণে- আমি এসেছি সব হারানোর পরে-অসময়ে!

এবং, সত্য বলে, এই দেখো, আমি আছি এখন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে। 

তুমি কাকে বেঁছে নিবে?! 

মিথ্যা বলে-আমার কাছে এসো।

 এখানে, ঘর বেঁধ। 

আমার কাছে কি নেই?! 

সবকিছু-

যা তুমি চাও এবং তোমার উত্তরপুরুষেরা যা চায়

এবং, তোমার পূর্বপুরুষেরা যা চেয়েছিল।

আমার উত্তরঃ পূর্বপুরুষদের ঘুম ভাঙানোর জন্যেই আমি এসেছি।

আমি আছি। পূর্বপুরুষদের ভুল শোধরানোর জন্যে-

আমার পতন। 

আমার অবদমন। 

আমার উত্থান।

আমার অনুতাপ। 

এবং, আমার পুণরুত্থান

আমি, সত্যকেই বেঁছে নিব যার সওদা তারা করেছিল মিথ্যে মোহের কাছে। 

এবং, আমার মাধ্যমেই বিলুপ্ত হবে সব মিথ্যা,

তরুণ,এ কথা তুমি মনে রেখ। 

 

সত্যকে আমি বেছে নিব প্রত্যেকবার প্রত্যেক নবরূপে।

কথা শুনে

আমার উত্তরপুরুষেরা ফিক করে হাসে। 

আমার পূর্বপুরুষেরাও গৌরবে হাসে। 

 

এতটা ভালোবাসা ঠিক নয় প্রিয়। 

 

এতটা ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখো তুমি আমায়,

তোমার অতিরিক্ত প্রেমের ঘেরাওতে আমি আটকা-

এতটা যত্নের অভ্যস্ততায় প্রেমিক আমার এখন আর বাইরের কড়ারোদ সহ্য হয় না

এতটা ভালোবাসা ভালো নয় প্রিয় যতটা তুমি আমায় বাসো ভালো,

অন্ধের যষ্টির মত হয়ে যাচ্ছ তুমি আমার কাছে-আমি তোমাতে বড় অভ্যস্ত!! 

এতটা, ভালোবেসো না আমায় যে, তোমার ছোট খাট তিরষ্কারও আমার সয় না

এতটা ভালোবেসো না আমায় যে, তোমায় বিনে আর অন্য পৃথিবী আমি চিনি না।

তরুণ, এতটা ভালোবেসো না আমায়, যতটা ভালোবাসলে কোথাও দূরে যাওয়া যায় না

এতটা, ভালোবেসো না আমায় যতটা ভালোবাসলে তোমায় ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না।

বাঁচা যায় না। 

তোমার প্রেমের জন্য, আমি এখন জনবহুল রাস্তায় নামি না

কারন, আমি তোমার মাধ্যমে চিনেছি এক নিবিড় যুতসই সন্ধ্যা!

একা-নিরিবিলি-যানজট ছাড়া!! 

তোমার প্রেমের জন্য, আমি এখন কোলাহল পছন্দ করি না।

কারন, তোমার আর আমার জগতের একান্ত নৈশব্দ ছাড়া আমি অন্যকোনো জগত চিনি না।

মানতে পারি না। এখন, নৈশব্দই ভালো লাগে।

যতটা, নৈশব্দ তোমাকে আর আমাকে কাছাকাছি আনে পরম যত্নে! আদরে-সোহাগে

তোমার প্রেমের জন্য, আমি এখন ছুটাছুটি করি না। কারন, আমার সমস্ত জগত তুমি।

তোমাকে ঘিরে আমার যত উৎসব যত কান্না। তোমার মধ্যেই এই অশান্ত দুনিয়ার সকল শান্তি।

তোমার মধ্যেই অসাম্যের পৃথিবীর সকল সমতা-লুপ্ত হয়েছে অরাজকতা-

তোমার মধ্যেই আমি মেতে থাকি। 

 

 

না হতে পারলাম প্রেমিক, না অপ্রেমিক।

 

প্রেম বলে, আমার মধ্যে ফানা হও। বিলুপ্ত করো আত্মসত্ত্বা!

সব পরিচয়। 

ব্যক্তি বলে, পারুম না।

আমি খোদরে অনেক ভালোবাসি।

 আমারে আমি কষ্ট দিতে পারুম না৷

এভাবে, ব্যক্তি প্রেমিক না হয়ে, হয়ে উঠে খোদের খোদা৷ 

ঐদিকে, আসল প্রেমিক প্রেম বিলিয়ে দেয় অকাতরে,

করে না কোনো অসমতা।

সে, প্রেমিকরেও ভালোবাসে, অপ্রেমিকরেও সমানভাবে ভালোবাসে।

তার, প্রেম বিশ্বব্যাপিয়া এবং বিশ্বের পরেও যদি কিছু থেকে থাকে,

সে সমস্ত তল স্পর্স কইরা প্রেমিক দুবাহু মেলে ধরেন-

 তাঁর প্রেমে লীণ হওয়া প্রেমিকদের জন্য করতে থাকেন

এ এক বিস্তর অপেক্ষা। 

 

এক পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা। 

এক পৃথিবী ধ্বংস হবার পরে

নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ পর্যন্ত অপেক্ষা। 

আর আমি, না হতে পারলাম প্রেমিক, না অপ্রেমিক। 

না পারলাম ফানা হতে, না পারলাম হক ধরে রাখতে। 

আমার মধ্যে হলো সত্যের করুণ অপচয়।

কারন, আমি এই পৃথিবীতেই থাকতে চাই-

আমার রূপান্তর হয় নি,

নতুন পৃথিবীতে প্রবেশাধিকার আমার নেই। 

এক জ্বলন্ত জাহান্নাম বুকে বয়ে বেড়াই।

সে, আগুনে রোজ পুড়ে যাই।

তাই, আমার মধ্যে নেই কোনো অপেক্ষা-

এক পৃথিবী ধ্বংস হবার পরের, নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা!! 

সে, পৃথিবীতে জ্ঞানপাপীদের কোনো স্থান হয় না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 ভাস্কর।

 

ভাস্কর যেমন নিজ হাতে অধিক যতনে গড়ে মোনালিসার মূর্তি,

তেমনি তুমি এক ভাস্কর, মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি আমাকে গড়ো।

তুমি আমাকে ভাঙ্গো।

শিল্পী যেমন প্লাস্টার লাগায়,

আকার গড়ে-ক্রাফটিং করে,

তেমনি তুমি আমার উপরে এক শিল্প রচনা করো

তুমি তেমনি এক ভাস্কর যে আমাকে জীবন্ত ভাস্কর্য বানাও,

প্রত্যেক বিনিদ্র রাতে বিনির্মাণ করো!! 

 

 

নতুন শহরে হাইওয়ের পাশে আঙ্গুর বাগান থাকবে।

 

যে শহরের প্রাচীরও কথা বলে,

 সে শহরে এত এত ডোবা, শহরের বুক বয়ে ক্ষতস্থান!

ক্ষতস্থান হতে রক্ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে- কালভার্টের ভারে নত সড়ক!! 

আমার শহর অন্য একটা

আমি খুঁজি তারে৷ 

যে শহরে বাস আমার,

সে শহরের হাইওয়ের পাশে আঙ্গুরের গাছ থাকবে।

 তার পাশে পেয়ালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে শিশুরা, নাদ শোনাবে। 

সে শহরে কোনো জ্যাম থাকবে না,

 দলবেঁধে সবাই মহান প্রেমিকের সাথে দেখা করতে যাবে।

 এবং, তার সাথে সাক্ষাতকারের পরে এবং আগে নতুন ভাবে জম্ম নিবে। 

নতুন শহরে নব জন্ম নিয়ে প্রবেশ করবে।

সেখানে হাইওয়ের পাশে আঙ্গুরের বাগান থাকবে। 

 

 শতায়ু মাকড়সা।

 

আমি একটা মাকড়শা। 

সেমেনটিক হতে আর্বান পর্যন্ত আমার পথচলা। 

দীর্ঘ এবং নিরলস। 

আমি একটা মাকড়সা!

কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তিত হয়েও

 আমি রয়ে গেছি একই রকমঃ জাল বুঁনেই চলেছি, এক দীর্ঘ জাল। 

আমি একটা মাকড়সা!

জালের পর জাল বিস্তারে আমার আর্ট একটা স্থাপনা।

আমার নাই কোনো শৈশব।

 নাই কোনো কৈশোর।

 নই আমি যুবা।

আমার নেই বয়স।

 নেই কাল।

 নেই স্থান।

 নেই আবরণ।

আছে শুধু এক কাঙ্খিত অপেক্ষা। 

 

মাকড়শরা কিসের অপেক্ষা করে জানো তরুণ?! 

এক ভূকম্পনের!

সবকিছু আলোড়িত হয়ে শেষ হয়ে যাবে,

শেষ হবে অন্তর্জাল।

ছিঁড়ে যাবে মাকড়শার জাল।

তবুও, রয়ে যাব আমি পাথরের উপরে চিরকাল। 

কারন, আমি একটা শতায়ু মাকড়শা। 

আমার মধ্যেই পৃথিবী।

আমি ধারণ করি এক সত্তা। আমৃত্যু এবং তারপরও।

আমি এবং আমরা একটা মাকড়শা,

সপ্তবর্ষী মাকড়শারা জাল বুঁনা ছাড়ে না৷ 

অন্তর্দ্বন্দের অন্তর্জাল তাদের পিছু ছাড়ে না। 

মাকড়শা যদি জানত তার জাল সবচেয়ে দুর্বল,

তবে সে কখনও ঘর বাঁধত না!

 

 

 

 

 

 

 

 

তুমি সেরা।

 

জগত ঢুঁঢে দেখি তুমিই সেরা,

তোমার স্তবক গাই কারন তোমার নাই কোনো 

তুলনা, মোহনীয় তুমি, তারচেয়ে বেশি তোমার নিষ্ঠা,

অবাক হয়ে যাই বারবার দেখলে তোমার উদারতা,

এমন দৃষ্টিভঙ্গি, এমন চিন্তাধারা,

এমন ভালোবাসা আর দেখি নাই,

আমি দেখি নি রোমিও,  আমি দেখি নাই মজনু,

দেখি নাই এডোনিসকে, তুমি প্রেমিক পুরুষ,

তুমি সেরা, তোমার জীবনচ্ছটা ম্লান করে দিয়েছে সব অমরতা,

আমি পর্বত ছুঁই নাই, আমি তোমাকে ছুঁতে চাই,

আমি দীঘির জোছনা দেখি নাই, দেখেছি তোমার মুখটায়,

ক্লান্ত তোমার চাহনীতে উজ্জ্বল তারারা,

জ্বলজ্বল করে হাসির প্লাবনে বাঁধনহারা,

আমি তোমাকেই চাই একশতকোটি বছর,

তোমাকে পেয়ে দর্পণে স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি দেখি,

তোমার দেয়া উৎসাহে ম্যারাথন খেলে যাই,

এইত সত্য, এইত বন্ধন, আমি জানি না, ছলনা কি,

দ্বিরুক্তি, বিভাজন, ফাঁটল ছিল না বলেই সমতলে

আমরা চলি; মাঝেমাঝে হোঁচট খাই, মাঝমাঝে আমরা ভুল করি,

ফুসফুসের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চিৎকার করি,

পরক্ষনেই বাহুডোরে আটকা পড়ি,

আমি চাই না আর মুক্তি, চাই না অহেতুক দৌড়াদৌড়ি,

  বাঁধনে থাকতে চাই অনাদিকাল,

এবং চাই না ভাঙতে এই শেকল,

অবাক হচ্ছো, হয়ে যাও অবাক,

আমি বিস্ময় ভরা গুল্ম হতে চাই,

কিন্তু তুমি আমার সার, সরিয়ে দাও সব পোকামাকড়,

মাকড়শার জাল,

থামিয়ে দাও তোমার সব দু:শচিন্তা,

তোমার ভালোবাসা একটা উৎকৃষ্ট শিল্প,

যার নির্মাণ চলে যাক আজন্মকাল।

তুমি অসীম, সৃষ্টিশীল, করুনার সাগর,

সেইসাথে কঠিন, শীতল এবং রুক্ষ,

আমি তোমাকে দেখেছি সবদিক হতে,

আবিষ্কার করে নিব অজানাকে,

তোমাতে নাই কোনো সন্দেহ, দুর্বলচিত্ত,

অজানা আতঙ্ক এবং একশ্রেনীর লোক সবসময়ই

বলে পুরুষ হীনমণ্য,

আমি বলব তুমি তাদের বিরুদ্ধে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত,

যে হিমালয় দেখে নি, সে একবার দেখুক,

ভালোবাসলে পুরুষ হয় সে হিমালয়,

আর প্রেম পাহাড়ধসের কারন,

যদি না, আরোহী হয় পাহাড়ের মতই বলিষ্ঠ,

পৃথিবী সাজে তার আদিম রুপে, কখনো স্বর্গ ছিল

তার নাম,

তুমি পর্বত, তুমি শ্রেষ্ঠ, আমি তোমার পাহাড়িকা,

একবার নয়, বারবার বলব তুমি অবিনাশী,

ছবি হৃদয়ে আঁকা।

 

 

মনের ভাস্কর্য।

 

মনের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেল সৈনিক

যা তুমি গড়েছ, ভেঙ্গে ফেল সে অথর্ব দৈন্য হীনমন্যতা,

যা তুমি নির্মাণ করেছ। মনের ভাস্কর তুমি।

মন উভয়ই-কাবা এবং মন্দির!

মনে বুদ্ধের পবিত্র আসন-প্যাগোডার নিস্তব্ধতা।

মনে হিজরত বারবার করো। 

মুখ ফিরিয়ে নাও-সব অসত্য হতে।

হিজরত করো, প্রত্যাবর্তন করো, সকল জুলুম হতে।

মনের সৈনিক কখনও কাবা ভাঙতে পারে না,

কখনও মন্দির ভাঙতে পারে না, কখনও প্যাগোডায় হামলা করে না।

যদি সে জানত, মনের বেঁদীকেই করতে হবে পবিত্র,

কিবা গঙ্গা জল কিবা জমজমের পানি দিয়া

যদি সে জানত, সবাই এক সমান রক্ত-মাংসে-মানবিকতায়,

যদি সে জানত, সবাই ভিন্ন শুধুমাত্র মতবাদে-মতবাদ

সেটাও কি?!                                                                                                                                                                    

 মানুষের তৈরি-পরস্পরের মধ্যে ভেদাভেদ বাড়ানোর জন্যে!! 

হৃদয়ে সত্যের প্রতিমা স্থাপন করো তরুণ। 

সত্যের কাবায় খোদার নাম জপো। 

 তবে, কোন প্রতিমাকে তুমি স্থান দিচ্ছ--তা খেয়াল রেখো-

মোহের দেবীর পুঁজারি নাকি লোকদেখানো আচার্য,

তাঁর পরিচয়ে সাবধানে থেকো।

মনের ভাস্কর তুমি,

তাই উত্তম পলি দিয়ে তার মূর্তি গড়ো। 

ভুলে যেও না, খোদার প্রতিনিধি তুমি

ঈশ্বর তোমাকে সমৃদ্ধির জন্যে পাঠিয়েছেন,

ভেদাভেদ করতে বলেন নি প্রভু!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অতিক্রম্যতা। 

 

এবং শালবন, বিহার, ময়নামতি,
পাহাড় গিরিপথ অতিক্রম করে আমি
সবুজ শালিকের পাখনায় গজানো স্বপ্ন
দিয়াশলাইয়ের পুচ্ছে জ্বালিয়ে বারকয়েক
দিগন্ত ঘুরে আসি, পৃথিবী বড় ছোট হয়ে গেছে;

দেখে আসি আমি সেই অংকিত মানচিত্র;

আহামরি কিছুই নেই দৃশ্যমান,

সবই গহবরে খোদিত, লুকানো আশ্রয়হীন সত্য,
অতিক্রম করি আমি সেই দাউদাউ করা খনিকে,
যা একদিন পুড়িয়ে দিয়েছে হাট-মাঠ-ঘাট বিস্তীর্ণ প্রান্তর,

বোমা বারুদ দিয়ে ফুটিয়ে দেই সেই বৃথা আস্ফালন,
আমি অতিক্রম করি সেই অদেখা কালো হাতকে,
যা বারবার ধর্ষন করতে চায় লাখো স্বপ্নকে,
লুট করে নিয়ে যায় গৌরব ছিন্ন বিভৎস অস্তিত্বে,
আমি অতিক্রম করি কালো উপসাগর,
যার স্রোতে ঘৃণিত পশুর লালসা মিশে থাকে,
গোগ্রাসে গিলতে চায় পলাতককে,
আমি অতিক্রম করি এক সুবিশাল মরুভুমিকে,
মরীচিকার মতো আশা দিয়ে হতাশ করেছে,
মিথ্যে অভিনয়,

মিথ্যে মোহের প্রায় অপ্রাপ্য জালের বুনন

থামাতে পারে নি মহৎ পথচলাকে,
আমি অতিক্রম করি তোমাদের দাপটের হাসি,
ক্রর বিবেকের বিপণন করে কবেকার হয়েছ কৃতদাসী,
আমি লুঠ করতে চাই সেই দানব সত্তাকে,
যা হাজার হাজার প্রাণকে,

 হৃদপিন্ড আর মস্তিষ্কের দৌটানার খেলায় বিভ্রান্ত করে রাখতে চায়,

আমি দেখতে চাই সে কুৎসিত কলুষিত আত্মা,

ভ্রংশিত যার বুদ্ধি, রক্তের খেলোয়াড়,
আমি দেখতে চাই তার রক্ত আদৌ আমাদের মত
লাল কিনা, বুক ফেঁড়ে একবার দেখতে চাই সেই করুন বিবমিষা,
আমি অতিক্রম করি জ্বলন্ত হিংসা,জিঘাংসা,

কয়লার অগ্নিমুখ, লোহাগরম শেকলের প্রতিরক্ষা,
আমি অতিক্রম করি সেই আগ্রাসী বেঈমান সত্তাহীনতা,
কপট রোদ, ছলনাময়ী বৃষ্টি এবং ঈর্ষার মেঘেদের যারা ধুঁয়া দিয়েছিল।


আমি অতিক্রম করি পেরুর চিরবসন্ত,

ধীরে ধীরে যা পশ্চিমা অবয়ব ধরছে,

হারিয়ে ফেলছে প্রকট অস্তিত্ব,
আমি অতিক্রম করি অভিমানী ক্ষোভ এবং বিলাসী মায়াকে,
যা বারবার গতি থামাতে চায়,

বানাতে চায় অলস টাট্টু মাথায় পরে অনুকরণের শিং

এবং বলে তুমি সিংহ,
আমি হলাম সেই দাবাড়ূ যার সবগুলো গুটি হারমানা,
সময়ের দাবীতে কেউ রাজা, কেউ মন্ত্রী আর কেউ বণিক,

বাকীরা ঈষৎ ছায়া,
আমি অতিক্রম করি দীর্ঘ পথ,

বুঝে নিতে সব দ্রাঘিমা রেখা,
এবং আমি অতিক্রম করি আমাকে,

রোদ-ছায়ায় অভিমিশ্র বিভিন্ন রঙের সম্মিলিত

প্রয়াসে যার কৃতিত্ব হয়েছে গত,

অবাক সম্মোহনে হাতড়িয়ে বেড়াই;

খুঁজি অপরাজেয় বিবেকের অস্তিত্ব!

 

 

 

 

 

ভালো থেকো ধূমকেতু

 

আমি বসে রই হতাশ চোখে শূণ্য দাপটে,

খুঁজে বেড়াই স্মৃতিতে তোমার আল্পনাকে,

সবুজ ঘাস মাড়ানো ভোরে সেদিন হেঁটেছিলাম 

আমরা হাতে রেখে হাত ক্লেদাক্ত তৃনে,

তুমি ছিলে উত্তম বন্ধু, সহযোগী সারথি

যার সাথে করতাম সবধরনের পাগলামি,

আমি ছিলাম তোমার অধরা স্বপ্ন যা তুমি

কখনো তারাদের কাছে হারাতে চাইতে না,

অথচ তুমি ছিলে আমার কাছে অলস সময়,

যারজন্য কখনো আমি থামব না,

আমি তোমাকে চেয়েছি ঠিক ততটুকু,

যতটুকু চাঁদ চায় জোছনাকে,

কিন্তু তুমি আমাকে চেয়েছ সূর্যের মত,

সমস্ত গ্রহানু, ছায়াপথ ঘিরে,

তোমাকে কখনো অনুভব করি না তারমানে

এই নাযে আমি তোমায় ভুলে গেছি,

ভুল করে হলেও উদ্ভট শরৎে তুমি দমকা 

হাওয়ার মতো এই মনে এসে উড়িয়ে দাও 

বাঁধনহারা শেফালি,

উলটা স্রোতে ভাসে তখন আমার সব নীতি,

ঝরাপাতার মত উপড়ে ফেলতে চাই তোমাকে

সমূলে, তবুও পারি না,

কেন তোমাকে পুরোনো প্রিয় গানটির মতই

বারবার শুনতে চাই, পুরোনো স্মৃতির মত আগলে রাখতে চাই।

সানগ্লাসের ধুলোতে তোমার নাম লিখতে চাই,

ঘুমানোর আগে তোমার কথা ভাবতে চাই,

এবং কল্পনা করি,

আমাদের আবার দেখা হলে কেমন হবে

তোমার আমার মাঝে প্রতিক্রিয়া,

জ্বলবে কি আগুন আগের মত নাকি ভস্ম হয়ে যাবে সবকিছু,

হয়ত কিছুই হবে না,

তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে যাবে,

আমি পিছনে শূণ্য দৃষ্টিতে বিপরীত পথ ধরব,

এটাই প্রাপ্য, বিধিতে লেখা ছিল,

তুমি আবারো অনুরোধ করবে,

একজোড়া নুপুর দিলে কি পরবে?

আমি বলব, এখন আর সম্ভব না,

সব হারিয়ে গেছে,

আমাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে,

এবং আমার অঙ্গীকারনামা আছে,

বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি কে ফেরত পায়?

একবার লুট হলে হীরণ দ্বীপ কে তার ঠিকানা পায়?

বিলুপ্ত সংস্কৃতির জন্য কে যুদ্ধ করে?

কিছু কিছু সভ্যতা হারানোর জন্য উত্তলিত হয়,

তোমাকে আমি কখনো চাই নি, চাইও না,

তুমি আমার কাছে সেই শিশিরের মত; ভোরে

সহসা মিটে যাবে, কিন্তু কোথায় রেখে গেছ তোমার দাগ?

রগরগে দাগ যে তোমায় ভুলতে পারি না,

তোমার থেকে ভালো আছি আমি,

খুঁজে পেয়েছি সত্ত্বা, গড়েছি পরিচয়,

নব জমিনে চাষ করেছি কিছু সফলতা,

নতুন আবাসন পেয়েছি পুরোনো নিয়মে,

এবার এইটাই আমার স্থায়ী ঠিকানা,

যেটি আগের এবং পরের একশত বছরের চেয়ে

ভালো, তবুও কেন মনে পরে সেদিনকার কথা?

কেন ঈষান কোনে মেঘ জমেছে অকাল বর্ষণের দিল পরোয়ানা,

আমি ভিজতে চাই নাই সেই বৈরী বৃষ্টিতে,

তবুও কেন অহংকারী সত্ত্বা ভিজে যায় বারবার,

হয়ত শৈবালকে ক্ষুদ্রকণা ভেবেছিলাম,

ভাবি নি তা দীঘির জল ভরে ফেলবে,

ভাবি নি তোমার কথা, তুমি একদিন পাহাড় ছুঁবে,

কেবল নিজের কথাই ভেবেছি, জয়েছি সব বাধা,

ডিঙিয়ে উঠেছি সেই পর্বতে,

যা একদিন আমাদের কোণ থেকে দেখা যেত,

কিন্তু তুমি আরো দূরে চলে গেলে,

আমি তোমাকে দেখতে চাই না

এত ভাল হয়ে তোমার দূরে চলে যাওয়াটাই

আমার শাস্তি, কিছুতেই যে আর তোমাকে দোষ দিতে পারি না।

ভালো থেক তুমি ধুমকেতু,

ভালো থেক তুমি ওপাড়ে, জয়ে নিও সব বাধা- থেকো আত্মগোপনে।

 

 

 

অশ্রুর নদীর উপহার।

 

 

শেষবারের মত কেঁদে ঝেড়ে ফেললাম,

মনের 'গহীনে লুকোনো গভীর ক্ষত-ক্ষতের অবসাদ

শেষবারের মত অশ্রু গড়িয়ে পড়ে-

গতিপথ পালটে ফেলে অশ্রুর নদী,

এবারে সে মহাসাগরে লীন

অশ্রুর নদী বয়ে যায় নতুন ভূখন্ডে, নতুন গন্তব্যে-

নব জলধারার স্রোতে যেন বেসামাল

অশ্রুর নদী বলে পুরোনো ঠিকানার হলো অবশেষ। 

আর নয়, আর নয়,

পুরোনো গতিপথে ফিরতে চায় না অশ্রুর নদী,

পুরোনো বাঁকে ফিরতে চায় না,

 ভেজাতে চায় না কংক্রীটের তট!

স্মৃতির স্তুপে ভস্ম হয়েছে সব বিষাদের পলিমাটি। 

অশ্রুর নদী জন্ম দেয়-নতুন চর, নতুন দ্বীপ, নতুন ভূমি।

তবুও, স্বৈরাচারী আসে সে ভূমিকে দখল করে-

গ্রেনেডে উড়িয়ে দেয় অশ্রুর নদীর দেয়া উপহার-

কাঁদে অশ্রুর নদী।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অপরের চোখে নিজেকে দেখা।

 

দলবদ্ধ থাকলে তুমি হতে পারো না 'নিজের' মত,

একাকি থাকলে তুমি দলের কেউ হতে পারো না,

অথচ তুমি খুব করে অন্তর্ভুক্ত হতে চাও

 

দলবদ্ধ হয়ে থাকতে থাকতে তুমি হারিয়ে ফেল 'স্বয়ং'কে,

যেটির বিনির্মান করো তুমি রাতজাগা চোখজোড়ায়-

কল্পনায় কতবার তুমি বলেছ নিজেকে,

 

স্বগতোক্তিতে-আমি এমন, আমি তেমন,

সে ওমন, সে ওমন নয়,

ওটি এমন নয় তেমন ছিল।

এটি এমন, তেমন নয়-

হাবিজাবি আবোলতাবোল!

আমি এটা করতে চাই।

ওটি করতে চাই না।

আমার এটা দরকার।

ওটা চাই, এটা চাই না-ব্লা ব্লা!! 

 

মনে মনেই সব হিসাব যেন কষিয়ে ফেল।

কিন্তু, দলবদ্ধ হয়ে থাকবার খায়েস তোমাকে

না হতে দেয় নিজের হতে না তাদের

তুমি, মনের দ্বন্দে দ্বিধান্বিত। 

 

কিন্তু, তুমি যখন একা থাকো,

তখন অনুভব করতে থাকো মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা,

অথচ এতদিনে তুমি 'অন্যদের' চোখে নিজেকে

দেখতে দেখতে এতটা অভ্যস্ত,

যে 'অন্যদের' ডাকে সাড়া না দিয়ে তুমি থাকতে পারো না

 

অথচ, যা তোমার নিজের বলে ভাব তা কখনও তোমার ছিল না।

যা কিছু তুমি নিজস্ব অর্জন বলে ভাব, সবই পেয়েছ 'অপর' থেকে

তাই, অপরের কাছে 'অপর' হয়ে থাকতে তুমি নারাজ।

দেখতে পাও, নিজের শেষ!

 

 চোখের কোটরে দেখতে পাও সবচেয়ে সুন্দর স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ!  

ক্ষয়ে যাচ্ছ তুমি, সময়ের চোরাস্রোতে তোমার ধ্বংসাবশেষ-

বয়ে চলা অস্তিত্বের হয়তবা হয়ে গেছে অবশেষ

 

 

 

 

 

 প্রেম যেন অনাহারক্লিষ্ট এক নতুন মানচিত্র!

 

 

একইরকম প্রেমকে এত ভিন্ন ভিন্ন

আঙ্গিকের প্যারাডাইমে বিভক্ত করার ফসল,

হতে পারে বিভক্ত ধারাগুলোর ধারাবাহিকতা-

একই গন্তব্যের বিভিন্ন ধারায় বিভক্তি-দৃশ্যপটের বিভাজন

 

একইরকম মানবীয় আবেগকে বহুমাত্রিকতা দান করে,

কেবলই মানসপটের বিভিন্ন চেতনায় উৎসারিত উৎকর্ষতা,

সাধনা-স্বার্থক বটে!

 

বিভিন্ন বিশ্বাসে, চাওয়া-পাওয়ার ভিন্নতায়,

ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং বিভিন্ন অবস্থা হতে

উৎপাদিত চিন্তাসকল বিভক্তি এনে দেয় সেই পুরোনো সুরে-

পুরোনো আবেগকে খচিত করতে থাকে-

যেন এক নতুন স্বাধীন ভুখন্ড-

অনাহারক্লিষ্ট এক নতুন মানচিত্র

 

 

 

 

 

যদি তোমাকে ভালোবাসা না যায়।

 

 

তোমাকে যদি ভালবাসতে হই অক্ষম,

যদি তোমাকে ভালবাসা না যায়,

তোমাকে যদি ভালবাসা না যায়,

তবে তাবৎ পৃথিবীর তাবৎ বসন্ত,

ফুলের ঘ্রাণ, নদীর কলতান,

গেঁয়ো মাটির শীতলতা,

 শীতের সকালের কুয়াশা,

ঝলমলে রোদেলা দুপুর,

উচ্চতম পাহাড়ের একনিষ্ঠ

উচ্চতা আমাকে আর টানে না

 

তোমাকে যদি ভালবাসা না যায়-তবে,

উচ্চতর টাওয়ার হতে দৃষ্ট মেঘমল্লার-সব ফিঁকে,

প্রিয় গানের লিরিক্স, অভ্রান্ত রঙগুলোর নস্যি খেলা সব সমতল,

সব নিষ্ঠুর-নির্বাক খেয়ালের অনিত্য খোয়াব-

সবই পাংসে-দারুন অবসাদের-যদি তোমাকে ভালবাসা না যায়!!

 

যদি তোমাকে ভালবাসা না যায়...

আমার অস্তিত্বের চেয়েও বেশি ভালবেসেছি তোমায় আমি-

কবে কোথায় কখন কিভাবে যেন তীব্রভাবে ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়!

 

প্রবলভাবে ঝড়ের মত কিংবা আড়াল হওয়া হ্রদের মত-

ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমায় কোন এক লহমায়,

অতুলনীয় বিষাদে রূপান্তরিত যে পাললিক মমতা-

নতুন-পুরাতন সুখে বন্দী স্মৃতির কামরায়!! 

 

ভালবাসা সে কি?! 

রুবির মত গাঢ়তর,

পান্নার মত সবুজাভ-সপ্রতিভ-তীব্র প্রগাঢ়-এক নিবিড়-আত্মিক টান।

 

যদি তোমাকে ভালবাসা না যায়-

তবে বিদায়বেলায় আমি চোখ মেলে যেন আর কিছু দেখতে না পাই

দৃষ্টিবিভ্রমে পতিত হবে যে ভ্রান্তির শনি-

তোমার সন্ধিতে অবিচ্ছেদ্য এক নিপাতনে সিদ্ধ সমাস আমি

ব্যাস বাক্য শুধু একটাই-তোমায় অনেক ভালোবাসি। একটু বেশিই। 

 

 

 

 

 

 

বাজারি হয়ে যাচ্ছে নাতো সবকিছু....

 

 

সৃজিত কাব্যগুলো বাজারি না করতে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে নাতো নৈরাশ্যবাদী?! 

সীমাহীন নিহিলিজমে আক্রান্ত বিষুবে অস্ত যাওয়া পৌষসংক্রান্তির দ্বিধান্বীত এক দ্বান্দ্বিক মন!

 

বাস্তবতাই নৈরাশ্যময়, নৈরাশ্যই যদি হয় বাস্তবতা-একটা গোটা প্রজন্ম,

কাল অতিক্রম করছে নৈরাশ্যের চরম বিভ্রান্তি ম্যাজিকের মত দুনিয়ায়

 

আলাদীনের প্রদীপের মত যেখানে ঘষা দিলে সব পাওয়া যায়,

আবার সব নিমিষেই হারিয়ে যায়

 

বাজারি হয়ে যাচ্ছে নাতো সবকিছু?! 

আর, বাজারি না হতে গিয়ে,

নৈরাশ্যবাদী হয়ে যাচ্ছি নাতো আমি তুমি-

একই ক্রান্তিলগ্নে যখন আমাদের বেড়ে ওঠা-

 যাপিত জীবন

 

 

 

 

 

 

পস স্বপ্ন।

 

এত পশ সেজে লাভ নেই

সারাদিন পশ ড্রেস পরে,

পস পস রেস্টুরেন্টে অন্যের ট্রিটে খানাপিনা সেরে

ঘরে ফিরে সেই চটকে চটকে আলু দিয়ে ভাত খাবা।

 

এত পশ সেজে লাভ নেই

ধার করা পোশাক ফিরিয়ে দিতে হয়,

ধার করা গ্লেমারাস পোষাকেও পরিবর্তিত হয় না কিছুই-

না শ্রেণী না শ্রেনী ব্যবধান! না পরিবর্তিত হয় রুচি!

না পরিবর্তিত হয় আদিম কৃতি-সংস্কৃতি-পরিচিতি!

 

এত পশ সেজে লাভ নেই

লাভ নেই বিপ্লবী সেজে,

লাভ নেই বলে -আমি নিয়মের তোয়াক্কা করি না,

পরোয়া করি না কিছুই-বেপরোয়া-এক বাঁধভাঙ্গা ঢেউ

 

আদতে তুমি ভাঙতে পারো না সীমারেখার প্রাচীর

ভাঙতে পারো না কোনো কাঠামো

ভাঙ্গতে পারো না কিছুই-শুধু ভাঙ্গো নিজেকে

নিজেকে ভেঙ্গে বলো, বলতে থাকো ভেঙ্গে ফেলেছি সব নিয়ম,

সব নিয়মের বেড়াজাল। 

অথচ, নিয়মের বাইরে অনিয়মেও তুমি বন্দী-

এক দারুণ অবসাদ

 

এত পস সেজে লাভ নেই

ইংরেজিতে তোমার ভাত নেই

নিজ দেশে হতে পারো না তুমি রাজা,

অন্যের দেশে হতে পারো না প্রজা!

 

গড়পড়তা একটা জীবন কাটিয়ে দাও,

 তুমি একটা 'পস' স্বপ্নের বিভ্রান্তিতে

এখানে রোজ ভোর হয় পুরোনো শেকলের 

ঝনঝনানিতে লোহার গেইট খোলে-আবার 

আটকানো হয় নির্দিষ্ট সময় পর নির্দিষ্ট নিয়মে-

এক আজন্ম কারাগার-'একটি পস স্বপ্নের তার'

বেহালার সুর হয়ে বাজে-পস স্বপ্নের গান।

 

তুমি কেবল পস ইন্ডাস্ট্রির একটা পস পণ্য কেবল

পস সাজার অভিনয়ে পার করো জীবন

দিন-কাল-ক্ষণ

 

'পস' স্বপ্নে বিভোর দিন কাটে তোমার অপ্রাপ্তিতে হতাশায়

চোখ খোলো-ঘোলাটে চোখে দেখ না 'পস' স্বপ্নের জাল

যা তোমাকে ভাঙ্গে-আনে অবসাদ!

 

 

 

চোখের কথা।

 

সবসময় মুখ দিয়ে কথা বলতে হয় না-

কখনও কখনও চোখও কথা বলে

চোখের-চোখের বিনিময় হলে,

অশ্রু অশ্রুর দেখা পেলে-

আর কথা বলতে হয় না দুজনের সমীপে

 

তখন, আপনাপনি সব কথা জানা হয়ে যায়।

মনের এবং বাহিরের।

পৃথিবীর এবং তার পরের পৃথিবীর

 

কারন, চোখ হলো মনের জানালা আর আত্মার দরোজা

আত্মার দরোজা খুলে মনের মেহমান হলে-

আত্মার দুয়ারীদের কথা বলা লাগে না

 

 

আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না৷ 

 

 

একটা সময়ে কথা না হতে হতে সব 

কথা হারিয়ে যাবে

জানোইত কথা হলো মনের ভাষা

মন কথা বলতে চাইলে তা ভাষা হয়ে বের হয়

কিন্তু ভাষা হারিয়ে যাবার পরেও মনের কথা হয় 

কিন্তু তা কেউ শুনতে পায় না!

 

তুমি আর আমি এখন যোজন যোজন দূরে

দূরেই ছিলাম, দূরেই থাকব যেন দূরত্ব আরো বাড়ে!

 

একটা সময় জানো তো

মনও কথা বলা বন্ধ করে দিবে

মন আর বলবে না তুমি ছিলে,

তুমি আছো, বা তুমি থাকবে,

কারন মন বারবার উঁকি মারে।

কার সাথে হয় লেনদেন দেনদরবার,

মনের তা ঠিকই খুঁজে বার করে।

 

এভাবেই একদিন তুমি থেকেও নাই হয়ে যাবে

এভাবেই তুমি সবকিছু থেকে বিস্মৃত হয়ে যাবে

এভাবেই তোমার কোনো ব্যাপারই

আমাকে আর টানবে না,

এভাবেই, তুমি আছো কি নাই 

তাতে আমার কিছু যায় আসবে না

এভাবেই জানো, তুমি একদিন

পাশে বসে থাকলেও আমার কিছু মনে হবে না

আমি তোমাকে আর খুঁজব না,

সবুজ বাতিটি জ্বলে কিনা, তুমি ঘুমিয়েছ কিনা

আমি তোমাকে আর খুঁজব না,

আমি জানতে চাইব না আর তুমি দুপুরের খাবারটি খেয়েছ কিনা!

 

জানো তো, ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ব আমি

তোমার খোঁজ নেয়ার সময় থাকবে না,

আর এভাবেই, আমি তোমার সব স্মৃতি আস্তাকুঁড়ে 

নিক্ষেপ করে, তোমাকে ভুলে যাব চিরতরে

ব্লকলিস্টে থাকবে তোমার নাম

ফোনের স্ক্রিনে আর আসবে না তোমার কল

শুনতে পাব না তোমার ধ্বনি কিংবা

কোনো আহাজারি অথবা গালাগালি

কারন, আমি এখন স্বাধীন।

 

তোমাকে ভালবাসার দায় হতে স্বাধীন। 

অপ্রিয়কে কিভাবে ভালবাসে বলো প্রিয়?! 

তুমি তো আমার প্রিয় হতে দিনে দিনে বড় অপ্রিয় হয়ে গেছ।

 

তুমি আসল থেকে নকল হয়ে গেছ

আমি তোমাকে চিনে ফেলেছি,

প্রিজমের কাচ ভেঙে আমি তোমার রশ্মির বিকিরণ 

ঘটিয়েছি এবং সাতটি রঙ আবিষ্কার করে দেখি

প্রতিটা রঙই একটা কথা বলে-

মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে 

তুমি এবং মিথ্যে তোমার ভালবাসা

বড় এক মিথ্যা তুমি

 

মিথ্যার অলংকার পরেছিলে এতদিন!

তাই, আমিও আজ জোরে চিৎকার দিয়ে

বলে ফেললাম অবশেষে-সবাই শুনুক-সবাই জানুক

আমি তোমাকে আর ভালবাসি না

আমি তোমাকে আর ভালবাসব না!

 

 

 

 

 

আপন হবার নীতি- চাহিদা!

 

 

পৃথিবীতে তোমাকে ভেবেছিলাম

সবচেয়ে বেশি আপন

অথচ আমি এখন বুঝতে পারি

আপনের সংজ্ঞাটিই ছিল আমার ভুল

আমার জানাশোনায় ছিল বিস্তর ভুল

 

ভুলের অতল সাগরের ফেণায় জন্ম নেয়া এক ঝিনুক আমি,

আর ঝিনুক কুড়িয়ে লুপ্ত মুক্তা কেড়ে নেয়া ঘাতক তুমি

অথচ, দোষ নেই তাতে কোনো

ঝিনুকের মুক্তা হয়ই লুন্ঠনের জন্যে

শোভা পায় অভিজাতদের সিন্ধুকে আর কুড়িয়ে পায় শিকারীরা!

 

তুমি যেমন এক পাক্কা শিকারী

অতল সাগরটিও সমান দোষী

স্রোতে ভাসিয়ে এনেছে সে মুক্তা খচিত ঝিনুক

স্রোতে ভেসে উঠা অমায়িক সম্পদ

 

স্রোতকে কেউ ঠেকাতে পারে কি?! 

সব সাগরের, সব জলরাশির কি একই রকম স্রোত থাকে, তা নয় কি

হয়ত সব সাগর সমান হয় না যেমন সমান হয় না জলাধার কিংবা জলের স্বাদ,

কিছু পানিয় থাকে মিষ্টি, কিছু নোনতা তেমনি,

কিছু কিছু সাগর হয় কৃষ্ণ অথবা লোহিত অথবা মুক্তাসিদ শুভ্র!

 

তাই, হয়তবা কিছু কিছু জলের স্রোতে মুক্তা ভেসে উঠে আর কিছু কিছুতে ভেসে উঠে না

অমুল্য সম্পত্তির কদর বুঝে কে?

কোটরে অবস্থিত মণিমুক্তার মুল্য ঝিনুক বুঝে না

বুঝে ব্যবসায়ী

কারন, সে তার প্রয়োজন চিনে

বস্তুত, সবকিছুই হয় প্রয়োজনের স্বার্থে

চাহিদার নেপথ্যে,

তুমি কারুর চাহিদা না হতে পারলে কেউ তোমাকে ভালবাসবে না

তুমি কারুর আপন হতে পার না

আপন হবার একটাই নীতি- সেটা চাহিদা

তুমি হতে পারো কেবল চাহিদার দয়িতা!

 

 

 

 

 

 

 

 

একাকিত্বের সাথে আলাপ।

 

 

একাকিত্ব আমায় প্রশ্ন করে

এই যে তুমি বেশ কিছুদিন 

আমায় ভুলে হাসি তামাশায় মজে ছিলা,

কেমন লাগে এখন দুঃখ পেতে

আমি তোমায় বারণ করেছিলাম নাহ মিলিত হতে?! 

উত্তরে আমি বলি আমার প্রিয় সঙ্গীকে,

দুঃখ আমাকে ভেঙ্গেছে, দুঃখ আমাকে গড়েছে। 

 

দুঃখ আমায় উপহার দিয়েছে বিনিদ্র রাত্রি,

দুঃখ আমায় উপহার দিয়েছে একাকিত্ব,

যাকে আমি পুজারি

একাকিত্ব তুমি মহান,

অন্তত তুমি আমাকে কখনও একা ছাড়ো না

ছায়ার মত লেগে থাকো আমার সাথে

আশাভঙ্গের পরেও তুমি থাকো

বিজয়ের হাসি হাসো।

 

কারন, একবার আমাকে কানে কানে ফিসফিস করে

তুমি বলেছিলে অতি গোপনে,

কেউ আমার হবে না।

মনে পড়ে, তুমি বলেছিলে আমাকে সগৌরবে

"তুমি কারুর নও। কারুর হতে পারো না!"

 

একা তুমি জন্মেছিলে, একা তুমি মারা যাবে

অন্ধকার কবরেও তুমি পাবে আমায়,

নিরন্তর একাকিত্বকে,

লোকের ভিড়েও তুমি থাকবে একা

তখনও তুমি পাবে আমায়

কারন, আমি অবিনশ্বর

আমিই আদি-অন্ত, আমি শুরু,

আমিই এ গল্পের শেষ পর্ব।

 

একাকিত্বের কাফনে মোড়ানো হবে তোমার দেহ,

একাকিত্বের লেবাসে ছুটতে হবে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে

নিত্যনতুন কারবারে বেশ কিছুদিন

আমাকে জড়ানোর জন্য কিছুকাল অপেক্ষা করো।

 

 

 

 

কারাগার। 

 

বহুমুখীতার সমাজে দ্বিমুখী এক সত্ত্বা তুমি,

 প্রকাশ করলেও বিপদ, এক আজন্ম কারাগারে তুমি অন্তরীন,

চেপে রাখলেও তুমি বন্দী

বৈরি পরিবেশ তোমাকে যা শিখিয়েছে,

যেমন মনন গড়ে দিয়েছে,

তাতে তোমার দেহ-মন প্রথমে একটি কারাগার,

নিজের ইচ্ছার কোনো মুল্য নেই যেখানে,

আদতে ইচ্ছা গুলোও সব ফ্যাকাশে

ঠিক বিবর্ণ আকাশের মত

যেখানে একটি কাকপক্ষীও উড়ে না এখন

 

এমনকি আসমানও তার সত্তা পালটে ফেলেছে

পশ্চিমের লালিমা কম উজ্জ্বল এখন

সব কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে

এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছ তুমি- ধীরে ধীরে

নষ্ট হচ্ছে তোমার হৃদয়

নষ্ট হচ্ছে তোমার মন

নষ্ট হচ্ছে তোমার চোখ

নষ্ট হচ্ছে তোমার অস্তিত্ব

ভেজালে মিশ্রিত হয়ে পড়ছে বিশুদ্ধ আত্মা

 

আত্মার ক্রন্দন - বুঁকের বা পাশে হাত রেখে বলছি

আমার হৃদপিণ্ড এতটা দূষণ সইতে পারে না

বুঁকের বাঁ পাশে আজ বড় ব্যথা-আমি অধঃপতন দেখতে পারি না

নষ্ট কীটের মত মনে হয় নিজেকে মাঝেমধ্যে, যেনবা নর্দমায় সাঁতার কাটছি

অথচ, আমি মনে করতাম মানুষ হয়ে জন্মেছি

কত বড় ভুল ধারণা মনে এতকাল ধরে পুষেছি!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কর্মময় অস্তিত্ব জবাব দিবে।

 

 

বিপদগ্রস্ত মানুষ বরাবরই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়,

হোঁচট খায়, উঠে দাঁড়ায়, আবার হোঁচট খায়

উঠে দাঁড়ানোর জন্যে অথবা অভিমুখ পরিবর্তনের জন্যে

ঝড়ের গতি পরিবর্তিত হলেও বা করণীয় কি?! 

ঝড় বিধ্বংসী

যেদিকেই যাবে সেদিকে তছনছ করবে

ভাঙচুর করা যার স্বভাব

সমীহ করে চলবে কি করে?! 

এবং দুর্যোগ তুমিও মহান

তুমি প্রতিটা কাঁটার মুল্য শেখাও

তুমি বুঝাও একটি শান্ত সুন্দর সকাল কেমন হয়

কেমন লাগে নির্বিঘ্ন সকালে ধুয়া উঠা কফির কাপে চুমুক 

দিতে; কেমন লাগে ব্যালকনির প্রিয় কোনটিতে বসে

সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতে ধুঁয়া উঠা কফির কাঁপে চুমুক 

দিয়ে কত বিস্মৃতির অতলে সুখটান দিতে, ঠিক কেমন লাগে?! 

 

অথচ, ঝড় এসে সেই সুন্দর সাবলীল পরিবেশ কেড়ে নিল

নির্জন শৈল্পিক প্রকৃতির সমস্ত রূপ যৌবন কেড়ে নিল,

কেমন লাগবে যদি পৃথিবী আর কখনো ঠিক না হয়

কেমনটা লাগবে এই সুন্দর শ্যামল প্রকৃতি যদি আর কখনো 

যৌবন ফিরে না পায়

কেমনটা লাগবে যদি, দুর্যোগ আর কখনও না কাটে?! 

আর, যদি কখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষন্ন সকাল শেষ না হয়

অথচ, একদিন পাড়ায় সুন্দর সকাল হতো

অথচ, একদিন রাস্তা ঝকঝকা পরিষ্কার ছিল

অথচ, একদিন দিকে অনেক কলরব ছিল

অথচ, একদিন অঞ্চলে বসন্ত উৎসব হতো

অথচ, ঝড় আসার আগে সবই স্বাভাবিক ছিল৷ 

অথচ, ঝড়টা আসারও দরকার ছিল

 

ঝড় না আসলে কিভাবে বুঝতাম একটি সুন্দর সকালের 

অভ্যর্থনা কেমন হয়

ঝড় না আসলে কিভাবে বুঝতাম

একটি নিরাপদ রাতে নিশ্চিন্ত ঘুমের পর,

ভোরের ক্লান্তিহীন সতেজতা কেমন লাগে!

আচ্ছা তরুণ বলো ,

এখনকার ভোর বেলা এত স্নিগ্ধ হয় না কেন

এখন কার রাত গুলো দুঃশ্চিন্তামুক্ত হয় না কেন?! 

এখন আগের মত কথা বলা যায় না কেন?! 

আমার প্রতিটা কথায় একটা করে

ফুলস্টপ যদি লাগিয়ে দেওয়া হয় তরুণ

আমার কলম কথা বলবে তবে

আমার প্রতিটা শব্দ কেটে দাও যদি,

আমার অস্তিত্ব তার কথা জানান দিবে

আমার অস্তিত্বের প্রতিটা লহমা মিটিয়ে দিলেও

দেখবে আমার কর্ম জবাব দিবে।

জবান নয়, কর্মময় অস্তিত্ব আমার কথা বলবে।

 

 

 

 

 

 

ক্ষমতাহীনতা একটি সিস্টেম। 

 

 

ক্ষমতাহীনতা-কিছু করতে না পারা,

ক্ষমতাহীনতা-সিস্টেমের জালে আটকা পড়া,

ক্ষমতাহীনতা- কিছু করতে পারার ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যাওয়া

 

ক্ষমতাহীনতা-একা হয়ে পড়া,

ক্ষমতাহীনতা- তোমার ভালো থাকা এবং ভালোভাবে চলা নষ্ট হয়ে যাওয়া,

ক্ষমতাহীনতা- সমস্ত ইচ্ছেশক্তি বিলীন হয়ে যাওয়া,

নশ্বর হয়ে যাওয়া অবিনশ্বর হতে গিয়ে।

 

ক্ষমতাহীনতা- নিজের উপর আর ভরসা রাখতে না পারা,

ক্ষমতাহীনতা- আটকা পড়া এক চোরাবালিতে যেখান থেকে তরুন,

তুমি আর বের হতে পারো না

এক গভীর অনন্ত মহাগহ্বর যা কখনও শেষ হবার নয়

কারন, ক্ষমতাহীনতাও একটা সিস্টেম যা তোমাকে বিকলাঙ্গ 

করে তুলে-পঙ্গুত্ব বরণ করে তখন তোমার মন-মননশীলতা, অহম এবং আত্ম-পরিচয়

এক গভীর সংকটে পতিত হও তরুণ তুমি। 

জেনে রাখা ভালো যে এক সংকটময় পৃথিবীতে তুমি জন্মেছিলে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের বুঁর্জোয়া হবার শিক্ষা দিন মাননীয়...! 

 

 

ক্ষুদার রাজ্যে কবি নাকি বলেছিল পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি

অথচ ক্ষুদার রাজ্যে ক্ষুদা মরে যায়

পূর্ণিমার চাঁদকে রুটি মনে করার বিলাসিতা জন্মায় না!

জন্মায় কি?! 

 

প্রতিটা অভাব তরুন তোমাকে আরো অভাবী করে তুলবে,

কিন্তু তোমার কিছু করার থাকবে না

কারন, অভাব মাত্রই তোমার সামর্থ্যকেও

নিভিয়ে দেবে যা তুমি টের পাবে না

 

যেমনটা অতিরিক্ত ক্ষুদা ক্ষুদাহীনতায় রূপ নেয়

যেমনটা অতিরিক্ত প্রেম ঘৃণায় রূপ নেয়,

যেমনটা অতিরিক্ত শ্রম শোষণ করে,

যেমনটা অতিরিক্ত সফলতা মানুষকে অন্ধ করে

তেমনি তুমি একদিনের জন্যে হলেও ব্যর্থ হও তরূন,

ব্যর্থতার গল্পগুলোও লিখিত হোক এবার

 

সিস্টেম সফলদের গল্প বলে, ব্যর্থদের গল্প শোনায় না!

সিস্টেম বিজয়ীদের কথা বলে কিন্তু তাদের পন্থা বলে না!

সিস্টেমে বিজয়ী হতে হলে আদর্শের পোষাক ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়,

তাতো, কেউ বলে না!! 

 

তাহলে, সিস্টেমের কাছে দাবী আমাদের কেতাবে আদর্শ আর না শেখানো হোক,

নীতি নৈতিকতার বুলি, মোরাল স্টোরি আর প্রচার না করা হোক,

আমরা সবাই বুঁর্জোয়া হব,

আমাদের বুঁর্জোয়া হবার শিক্ষা দিন মাননীয়...!

আমাদের শোষণ না করে বুঁর্জোয়া হবার শিক্ষা দিন প্লিজ মাননীয়......!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পরিস্থিতি। 

 

আমার সব টুকু সুখ কেড়ে নিয়ে খুব কি ভালো আছো?! 

সব টুকু হাসি, সব টুকু আনন্দ, সব টুকু বেদনা

পুরোটার ভাগই দিয়েছিলাম তোমায় শুধু

অথচ, আমি মনে করতাম ভালবাসা সব জয় করতে পারে 

কিন্তু এটাও আমার জানা উচিত ছিল ভালবাসা মানুষকে 

বাস্তুহারা করে, নিশ্চিহ্ন করে, এক অনন্ত জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে 

নিক্ষেপ করে, কিন্তু আমি সেই আগুনে দগ্ধ হতে হতে

পুড়ে গিয়ে বিশুদ্ধ হলাম এবং

জানলাম আমি তো ভালবাসতেই পারলাম না,

না নিতে পারলাম

কারন, আমি তোমার ভালবাসায় ভুলে থাকতে চেয়েছিলাম,

আমার ভালবাসা না পাওয়ার স্মৃতি, অভাব

সবচেয়ে বড় অভাবী আমি এখন

 

অভাব জানো তরুন কি করে?! 

অভাব যেমন মানুষকে ক্ষুদা হতে বিরত রাখে 

কারন সে জানে অভাব মেটানোর তার কোনো মাধ্যম নেই,

তেমনি ভালবাসার অভাব আমাকে এখন ভালবাসাহীনতায় 

অভ্যস্ত করে দিয়েছে, আমি ভালবাসতে জানি না এখন,

ভালবাসা নিতেও জানি না।

 এরচেয়ে করুণ কিছু কি আর হতে পারে তরুণ,

আমি সন্দেহাতীতভাবে কিছু গ্রহন করতে পারি না।

 

ভালবাসার অভাবে আমি ভালোবাসাহীনতায় ভুগছি।

ভালোবাসার প্রয়োজনটা কি সেটা ভুলে যাওয়া

 আমি এখন আর ভালোবাসতে পারি না। 

 

দোষটা কার?!

আমার নাকি তোমার?

নাকি এই জাল বোনা পরিস্থিতির?

যা আমাদের কখনও এক হতে দেয় না। 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 দ্বন্দ্বের ইতিহাসে সব দ্বান্দিক। 

 

 

এবং ঈশ্বরের রচিত সবচেয়ে নিঁখুত ভুল তুমি

ঈশ্বর কর্তৃক অঙ্কিত ভুলের ফুলদানি

এবং জাগতিক দার্শনিকও সঠিক বটে

সুপ্রিম সত্ত্বা বলেও একটা কথা আছে

তুমি দুর্বল এবং ঈশ্বর তোমাকে ওভাবেই সৃষ্টি করেছেন,

তুমি দুর্বল তাই তুমি মানুষ

তুমি আদিপাপে জর্জরিত তাই পাপ তোমাকে ছাড়তে পারে না!

পাপ তোমার নিত্য সঙ্গী।

তুমি মুর্খ এবং সেই সর্বোচ্চ সত্ত্বা মহাজ্ঞানী

এবং, তুমি ভুল করো, হয়তবা তারই ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়

এবং, তুমি যা ভুল মনে করো, সেটারও প্যারামিটার কি?! 

যা তুমি ভুল মনে করো হয়তবা তা ভুলের উর্ধ্বে,

 এবং যা তুমি সঠিক মনে করো সেটাই ভুলের শীর্ষে

হায় রে দ্বন্দ্ব

ঈশ্বর দ্বন্দ পছন্দ করে

তাই, সবই বক্র, কিছুই সরল নয়!

এবং, মানুষ সবচেয়ে বেশি বক্রভাবে চিন্তা করে

দ্বন্দ্বের ইতিহাসে সবই দ্বান্দ্বিক!  

দ্বান্দ্বিকতার জয় সর্বব্যাপী এবং পরাজয়ও উভমুখী

পরাজয়ের ফলাফল হতে পারে ইতি এবং নেতির-উভয়েরই!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভালোবাসা সাক্ষ্য দিক। 

 

 

এবং অহম তোমাকে বারণ করে 

চেনাজানা গলিতে যেতে অথচ এখানে 

তোমার একদা সহয বিচরণ ছিল

এবং অহম তোমাকে বারণ করে প্রিয়কে প্রিয় বলে

সম্বোধন করতে, কারন সে প্রিয়কে তুমি প্রিয়মনে করছ

সে আর তোমার প্রিয় হবার যোগ্য নয়

প্রিয় হতে অপ্রিয় হয়ে যাওয়া কতটা সহয,

তাই নয় কি?! 

কিন্তু, অপ্রিয় হতে প্রিয় হতে পারা অনেক কঠিন

বেশ কঠিন

 

সেই কঠিনের রাস্তা তুমি পার হও

সেই কঠিনত্ব তুমি ভেদ করো

সেই ইট-কংকর-বালির অমসৃণ বন্ধুর পথে চলার জন্যে তুমি প্রস্তুত হও

 

সেই বরফ শীতল হৃদয় তুমি গলিয়ে দাও,

 আবারো তোমার উষ্ণ ভালবাসায়,

কারন বিশ্বাস এমনেকটা জিনিস যা আমি শুধুই তোমাকে দিয়েছিলাম

 

আমার অহমকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো এবং তোমার ভালবাসা যে সত্য তার প্রমাণ দাও

আমার অহম ভুয়া একবার প্রমাণ করো, আমাদের ভালবাসা মিথ্যে নয় আরেকবার প্রমাণিত হোক!

 

প্রমাণিত হোক, তোমাকে ভালবেসে আমি কোনো ভুল করি নি,

ভুল ছিল না আমার সরলতায়-ভালোবাসায়

প্রমাণ করে দাও, আমার আর তোমার অহমিকাই ভুল,

বাকি সবকিছু ঠিক আছে

 

শুধু প্রমাণ করো তুমি এখনো!

তুমি অতটা ঘৃণ্য নয়

ঠিক যতটা আমি ভাবছি!

এবার, ভালোবাসা সাক্ষ্য দিক!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঠিকই বের করব...

 

 

প্রেমিক তুমি কি দহন বুঝ?! 

অন্তর্দ্বন্দ বুঝ?! 

নিয়তির সাথে বিদ্রোহ শুরু করে দিলাম আমি 

তোমার তরফ আসার জন্যে

অথচ, ঈশ্বরের নিঁখুত পরিকল্পনা আমি বুঝতে পারি নাহ!

 

নাকি ব্যক্তির বোধের অভাবই ঈশ্বরের পরিকল্পনা হয়ে যায়,

তাও ঠাওর করতে পারি না!

তুমি এক অতল বরফখন্ড যার তল আমি খুঁজে পাই না,

আমি এমনেক দাবানল অন্তহীন জ্বলছি অনন্তকাল,

তুমি নেভাতে পারবে না

লাভা কখনও বশ মানে না,

কখনও হার মানে না

নিজে পুড়ে এবং পোড়ায়

আমি সেই দাবানল।

 

 তরুন তুমি কতটা উত্তাপ সইতে পারবে?! 

আজন্ম বিদ্রোহী, দ্রোহ করেই যাচ্ছি

আমার প্রেমও একটা দ্রোহ যেন ড্রোণ

অথবা মিসাইল কিংবা সাবমেরিন

আটলান্টিকের অতলের অতলান্দ্র প্রহরী তুমি হও 

অথবা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীর খাদ হও

তুমি রও যেমনটা তুমি আছো

আমি ঠিকই খুঁজে বার করব

ঠিকই পরিমাপ করব তোমার গভীরতা

দেখব ঠিক কতটা উচু অথবা নিচু 

ঠিক কতটা নিখাদ অথবা ভেজালের মিশ্রণ তুমি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

.

 

 

পুঁজিবাদের যুগে সবাই ভীষণ একা,

কোথাও কেউ ভালো নেই,

ভালো থাকার জন্যেই কি ছিল এই সিস্টেম 

নাকি নেপথ্যে ছিল শুধুই শোষণ?! 

শোষিতও এখন শোষণ করে

শোষণ করা শিখে গিয়েছে

আদতে, শোষিত হওয়া শোষণ করার মধ্যে 

পার্থক্য কতটুকু?! 

যেই শোষিত হয় সেই একদিন শোষক হয়

মাঝখানে কেবল সময়ের রূপান্তর!

 

 

 যাত্রী তুমি ছুটতে থাকো...

 

ব্যক্তি যা নিজের মনে করে তা আদতে ব্যক্তির নয়,

আবার ব্যক্তি যা নিজের মনে করে না সেটিই তার নিজস্ব!

কারন, সত্তাকে পৃথক করে দিয়েছে ধারক!

 

বাহনকে যেমন চালায় জ্বালানী,

জ্বালানী ফুরোলে অথর্ব বাহন,

ঠিক তেমনি অপদার্থ তুমি-আমি। 

 

ঠিক তেমনি ক্ষমতাহীন মূঢ আমরা,

অলীক নিয়মে বন্দী।

 

আজকের মহাবীর কালকের কীট,

সব সময়ের বিবর্তন,

সময়তে যা নিয়ে আসে,

সময়তেই সব খোয়া যায়।

 

অতল গভীর নিগুঢ় অন্ধকারে

একটি শুকতারা আলো জ্বাললে পুরা আসমান কি তার হয়ে যায়?!

আর উল্কাপিন্ডও দিনশেষে ব্যর্থ,

জ্বলতে জ্বলতে তড়িৎ বেগে হারিয়ে যায়!

 

যা সবচেয়ে বেশি অপ্রয়োজনীয়-

অবাঞ্চিত, বাহুল্য এবং সেকেলে মনে হয়,

সেটিই এখন প্রয়োজনীয়। 

ঠিক সেখানেই তোমার-আমার প্রত্যাবর্তন

কারন, সবকিছুই একটা ধাঁধা,

মরীচিকার পেছনে ছুটছে মহামানব

হায়, মরীচিকার পেছনে ছুটছে মহামানব

 

ধাঁধার অপর প্রান্তে রয়েছে উত্তর। 

কিন্তু, সে উত্তর কেউ খুঁজে না। 

কারন, উত্তর থেকে প্রশ্ন হয় না। 

প্রশ্ন থেকে হয় উত্তর। 

 

এবং, একটি প্রশ্নের হয় অনেকগুলো উত্তর

কোনটি বেঁছে নিবে তুমি মহামানব?! 

 

বস্তুত, মানুষকে মহান করে কিসে?!

সূর্যকে কে মহান করেছে?! 

সে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে?! 

বস্তুত, সুপ্রিম সত্তাকে কে মহান করেছে?!

ব্যক্তি মাত্রই ক্ষুদ্র বলে?! 

 

পরাজয়কে মুকুট মনে করে এবং পরাজয়কে 

শিরোধার্য মনে করে যে এগোয়,

শুধুমাত্র একটিবার জেতার জন্যে,

সেই কি নয় প্রকৃত বিজয়ী

আর জুয়ার মত এই জীবনে,

 যা একজনের কাছে পরাজয় তা অন্যজনের কাছে সফলতা

চাহিদার পার্থক্যটুকু কেবল

 

চাহিদার দৌরাত্ম্যে কেউ সূর্যের মুখাপেক্ষী কেউবা চন্দ্রের!

কেউ পূর্নিমা ভালবাসে কেউবা বৃষ্টিবিলাস!

আর কেউ কেউ মরীচিকার মত ছুটে চলে অনবরত

তবুও চাহিদার শেষ সীমারেখার দেখা পায় না!

কখনও তাদের চাহিদার তলাবিহীন ভান্ডার পূর্ণ হয় না!

 

এক অন্তহীন যাত্রা

যাত্রী তুমি ছুটতেই থাকো।

শুধু ছুটো চলো।

অলীকের দিকে ছুটতে থাকো তুমি অনবরত। 

 

নফস।

 

আদমের বেহেস্ত হতে অপসারণে জিতে নাই শয়তান

বরং তার কাঁধে দায়িত্ব বাড়ছে আদমের উত্তরপুরুষরে বিভ্রান্ত করবার,

শয়তান আদমরে প্ররোচিত কইরা নিজেই নিজের লেজ পুড়াইছে,

খোদার বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে নামছে,

যার পরিণতি সে জানে, অনিবার্য হার

এক বেহায়া পতন 

 

আদম সন্তানদের আফসোস করবার কিছুই নাই,

নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানলে,

তুমিই তোমার তাকদীরের মালিক 

আদমের পাপের ভার নিয়া নিছে শায়াতিন শয়তান

আদম পাপ করলেও শয়তান দোষী হয়

খোদার করুণার কত ভার, কত রূপ তার বোঝা দায়

 

শয়তান এজন্যে ঈশ্বর প্রেমে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী চায় নাই

হিংসায় বিদ্বেষে সে পুড়ে ছারখার

আদতে, আদমকে তৈয়ারের মাধ্যমে খোদা ইবলিসরে

যাঁচাই করছিলেন;

সেইটা ইবলিশ কখনও বুঝতে পারল নাহ 

খোদার প্রেম সার্বজনীন প্রতিটা সৃষ্টিরে তিনি সমান ভালোবাসেন

জ্বীনরেও, মানবরেও, ইবলিশরেও সমান ভালোবাসলেন 

 

ইবলিশ যদি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসত খোদারে,

আর খোদার প্রেমে যদি না করত বিদ্রোহ ইতিহাস

রচিত হইত একটু অন্যরকম

ইবলিশ যদি সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্বের আশায়

খোদার সেরা প্রেমিক হবার বাসনা না করত যদি,

খোদার মর্জি হইত না কাঁদামাটির আদম-হাওয়ারে বানানোর

 

ইবলিশ যদি সমস্ত ফেরেস্তাকুল,জ্বীন

মানবজাতির সর্দার হবার উচ্চাবিলাসি আকাঙ্খা না করত তবে,

সেই হইত এখন পর্যন্ত খোদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত!! 

কিন্তু, হায়! সবার মনের কথা জাইনা ফেলান গায়েবে খোদা

জাইনা শুইনা দ্বন্দ লাগান, বাজান তবলা

সে সুর তাল লয়ে নাচে বেবান বিশ্ব ধারা

কারন, সবার মনের ভেতরের মনইতো আসলে "খোদা"! 

 

ক্ষমতা।

 

যারা আমার রক্ষা কোনোদিন করবে নাহ,

ঈশ্বর তুমি তাদেরকে আমার রক্ষক বানিয়েছ

তাদের তুমি ক্ষমতা দিয়েছ

 

--তা,তুমি কি জানতে না সে কথা?! 

 

- জানতাম এবং এও জানি, তুমি আমাকে ক্ষমতা দিলে,

আমিও তাদের মত হয়ে যাব

সমাজটা তো অসমভাবে তৈয়ার হয়েছে,

সাম্য আর সৌহার্দ্য আসবে না পরকালেও

 

 

খোদার আবেগ।

 

"খোদাও দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়

বান্দা দেয় না

খোদাও মাফ করে, বান্দা মাফ করে না 

বান্দার আবেগ আছে, খোদার তা নেই,

তাই, খোদা ভুলে থাকলেও, বান্দা ভুলে না 

খোদা খোদা , বান্দা খোদা হতে পারে না

 বান্দা যা চায় খোদা চায় না

খোদা যা চায় বান্দা তা মানে না!

মানুষের আবেগ আছে,

খোদার আবেগ নাই বলে

ঈশ্বর সবার খোদা"

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঈশ্বরের সাথে তরুণের কথোপকথনে!

 

এরপরের জন্মে, খোদা আমারে ছ্যাছড়া বানাইয়ো

যেন সহযে হাত পাঁততে পারি 

এরপরের জন্মে, খোদা ছ্যাছড়া বানাইয়ো,

যেন সহযে মুখে যাই আসে না কেন যাচ্ছেতাই বলে দিতে পারি

এরপরের জন্মে, খোদা ছ্যাছড়া বানাইয়ো,

যেন মন যা চায় যাচ্ছেতাই ভাবে তাই তাই যেন করতে পারি!

মন যেখানে চায় সেখানে যেন চলে যেতে পারি

এরপরের জন্মে, খোদা ছ্যাছড়া বানাইয়ো

যেন ছ্যাছড়ামি করতে গিয়ে বিবেকবোধ নামের

ফালতু একটা অনুভূতির প্যাচালে না পড়ি;

দায়সারাভাবেই যেন চলতে পারি,

সব কাজ করতে পারি

 

জন্মে খোদা আমারে বিবেকবান বানায়া তুমি ভুল কইরা ফেলাইছ 

জন্মে খোদা আত্মসম্মানবোধ দিয়া আমারে ডিস্টোপিয়ান আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে মারছ

বহুত মুশকিলে পইড়া গেছি,খোদা তুমি হয় আমারে ছ্যাছড়া বানায়া দাও নয়ত

ছ্যাছড়া দুনিয়াটারে একটু বাসযোগ্য বানায়া দাও 

প্লিজ লাগে তোমারে, তোমার দুহাত দু পাও ধরি!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ভীষণ চাওয়া।

 

ঈশ্বর একবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো তোমার ভীষন চাওয়াটা কি?!

আমি বললাম, খোদা তোমার দরবার খুলে দাও যেন বছরে

একবারের জন্য হলেও প্রিয় মানুশগুলারে দেখে আসি৷

বেশি সময় না- আধা ঘন্টার জন্যে হলেও সে ঘরের চাবি দিও-

তাদের সাথে একটু গল্প করে আসি

একবার জড়িয়ে ধরি 

ঈশ্বর আমাকে ফিরিয়ে দিলেন

আমিও ঈশ্বরকে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম-

কিন্তু ঈশ্বর থেমে রইলেন নাহ

একের পরেক আমার প্রিয় মানুশ,

প্রিয় জিনিসগুলো আমার থেকে ফিরিয়ে নিলেন

সেদিন থেকে আমি ঈশ্বরকে ভয় পাই

ভীষণ ভয় পাই

ঈশ্বর তার দরবার থেকে আমায় ফিরিয়ে দিলেও,

আজও আমি ঈশ্বরকে ফেরাতে পারি নি 

 

মানুষকে পচনশীল না বানালেও পারতে!

 

খোদা, তুমি মানুষ মরার পরে

দাফন করার ব্যবস্থা কেন করলে?!

কবর দেয়ার প্রথা না করলেও পারতে!

বুঝলাম, আত্মারা তোমার আমানত,

তুমি সব আত্মার মালিক,

দেহ পিঞ্জিরা থেকে ছোঁ মেরে নিয়া যাবা রুহ

তা, মানুশের দেহটা অন্তত রেখে যেতে

এক পলক দেখতাম 

মানব দেহ পচনশীল না হইলেও পারত

প্রিয়জনকে শো পিচের মত সাজিয়ে রাখতাম৷

মানুষ কথা না বলুক, কিছু না করুক, তবুও তার

একটা উপস্থিতি আছে উপস্থিতি থাকতে পারত!

তবুও, কথা বলার একটা জায়গা আছে!

কথা বলার জায়গা থাকতে পারত!

তুমি এটা ঠিক করো নি খোদা 

মানুষকে অমরত্ব না দিলেও,

অন্তত অপচনশীল বানাতে পারতে

 

 

আত্মকথন

 

"হে খোদা, তুমি আমাকে কখনও অহংকারী বানায়ো না

আমার কথাবার্তায়, চলনে, বলনে যেন কখনও অহংকারের ছিঁটেফোঁটা না থাকে

 

--"কিন্তু, আমি তোমাকে পরীক্ষা করব তোমার জীবন ভরিয়ে রাখব স্বল্পবোধের বিষাক্ত মানুষে

পথে পথে তারা তোমার কাঁটা হয়ে থাকবে তিক্ত কথা শুনিয়ে তোমাকে নিরুৎসাহিত করবে

তখন, তুমি বাধ্য হয়েই অহংকার করবে ক্ষমতা দেখাতে চাইবে"

 

--' আমি জানি আমি এও জানি, ক্ষেত্রবিশেষে বারবার আমাকে বল প্রয়োগ করতে হবে

বারবার বলতে হবে, কে আমি, কি আমার কাজ এবং আমি কি করতে চাচ্ছি

তবুও, এসব করতে গিয়ে যেন, ক্ষমতা আর অহংকার আমার পরিচয় না হয়,

সে অনুরোধ তোমার কাছে রাখলাম কারন, গৌরব করাটা শুধু তোমাকে মানায়

অহংকার তোমার চাঁদর'

 

-- 'হা...হা!! বান্দা-পৃথিবীতে পাঠানো, তুমি আমার ছোট রূপ- অসহায়

তোমাকে অসহায়ত্ব আর সীমাবদ্ধতা দেয়া হয়েছে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যে'

--'তাহলে,আমি কি ক্ষমার যোগ্য?!

তোমার ভালোবাসা পাব?!'

 

--- 'আমার খলিফা হিসেবে দুনিয়াতে কার জন্য কখন কি ক্যামনে করছ,

তার উপর নির্ভর করবে আমার কৃপা এবং দেখব, তুমি কতটা ক্ষমাযোগ্য'

 

-- তাহলে, কর্মভেদে পাব আমরা খোদার নিদর্শন আর সাহায্য?!

 

খোদা বেহেস্তে পায়চারি করতে লাগলেন গম্ভীর হয়ে রইলেন

হাতে ছড়ি নিয়া আমারে একটা বাড়ি দিলেন আর কইলেন

 

--" কর্মফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হও

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দেশপ্রেম

 

"খোদা আমারে হাসরের ময়দানে যদি জিজ্ঞেস করে বসে,

কেমন ধার্মিক তুমি?! 

-ইহকালে তার প্রমাণ দেখাইতে পারলা না

 

-আমি ঈশ্বরকে পালটা যুক্তি দেখায়া বইলা দিব

'আমি দেশকে বাইছা লইছিলাম, ধম্মের উপ্রে

আমারে পারলে মাফ কইরা দিও,

আমি দেশের উপ্রে আর কিছুরে রাখতে পারি নাই

-কিন্তু, ঈশ্বর হয়ত আমাকে ক্ষমা করবেন না

খোদা বান্দার  যুক্তি পছন্দ করেন না

 

কিন্তু, তবুও আমি খোদার জজকোর্টে বইলা গেলাম

" হে খোদা, দুনিয়াটারে তুমি এমন বানাইছ ক্যান যদি প্রশ্ন করি

তবে এসব তোমার লীলা! তুমি আমারে দোটানায় না ফেললেও পারতা!

আমি মানুষ, আমারে বাছতে হয়, তুমি খোদা তোমার বাছনের দরকার পড়ে না!" 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বোয়াজিজির মত পুড়ছি।

 

প্রেমাস্পদ, তুমি না থাকলে জীবনে আমার;

বুদ্ধই হয়ে যেতাম বোধ হয়

ছুঁড়ে ফেলে দিতাম ঘরবার,

দেনদরবার, সালিশ বিচার

ছুঁড়ে ফেলে দিতাম পদ-পদবী,

মুছে ফেলতাম নাম-পরিচয়

দিয়ে দিতাম সব 'অহং' এর বলি

ধুয়ে ফেলতাম আমার নামে লেখা আছে যা কিছু

ফেলে দিতাম 'আমি' নামের অস্তিত্বের সব কিছু

তারপর, 'সমগ্র অস্তিত্বের' বাহক হতাম

অথবা, হতাম সময়ের 'বোরাক' বা সমান্তরাল বিশ্বের

সেনাপতি অথবা সেবিকা কিংবা অলীক অন্যকিছু

 অথচ, প্রিয়তম,তুমি বিবি খাদিজার মত প্রতিনিয়ত

আমার ধ্যাণে সঙ্গ দাও

অথচ, তুমি আয়েশা বিবির মত

আমার সাথে আলাপে তর্ক জুড়ে দাও 

তরুণ প্রেমিক আমার, আমাকে আমার 'হেরা গুহায়

আসহাবে কাহফে থাকতে দাও 

সময় মত আমি ঠিকই বেরিয়ে আসব আলো হাতে 

কিন্তু কথা দিলাম তোমায় পরিত্যাগ করব না

বুদ্ধের মত অত মহান আমি নই

বুদ্ধের মত অত নির্ভীক সাহস আমার নেই

আমি ভীতু, আমি মোহাচ্ছন্ন

আমি হয়তবা সংস্কারক,

মশাল হাতে নিয়ে বোয়াজিজির মত পুড়ছি সারাক্ষণ!  

 

আচ্ছা ধরো তরুন, তুমি দুনিয়াতে যা যা করেছ তার হিসাব দিবা পরকালে খোদার নিকট হাসরের ময়দানে

তার আগে তুমি কবরে আযাব ভোগ করবা(যদি অসৎ হও) এরপরে পুলসিরাত পাড় করবা তারপরে খোদার মুখামুখি হবা এক শতাব্দী পরে,

 

এরপরে খোদা বাটখারা লইয়া তোমার কর্মের ফল মাপবে

মানুশ, তুমি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যাবা তখন,

এক-জান্নাতি, দুই-জাহান্নামি,

কিন্তু, এরপরও আরেক দল রয়ে যায় যারা মাঝামাঝি 

 

জাহান্নামে অনন্তকাল না পুড়ে যারা তাদের খারাপ কর্মের ফল আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি হয়ে নয়া বেশে জান্নাতে প্রবেশ করবে

 

তাহলে, এই যে এতবার, এতগুলা জীবনে, তরুণ তুমি তোমার কর্মের ফল ভোগ করো আর প্রতিবার নতুন জীবন পাও

দুনিয়ার জীবনও কি তার কোনো রূপ কর্মের ফল?! 

 

খোদার কাছে কর্মের হিসাব দিতে জন্ম হয়েছে তোমার?!

পৃথিবী যদি হয় একটা পরীক্ষাকেন্দ্র, তবে কোন কর্মের পরীক্ষা দিচ্ছ এখানে তুমি?! 

 

মায়ের পেটে আসার আগেও কি ছিল তোমার অন্য কোনো জীবন?! 

যার প্রতিফলন তোমার এই দুনিয়াবি জীবন??!! 

 

©® ফারহিন ন্যান্সি

 

 

০৪.

 

খোদার মধ্যে কাম থাকে না বলেই তিনি খোদা

মানুষের মধ্যে ষড়রিপু থাকে বলে সে নফসের শিকার

আর নফস আসে খোদা-বিরোধী সকল সত্তা থেকে!! 

তাই, মানুশ আল্লাহ নাহ!!

 

এখন খোদা বিরোধী সত্তা অনেক কিছুই হতে পারে--খোদা ভালো জানেন কি হয় কিসের হতে!!

 

মানুশের মধ্যে খোদার রুহানিয়াতের সাথে নফসের কুমন্ত্রণা থাকে বলেই সে খোদা হতে পারে না 

 

নফসকে জিসম অথবা সত্তা থেকে আলাদা করে দিতে পারলেই সে খোদা হয়ে উঠতে পারে,খোদা হইয়া উঠতে চাইলে এর বাইরে আর কিছুই করার থাকে না!! 

 

আর, মানুশকে খোদা মধ্যমপন্থি হিসেবে বানাইছেন 

মানুশ, গোমরাহ হবে, বিভ্রান্ত হবে আবার হেদায়াতের রাস্তায় ফিরে আসবে রুহানিয়াতের পথে!! 

মানুশ আবার পাপ করার পরেও খোদার প্রেমে কামেল হইবে

তাই, খোদা বারবার মানুশকে মাফ করে!! 

 

খোদা মানুশকে মধ্যমপন্থি বানাইছেন দেইখা মানুশের মধ্যে স্বয়ং ঈশ্বর আর শয়তান বাস করে!! 

 

মানুশের মধ্যে, আল্লাহ আর ইবলিশে পিং পং খেলে!!

এখানেও, 'আইডলজির' খেলা চলে!! 

কে কারে কার দলে টানবে এই লইয়া টানাটানি চলে!!

 

আমার প্রতিটা কবিতা একেকটা "অরোবোরোস", 

নিজের ধ্যাণে বেড়ে উঠে নিজেকেই স্বয়ং গিলে

এককথায় 'স্বয়ংসম্পূর্ণ' যাকে বলে 

কোনো মত, কোনো ধারণা, কোনো ভাবনা, কোনো চিন্তন চিরকাল দৃঢভাবে ধরে রাখে না 

বহুমুখী এবং বিকেন্দ্রীক

বিবিধ হইলেও খোঁজে শুধু 'সত্য' এর উত্তর

সত্য বিবিধ হবেই যেমন বিবিধ বাস্তবতা হয় তার জনক

 

ডাইনামিক এবং পরিবর্তনশীল হইলেও শেকড়ে প্রোথিত,

আদিম সত্তায় জাগ্রত, আদি জ্ঞানে আলোকপ্রাপ্ত,

আদিতে যার অভিগমন 

আদির দিকে এক আদিম যাত্রা!

আধুনিক হলেও চরম অনাধুনিক,

প্রতিটা কবিতা নিজের মধ্যেই নিজেই একেকটা ধাঁধা

একেকটা 'আইডিয়া', ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতার নিরিখে ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা!

কাউকে, কোনো পূর্বতন ধারণাকে সে মানে না

পুরোনো দেখানো রাস্তায় চলে না

একমাত্র স্বজ্ঞায়, বোধে, প্রজ্ঞায় আলোকের জাগরণে

ভেতরের প্রশ্ন হতে দুমড়ে মুচড়ে যে উত্তর আসে

সেগুলোই একেকটা কবিতার গঠন হয়ে আকৃতি লাভ করে

এখানে, আমার 'মাস্টর' এবং 'মাস্টরমাইন্ড' আমি নিজে 

আমিই আমার 'অরোবোরোস' 

আমিই আমার 'মিস্টিক', 

 

আমার এত আমাকেই 'সাবজেক্টিফাই' করে বলতে হয়

নিজেকেই এত গুরত্ব দিতে হয়

কারন, আমার মারফতেই আসে আমার 'মারফতি জ্ঞান',

আপন সত্তায় জাগরিত হয়ে!

 

আমার কাব্বালায় কাফেলা হয়ে যাত্রা করে মন ধুসর মরুভূমিতে উট হয়ে

 

 

বিচিত্র মন।

 

কিছু কিছু মানুষ দোষী হয়েও নির্দোষ হয়,

ইবলিশ যদি থেকে থাকে তবে সে আগে ফেরেস্তা ছিল,

ফেরেস্তা যদি ইবলিশ হতে পারে,

ইবলিশও নির্দোষ হতে পারত!

স্বর্গ নরকের অপূর্ণ দানবীয় খেলায়,

স্বর্গের দুয়ার নরকে,নরকের খিড়কি স্বর্গে,

কে গেছে বেহেস্তের গালিচা পাড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে?

মানুষ নামক একটা অদ্ভুত জীব আছে,

সে জীবের বড় অদ্ভূতুড়ে একটা হৃদইয় আছে,

এই হৃদয়ের একটা মন আছে,

সে মনের জানালায় অসংখ্য চিন্তারা যাওয়া-আসা করে।

তরুণ, তুমি যদি বেহেস্তের নরম বালিশে মাথা পেতে শুতে চাও-

তবে তুমি মনের আশ্বিনে শুধু ভালো চিন্তা চাষ করিও,

তুমি যদি জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে ঝলসে যেতে চাও-

তবে একবার শুধু কিছুসময়ের জন্যে খারাপ চিন্তা করে আও-

ইহজাগতিক এ জীবনটাই তোমার একটা আস্ত নরককুন্ড হয়ে যাবে,

পুড়ে যাবে সব এবং সবাই, সাথে তুমিও!

তরুণ, এ মনে বাস- রাজকীয়তা আর অরাজকতার,

মানব হৃদয় হচ্ছে-একটা  

জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড নরক দুয়ার,

আবার, এ মানবমনে হলো স্বর্গীয় সুধা,

এইখানে আছে বেহেস্তি হুর,সুরা,গালিচা,মধু,ফুলবাগান,

এই একজায়গায় সব তৈরি হয়,

এই কারখানায় সব চাহিদার যোগান দেয়া হয়,

হয় কত নির্মাণ-বিনির্মান।

এইখানেই সব ঈমান,বেইমান,

এ দ্বৈততা বড্ড বেমানান!

বড় বিচিত্র-ঠিক মানুষের মত!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঐশ্বরিক প্রেম।

 

ঈশ্বরের সমীপে আনে যে প্রেম তা মানবীয় নয়-ঐশ্বরিক

যে ভালবাসা হারিয়ে ফেললে খোদা নারাজ হয়,

সে ভালবাসা মানবীক নয়-ঐশ্বরিক,

যা পারলৌকিক অনুভুতি জাগায়-আনে খোদার নিকটবর্তী,

শরীক করায় খোদার অস্তিত্বে, খোদার মনে শামিল করায়

তা ঈশ্বর প্রেম নয়ত আর কি

যে ভালোবাসা সাহস সঞ্চয় করে,

যে ভালবাসা নীতির সীমা আঁকে,

যে ভালবাসা সমস্ত মিথ্যে অহমের উর্ধ্বে

সেটি মানবীয় নয়-ঐশ্বরিক

যেন ঈশ্বরের মর্জি

যে প্রেম ছুটে গেলে ঈশ্বর নারাজ হয়

যে প্রেমের অবজ্ঞা করলে খোদা অভিসম্পাত করে,

জ্ঞানপাপী তরুণ নেহাত তুচ্ছ এক আশিক

মানুষের সাথে দ্রোহ করলেও মানুষ,

খোদার সাথে কি করে করে নাফরমানি

খোদার প্রেমে মশগুল বান্দার আমিত্বে

এবং অস্তিত্বে ফুঁকে দিয়েছেন এক রুহানি আত্মা,  

তা এখন আর কোনো মানুষের, নিয়মের, সমাজের পরোয়া করে না

ঈশ্বরের প্রেমে মশগুল বান্দা সবখানেই ঈশ্বরকেই খুঁজে বেড়ায়।

সাকি যে একবার করেছে পান মৃত্যুকে যেন করেছে আলিঙ্গন। 

মৃত্যুকে কাছে ডাকে সে মৃত্যুর টানে সয়লাব

কারন সে জানে একমাত্র মরণের পরে দেখা পাবে মহান আশিকের,

ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাতকার!

 

 

 

দৃষ্টান্ত।

 

আমি দেখি নি খোদা তোমাকে আমার হায়াৎ হিসেবে পাঠিয়েছেন,

আমার হায়াৎ তুমি

আয়াতও তুমি,

তোমাকে আমি পড়ি,

পড়ে নিখোঁজ হই,

সাবধানে থেকো তুমি,

যেহেতু আমি তোমাকে তাফসীর সহ পড়ি,

সাবধান থেকো তুমি, যেহেতু আমি তোমাকে অর্থ সহ বুঝি

প্রতিটা কাজ এমন ভাবে করো যেন আমি প্রত্যেকটাকে

একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করতে পারি!

 

 

 

 

চারুলতার প্রেমে…

 

তাহলে কি তুমি আমার জীবনে ইবলিশ নাকি ফেরেস্তা?! 

কি করে বুঝব-তুমি কি ছিলে!

ইবলিশও হাজার বছর ধরে করেছিল খোদার বন্দনা

 

দেবীর মত তুমি ত আমাকে রোজ পুঁজো,

চারুলতার চরণতলে ভক্তরা দেয় কামনার ধুতরা ফুল

তুমি সেরূপ আমায় ডাকো,

দেবীর মতই সাজাও কার্তিকে,

অগ্রহায়নে মন ভরে ঘ্রাণ নিও-

ধুপ, ধুঁয়া, চন্দন কাঠির,

আমায় তুমি তোমার প্রার্থনায় সয়লাব করো।

 

প্রত্যেক বিভায়, ফজরে সিজদায় আমাকে চাও,

প্রত্যুষে আমার জন্যে করতে থাকো প্রত্যাশা,

দেবির মত আমাকে আরাধনা করো।

 

দেবী যেমন ভক্তের ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়,

ছুঁড়ে ফেলে দেয় বেধী হতে, তিরষ্কার জানায়,

ভক্তকে যাঁচে-তেমনি তুমিও অপেক্ষার প্রহরে,

কঠিন অগ্নিপরীক্ষায় পুড়ে খাঁটি হয়েছ।

নিশ্চিত থেকো সততার সাথে তোমাকে জয়ী করা হয়েছে।

 

খোদার পরে কাউকে যদি সিজদাহ করতে বলা হতো,

তোমায় করলে কি হইতো শিরকী কবীরাগুনাহ?! 

তবুও আমার দুজাহানের প্রেমাস্পদ তুমি

এটি তোমার নিজেরই প্রাপ্তি-যোগ্যতা

অর্জন করে নিয়েছ তুমি আমার ভালবাসা

পাথরেও ফুটাতে পারো ফুল তুমি

পাথর ভেদ করে বহে ঝর্ণাধারা!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মৃত্যু।

 

মৃত্যু যখন সন্নিকটে,

জীবন থেকেও বন্ধুপ্রতিম লাগে,

উচ্ছ্বাস থেকেও তখন নৈশব্দ প্রিয় লাগে,

ঠিক তখনি বৈভবে বৈষম্য বাড়ে।

ঠিক তখনি বিত্ত হারিয়ে যেতে থাকে অথবা 

খুব অপ্রয়োজনীয় লাগে

যেন এতদিনের সঞ্চয় অযথাই,

বৃথা জীবনপ্রবাহ, এরচেয়ে প্রেম ভালো মোহের চেয়ে,

এরচেয়ে অবকাশ ভালো ছুটে চলার চেয়ে

এরচেয়ে ঠাঁয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভালো

বৃথাই দৌড়ানোর চেয়ে

বৃথা ঘোড়দৌড়!  

বৃথা আস্ফালন!  

সবচেয়ে দুরন্ত ঘোড়াদের স্থান হয় আস্তাবলে!

 

 

শিরকী।

 

খোদার ইচ্ছা জানতে চাওয়াটা যদি শিরকী হয়

তবে খোদাকে চিনতে হলেও, আমি করব গুনাহ,

একবার নয়, বারবার

তবুও জানতে ব্যাকুল মন খোদার স্বপ্রতিভ আভা

কেমন ধারক তিনি, কেমন তার অনুভুতি

ভেতরে-আরো গহীনে,

এবং অন্তরালে অন্তহীন যেখানে যাত্রা,

ঠিক সেখানে খোদা তোমাকে চিনতে চাই,

জানতে চাই কেমন তোমার কর্মধারা

কার্যকলাপ এবং চিন্তাভাবনা!!  

মনোবাসনা

আড়ালে-অভ্যন্তরে এবং

সযত্নে যা লুকানো-

প্রত্যেকে তার অংশ-পুরোপুরি এবার লীণ হতে চাই

চিনব ঠিকই তোমার স্বরূপ-সন্ধানে বেরুলাম

তুমি পথের মালিক, এসব পথ তোমার রচনা

আমি শুধু করেই গেছি এতদিন অথর্ব বাসনা আর নির্থক বন্দনা

একবার শুধু দেখাও তোমারে-আমি দেখে হারিয়ে যাব চিরতরে,

হারানোতে সুখ যত, প্রাপ্তিতে অপূর্ণতা থাকে। 

পূর্ণতাও আদতে কি?! 

মনের সীমানা

যতটুকু মন গ্রহন করতে পারে,

যতটুকু মন প্রয়োজন মনে করে এবং

ধারণ করতে পারে-

ঠিক ততটুকুকেই মনে করে পূর্ণতা,

শুন্য হয়েও পূর্ণ মনে করে আর পূর্ণ হয়েও শূন্য মনে করা 

লোকের মধ্যে ভেদাভেদ কতটুকু?! 

একজন খোদার রুহানি শরীরের অংশ বয়ে বেড়াচ্ছে

যা আজও উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে

অপরজন হারিয়ে ফেলেছে সে দ্যুতি,

ম্রীয়মান ক্ষীন আলোতে পাপগুলো

উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করে।

 

পাপ কি?! 

যাকে সে সঠিক মনে করে নিজের বোধে,

যা তাকে সাময়িক সন্তুষ্টি দেয়। 

অপ্রাপ্ত, অসন্তুষ্ট, অপূর্ণ, অসম্পূর্ণ

থাকতে পারার সাধনা-কয়জনায় করতে পারে?!

সেটিই সবচেয়ে বড় সাধন, কর্মযজ্ঞ, বিপ্লব

বিবর্তন অথবা যেনবা বিধি।

 

তরুন, তুমি বেছে নাও, কোনটি হবে!

এখানে হারানো মানে প্রাপ্তি নয় ঠিক,

হেরে যাওয়া মানে হলো,

ভেতরের খায়েশের ফরমায়েশি করা,

নফসকে যে বানিয়েছে খোদা-বলি হয়েছে স্বয়ং মানব,

মানুষ করেছে নফসের বন্দনা

ভেতরের আত্মা তড়পায়

অথচ খুব কম মানুষই সে তড়প শুনতে পায়। 

আফসোস,

যে খোদাকে চিনে নাই,

সে তো খোদাকে চেনার কখনও চেষ্টাও করে নি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আসমানি খায়েস।

 

বদ্ধ জানালা দিয়ে সবাই আকাশকে 

অনুভব করে,চোখ মেলে দেখার খায়েশ জাগে৷

উন্মুক্ত আকাশে কেউ আকাশের দিকে তাকাতে পারে না,

বড্ড একঘেয়ে লাগে। 

যা যতবেশি বিস্তৃত তা ঠিক ততবেশি অপ্রয়োজনীয়। 

মুক্তি চাওয়ার জন্যেও একটা কারন লাগে। 

আকাশ ভালবাসতেও বদ্ধ ঘরে থাকা লাগে। 

যে পাখির চিরকাল আকাশেই বিচরণ

 

কখনও চিনতে পারে নি আকাশকে।

চিনে নাই সে তার বিশালতাকে।

 

 

মহামারী পরবর্তী সময়ে আধ্যাত্মিকতা…

 

মহামারী পরবর্তী সময়ে আধ্যাত্মিকতার চর্চা হবে,

মননে আর চলনে

সকল অস্তিত্ব জুড়ে।

মহামারী পরবর্তী সময়ে প্রাচীনে ফিরে যাবে মানুষ অথবা 

খুব করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবে তথ্য যুগের নব বিপ্লবে-

নতুন উদ্যোগে অথবা নতুন বিনিয়োগে, নতুন কারবারিতে। 

নতুন কাজের নতুন সংজ্ঞায়নে অথবা পূর্বনির্ধারিত

পূর্বসংজ্ঞায়িত পথে ফিরবে মানুষ

যেখানে আত্মারা বিশ্রাম করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

খোদার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।

খোদার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তুমি আমার

উপহাস ভেবে ভুল করেছিলাম।

জীবন তুমি আমার,

তুমি না থাকলে জীবনের আলো নিভে

যাওয়ার উপক্রম যেখানে সব অন্ধকার।

যে জগত বির্নিমান করি তুমি বিহনে সে জগত জড়-

অচল বড়! আমার আমিত্বের পিছনে কারন তুমি,

আমার আমিত্ব হারানো গেলেও-কারন তুমি। 

নষ্ট ঘুমের কারন তুমি, দৃষ্টিসীমাও তুমি!

আমি শুধু তোমায় দেখি-যেন আমি গান্ধারী!

অন্যকিছু, দৃষ্টি কখনও চিনে নি,

দেখে নি, দেখতেও চায় না!

শূণ্য! সব শূণ্য!

শুণ্য থেকে শুরু যখন শুণ্যতায় এসে ঠেকে তুমিবিহীন।

দিনের শুরুতে,প্রত্যেক কথার সূত্র তুমি, শুধু তোমার নাম

ধ্যাণেও তুমি, কর্মেও তুমি, সত্যেও তুমি, মিথ্যে ছলনায় তুমি,

কারন ছলনায় হেরে যাই আমি।

আমার সব উৎসব তুমি, পার্বণও তুমি।

আমার দেবতা তুমি।

তাই তো, দেবীকে বিসর্জন দেয়া হয়, দেবতাকে নয়!!

ভালোবাসি। ভালোবাসো।

ভালোবাসি। ভালবাসো। 

থাকো। রয়ে যাও। থমকে যাক সময়।

থমকে যাক সময় মহামারীর মত আবার,

থমকে যাক সময়-মহামারির মত ছড়িয়ে যাক ভালোবাসা-

প্রতিটা সৃষ্টিতে, ধরুক বিস্ময়!!! 

 

রুহানি প্রেম।

তরুন, তুমি আর আমি জড়াই নি কোনো নিম্নস্তরের প্রেমে

তাই তো এখন আমাদের প্রেমের আলোক ছড়িয়ে পড়ে দূর-দূরান্তে

উচ্চমার্গীয় প্রেম কাকে বলে তুমি কি তা জানো তরুন?! 

আমাকে অনুসরণ করো, প্রেমিক-এক নতুন ধরণের প্রেম শেখাব তোমাকে

কি জানো?! 

নিজেকে তুমি ভালবাসবে আমার চেয়েও বেশি।  

আর, সবার চেয়ে ভালবাসবে খোদাকে!

যিনি ফুঁকে দিয়েছেন- তোমার আর আমার মধ্যে রুহানি প্রেম!

কালোত্তীর্ণ শৈশব।

অতীতেই গমন, অতীত রোমন্থন। 

বর্তমানের বীজ অতীত হতে অংকুরিত

শীতল ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষরূপে আগমন। 

হয়ত, একই স্থানে, একই দেহে, একই ব্যক্তির 

ভিন্নরূপে প্রত্যেকবার ভিন্ন ভিন্ন নবজন্ম-নবজাগরণ।

কালোত্তীর্ণ শৈশবের রেষ যেন বয়ে বেড়াই ইহকাল

এবং তারপরও।

 

 

 

অলংকার।

এখনো দ্রোহ যায় নি রক্ত হতে-

শিরায় যেখানে সাঁতার কাটে দ্রোহ,

জীবন হতে নেয়া জীবনের তাগিদে গড়া...

প্রেমময়ী আমি

লড়াকুও

কোন রূপটি আমার দেখতে চাও তরুন,

অতিসত্বর ঠিক করে নাও। 

তীব্র প্রেমে আনে যে তীব্র ঘৃণা

তা কখনও ভুলবা না,

আমার ভালবাসার কখনও অমর্যাদা করবা না,

কারন, কোনো কিছুর তীব্রতাই ভালো না। 

না প্রেম, না অপ্রেম।

তুমি আমার সঞ্চিত কাব্যমালা

এবং আমার জীবনের মুক্তোবালা

আমি তোমাকে অলংকারের মত পরিধান করি

তাই, আমাকে শোভিত করো, অপদস্থ নয়,

কারন আমি কোনো সস্তা গহনা পরি না

অলংকার পরলে সৌন্দর্য বর্ধিত হয়

আর না পরলেও,

যা সুন্দর সবসময় চিরসুন্দর থাকে।

 

 

শেষ গল্প।

পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে লিখে যাচ্ছি

এক অলিখিত গান,

প্রজন্ম হতে প্রজন্ম বইবে সে উত্তরাধিকার

জন্মের নয়, পর জন্ম এবং

তারপরেরও চিন্তা, সূত্র, গীতবিতান 

রেখে গেলাম। 

কারন, আত্মারা কখনও মরে না। 

ফিরবে তারা চক্রান্তে দোয়েলের মত ঘূর্ণিপাকে বারবার

কোনো এক ত্রাসে গ্রাস করবে দেহ-না জানি কার!

বলবে কথা- বলবে তার গ্লানি

শোনাবে অসম্পূর্ণ গাঁথা

তারপর-

ঠিক একদিন ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সে পথে,

যে পথ পথিক মাড়ায় নি ভয়ে,

অথবা খুব করুন বাস্তবে-যে পথের ডাকে সাড়া দেয় নি,

সে অনুতাপ আবারও নিয়ে যাবে তারে চক্রধামে। 

কারন, পথেরও শেষ থাকে,

পড়ন্ত বিকেলও শেষ হয় উদাস সন্ধ্যার পরে।

যেমন শেষ থাকে সব গল্পের- জীবনের মত

জীবনের তাগিদে

 

 

মন দরবারে।

যুগের সবচেয়ে বড় শত্রু কোনো ট্যাংক নয়,

নয় মেশিন গান অথবা স্কাই রকেট,

বা একে-ফোরটি-সেভেন

সবচেয়ে বড় শত্রু তোমার মন-অসুখও সে।

মনকে স্থির করো- এক গোটা বিশ্বদরবার তোমার!

সেটাও শুধু তোমার মনে

মনে মনে রাজা ভাবলে রাজা,

মনে মনে দাস ভাবলে দাস। 

করার কি কিছু আছে?! 

মন দরবারে পাগলা উটেরা নালিশ করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মোনাজাত।

এবং হাত তুলে মোনাজাত করো তোমার পূর্বপুরুষদের জন্যে

তারা চেয়ে আছে, তোমার দুহাতের দিকে

হাত দিয়ে তুমি তাদের কি দিতে পারো?! 

অর্থ-সম্পদ?! 

বিত্ত-বিলাস?!

খায়েস-অভিলাস?! 

নাহ, এগুলো আযাব

তুমি দিতে পারো দু ফোটা অশ্রু

দিতে পারো সকরুণ দরুদ,

দিতে পারো একরাশ দোয়া কাঁশ ফুলের মত শুভ্র,

ফুলের রেণু গিয়ে পৌছুবে- সাত আসমান উপরে,

তাদের বাসস্থানে জ্বলবে আলো তোমার দোয়ার প্রতিদানে,

তাদেরও মনে আশা জাগবে- বৃথা ছিল না তাদের জীবনসংগ্রাম।

তারা জেনে খুশি হবেন,

যোগ্য উত্তরসূরী পৃথিবীতে রেখে এসেছেন। 

হাস্যোজ্জ্বল তাদের চেহারা, দ্যুতি ছড়ায় দুয়া

আরশ কাঁপায় আল্লাহর, ডাকো কেবল তারেই

প্রত্যাবর্তন করো শুধু মহান সত্ত্বার নিকটে!

 

 

 

 

একক প্রেম।

হেফাজত করো তোমার প্রেমকে যেটি স্বর্গ হতে আসে

এবং অবশ্যই ঈশ্বর কর্তৃক যেটি অনুমোদিত,

রক্ষা করো তাকে জানমাল দিয়ে

হিংস্রভাবে,প্রবলভাবে ভালোবাসো শুধু তারে-

ঈশ্বর যাকে আশীর্বাদ করেছেন শুধু তোমার তরে!! 

কারন, সে প্রেমের মত হয় না দ্বিতীয় আর কোনো

প্রেমের মত স্বর্গীয় এবং সত্য সুন্দর অনুভূতি হয় না কখনও

দ্বৈততা সকল দ্বন্দের মূল

 দ্বৈততার প্রয়োজন কেবল বৈপরীত্যে!

স্বর্গীয় প্রেমে কোনো দ্বৈততা থাকতে পারে না।  

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

খোদায়ি ইচ্ছা।

অন্তর থেকে খোদায়ী ক্বলব মিটে যাবে বলে,

সাচ্চা মুমিন বান্দা খোদাভীরু মানুষ ছাড়া

অন্য কারুর সাথে চলতে পারে না

কেমন যাতনা

যেখানে লোকদেখানো খোদা ভক্তের সংখ্যা বেশি

যারা ঈশ্বরপ্রেম চিনে না

তারা মানবপ্রেম কি করে বুঝবে?! 

মনের কোনে ঈশ্বরকে না জপলে

ঈশ্বরকে না ভালোবাসলে

ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা আসে না-

আসে অবজ্ঞা

ঘৃণা! অবহেলা

যে ঈশ্বরকে চিনে না সে নিজেকে চিনল না

ঠকালো স্বয়ংকে

যে ঈশ্বরকে চিনে না সে ভালবাসা কি তা জানল না

ঠকালো সরলমনা মানুষদেরকে

যে ঈশ্বরকে চিনে না

সে পাপকে পূন্য আর পূন্যকে পাপ মনে করে। 

যে একবারের জন্যও খোদাকে ভয় করে নি,

সে পাপকে অবশ্যম্ভাবী মনে করে। 

ফলে, সে অন্ধকারেই রয়ে যায়।

ফলে, সে ঘৃণার মধ্যেই বড় হয়। 

ঘৃণাকেই জন্ম দেয়। 

ফলে, সে দয়া কি মায়া কি চিনে না,

শাস্তি প্রণয়নকে বিধান মনে করে-

যা আসলে স্বয়ং খোদার বিভাগ-

খোদা নারাজ হয়। 

সমস্ত আইন খোদার তৈরি-

খোদার মনঃপূত হওয়া চাই। 

খোদা ব্যতিরেকে যে সকল আইন-

মানুষের তৈরি তা কতটা নেয়ামত দিতে পারে,

পেরেছে কবে, ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রয়। 

ঈশ্বরের অভিন্ন আলোতে আমরা বিভিন্ন জনে

বিভিন্ন কোণ হতে বিভিন্ন সময়ে আলোকিত হই।

শুধুমাত্র খোদার বাণীর মর্মার্থ প্রচার করার জন্যে।

খোদার ইচ্ছায়।

খোদার ইচ্ছায় মানুষ পালক হয়ে উড়ে।

 

 

 

 

 

 

 

 

এক আলোকজ্জ্বল সকাল।

প্রত্যাবর্তন করো তোমার খোদার নিকটে

যিনি তোমার অন্তর ভালোবাসায় ভরে দিয়েছেন। 

যিনি তোমাকে দু হাত ভরে দিয়েছেন- এবং তুমি তার

দেয়া বরকতের আর কি কি অস্বীকার করবে?! 

ঈশ্বর তোমাকে ভালোবাসেন- কিভাবে বুঝবে জানো তরুণ?!  

উনি তোমার জীবন এবং চারপাশ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবেন

উনি তোমার অন্তরে সৃষ্টির প্রতিটি প্রাণীর জন্যে মহব্বত ফুঁকে দিবেন-

এমনকি যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে-

এবং তোমার উপরও জুলুম করেছে-

তাদের প্রতিও ক্ষমাশীলতা তৈরি করে দিবেন। 

তোমাকে সহয করে দিবেন।

কারন, তুমি জানো তারা আলো থেকে বঞ্চিত। 

সরল পথ থেকে বিচ্যুত।

কারন, ক্ষমা করতে পারাটা সবচেয়ে বড় ইলম

যা খায়েশিয়াতের দাসত্ব করা মানুষ বুঝতে পারে না

নফসের শিকার যে মানব- প্রবৃত্তির শিকার

বুঝবে না সে ক্ষমাশীলতার মর্ম, কেমন 

প্রশান্তি, কেমন অপূর্ব সুন্দর এক সতেজতা-

আলোকজ্জ্বল সকাল।

 

 

 

স্বকীয়।

যার নিজস্ব মতবাদ আছে

স্বকীয় এবং মননশীলতার দিক থেকে যে স্বয়ংসম্পূর্ণ

সে অন্যের মতাদর্শে চলতে পারে না। 

বড়জোর অন্যের মতামতকে সম্মান জানাতে পারে

এবং সম্মানের সহিত বৈপরীত্য প্রদর্শন করতে পারে

কিন্তু নিজের মতাদর্শের সাথে অন্যের মত মেলাতে পারে না। 

খাপ খাওয়াতে পারে না। 

মৌলিকতা যেখানে প্রতিনিয়ত অনবদ্য

স্বকীয় যেখানে চিন্তাধারা

স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিন্ন সে, সবার সাথে থেকেও একলা

সবার মত মেনে নিলেও সে পৃথক-

নিজস্ব চিন্তার জগতে যার কেবল পথচলা

একে, বলে ভদ্রতা

সহনশীলতা। 

এবং, সে স্বকীয় বলেই পরের মতাদর্শকে শ্রদ্ধা করতে জানে,

কারন, নিজের মতাদর্শে সে কোনো আঁচড় লাগতে দেয় না

তাহলে, পরের মতামতকেও কেন অগ্রাহ্য করবে?! 

যেখানে সবাই যার যার অবস্থানে সঠিক ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে

শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক

ফারাকটাও গুছে যেত-যদি সবাই একইরকম সহিষ্ণু হত

যদি সবক্ষেত্রে সহনশীলতার চর্চা হত!

 

সাধনা।

সাধনা করো-চুপ থাকো-একা থাকো,

নিরিবিলি-নির্ঝঞ্জাট-আর ভাবনার সাগরে ডুব দাও।

সেখানে, ডুবে যাও, চিরতরে হারিয়ে যাও। 

উদ্ধার করে আনো কিছু উৎকৃষ্ট মানের পলি মাটি,

যখন চোখ খুলো-নিয়ে এসো কিছু ঝিনুক কুড়িয়ে আনো

মুক্তোমনি-যখন দম ফেলো।

ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নাও-ধীরস্থির করো তোমার প্রতিটি 

পদক্ষেপ-চলাফেরা এবং বাঁছাই করো-

সর্বোৎকৃষ্ট পরিবেশ, সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ তোমার জন্যে

যে পরিবেশে, যাদের সাথে তুমি মনের চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে পারবে-

যারা তোমার না বলা কথাগুলা বুঝে ফেলবে আর একসঙ্গে একটি ভালো

পৃথিবী বিনির্মাণের জন্যে তোমরা একতাবদ্ধ হবে, কাজ করবে।

এবং, কথা তাদের সাথেই বলো, যারা তোমার কথার অর্থ বুঝতে পারে।

মূল্যায়ন করতে জানে৷

এখানে তোমার কোনো মুল্য নেই অথবা তোমার কাছে

তাদের কোনো মুল্য নেই। 

তুমি অমুল্য। 

সাধনা করো-নিরিবিলি-নির্ঝঞ্জাট-একাকিত্বে

যতদিন না আধ্যাত্মিকতার পৃথিবী পাও। 

 

 

 

পূর্বপুরুষের ঋণ।

কিভাবে ভুলে যেত পারো তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে?! 

যাদের অবদানে আজ তোমরা এতটা উন্নত- উন্নতির শিখরে

কিভাবে ভুলে যাও সে পূর্বপুরুষকে যার মেহনতের ফলাফলে

আজ করছ এতটা বিত্তের অপচয়- কত সহয এটা তোমাদের জন্যে!

পূর্বপুরুষদের অঙ্গীকার ভুলে গেলে এত সহযে!! 

শোধ করতে হবে দেনা এবার সুদে-আসলে!

দেখে নিও, সব ডুববে কঠিন আযাবে!! 

বিত্তের জোর কয়দিন?! 

শক্তিমত্তার জোরও বা কয়দিন?! 

ইতিহাস সাক্ষী, মিটে গিয়েছে তোমার পূর্বের লোকেরাও 

এবং মিটে যাবে তোমার পরের লোকেরাও

মাটির মত মাটিতে, তাই মাথাটা আসমানে তোলার আগে 

পা দুটো মাটিতেই রেখো। 

কারন, মাথা সবসময় উপরে থাকলেও,

পা দুটি মাটিতে বিছিয়ে হাঁটার জন্য!

 

বলিষ্ঠ ঈমান।

হে প্রভু, আমার ঈমান কখনও দুর্বল করো না

কখনও আমাকে আমার মোহের কাছে পরাজিত করো না। 

নিশ্চয় আমার মোহ, আমার প্রয়োজন নয়

অত্যাবশ্যকীয় কিছু নয়

কেবল, অহমকে বর্ধনের জন্য একটি প্রকরণ মাত্র

হে, প্রভু তুমি আমাকে নির্মোহ বানাও

আমাকে কারুর দ্বারস্থ করো না,

তুমি আমাকে সত্য দেখাও

যা আমার জন্যে এবং তোমার সৃষ্টির জন্যে কল্যানকর

তুমি আমাকে এবং আলোক বঞ্চিত লোকদের সে সত্য দেখাও,

সর‍ল সত্যের পথ তুমি উন্মোচিত করো

যেন সবাই দেখতে পারে-তুমি আমাদের উপর রহম করো

যেন আমরা তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি এবং

তোমার মাহাত্ম্য বুঝতে পারি।

 

 

 

 

 

 

 

খোদায়ী চোখ।

এই নকল দুনিয়ায় অনুভুতিই একমাত্র চিরসত্য দর্পণ!

অনুভবে যেন সব শক্তি।

খোদায়ী চোখ ধারণ করবার ক্ষমতা আল্লাহ সবাইকে দাও-

যেন একইরকম অভিন্ন চোখ দিয়ে তারা পৃথিবীকে দেখতে পারে!! 

যেন এক রকম একটা পৃথিবী তৈরি হয়,

বৈষম্যহীন অভিন্ন সমাজে যেন বসবাস হয় সকলের-

যেখানে শুধু ঈশ্বরপ্রেম আর মানবপ্রেমের চর্চা হবে!

খোদায়ী চোখ দান করো খোদা তোমার প্রত্যেক সৃষ্টিকে!

একমাত্র খোদায়ী জ্ঞানইমানুষ তোমাকে প্রকৃতার্থে মুক্ত করতে পারে!!

হলফনামা।

অর্থ-বিত্ত তোমাকে আধুনিক দাস সমাজের একনিষ্ঠ দাস হওয়া থেকে বাঁচায় ......  

 এবং, অজ্ঞাতনামার প্রতি জ্ঞান আর ভক্তির বিত্ত-

তোমাকে দুনিয়াবি বাসনার দাস হওয়া থেকে বাঁচায়

মোহের ফাঁরাক গোছায় এবং বাস্তবতা চিনতে শেখায়।

সম্পদ- তোমাকে মনিব বানাবে অজ্ঞাত সময়ের-

অজ্ঞাত স্থানের-অজ্ঞাতশ্রেণির-অজ্ঞাত কালে-
যেখানে অজ্ঞাত হলফনামায় লিখিত হবে

তোমার নাম কোনো এক অজ্ঞাত পরিচয়ে!!! 

তরুণ, তোমার পুঁজি কেমন??! 

কি আছে পুঞ্জিভূত তোমার একান্ত হলফনামায়??!! 

 

 

জগতসংসার।

এবং, আমার জগত আমি তৈরি করি আমার

একান্ত জগতের ঘাত-প্রতিঘাতে!! 

এই তো আমি বেশ রয়েছি আমারই চিন্তাভাবনার সাথে!! 

জগতসংসারের এতো ঠুনকো বিষয়ে কেন এত ভাবনা

জগত, জগত করে আমরা তড়পাই!! 

হাপিত্যেশ করি, জালে আটকা মাছের মত ছটফট করি

অথচ এর বাইরেও রয়েছে এক বিস্তর জলতরঙ্গ

আমরা সেখানটায় না সাঁতরিয়ে, অনুসরণ করি শুধু অন্ধ মোহ।

অনুধাবনটা করুণ সত্য!

 

কর্মের ধরণ।

তোমাকে খোদা দেয় ছোটাছুটির দৌরাত্ম্য,

আমাকে মহামহিম দেন শুধু একাকিত্ব!!

উভয়ের কার্যবিধি ভিন্ন ভিন্ন-কিন্তু খোদার উদ্দেশ্য অভিন্ন!! 

কেউ কেউ কর্ম সম্পাদন করে আর কেউ কেউ কর্মের ব্যাখা দেয়। 

উভয়ই প্রয়োজনীয়!  

খোদার খোদায়ী উদ্দেশ্য পূরণের জন্য!! 

মানুষের জন্যে-কারন, স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টি তুমি!! 

তোমারই জন্য তৈরি হয়েছে-

 সংবিধান।

নিয়ম।

কানুন।

অভিধান।

আলাপ।

অপলাপ।

বিধি-বিধান।

ধ্যাণ।

অনন্তর। 

 

খোদার পরীক্ষা।

ঈশ্বর আমাকে অসম্পূর্ণতা দিয়েছেন, আমি তা পূর্ণ করি।

যেমন কয়লা আর ছাঁই এর স্তুপ দিয়ে বললেন,

কাজে লাগাও-আমি তার মধ্যে মুক্তো খুঁজার চেষ্টা করি। 

তারপর, সেই মুক্তোর মালা বানিয়ে-অন্যত্র বিলিয়ে দেই। 

কারন, বিলিয়ে দেয়াই খোদায়ী ধর্ম-ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার উপায়। 

এরপর, খোদা আমাকে নুড়ি পাথর দিলেন এক বস্তা

এবার আমাকে বললেন, দেখাও তোমার মোযেজা-

নিশ্চয় পরীক্ষার পরই আমি তোমাকে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। 

আমি নুড়ি পাথর গুলো নিয়ে ঝর্ণাধারায় গেলাম।

সেগুলো, ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে লাগলাম।

তারপর,সেগুলো ক্রিপ্টোনাইট হয়ে গেল-

আঁধারেও জোনাকের মত জ্বলতে থাকল৷ 

এরপর৷ খোদা অনেক দিন আমার সাথে কথা বলেন নি। 

আমি একা হয়ে যাই।

খোদা নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন ভেবে আমিও তার থেকে দূরে সরে যাই।

আর, মোহকে এবার খোদার দেয়া উপহার ভেবে খুশি হই।

আর,একটার পরেকটা মনভুলানো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

প্রকৃতপক্ষে, এটাও যে খোদার তরফ থেকে একটি পরীক্ষা ছিল,

আমি বুঝতে পারি নাই।

অতঃপর, খোদা নিরুদ্দেশ হোন নি, নিরুদ্দেশ হয়ে যাই আমি-

অবিশ্বাসে-খোদায়ী ক্বলব হতে দূরে সরে যাই আমি বাতেনি আলো হতে

খোদা কখনও হারিয়ে যান না, আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি। 

খোদা কখনও মরেন না, আমরা তাকে ডকট্রিনে মেরে ফেলি।

এরপর- হয়ত খোদার তার প্রিয় বান্দার উপর কিছুটা রহম হলো।

করুণা হলো।

তাই, তিনি তাকে আবার বজ্রপাতের শামিল নুরের আলোকচ্ছটা দেখান। 

বান্দার পাপের মধ্যেই খোদা তাকে চেনান।

খোদা এত রহমান, এত দয়াল!!! 

একদিন বান্দা অনুতপ্ত হয়।

বুঝতে পারে, খোদার পরীক্ষা এখনও সে পাশ করে নি।

খোদার পরীক্ষা এখনও আরো বাকি আছে

এবার, খোদা বান্দাকে একটা তলোয়ার উপহার দিলেন।

বললেন, এটার যথোপযুক্ত ব্যবহার করো। 

আমি খোদার তলোয়ার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখলাম অনেকক্ষণ।

কিন্তু, খোদার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না।

তিনি বললেন, অবিশ্বাসকে কতল করো। 

এবং, আমি সেই তলোয়ার দিয়ে নিজেকেই জখম করলাম-

রক্তের সাথে দেখলাম কালো পুঁজও বের হলো। 

বুঝতে পারলাম, আমার মধ্যেই অবিশ্বাস ছিল

খোদা বাকি অবিশ্বাসটুকু এই তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলতে বললেন। 

মনে মনে যে দ্বন্দ-যে অবিশ্বাস তাকেই ছাঁটাই করতে বলল!! 

অতঃপর, আমি জখম হয়ে যখন মরণের পাণে,

খোদার দিকে পরম মমতায় চোখ তুলে তাকালাম

তখন খোদা বললেন, যাও! বান্দা! তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম!! 

নতুন জীবন ফুঁকে দিলাম-আমৃত্যু অনশন করো।

ক্ষুদাকে চিনো আর ক্ষুদাকে দমন করো!

নিজের এবং অন্যদের-অভাবীদের ক্ষুদা মেটানোর চেষ্টা করো।

 

পারলৌকিক ভালোবাসা।

আমার কাছে ভালবাসা মানে হলো একটি ইবাদত

 খোদার সৃষ্টিকে সম্পূর্ণভাবে জানা।

আগলে রাখা।

তার সত্ত্বার সাথে নিজের সত্ত্বাকে বিলীন করে দেয়া।

যেমনটা, খোদা চান!

আমরা একে অপরে বিলীন হই।

নিমজ্জিত হই।

কিন্তু, নিমজ্জনের মধ্যেও যেন ঈশ্বরকে খুঁজে পাই।সন্ধান করি। 

এবং, আমার বিশ্বাস খোদার কোনো সৃষ্টি খারাপ হতে পারে না।

কারন, প্রতিটা সৃষ্টিতে খোদা তার রুহ শামিল করেছেন। 

নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন-রূপ দিয়েছেন-

হয়তবা নিজের গুনাবলী থেকেও কিছু ধার দিয়েছেন!

তাই, যে পথভ্রষ্ট, সেও ঈশ্বরের সৃষ্টি কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু

সে ঈশ্বরের কৃপা হতে বঞ্চিত। 

শত্রু দ্বারা প্রলোভিত। 

যে শত্রুকে, স্বয়ং খোদা নিষিদ্ধ করেছেন!! 

ঈশ্বর এবং মানবকুলের শত্রু!! 

তাই, সে ঈশ্বরের নুর দেখতে পায় না-

ঈশ্বরের নুরের শরিক হতে পারে না-

অন্ধকারেই তার যাত্রা, অন্ধকারেই রয় তার বাস!! 

সেখানে, খোদার দূতেরা প্রবেশ করতে পারে না

তাই, পথভ্রষ্টরা কখনও প্রকৃত ভালোবাসার সন্ধান পায় না। 

কারন, প্রকৃত ভালোবাসায় ঈশ্বরের রুহ থাকে-

কৃপা থাকে, যা কোনো শয়তানি ভালোবাসায় থাকে না।

 

খোদার ডাক।

আমার খোদাকে আমি ডাকব আমার তরিকায়

কারন খোদার সাথে যে তরিকায় আমার কথা হয়-

তা একান্ত ব্যক্তিগত!! 

তোমার খোদাকে বুলানোর ধরণের সাথে আমার ধরণ

মিলতে নাও পারে-কারন

প্রত্যেকে যার যার ফরিয়াদ-

আর্জি নিয়ে খোদার মুখোমুখি হয়-

তোমার আর আমার আর্জির ধরণ ভিন্ন!! 

আমি পার্থিবেও খোদারে চাই

অপার্থিবেও খোদারে বুলাই

আমি ইহজাগতিক বিষয়েও খোদায়ী চোখ চাই

পারলৌকিক বিষয়গুলো অস্বীকারের উপায় নেই!! 

যা আমার নাই-নিগুঢ রহস্য ভেদ করার ক্ষমতা-

সব তল বিদীর্ণ করার মত অনুসন্ধিৎসু মন- ক্ষনিকে ক্ষনিকে 

যা মোহে আচ্ছন্ন হয়-তেমন মনের হোক অপসারণ!

সেই সাথে, আমি চাই পার্থিব জীবনে অপার্থিব রকমের সফলতা,

খোদার সাথে খোদায়ী বন্ধণের অভিজ্ঞতা

আমি চাই সফলতা--- 

প্রসারণে,ব্যবধানে।

অন্তর্ধানে।

অবগাহনে।

অবদমনে।

সংকোচনে।

সম্মেলনে।

 সহচার্যে। 

কেবল, খোদার!! 

কেবল, পাক আত্মার!! 

কেবল, পরওয়ানার!!

 

 

 

 

ক্যাকটাসেরা কখনও মরে না।

খোদা তোমার ডাকে সাড়া দিতে দেরি হয়ে যায় আমার-

নিতান্ত তুচ্ছ অলস বান্দা আমি-মিনিটে মিনিটে করি গুনাহ!! 

খোদা বিদ্রোহী কারা হয়?!

 তোমার সাথে দ্রোহ করতে করতে অভ্যস্ত

 আমজনতা নাকি?

তোমার দেয়া বিধানের বিরোধিতা করতে করতে 

জীবনের সাথেই স্বয়ং তারা করে বসে বেঈমানি। 

আজীবন লালিত করে দ্রোহের আগুন বুকের মরুভূমিতে,

যেখানে ক্যাকটাস হয়ে ফুঁটতে পারত-খোদাভক্তি ভীষণ অভিলাষে!

অধিক যতনে!! 

সেখানে বাস করতে পারত পরম মমতা

সৃষ্টির সকল জীবের প্রতি!! 

ক্যাকটাস--?!! 

তরুণ, যারপরনাই অবাক হয়। 

হ্যা, তরুণ, ক্যাকটাস

ফুল পচে যায়,

ক্যাকটাস কখনও মরে না। 

চিরঞ্জীব মহীরুহ হয়ে বেঁচে রয় শুষ্ক মরুতে

শুষ্কতার মধ্যেও জমায় শরীরে দয়ার পানি

এতো, যেন খোদার জ্বলন্ত মেহেরবানি!!  

বলো, রব মহামহিম!!

খোদা সর্বব্যাপী,  

দয়ালু, বিচিত্র বড়ই!! 

তাঁর খেল সব আজিব!!

ক্যাকটাসকে আক্রমণ করলেও ক্যাকটাস নির্লিপ্ত থাকে

দুই একটা বাকল ছিঁড়লেও, ক্যাকটাসের কিছু যায় আসে না!!

ক্যাকটাস কখনও মারা যায় না!! 

ক্যাকটাসেরা মরে না!! 

 

নিরুদ্দেশের প্রতি যাত্রা…

মানবশত্রুর সাথে আবার কিসের দরকষাকষি?!  

যে শত্রু সে শত্রুই থাকে যতই থাকুক তার কথা অমৃতের মত

শিরায় শিরায় যে চলতে পারে- চলতে পারে ধমনীতে ধমনীতে-

আলোর বেগে, ন্যানো সেকেন্ডে যে শিহরিত করতে পারে-

বিবেক মন-অন্তর!! 

এমন দ্রুপদী শয়তান হতে সাবধান

যে দৃশ্যমান হয়েও অদৃশ্য অথবা অদৃশ্য হয়েও দৃশ্যমান

এমন, শত্রু থেকে সাবধান-যার সাথে সন্ধি করতে মানা করেছেন প্রভু

যিনি সবখানে আছেন-সকল দৃষ্টিগোচরে অথবা দৃষ্টির অপাশে-

যিনি আছেন প্রত্যেক ক্বলবে ক্বলবে!! 

স্থান, কাল নির্বিশেষে-যিনি চলমান,

ধাবমান, উদীয়মান, অনতিক্রম্য,

পরম্পরাগত নয়, বরং এক পরম সত্য!! 

চূড়ান্ত গন্তব্য- তরুণ, তোমার সেদিকেই যা ছিল পূর্বনির্ধারিত!  

যা চূড়ান্ত-তোমার অস্তিত্বশীল হবার আগে থেকেই এবং যা 

চূড়ান্ত থাকবে তোমার অনস্তিত্বশীল হবার পরেও। 

চির ধাবমান। অনন্তকাল ধরে -ঘূর্ণায়মান। চলমান। 

তরুন, তোমার নিরুদ্দেশের প্রতি যাত্রা কেবল শুরু!!

 

আরাধনা।          

যেটা হারিয়ে আমি খোদাকে পাই

সেটাই তো মহামুল্যবান রত্ন!! 

খোদাও চায়-সব হারিয়ে তুমি তার কাছেই 

প্রত্যাবর্তন করো। 

যা কিছু হারিয়ে তুমি খোদাকে খুঁজে পাও-তা অমুল্য,

তুমি সব হারিয়েছ, কারন প্রাচুর্যের মধ্যে তুমি খোদাকে চিনো না

প্রাচুর্যের মধ্যে অবগাহন করে, তুমি প্রাচুর্যকে খোদা মনে করা শুরু করো। 

ভাবো, এটা তোমার সক্ষমতা! অলৌকিক ক্ষমতা!!

এখন,তুমি সত্য সুন্দর পথের সন্ধান পেয়েছ। 

এবং, তুমি যা কিছু খোদার উদ্দেশ্যে ত্যাগ করবে

প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপরওয়ালা,

দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দিবেন যা কিছু বান্দা তুমি তাঁর তরে হারিয়েছ

বলো, তরুণ, তুমি কি মুনাফার সওদা করবে না খোদার সাথে?! 

নাকি, আত্মাটা ধার দিয়েই দিবে শত্রুর কাছে,যে কিনা মানবগতের চিরশত্রু?! 

ধার দিয়েছ তোমার আত্মাকে কিন্তু বিক্রি করতে পারো নি কখনও,  

তুমি আল্লাহর সৃষ্টি, তার সিফাতের কিছু অংশ রয়েছে তোমার মধ্যেও,

হয়ত সেটা লুপ্ত অথবা ভগ্ন নতুবা শয়তানের প্রশ্রয়ে আচ্ছাদিত। 

ছায়ায় আছে, আলোর অপেক্ষায় তোমার চরিত্র

বিকশিত হবে, উন্মেলিত হবে তোমার নতুন চক্ষু!! 

ভালোবাসার আরাধনা।

মনে রেখ, পৃথিবীতে খোদার তরফ

থেকে সবচেয়ে দামি উপহার-সাচ্চা প্রেম!

ভক্তিময় ভালোবাসা!!

পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে আদিম ইচ্ছা হলো-

ভালোবাসার আরাধনা!

ভালোবাসার কামনা

এজন্যেই যুগের পর যুগ মানুষ করে প্রার্থনা!

একান্ত সাধনা

সাবধান, তরুণ।

ভুল মানুষের সাথে করো না সাধনা। 

তোমার ধারণায় ভুল থাকতে পারে কিন্তু প্রার্থনায়

আরাধনায় ভুল থাকতে পারে না। 

প্রার্থনায় যদি ভুল থাকে তবে বুঝতে হবে

চাওয়ার মধ্যেই ভুল ছিল,আরাধনায় যদি ভুল থাকে

তবে বুঝতে হবে ভালবাসার চর্চায় ভুল ছিল। 

 

 

 

 

 

 

 

আবাদ।

আমার বর্বাদি আমার নিজের মধ্যেই হয়েছে,

কেউ আমাকে বর্বাদ করে নি,

আমার কেয়ামত আমিই দেখেছি,

পরনের চশমা খুলে ফেলেছি৷ অন্ধ আমি,

এখন এক অন্ধ যাযাবর!! 

বর্বাদ হবার পরে উপলব্ধি করলাম,

আমি এমনেক দিগন্ত দেখছি, যাকে ধরা যায় না।

ছোঁয়া যায় না।

সরাসরি কথা বলা যায় না।

শুধু অনুভব করা যায়।

যাকে শুধুই অনুভব করা যায়। 

তাকে অনুভবের দৃষ্টিতে দেখার পর হতে

আমি আর অন্যকিছু দেখতে পাই না অথবা

খুব করে দেখতে পাই সব কিছুর আদ্যোপান্ত।  

অতঃপর আমি বর্বাদ হবার পরে এক নতুন

যাত্রা আরম্ভ করলাম

আমার দুনিয়ায় কেয়ামত হলো।

জগত চূর্ণবিচূর্ণ হবার পরে,

আমি আবিষ্কার করলাম-

বর্বাদ না আবাদ হলাম আমি,

অদৃশ্যমানকে অদৃশ্যভাবে ছোঁয়ার পর

আবাদ হলাম আমি, হলাম অন্ধ।

 

নবজন্ম।

 

আমার মৃত্যুশয্যার মাধ্যমেই জন্ম হলো।

কেবলমাত্র, জন্মিলাম।

সেই সাথে আমার পূর্বের দেহের সাথে দাফন দিলাম-

অন্ধ মোহ, অভিলাষ।

দাফন দিলাম, কামনা-বাসনা-লালসা।

দাফন দিলাম আশা-হতাশা-নিরাশা।

আমার এক নতুন জন্ম হলো।

কারন, আমার এক নতুন প্রেম হলো।

অজানার সাথে প্রেম।

পারলৌকিক প্রেম। 

আমি অচেনাকে চিনলাম।

অজানাকে জানলাম।

অথবা, চেনার চেষ্টা করলাম

কিছুটা জানলাম।

তাঁকে কেউ জানতে পারে না পুরোপুরি।

তাকে, কেউ চিনতে পারে না সরাসরি।

তিনি অস্পৃশ্য, তিনি অদৃশ্য।

বিশ্বাসেই, মেলায় পরিচয়।

আমি অজানাকে জানার চেষ্টা করলাম। 

পুণরুত্থানে আমি বলব, আমি দো-মনা ছিলাম না।

আমি সত্য জানার চেষ্টা করেছিলাম।

আমি, দুই দুয়ারি ছিলাম না অথবা খুব আছি,

দুটো দুয়ারই খোলা রেখেছি।

এক দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করি চেনাজগতে,

আরেক দুয়ার দিয়ে ঢুকে পড়ি অচেনাজগতে অজানাভাবে!! 

আমি কোন দুয়ারে রয়ে যাব চিরকাল?!

তা কে বলতে পারে!

আমি সত্যের দুয়ারে কড়া নাড়ছি-

দুয়ার খোলো কেউ। দুয়ার খোলো। পথ দেখাও।

অন্দরমহলে নিয়ে যাও।

আমি কিছুক্ষণ, সত্যের সাথে আলাপ করতে চাচ্ছি।

 কিছুটা সময় চাচ্ছি। সময় দাও।

 

 

 

অন্ধ কবির জন্ম।

 

আমার আমিত্বকে অতিক্রম

করতে পারলেই আমি মুক্তি পাব।

নির্মোহ হব।

আমার আমিত্বকে হারানো বড় কঠিন

কঠিন পথেই আমার যাত্রা।

কারন, আমার এই আমি এতদিন বহু মিথ্যে স্বপ্ন দেখেছে।

আদতে, সেগুলো স্বপ্ন ছিল না মোহ ছিল।

আমার আমিত্ব মোহকে অতিক্রম করতে পেরেছে। 

আর, সে হতে একজন অন্ধ কবির জন্ম।

সে হতে তার যাত্রা সম্পূর্ণ হলেও অনিশ্চিত।

সে তার ঠিকানা জানে না অথবা খুব করে জানে,

শুধু ঠিকানা পর্যন্ত পৌছানোর অপেক্ষা। 

এক বিস্তর অপেক্ষা!! 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুদিনের মেহমান।

 

দুদিনের মেহমান যাত্রার,

দেহটা স্বল্পদিনের জন্যে ভ্রমণ করে কেবল-

আত্মা চিরমুক্তি খোঁজে ইহকাল। 

দেহ হতে মুক্তি, মন হতে মুক্তি, পরিবেশ হতে মুক্তি

ভূপৃষ্ঠ হতে মুক্তি চায় আত্মা চিরকাল।

কিন্তু, মুক্ত হয়েও ঠিক মুক্ত নয়।

কিছু কথা রেখে যায়।

ফিসফিস করে কথা বলে,

তার রেখে যাওয়া পদচিহ্ন।  

 

মানুষ আজ আছে, কাল নেই

রেখে যায় তার নৈশব্দ পদচিহ্ন। 

অথবা রেখে যায় কিছু কর্ম, কথা এবং আদর্শ।।

স্মৃতিগুলো উপহার হিসেবে তোলা থাক-প্রিয়জনদের জন্য

আজীবন। আমৃত্যু।

 এবং

তারপরও। তারপরও। 

 

শেকড়ের টানে।

 

শেকড়ের টানে প্রাচীনে ফিরে যাও তরুণ

আধুনিকতা বড়ই বেমানান

সবকিছু সৃষ্টি হয় ইতিহাস হবার জন্যে-

অতীতকে অতিক্রম করো।

 

প্রার্থনা করো প্রভু হতে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন,

প্রার্থনা করো তাঁর নিকট তাঁর সৃষ্টির অনাসৃষ্টি হতে

যা তুমি দেখতে পাও না, যা তুমি পবিত্র মনে চিনতে পারো না,

যা তুমি খোলা চোখেও দেখতে পারো না।

অথবা, দেখেও চিনতে পারো না।

জেনেও, বারবার ভুলে যাও।

নিষিদ্ধ পথেই পা বাড়াও।

 

তুমি দেখতে পাও না,

কারন, তোমার খোদায়ী চোখ সকল

মন্দের মধ্যে শুধু ভালো খোঁজে,

সকল পাপের মধ্যে ঠিক পাপ নয়,

পাপের হেতু খোঁজে,সকল বিপথের মধ্যে ত্রাণ নয়,

সঠিক পথের দিশা খোঁজে

 

 

 

 

একটাই পথ হয়। মানুষ সে পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়।

একটাই পথ থাকে। মানুষ সে পথকে বিভক্ত করে। 

একটাই পথ ছিল। মানুষ তা ভুলে গেছে। 

 

বহু পথ অতিক্রম করতে গিয়ে মানুষ বহুমুখী হয়েছে। 

বহুমাত্রিকতা অর্জন করতে গিয়ে মানুষ একত্ববাদ হারিয়েছে। 

 

বহুগামী হতে গিয়ে সৌন্দর্য হারিয়েছ মানুষ তুমি,

যে সুন্দর রূপে তোমাকে গড়া হয়েছিল।

কদর্য হয়েছে তোমার সে চরিত্র যা ঈশ্বরের অনুরুপ গড়া হয়েছিল।

কদর্য হয়েছে তোমার আত্মা, যার মধ্যে খোদা রুহানী আলো ঝলকে দিয়েছিল।

কদর্য হয়ে গিয়েছে, তোমার সত্তা যা আল্লাহর আলোয় আলোকিত হবার কথা ছিল। 

 

তরুন, তুমি এখন বিভক্ত এবং উদ্দীপিত।

তুমি আদতে একজন আসামী, কঠিন দন্ডপ্রাপ্ত। 

 

ঈশ্বর তোমাকে যাচাই করেছেন এবং তুমি জীবনে

এবং তারপরেও, সাজাপ্রাপ্ত।

জেনেবুঝে তুমি অপবিত্র।

অথচ, বাগানের সবচেয়ে সুরভিত ফুল,

তোমার হবার কথা ছিল। 

 

মনের ভাস্কর্য।

 

মনের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেল সৈনিক

যা তুমি গড়েছ,

ভেঙ্গে ফেল সে অথর্ব দৈন্য হীনমন্যতা,

যা তুমি নির্মাণ করেছ।

মনের ভাস্কর তুমি।

মন উভয়ই--কাবা এবং মন্দির!

মনেই বুদ্ধের পবিত্র আসন-প্যাগোডার নিস্তব্ধতা।

মনেই করো হিজরত, বারবার।

মুখ ফিরিয়ে নাও-সকল অসত্য হতে।

হিজরত করো, প্রত্যাবর্তন করো, সকল জুলুম হতে।

মনের সৈনিক কখনও কাবা ভাঙতে পারে না,

কখনও মন্দির ভাঙতে পারে না, কখনও প্যাগোডায় হামলা করে না।

যদি সে জানত, মনের বেঁদীকেই করতে হবে পবিত্র

কিবা গঙ্গা জল কিবা জমজমের পানির সহিত

যদি সে জানত, সবাই এক সমান রক্ত-মাংসে-মানবিকতায়

খোদার বাক্যে

যদি সে জানত, সবাই ভিন্ন শুধুমাত্র মতবাদে-মতবাদ?! 

সেটাও কি, মানুষের তৈরি-পরস্পরের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করার জন্যে!! 

হৃদয়ে সত্যের প্রতিমা স্থাপন করো তরুণ। 

সত্যের কাবায় খোদার নাম জপো। 

 তবে, কোন প্রতিমাকে তুমি স্থান দিচ্ছ-

তা খেয়াল রেখো-মোহের দেবীর পুঁজারি নাকি লোকদেখানো আচার্য,

তাঁর পরিচয়ে সাবধানে থেকো।

মনের ভাস্কর তুমি, তাই উত্তম পলি দিয়ে তার মূর্তি গড়ো। 

ভুলে যেও না, খোদার প্রতিনিধি তুমি

ঈশ্বর তোমাকে সমৃদ্ধির জন্যে পাঠিয়েছেন,

ভেদাভেদ করতে বলেন নি কভু!

 

 

দ্বীপ।

 

দ্বন্দ,সংঘাত,কপটতা এনে দিয়েছে দুর্ভিক্ষ 

ক্ষরা সোনালী মৌসুমের ভরাট জমিনে,

এখন জমিদারি করতে রাজি সবাই,

কেউ আর চাষবাস করে না,

কি লাভ অযথাই খেটে?

যখন সোনালি ধান গুদামে ভরে মহাজনে বিনা ক্লেশে,

একতরফা বিচার,লক্ষ্যহীন মুর্খতা,ছলচাতুরীর 

বোকামো,অতর্কিত হামলা,অগত্যাই শোষন,

কি কারন এর পিছনে?চলো চলে যাই পিছনে।

সময়ের আড়ালে,দৃষ্টির আড়ালে,

নতুনের সমাগমের আগে,

বর্তমানের পুচ্ছ অতীতে,

একটি সময় ছিলো জোঁক রক্ত চুষতে থাকে,

এখন সবাই টোটকা জানে,লবণ হাতে রাখে,

অনাচার আগেও হয়েছিল,এখনও হয়,

পার্থক্য শুধু স্থানে,সময়ে,ভূমিকায়,

কি কারনে বনে এখন পশু দেখা যায় না?

দেখা যায় আমার ঘরের আঙিনায়?

সাদা বকের দল কোথায় উড়ে গেছে?

উত্তরে কি চলে গেছে?

মেঘের ঝিরিঝিরি হাওয়া এখনো বয়,

উত্তাপের ঝড় এখনো ধেয়ে আসে,

রবাহূত ঢেউ এখন নদীর জোয়ারে আসে,

কোথাও ডিঙি ভিড়ানো যায় না,

মাঝি এখন সম্বলহীন তাই নদ ভালোবাসে না,

এমন রোদ্রপ্রতাপ দিনে কেউ ছাতা মেলে না,

কারন,এমনি রুদ্র রোদে,এমনি উত্তাপে,এমনি

কাকমরা বৈশাখে সেও তৃষার্ত হয়েছিল খুব,

জল পায় নি ঢুঁড়ে,

তাই জলের আশা ছেড়ে দিয়ে সমুদ্র গড়ে,

এতই কি সহয সমুদ্র গড়া?সাগরিকা হওয়া?

তাতে কি নেই একফোঁটা পঙ্কিল বালুকনা?

গিয়ে দেখ তাতে ইট-বালি-পাথরের শ্বাসরুদ্ধ কারখানা,

ধুলো কাঁদা জমে জমে এখন দ্বীপ শিলার আস্তানা,

মানুষ এখন গৌরবের জন্য নয়,

প্রতিশোধের জন্য লড়ে;

সেখানে হয় না সূর্য দেখা।

 

দুশমন।

 

আমার দুশমনও আমি,

আমার বন্ধুও আমি, আমার এই আমিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই।

এ যেন এক বিধ্বংসী সৃষ্টি। সবকিছু সৃষ্টি হয় ধ্বংস হওয়ার জন্যে।

এই আমিত্বকে অতিক্রম করাটাই সফলতা। 

সবকিছু ধ্বংস হয় আবার সৃষ্টির জন্য।

অমোঘ খেলায় মেতে উঠে সত্তা।

লম্ফঝম্পে দিন কাটায় অমর সত্তা।

দিকবিদিকশুন্য হয়ে খুঁজতে থাকে ঠিকানা এক অনন্তহীন অরণ্যে,

ছুটতে থাকে সে ফামিয়ন কণার মত অংশ হতে কোনো ফোটন কণার!

এরপর,কোনো একটা কিছুর সাথে যুক্ত হয়ে সে পরিণত হয় বস্তুতে কিন্তু হারায় না সারবত্তা!! 

অনুতেই থাকে সারাংশ, ভাবে সম্প্রসারণ, তরুণ তুমি তার ঠিক কতটা বুঝতে পারলে ?! 

 

পরিণত ভালোবাসা।

 

অপরিণত ভালোবাসা:

আমাকে সবাই ভালোবাসুক, আমি বাসি না।  

পরিণত ভালোবাসা:

আমি ভালোবাসি, এটাই তো আমার জন্য যথেষ্ট।

অন্যের ভালোবাসা তো অন্যেরই, আমার সেতো না।

 

কারণিক।

 

এই যে তীব্র মাথা ব্যথার কারণ যে কারণশুন্যতা

এক নিদারুন কারণিক

অর্ণবের মত শিথিল হোক অদৃশ্য সদৃশতা

লাঘব হোক সকল ক্লেশ-হৃদয় তৃণে যে দুর্বাঘাস এত সবুজ

তা মাড়ায় কোন রুষ্ট পথিক কিসেরই বায়নায়?!

কিসের যন্ত্রণায়?! 

হতাশ তরুণ সাদা মেঘেও রং তুলিতে ব্যথার ছোপ আঁকে,

তারপর সত্তার তালাশিতে নিঁখোজ ব্যক্তি হঠাৎ লোকালয়ে ফিরে আসে। 

কে বলেছে, আলোর রঙ সাদা হয়?!

আলো দৃশ্যমান?! 

আলোর রঙ কালো হয়, অন্ধকারেই তার বসবাস। 

আধারের মত সে অদৃশ্যমান। 

মিলিয়ে যায়ফুরিয়ে যায় সবকিছু

ফুরিয়ে যাবার জন্য। 

আলোকচ্ছটাও কেবল সত্তার বহ্নিপ্রকাশ

অন্ধকারের মধ্যে চলুক সব তালাশ। 

অন্ধ হয়ে যাও তরুণ। অন্ধত্বকে বরণ করে নাও।

একমাত্র অন্ধই চিনে আলোর রুপ,

বুঝতে পারে ভয়াবহ রাতের পর

আলোকপাত কতটা গুরত্বপূর্ণ!  

 

কবিতার ভাষায় কবিতা।

 

খোদা তোমার সাথে আমার কথোপকথনও যেন একেকটি কবিতা,

বুঝি না তুমি কবিতার ভাষা নাকি তোমার ভাষাও একটি কবিতা?! 

অন্তর্নিহিত অর্থ--গভীর,গাঢ়

তরুণ, তুমি প্রতিটা ছন্দের অর্থ খুঁজ।

তোমার স্রষ্টাকে তাঁর ভাষায় খোঁজ করো।

খোদার সাথে বান্দার কথোপকথনে তাঁকে তালাশ করো। 

 

 

 

ঘুড়ির লাটাই।

 

ঘুড়ি উড়ে আসমানে, লাটাই কার হাতে?! 

তরুণ, তুমি ঘুড়ি উড়াও, লাটাই সত্ত্বার হাতে। 

সব সুতো মহান সত্তার কাছে!! 

সুতোর বাঁধন আলগা করেন আবার জোড়া করেন

সব দেনদরবার তাঁর হাতে! তারই, মুষ্টিতে!! 

অথবা, তাঁর আসমানে আমরা একেকটি ঘুড়ি

দিকশুণ্য হয়ে ঘুরি

তিনি যে ঘুড়িতে টান মারেন,

সে ঘুড়ি উড়ে যায় সুউচ্চ স্তরে

তিনি যে ঘুড়ি ছেড়ে দেন তা হারিয়ে যায় অতলে!! 

হাবিয়ার অতলে!

 

 

ফুল ও পাঁপড়ির পৃথক হওয়া…

 

আমার ভাষা তোমাকে কেউ বুঝতে বলে নি,

আমার ভাষায় কথা বলতেও তোমাকে কেউ বলে নি। 

তরুণ, আমি তোমাকে তোমার ভাষায় কথা বলতে বলি

নিজের ভাষায় খোঁজ করো স্বাধীনতা-সত্ত্বার উন্মীলন

অভিগমনকালে অন্তিমে হবে তাঁর সাথে মিলন!!! 

সেটিই প্রকৃত স্বাধীনতা!

সেদিন হবে তুমি সত্যিকার অর্থে মুক্ত।

মহান সত্ত্বার সাথে ঘটবে অভিষেক।

তুমিও হবে সত্ত্বার অংশ।

এখন তার ঝলক মাত্র অথবা ঝলকানির তিলমাত্র!

মহান সত্ত্বার সাথে তোমার অভিসার কেমন হবে তা ঐকান্তিক,

একান্তই তোমার, তুমি তোমার সজ্জা সাজাও ফুলের রেণু দিয়ে!! 

 

ফুল কি তুমি তা জানো?! 

ফুল হলো তুমি আর পাঁপড়িগুলো তোমার কর্ম।

কর্ম হতে পৃথক করো তোমাকে,

যেমনটা পাঁপড়ি পৃথক হয় ফুলের রেণু হতে।

 

 

কাঠগোলাপ

 

তরুণ রোজ বাগানে যায়।

 সবচেয়ে উঁচা গাছটার নিচে দাঁড়ায়।

একটা একটা করে কুড়িয়ে নেয় ঝরে পড়া 'কাঠগোলাপ' গুলারে!

একটা ছোট্ট মাছের একুরিয়ামে সে মাছ না রাইখা ফুলগুলারে সাজায়া রাখে। পরিষ্কার পানিতে 'কাঠগোলাপ' গুলা হাঁস হয়ে ভাসে।

 তরুণ, রোজ বাসি হয়ে যাওয়া ফুলগুলারে তুইলা পাশের ঝুড়িতে ফেলে দেয়।

একদিন তরুণ, উঁচা গাছটার তলায় যায় ফুল কুড়াতে।

 সেদিন সে দেখে, 'কাঠগোলাপ' গুলার হলুদ মিইয়ে গেছে।

কাঠগোলাপের সাদা আর সাদা নাই, লাল হয়ে গেছে।

তরুণ, অবাক হয়ে সে ফুলগুলারে নিয়া একুরিয়ামে রাখে। পরদিন দেখে একটা ফুলও বাসি হয় নাই। লাল লাল 'কাঠগোলাপ' গুলা এখনও রক্তিম লাল হয়ে আছে।

তরুণ একটা ফুল তুইলা আইনা মুখের কাছে নিয়া কয়,

'কে তোমারে খুন করছে?!'

কাঠগোলাপগুলা পাপড়ি দুলাতে দুলাতে বলে,

'মানুষঃ তুমি এবং তোমরা!

 

 

 

 

 মিছেমিছির জগত।

 

"তরুণ, তোমার লালিত দুঃখগুলা কি না জানতে পারলেও,

আশা রাখি শোকগুলোর কষ্টিপাথর একদিন তোমাকে রত্ন বানাবে

 আর তুমি রত্নের মতই কঠিন হবে,

যাকে আর ভাঙ্গা যাবে না।

তরুণ, একটু একটু করে হলেও তোমার দুঃখের বিবরণ দিও,

মিছেমিছির এই জগতটা এখনও পুরোপুরি মিথ্যে হয়ে

যায় নি তো- বিশ্বাসটাও রেখো।"

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 পিছপথ।

 

"পাতাপড়া সুর যেন মিলায়ে না যায় সেজন্য কবিকে দিলাম ডাক,

 নিরাক বিকালে না দেখা পথটাও যেন মিশে যায় চেনা পথের সাথে হয়ত অন্য কোনো দরিয়ায়,

তবুও, না দেখার,

না মেলার অসুখে,

পথিকের যেন কষ্ট না হয় খুব!

 

পিছপথের গান ছেড়ে কবিও সামনের পথে মোকামে পৌছাক,

একমাথার ইতিহাস ভুলে নতুন ইতিহাসে গড়াক।

আড়ালের দর্শক যেন সামনেও আসে,

সামনাসামনি কিছু কথার বুঁনন হোক না-দেখা পথে!

সে পথের অবস্থা যেন বা শেষ হইয়াও হইল না শেষ!"

 

 

 

 

 

দেশকে ধম্মের উপ্রে জায়গা দিছিলাম বইলা......!

 

"খোদা আমারে হাসরের ময়দানে যদি জিজ্ঞেস কইরা বসে,

কেমন ধার্মিক তুমি?!

-ইহকালে তার প্রমাণ দেখাইতে পারলা না!

--আমি ঈশ্বরকে পালটা যুক্তি দেখায়া বইলা দিব,

'আমি দেশকে বাইছা লইছিলাম, ধম্মের উপ্রে,

আমারে পারলে মাফ কইরা দিও,

আমি দেশের উপ্রে আর কিছুরে রাখতে পারি নাই।'

-কিন্তু, ঈশ্বর হয়ত আমাকে ক্ষমা করবেন না,

খোদা বান্দার যুক্তি পছন্দ করেন না!

 

কিন্তু, তবুও আমি খোদার জজকোর্টে বইলা গেলাম,

"হে খোদা, দুনিয়াটারে তুমি এমন বানাইছ ক্যান

যদি প্রশ্ন করি তবে কইতে হয় এসব তোমার লীলা!

তুমি আমারে দোটানায় না ফেললেও পারতা!

আমি মানুষ, আমারে বাছতে হয়,

 তুমি খোদা তোমার বাছনের দরকার পড়ে না!"

 

 

স্বেচ্ছা নির্বাসন।

 

"আদর্শিক ব্যক্তিরা তাদের আদর্শের কারাগারে স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব গ্রহন করেন।

নিজেদের গড়া আদর্শে নিজেরা শহীদ হয়া যান;

আর নিজেদেরই বীরের খেতাব দেন।

স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে না।"

 

 

প্রেম অসামাজিক।

 

প্রেম হইলো গিয়া দ্বিপাক্ষিক তরুণ-অসামাজিক।

প্রেমের ভিতরে সমাজ ঢুইকা গেলে প্রেম ফুঁস কইরা উড়ে যায়।

প্রেমিক দুজন হয়া যায় অচিন তখন,

প্রেম কারে কয় তারা চিনে না।

 

--প্রেম হইলো গিয়া অসামাজিকদের জন্য

যারা সামাজিকতার বালাই মানে না।

 

--প্রেমকে যদি সামাজিক বানাতে চাও তরুণ,

 তবে প্রেম একখান প্রতিষ্ঠান বনে যাইব কিন্তু

প্রেমটা মাঝখান দিয়া হারায়া যাইবে, টের পাবা না!

 

--সামাজিক প্রেম বইলা কিছু নাই, সেসব ভন্ডামি,

ভন্ডরা অসামাজিকভাবে প্রেম কইরা সাধু সাজে

 আর সামাজিকতার বুলি কপচায়,

আদতে সামাজিকতা মানেই তো একরুপ ভন্ডামি,

দেখাদেখি আর দেখানোর কারবার!

 

-- ভন্ড হইলেও দোষ কি তাতে,

 আমরা ভন্ডদের বেশি পছন্দ করি,

তাদের গীত গাই আসরে আসরে,

নিজেরা শুদ্ধভাবে ভন্ড হইতে চাই বলে!

 

জবানবন্দি।

 

"টিকে থাকা কঠিন যখন অসময়েী।

জ্ঞানের বিভ্রম ছড়ায় মানুষ বিভিন্ন কারনে।

--টিকে থাকা কঠিন যখন অসময়ে,

জ্ঞান-বিজ্ঞান-অবিজ্ঞানের তফাতটুকু করবার প্রয়োজন

মিটে যায় মৌলিক প্রয়োজনীয়তার জন্যে!

 

টিকে থাকা কঠিন যখন অসময়ে,

 মুখোসের উপর মুখোস পরে;

 বিবর্ণ হতে থাকে ফেনিল সমুদ্রপিঠ।

সূর্যের দিকে উল্টায়া রাখলে মুখ, সূর্য কি নাই হইয়া যায়?!

-কই, যায় নাতো!

তবুও, কিছু কিছু সময়ে সূর্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে হয়-

শুধুমাত্র বেঁচে থাকবার তাগিদে!

 

দাম।

 

তরুন, তুমি কি ভুলে যাও,

কি করে টাকা আর সেই টাকা দিয়ে কেনা রোভার দিয়ে

 তোমার জীবনের সন্তুষ্টি মাপা হয় লোক দর্পনে?

বস্তুত, আমরা বস্তুকেই আপন সত্ত্বা ভেবে বসি,

 টেবিল, চেয়ার, সোফা সেটও এর ব্যতিক্রম নয়।

 কি দামি কিবা কম দামী।

দাম দিয়ে আমরা স্টেটাস কিনি, কার চেয়ে কে বড় বেশি!

ব্যতিক্রম নয়, ঘরের টাইলস আর রঙচঙা ফুলের বাহারে সাজানো সীসার ব্যালকনি।

আমরা, বস্তুতে রুহ ফুঁকে দেই,

 বস্তু আমাদের 'কর্ত-সত্ত্বানির্ধারণ করে দেয়।

খুব সুন্দর সমীকরণ, তরুণ,

 তাই নয় কি?

বস্তুর কর্তৃত্বে মানব।

 

বস্তুরও একটা কর্তৃত্ব আছে,

বস্তুকে ব্যবহার করারও একটা নির্দিষ্ট তরিকা আছে।

আধুনিক মানুষকে বস্তুই বলে দেয় প্রণালী,

 কোথায় কিভাবে কখন কি করতে হবে!

আফসোস, কতটা স্বেচ্ছাচারী,

একইসঙ্গে পরাধীন আধুনিক মানব।

প্রযুক্তি বিনে সে চলতে জানে না এক মুহুর্ত!

 

 

 আত্মসমালোচনা

 

"অন্যের করা প্রশংসা কতখানি আসল

 কতখানি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আর কতখানি উপকারি,

 তা একমাত্র সময় বলে দিতে পারে।

 কারন, সময়তে সব প্রাগৈতিহাসিক মুখোস খসে পড়ে।"

-তরুণ, কখনও প্রশংসার জোয়ারে ভাসবা না।

কখনও উৎসাহী হয়ে যাচ্ছেতাই কারবার করবা না।

 নিজের সমালোচক হয়ে সবসময় নিজের কাজের সমালোচনা করো,

দেখ, তাতে রয়ে গেছে কি কোনো ফাঁক, রয়ে গেছে কি কোনো ত্রুটি।

 

-- "মানুষ আছেই সমালোচনা করবার জন্যে,

এখন আমিও যদি করি নিজের সমালোচনা,

 তবে আত্মবিশ্বাসটা রইবে কোথায়?!"

--আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করো।

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যেই বলছি যাতে তোমার কর্মের যৌক্তিকতার

 জন্যে অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়।

খোদের 'বিবেককে' দায় করো।

 নিজের কাজকারবার সমালোচকের নেতি দৃষ্টিতে দেখ।

তবেই তুমি সুযোগ পাবে সংশোধনের!

তবেই তুমি নিজেকে শুধরাতে পারবে আর হবে এক 'পরিবর্তিত সম্পূর্ণ সংস্করণঅপরের করা আলোচনায় আর সমালোচনায় ফাঁক রয়ে যায় কিন্তু,

নিজের অন্তর্দৃষ্টির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুই লুকোনো থাকে না।

--কেউ কেউ তোমার আলোচনা করবে বন্ধুবেশে শত্রু হয়ে,

কেউ কেউ তোমার সমালোচনা করবে শত্রু হয়ে বন্ধুবেশে।

তাই, তোমাকে বেছে নিতে হবে, কে বা কারা কেনইবা সঠিক।

আর,বুঝতে পারবে কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তোমার কাছে আসছে।

--আর, সবচেয়ে ভালো হয়, যদি নিজেকে তোমার বন্ধুরূপে ভাবো আর বন্ধুর পথে কর্ম করে যাও-- তোমার কর্ম কথা বলবে।

তুমি কিছু না বললেও তখন চলবে- কথা নানী বলেছিলো।

তরুণ, সব শোনার পরে হাই তুলে। তারপর, ফেসবুক স্টেটাসে কে কয়টা রিয়েক্ট দেয় তা গুনতে থাকল। কান্ড দেখে নানী হাসতে থাকে আর আনমনে বলতে থাকে টগবগে তরুণেরা ভুল করেই তবে শিখবে।

 

 

সমাজ।

 

"যে সমাজ তোমাকে গড়ে সে সমাজই তোমাকে ভাঙ্গে,

তাই সমাজের ভরসায় থাকা অতি উৎসুক জনতা সামাজিক ডামাডোলে ধামাচাপা খেয়ে তন্দ্রাঘোরে যায় উচ্ছন্নে। 

-তাহলে কি সমাজকে পাত্তা দিব না?! কোনো ভয় পাব না?!

তেজী বৃদ্ধা বললেন, "আজকে সমাজের কাছে যা ভালো তাই কাল বিতর্কিত, আজকে যা সমালোচিত তাই হবে একদিন খুব আলোচিত। সমাজের ভরসায় না থেকে নিজের উপরে ভরসা করো- তুমি জানো তুমি কি করেছ-কি করছ-কি করবে এবং তোমার কি করণীয়!"

--তবুও, নিজের মত হতে যে ভয় করে!! লোকে যে অনেক কিছু বলে।

--নিজের মত হতে ভয় পাইলে তুমি অন্যদের মত হয়ে যাবে আর অন্যদের মত হয়ে গেলে তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবে।

আর, লোকের কথা শুনলে আজীবনই লোকের কথা শুনতে থাকবে-লোকজন কখন কোন কালে কথা বলে নি-সেটা বের করে দেখাও।

যারা তোমাকে নিয়ে বানোয়াট বাখোয়াজ বলে, তাদেরকে নিয়েও লোকে কথা বলে।

--তুমি নিশ্চিত থেকো। সত্যের জয় হবে। সত্যবাদী থাকো। আগে নিজের সাথে, তারপর প্রিয়জনদের কাছে, এরপরে সমাজের কাছে সৎ হও।

তারা, তোমার কিছু সত্য চিনবে, কিছু চিনবে না।

তাতেই বা কি যায় আসে!

-কিন্তু, সত্য ঢাকা পড়ে যায় মুখরোচক মিথ্যার আড়ালে! সত্য জানার মত প্রজ্ঞা কয়জনের থাকে!

-যারা বুঝার তারা বুঝবে আর এতো বুঝিয়েই বা কি করবে?! সব মানুষকে কি সবসময় যায় বুঝা?! সবাইকে কি যায় চেনা?!

নিজের কিছু অংশ রেখে দাও কালের গর্ভে। কিছু অংশ রেখে দাও অন্যদের মাতামাতি করবার জন্যে।

কারন, তুমি না চাইলেও কিছু কিছু লোক তোমাকে নিয়ে এমনিতেও গরু খোঁজা গবেষণা করবে!

 

 

পুরুষ।

 

"প্রত্যেকটা পুরুষকে ছিঁড়েখুঁড়ে খায় প্রত্যেকটা নারী,

তারপর বলে, পুরুষ সুবিধাবাদী!

ইতিহাস আর গনমাধ্যম সত্য বলে না,

ঘরে ঘরে প্রত্যেকটা ঘর গড়ে দেয় একেকজন পুরুষ-যারা অক্লান্ত পরিশ্রমী!

কে বলেছে নারীর মাধ্যমে সম্পর্কের সুঁতো জোড়া দেয়া হয়-আদিম হইতে সম্পর্ক জোড়া লাগায় পুরুষ।

পরিবার, বংশ, সমাজ, রাষ্ট্র গড়ার একনায়ক স্বপ্ন সর্বপ্রথম দেখেছিল পুরুষ!

 

রাতের বিভীষিকা।

 

"প্রত্যেক বিভীষিকাময় রাতের পরে নতুন ভোর শুরু হয়।

 ধুঁকে ধুঁকে কাঁতরানোর পরে গুমরে উঠা কান্নাগুলা স্বর পায়।

কান্নারও একটা স্বর আছে- জানো তো, তরুণ!

-কান্নারও একটা নিজস্ব সময় আছে। আছে শিডিউল।

ঘড়ি ধরে ঠিক বারোটার পরে প্রত্যেক রাতে

গুলিয়ে আসে কান্নাগুলো মানবিক প্রেতাত্মা হয়ে!"

'জোরে জোরে শব্দ করে-গ্রাস করে পূর্ব-পশ্চিম।'

 

 

 

 

 

 

 

 

আইডিওলজিক্যাল এপারেটাস।

 

"প্রত্যেকটা মানুষ লুকিয়ে রাখে তার ভেতরে একেকটা 'আইডিওলজিক্যাল এপারেটাস'!

নিজের গড়া আইডলজিতেই আটকে থাকে মানুষ আর আটকায়া রাখতে চায় অন্যদেরও!"

"বিভ্রান্তিকর এক এপারেটাস!"

 

 

 

ব্যর্থ।

 

"আমি ব্যর্থ হতে চাই।

ব্যর্থ হতে হতে একদিন একেবারের জন্য সফল হয়ে যাব।

আমি ব্যর্থ হতে চাই,

তখন,ব্যর্থতা থেকে উত্থান-পতনের গল্প বলতে পারব!"

 

 

 অভাব।

 

"খাবারের অভাব নাই যাদের ভালোবাসার অভাবে তারা মরে যায়।

ভালোবাসার অভাব নাই যাদের তারাও ভাতের কষ্ট পায়!

কখনও কখনও, ভাতের কষ্ট ভালোবাসাগুলাকে মেরে ফেলে!

কখনও কখনও, মৌলিক অভাবগুলো ভালোবাসার টুটি চেপে ধরে। "

এর থেকে রক্ষার কোনো উপায় নেই।

 

 

রুসওয়াহি।

 

" তোমাকে আমার দুঃখের কথা বললাম,

তুমি সারা বাজারে তা ছড়ায়া দিলা।

আমাকে বাজারি বানাতে চাইলা।

-এখন আমি মাইক হাতে নিলাম।

মাইকিং করেই যাচ্ছি-হাটে,বাজারে, অলিতে গলিতে।

আমার দুঃখের বিলি আমি নিজেই করি,

কারুর ঠাট্টা তামাশা

আর করা লাগবে না!

তুমি জেনে খুব অবাক হবে,

আমার রুসওয়াহির পরেও আমি ঠিক আছি। 

 

 

ফ্রয়েডিয় কবিতা।

 

"ক্ষয় হয়ে যাবার পরে আসে জয়,

যে জয় ক্ষয় চায় তার প্রেক্ষাপট কি?!"

-- মহাবিশ্বের প্রত্যেক বস্তুতে, প্রত্যেক কানুনে, প্রত্যেক সম্পর্কে দুটা চক্র থাকে- এক. সঞ্জীবনী শক্তি। দুই.মৃত্যু শক্তি।

সঞ্জীবনী শক্তি চায় সব ধারায় সব প্রাণী, ব্যক্তি, বস্তু আনন্দে মেতে উঠুক। নতুন কিছু উদ্ভাবন করুক- নতুন সম্পর্কে জড়াক- দুইটি অধরায় জোড়া লাগুক এবার।

--আর, মৃত্যুশক্তি চায় প্রত্যেক প্রানী, ব্যক্তি, বস্তু ক্ষয়ে যাক। ক্ষয়ে যেতে যেতে আদিতে মিলিত হোক যেখানে যখন সবাই শুণ্য ছিল। পরম আনন্দের সাথে -সাগরের কল্লোলের সাথে-অসীমে- বিভেদ ভুলে যাওয়া।কোনো পার্থক্য তৈরি না করতে পারা নিগুঢ গাঢ অন্ধকারে ডুবে যাওয়া। গভীর হতে আরো গভীরে সবকিছু পৌছে যাক- সৃষ্টির মূলে পৌছে যাক যখন কিছু ছিল না, কিছু তৈরি হয় নি।

 সেখানে, চিন্মাত্মার সাথে মিলিয়ে যাক- বিশ্বধরায় যা চিরসত্য।

-আর এভাবেই, মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষ নতুন জীবন পায়।মূলে ফিরে পুনরুজ্জীবিত হয় প্রত্যেক আত্মা। আর এভাবেই, মরনের পরে সীমিত মানুষ অসীম হয়ে যায় যেখানে ছিল না কোনো বিভেদকারী জ্ঞান বা জ্ঞানের প্রেতাত্মা!

-তাই, ক্ষয়ের পরে মানুষের জয় হয়। মরণের পরে আপন শক্তিতে মানুষ পুনরুজ্জীবিত হয়।মৃত্যুই চূড়ান্ত গন্তব্য-তাই পবিত্র শক্তি উপস্থিত থাকে সৃষ্টিজগতের সকল সৃষ্টিতে।

-- মৃত্যু হলো এমন ক্ষয়, যার কোনো ক্ষয় থাকে না। এমনেক যাত্রা যার কোনও অন্তিম লক্ষ্য থাকে না।

"এমন ক্ষয় তো আসলেই এক বিরাট জয়। তবুও, মানতে নারাজ সঞ্জীবনী শক্তিতে বিশ্বাস করা বান্দাগুলা, চির অমর হবার বাসনায় চেষ্টা করে যায় তবুও অমর হতে পারে না......!!"

 

 

 

 

দুঃখের সাথে প্রেম।

 

"কিছু কিছু মানুষের মুখটা কেমন জানি সবসময় হাসি খুশি থাকে।

দূর থেকে দেখলেই কেন জানি স্নিগ্ধ হাসি ছুঁড়ে দেয়।

 অথচ, কাছে আসলে দেখা যায় তাদের চোখ দুটি ছলছল করে।"

তরুণ, তুমি নাকি আমার চোখের প্রেমে পড়েছিলে।

তাহলে কি তুমি আমার দুঃখ চিনতে পেরেছিলে?!

" হয়তবা, জানি না।আমি তোমার দুঃখের প্রেমে পড়েছিলাম।

সেই দুঃখ, আজও আমি বয়ে বেড়াচ্ছি "

 

 

অবিশ্বাস।

 

তরুন, মাঝেমধ্যে মানুষের কাছে নিজের দুঃখ কষ্ট জাহির করবা, বুঝলা!

-- তা, কোন সুখে?! ভূতে কামড়াইছে?!

-- দরকার আছে।

 দেখবা একশ্রেণীর লোক তোমার দুঃখ কষ্টে বহুত মজা পাইতেছে,

দেদারসে শো অফ করা শুরু করে দিছে,

 দেখাইবে কত সুখে আছে তারা, কত ভাগ্যবান, খোদা তাদের সব দিছে!

আরেক শ্রেণীর লোক তোমারে সহানুভূতি দেখানোর নাম করে ফায়দা লুটতে আসছে৷

আবার, আরেকশ্রেণীর লোক ভাবুক হইয়া তোমার থেকে আসল কাহিনি উদ্ধার করতে চাইবে। এই শ্রেণীর লক্ষ্য হইলো গিয়ে, তোমার জ্ঞানের থাল হতে বিনা কায়েসে লোকমা তুলে খাওয়া।

-- হয়। বুচ্ছি। তয়, এইসব বুঝে করবটা কি?! আমার উপকারটা হইলো কোন দিক দিয়া, কও দেখি!

-- মানুষ চিনা। মানুষ যে কত জাতের, কত প্রকারের, কত কিসিমের, কত ধরণের,

তা চিহ্নিত করতে পারা।

" বুইঝা গেছি। তো, এত মানুষ চিনলে, মানুষের উপর থিকা বিশ্বাস উঠে যাইব না?!"

 

--" যাক গে! গোল্লায় যাক সব বিশ্বাস!

মানুষ হইতে হইলে, সবার আগে এই মানুষ নামের অমানুষ গুলান থাইকা বিশ্বাস উঠানো লাগে!"

 

--ওমা!! তাই, নাকি?!

 

--" হো, বাপ! কত ভুল মানুষের উপরে বিশ্বাস কইরা গড়ে উঠছে কত নীতি, কত বিশ্বাস, কত বিধি বিধান, কত সমাজ কত কালে ধ্বংস হইছে এভাবেই অনির্বাণ! "

 

 

ফটোগ্রাফ।

 

কেউ যদি বলে তার নির্জনতা পছন্দ তাহলে কি বুঝবা, তরুণ?!

" সে একাকি থাকতে চায়। মানুষকে তার খুবেকটা পছন্দ না হয়তবা!"

-নারে পাগলা!

মানুষ যখন অন্য মানুষের সামনে হাসি খুশি থাকার

অভিনয় করতে পারে না তখন সে একা থাকতে চায়।

এরপর, ভাঙা টুকরাগুলাকে একত্র করে,

কিছুদিন নিজের মত নিজেকে জোড়া দিয়ে মানুষের

 সামনে হাজির করে জোড়াতালি দেয়া পোষাকের মত নিজেকে!

"তাহলে, কি মানুষ সাময়িক একা থাকতে চায়?!"

-নির্ভর করে। কেউ কেউ অভিনয়তে বড় পারদর্শী হয়।

 এরা, রোজ অভিনয় করতে জানে।

আর, কেউ কেউ অভিনয়তে কাঁচা হয়,

তারা অন্যের সামনে অভিনয় করতে পারে না বলে একা থাকতে চায়,

 চিরকাল একা রয়ে যায়।

 

"তাহলে কি তাদের কেউ ভালোবাসে না?! কেন তারা একা থাকে?!"

 

-ভালো কমবেশি সবাই বাসে রে পাগলা! মানুষ কি ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারে?!

এরাও, কাউকে না কাউকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু, আফসোস!

এরা, যাদের খুব ভালোবেসেছিল, তারাই তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।

"ইশ! মানুষের কি ক্ষয়!"

-ক্ষয় না! হয়ত, জয়!

 তারা, অন্যের না হয়ে অন্তত নিজের হতে পেরেছিল যা পাক্কা অভিনেতারা কখনও পারে নি।

এরা না নিজেদের হতে পারে,না পুরোপুরি অপরের হতে পারে,

 অভিনয় করতে করতেই তারা মুখোশের আড়ালে মুখ লুকিয়ে এক জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। তাদেরকে আমরা বাহ বাহ দিয়ে কি বলি জানো?!

- সফল মানুষ?!

-নাহ! সুখী মানুষ!

অধিকাংশ সুখী মানুষই সুখে থাকার অভিনয় করে।

তাদের সুখ আটকে থাকে এক চিলতে হাসির ফটোগ্রাফে।

সে ফটোগ্রাফ তারা ঘরের কোণে টাঙিয়ে রাখে নতুবা ঝুলিয়ে রাখে কোনো জনমানবহীন ঘরে। কেউ কেউ শখ করে সে ফটোখানা ইন্সটাগ্রামেও ছাড়ে!

হায় রে, মানুষ!

সুখে নাই সে অথচ লোকদেখানো আচার আর মিথ্যে অহমের জন্য

কখনও বলতে শিখে নি, কষ্টে আছে!

 

 

শোক।

 

" কিছু কিছু শোক কখনও মরে না।

সেগুলো ব্যক্তির চলনে, বলনে, গড়নে প্রকাশ পায়।

সজোরে চিৎকার করে।

 কিছু কিছু শোক কখনও পুরোনো হয় না-সেগুলো আত্মস্থ হয়ে যায়।

কিছু কিছু শোক ব্যক্তির ভেতর আজীবন রয়ে যায়-লালন করে,

 কারন শোকটা তখন ব্যক্তির চরিত্র হয়ে যায়।"

 

 

ভয়।

 

একটা অনিশ্চিত জীবনের ভয় সবসময় তাড়া করে।

ব্যক্তি যখন জেনে যায় সময় অনিশ্চিত এবং সবকিছু আপেক্ষিক,

তখন সে কেবলি অনিশ্চয়তার ভয় পায়!

নিশ্চিন্ত হতে হতে সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়-অনিশ্চয়তার ধরায়,

হায় রে মানুষ!

বিষয়বস্তু না বুঝেই সবাই শুধু নিশ্চিত হতে চায়!

 

 

 

 

কষ্টিপাথর।

 

তুমি আমাকে আমার অভাবের সাথে পরিচয় করায়ে আরো অভাবী করে তুললা!

এবং, কোনো এক পথ শেষ না হওয়া সীমাহীন পথে হাঁটার সময়,

একদিন তুমি আমাকে বলেছিলে,

"তোমাকে সবসময় শুধু কষ্ট দেয়া দরকার!"

আমি বললাম, তাই নাকি?!

কষ্ট দিয়ে দেখই না,

যায় কিনা আমাকে আর কষ্ট দেয়া!

আমার এখন কিছুই অনুভব হয় না।

আমি কষ্টের কষ্টিপাথর। কষ্টের লালিত সুখ।

কষ্ট আমাকে ভালোবাসে- তাই ছেড়ে যায় না!

তাই, আমার প্রিয় শখ এবং সখী-

কষ্টকে কখনও কষ্ট বলে মনে হয় না!

আর, আমিও শিখে গেছি কষ্টের সঙ্গে বাস করা,

আমাকে আর কি কষ্ট চেনাবে?!

কষ্ট আমাকে ভালো করেই চেনে। আমি তাকে।

তুমি হয়ত জানো না,

 কিছু কিছু মানুষ সুখ কি সেটাই চেনে না।

তাই হয়ত,তাদের 'সুখ সুখ' বলে সুখের এত চাহিদা থাকে না।

তুমি বরং, তাদের কষ্ট দেবার কথা ভাবো,

 যারা কখনও কষ্টের জমিনে পা রাখে নি।যারা কষ্ট চেনে না।

কষ্ট পেয়ে তারা মুষড়িয়ে যাবে, আমি মোচড়াব না।

 

 

বিশ্বাসভঙ্গের দায়।

 

বিশ্বাসভঙ্গের দায় বড় পাপ,

তরুণ, দায় মাথায় নিয়ে তুমি মরতে পারো না!

কারুর বিশ্বাস ভেঙ্গে,

 নিশ্চিন্ত জীবন যাপনে ব্যস্ত তুমি ভুলে যেও না,

 কাউ না কাউকে তুমিও বিশ্বাস করো চোখ বুঁজে।

বিশ্বাস ভাঙ্গার দায় চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।

আজ তুমি কারুর বিশ্বাস ভেঙ্গেছ কাল তোমারটাও

কেউ না কেউ অবশ্যই ভাঙ্গবে!

 

 

 

মায়া।

 

ভালবাসা হইলো গিয়ে আপেক্ষিক বিষয়।

ভালোবাসা মরে যায়।কিন্তু, মায়া চিরস্থায়ী হয়।

আর, মায়া চিরস্থায়ী হয় কেন জানো তরুন?!

কারন, মায়া বাড়ে নির্ভরতায়!

আর, নির্ভরতা নির্ভর করে কিসের উপর বলতে পারো?!

অনেকক্ষণ ভেবে তরুণ উত্তর দিল,

 অর্থে?! ক্ষমতায়?! কানুনে?!

তেজী বৃদ্ধা হেসে বললেন, নারে পাগলা, বিশ্বস্ততায়!

একমাত্র বিশ্বস্তরা নির্ভীকভাবে ভালোবাসতে জানে।৷ একমাত্র বিশ্বস্তরাই নিঃস্বার্থভাবে মানুশকে আপন করে নিতে পারে।

তরুন খানিক মাথা চুলকে বৃদ্ধাকে পুছল, তাহলে, বিশ্বস্ত লোক চিনব কি করে?!

-তারা, তোমার ভালো রূপ, মন্দ রূপ দেখার পরেও তোমার সঙ্গে থাকে। তোমার খারাপ কথা কাউকে বলে না, আর তোমার ভালোকে আরো ভালোভাবে প্রকাশ করতে সহায়তা করে।

বিশ্বস্তরা কখনও তোমাকে যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ছেড়ে যাবে না। তুমি বিপদে পড়লে, তারাও তোমার সঙ্গে বিপদে পড়তে চাইবে তবুও তোমাকে ছাড়বে না।

বিশ্বস্তরা কখনও তোমাকে সন্দেহ করবে না। কারন, তারা মুখোসের আড়ালে মুখটা তোমার দেখেছে। তারা, জানে ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষ হয় তবুও তারা তোমাকে পছন্দ করবে।

আর, বিশ্বস্তরা সবসময় তোমার ভালো চাইবে। তোমাকে ভালো রাখার জন্যে তারা সব করতে পারে।

তরুন বলল, তাহলে, ভালবাসার চেয়ে কি বিশ্বস্ততা ভালো নয়?!

বৃদ্ধা বললেন, ভালোবাসা উবে গেলেও বিশ্বাস কখনও মরে না। ভালোবাসার সম্পর্কগুলোতে ভালোবাসা আর না থাকলেও, বিশ্বাস রয়ে যায়।বিশ্বাস যেদিন উঠে যায় ভালোবাসাও সেদিন মরে যায়। মরে যেতে হয়। কাফন পরিয়ে দিতে হয় প্রেমকে।

 তাই, ভালোবাসার রং ফিকে হয়ে আসলেও বিশ্বাসের রঙ কখনও উঠে না।

"তাহলে, ভালোবাসাই কি বিশ্বস্ততা আর বিশ্বস্ততাই প্রেম?!"

উত্তরে, তেজি বৃদ্ধা কিছু না বলে দূর শূন্যের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

 সিলিংয়ে একটা ফড়িং বসে আছে,

পাখার ঝাপটানিতে উনি তার উড়া দেখতে লাগলেন।

 

শূণ্য।

 

তুমি শূণ্য ছিলে, শূণ্যতেই মিলিয়ে যাবে।

তরুন, এক মহাশূন্যে অবস্থান করে তুমি কিভাবে জাগতিক চিন্তাভাবনা করো

 যখন শূণ্য বিন্দু হতেই তোমার আগমন হয়েছে অন্ধকার গুহা হতে?!

আলোর দিকে যাত্রা?!

এটাই, সবচেয়ে বড় মিথ, একটা মিথ্যা কথা! তুমি এগিয়ে যাচ্ছ ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে-শূণ্যস্থানে শূণ্য হবার তরে জীবন নদীতে সাঁতরে বেড়াচ্ছ ক্ষনিকের আনন্দ উল্লাস, সৃজন আর কর্ম উদযাপনের জন্যে।

বিরাগী সময়।

কিছু সময় আসে এমনি শুধুই মাতাল করবার জন্যে,

কিছু সময় আসে এমনও শুধু শুধু অস্থির করবার জন্যে।

অস্থির সময়ে অস্থির চিত্তের গান মুগ্ধ করে কাক, চিল আর কোকিলকে।

বিরাগী প্যাচা শুধু অন্ধকারে শুনে হালুম-মানুষগুলো যখন মুনাফার হালুয়া লুটে!

 

বিনিদ্র রাত।

কত কত রাত জেগে রই শুধু জেগে থাকার তরে বুঝাতে চাই-বেঁচে আছি এখনও জীবন্মৃত হয়ে জীবিতদের ভীড়ে!

কত কত রাত নোনা চোখে দেখি পুরোনো দৃশ্যপটটা,

একটা সমুদ্র সৈকত, ঢেউ আর ঢেউয়ের সাথে খেলতে থাকে খেলনা হাতে বালিকা।

ক্রমশ, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ঝাপসা হয়ে আসে স্বপ্নটা।

ঝাপসা হয়ে আসে চোখও- মিলিত হয় নেশাতুর রমণে-যা কখনও ঘটে নি অথচ ঘটতে পারত,যা ঘটেছে তা না ঘটলেও পারত,

উন্মাতাল সময়ে বিবেকের দংশনে হইলেও হইতে পারত যা হয় নি কখনও!

 

 

 

 

 

 

 ছোট্ট কাঠবিড়ালি।

 

তোমার অনুপস্থিতি তোমাকে করেছে মহান।

জানবে প্রত্যেকটা ইট, প্রত্যেকটা বালি, প্রত্যেক সিমেন্ট, প্রত্যেক পাথর,

তোমাকে ছাড়া ঘর; ঘর লাগে না আর!

তোমার অনুপস্থিতি করেছে আমাকে এক নিবিড় দুঃখী অভিযাত্রী,

জানবে প্রত্যেক ফুল, প্রত্যেক গাছ, প্রত্যেক পাখী,

আর হরেক রকমের মেঘ আসমানি,

তোমাকে বিনা জীবন কখনও উপভোগ করতে শিখে নি

ছোট্ট কাঠবিড়ালি!

 

জানবে পায়ের নিচে মাড়িয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘাসফুল,

বড় বড় করে পা ফেলে যাওয়া পথিকটির বুকে জমাট বাঁধা কষ্ট,

উজাড় করে নিগড়ে দিচ্ছে প্রত্যেক কর্কশ পদধ্বনি! 

জানান দিচ্ছে এক অসম ব্যথার চাপা দীর্ঘশ্বাসের বানী-

ভাল নেই ছোট্ট কাঠবিড়ালি।

 

সময়।

 

তরুন বলল, আমি সবসময় সময় থেকে এগিয়ে ছিলাম কিন্তু সময় আমাকে বলল, একটু অপেক্ষা করো।

সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা ধ্রব সত্যও, সময়ের অধীন।

সময়তে সব গুরত্ব পায়, সময়তে সব লোপাট হয়।

সময়তে সব প্রকাশিত হয়।

সময়তে সব হারিয়ে যায়।

সবকিছু হয় কিন্তু সময়ের কাছে হেরে যাবার পর।

সময়কে জিতে যেতে দিতে হয়।

তরুণ জিজ্ঞেস করল, কোন সময়?!

বর্তমান,অতীত নাকি ভবিষ্যৎ?!

তেজী বৃদ্ধা বললেন, আরো অপেক্ষা করো।

 সময়কে জিতে যেতে দিতে হয়।

 

তরুন বলল, তাহলে কি ব্যক্তির চেয়েও সময় বড়?!

বৃদ্ধা কোনো উত্তর না দিয়ে দাঁতে খিলি দিতে লাগলেন।

 

 

 

পচনশীল মানুষ।

 

 খোদা, তুমি মানুশ মরার পরে দাফন করার ব্যবস্থা কেন করলে?!

 কবর দেয়ার প্রথা না করলেও পারতে!

বুঝলাম, আত্মারা তোমার আমানত,

 তুমি সব আত্মার মালিক,

 দেহ পিঞ্জিরা থেকে ছোঁ মেরে নিয়া যাবা রুহ,

তা, মানুশের দেহটা অন্তত রেখে যেতে!

এক পলক দেখতাম।

মানব দেহ পচনশীল না হইলেও পারত,

প্রিয়জনকে শো পিচের মত সাজিয়ে রাখতাম৷

 মানুষ কথা না বলুক, কিছু না করুক,

তবুও তার একটা উপস্থিতি আছে।

 উপস্থিতি থাকতে পারত!

তবুও, কথা বলার একটা জায়গা আছে!

 কথা বলার জায়গা থাকতে পারত!

তুমি এটা ঠিক করো নি খোদা।

মানুশকে অমরত্ব না দিলেও,

 খোদা পচনশীল না বানালেও পারতে!

 

কারন।

 

যেটা আমার কাছে কারন, সেটা তোমার কাছে অকারণ।

যেটা কারুর কারুর কাছে কারন কিবা অকারণ,

সেটাই তোমার বা আমার কাছে অযাচিত অশোভন!

কারনের এতো বহুমাত্রিক কারণিকতায়,

তুমি আর আমি নেহাৎ শিশু অথবা শিষ্য।

কারনগুলোর কাছ থেকে শিখছি আমরা;

সময়ে অসময়ে বানাচ্ছি আমরা একের পরেক নতুন নতুন কারণ!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুর্বোধ্য।

 

তরুণ বললো,

 দুর্বোধ্য আমি, বুঝি না তোমাকে কিছুতেই!

আমি বললাম, হ্যা, ঠিক দুর্বোধ্য আমি!

চেষ্টা করাটা বৃথা!

উত্তরে তরুণ বললো, হঠাৎ চেনা মানুষ বড় অচেনা হয়ে যায়,

অদ্ভুত দুনিয়া!

তাই নাকি?!

ঠিক কতটা চিনলে, বলা যায় চেনা যায়?!

ঠিক কতটা জানলে, বলা যায় জেনে গেছি?!জানা যায়!

তরুণ, নিরুত্তর!

সবসময় সবকিছুর উত্তর দেয়া লাগে না।

কিছু কিছু সময় থাকে এমনও, যখন কোনো কিছুর উত্তর থাকে না।

 উত্তর দেয়াটা তখন নিষ্প্রয়োজন।

অনিশ্চয়তার জগতে যেমন অনবরত পরিবর্তিত হয় পরিস্থিতি,

পরিবর্তিত হতে থাকে প্রশ্ন সব,

 আসলেই তখন, থাকে না কোনো অস্থায়ী প্রশ্নের অমোঘ স্থায়ী উত্তর!

 

 

 

স্বেচ্ছা নির্বাসন।

 

স্বেচ্ছা নির্বাসনে বন্দী ব্যক্তিকে কি চেনাবে মুক্তির সংবেদ?!

তারা জানে।

 জানে তাদের দু চোখ।

আর জানে চোখের উপরের মগজ।

 তার তিন হাত নিচে জানে অন্তর-কোথাও কোনো মুক্তি নেই।

 এক অনিবার্য অন্ধকারে পতিত মানব জমিন- অপুষ্টিতে ভুগে মরে সেখানে চারাগুলো মানবতার!

তরুণ, তোমাকে একটি মানবতার অপমৃত্যু শোনাই যা তুমি নিজের চোখে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। বড় হয়েছ আর বড় করছ-চারাগুলো মানবতার, বৃথাই!

সংশয়ী চাষীরা ফলাচ্ছে সংশয়ের শস্য আর সংশয়ের অন্ন গিলছে তরুণ রোজ দারুন নিরুৎসাহে! অযথাই!

 

সমুদ্র কথন।

 

 সমুদ্রে নিবে?!

সমুদ্রপিঠে ভিজতে চায় তনু, একটু সোহাগ পেতে।

পরশ বুলিয়ে দিও আনকোরা চাঁদ-তারার নকশালে,

অচিন বন্দরে।

সমুদ্রে নিলে নিজেকে খুলে দিতে পারি,

যত চাও-ততবার বিলিয়ে দিতে পারি।

অথবা, সাগর তীরে রেখো আমায়,

ঢেউ হয়ে হয়ে ছুঁয়ে যেও অকস্মাৎ।

কখনও কখনও,

জোছনা হয়ে নেমো বিলাতে বা পাড়ের হাওড়-বিলের 'পরেও!

তুমি যদি বলো আমায় একবার চোখের ইশারাতে,

চাঁদ-তারাও ছিনিয়ে আনতে পারি,

পাষাণ বুকের জমানো আবেগকে জখম করতে পারি

 খুন করতে পারি সব রাগ, অভিমান, দুঃখ, ক্ষোভ,

 না পাওয়া বাসনাগুলোর শোক,

তোমায় পাবার আনন্দে ভুলে যেতে পারি

 সব হারানোর শ্লোক!

নিথর হয়ে পড়ে থাকবে অভিমানগুলোর লাশ,

প্রাণবায়ু ফুঁকে দিও মরা মনের গাঙ্গে,

গাঙ্গচিল হয়ে উড়ে আসিও---ছোঁ মেরে নিয়ে যাইও পরাণটারে!

জানো কোনো এক শুক্লপক্ষে,

আমি চাঁদ পোষাক বদনে জড়িয়ে,

চাঁদ চাঁদ হয়ে সেজে থাকব তোমার আগমনীর জন্যে।

অপেক্ষায় থাকবে আসমান-জমিন-মহাকাশ,

চাঁদটি উঠবে বলে।

তুমিও কি করবে প্রতীক্ষা এই চাঁদটার জন্যে?‌!

 

বিস্মৃতি।

 

তুমি কোথায়?! 

কোথাও তো তোমাকে দেখি না;

মহামায়ার পাড়ে সবুজ ঘাস বিছানো উপত্যকায়

নাকি কোনো এক হারানো সাগরের চোরাবালিতে লুকায়া আছো,

গভীর বিষাদে

তুমি কোথায়?! 

সুন্দরবনের শেওলা-ছাতায় ধুসর মাটি হয়ে লবনগুলো যেমন লেপ্টে থাকে

 হারানোর বেদনায়,

বেদনাটা কিসের জানো?! 

-অস্তিত্ব বিলোপের!

 তোমারও কি অস্তিত্ব নাই হয়ে গেছে?! 

লবনের মত তুমিও কি পাও ব্যথা-হারায়া যাবার?! 

তুমি কোথায়?! 

খাঁচার ভেতর প্রতিদিন একটি করে দোয়েল মারা যায়।

 অভিমানে-অভিমানটা কিসের জানো?!

দয়ালের উপরে! দয়ালের দয়ায় তারা উড়তে শিখছে ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতা পায় নাই.. দোয়েলের মত দয়ালের উপর তুমিও কি অভিমান করে আছো-আটকায়া যাবার জন্যে?! 

তুমি কোথায়?! 

তারাগুলো সব ফিসফিস করে; একজনের সাথে আরেকজন কথা বলে,

বলে তাদের এক ছায়াপথ হতে আরেক ছায়াপথে এসে টিকে থাকার গল্প।

পৃথিবীর ছাদে রোজ রাতে জ্বলতে তাদের নাকি খুব কষ্ট হয়।

কেমন যেন মিটমিট করে জ্বলতে হয়। তোমারও কি তেমন দুঃখ?! 

তুমি কোথায়?! 

আমি প্রতিদিন নিজেকে আয়নায় দেখি। দেখি শতেক রূপ।

দেখি, একদিন ভীষন বেগে ছুটে গেছিলাম কোনো এক প্রিয়জনের কাছে দূর থেকে তারে দেখে, কিন্তু আমি কাছে আসলে সে আমাকে না চেনার ভান করে আপন পথ মাপে।

 আমি তাকেও আমার মধ্যে দেখি--আয়নার সামনে আমি নই, সে দাঁড়ায়া আছে। 

আমি আরো দেখি আরো অনেকজনকে,যাদের মধ্যে কেউ কেউ কথা রেখেছিল আর কেউ কেউ কথা রাখে নি।

আমি দেখি তারা আমার ভেতরেই আছে, কোথাও পালায়া যায় নি! নিজেকে আর চিনতে পারি না তখন-আমি তাদেরকে দেখি। 

তারা কি আমার অস্তিত্বের অংশ হয়া গেল?! আমি তাদের মত হয়ে গেছি?! 

 

তুমিও কোথাও হারায়ে যাও নি, তুমিও আছো এখানে-এই হৃদয় জামরুল বাগে-- বিস্মৃতির অতলে তুমি আমার ভেতরেই দাফন হয়ে আছো...!

চিনি,তোমাকে ভালো করেই চিনি--তুমি আমার স্বরূপ -আমারই অংশ

 

 

 

টুকরা নিয়া খুশি থাকো

 

"প্রত্যেককে যাদের কলিজা দিয়ে ভালবাসছিলাম- প্রত্যেককে যাদের চোখ বুঁজে বিশ্বাস করছিলাম-যাদেরকে দিছিলাম এই সম্পূর্ণ আমাকে- টুকরা টুকরা করে ভেঙ্গে দিছিল তারা,

 টুকরা টুকরা করে ভাঙ্গছিল এই শ্বেতপাথরের খোদাই করা দেয়াল-সুশোভিত প্রাসাদ। 

এখন, বহুত কষ্টে জোড়াতালি দিয়ে ভাঙ্গা টুকরাগুলা নিয়ে  সামনে গেলে তাদের, চায় পুরোনো সেই পরিপূর্ণ  আমাকে

হাস্যকর৷ বড়ই হাস্যকর। 

ভাঙ্গার পরে জোড়া লাগানো যায় নাকি আবার?! 

টুকরা টুকরা নিয়া খুশি থাকো আমার-পুরা পুরা বিশ্বাস করা ছাইড়া দিছি বহু বহু আগে! সে কত কাল!"

 

সত্যবাদী তরুণ।

 

"তরুণ, তুমি যখন সত্য কথা বলা শুরু করবে তখন দেখবে চারপাশের বন্ধুগুলো কেমন না-চেনা হয়া যাইতেছে

তারাই তোমার শত্রু হয়া যাইতেছে যাদের বন্ধু হবার কথা ছিল,

তুমি বিটপীর মূলে কিছু আগাছা দেখতে পাইবে। 

শনাক্তি তোমার জন্য জরুরি ছিল

তুমি বুঝতে পারবে মোটা দাগে মনুষ্য জগত দুইটি ভাগে বিভক্ত থাকে-

সত্যবাদী আর মিথ্যাচারী। 

যারা সত্যের আদর্শে বিশ্বাস করে তারা সহযেই তোমারে মাইনা নিবে আর যারা মিথ্যাচার কইরা অভ্যস্ত উঠতে বসতে

তারা তোমার বিরোধ করবে। 

তাহলে কি তুমি থেমে যাবে?! 

নতুন দেশে উইড়া আসা নাম না জানা পাখির মত তুমিও একলা উড়বে অচিন সমুদ্দর পাড়ে। 

তোমার উড়ার নিশান দেইখা আরো এক ঝাক পাখির বহর নামবে সে বিজন বনে!" 

 

সীমারেখা।

 

তোমার আমার সম্মানের গন্ডিতে সীমারেখা 

টানা হলো

আমার সীমানায় আমি সম্মানিত

তোমার সীমানায় তুমি!

কিন্তু, সীমান্তে সীমান্তে ঘর্ষণ হয় না

তাই তো তা পৃথক করা হয়। 

আমার সম্মানে আমি কোনো দাগ সহ্য করব না,

যেমন স্বাধীন রাষ্ট্র তার সীমানায় কাউকে ভাগ দেয় না,

তেমনি তরুন আমাকে ছিদ্রায়িত রাষ্ট্র ভাবার ভুল 

করো না আর ভুল করেও আমার সীমান্ত পাড়ি দিও না। 

শরনার্থী হিসেবেই রয়ে যাবে, মুল ভুখন্ডে স্থান পাবে না।

 

পেনোপটিকন।

"দম বন্ধ হয়ে আসা একটা পেনোপটিকনে আটকা নগরের নাগরিক ক্লান্ত তরুণ একটা আকাশ, একটা সৈকত আর একটা পাহাড় খোঁজে সাদা-নীলের ডিজিটাল প্লাটফর্মে। 

আমাদের প্রেমগুলি এখন সবুজ বাত্তির মত জ্বলে আর নিভে যায় গন্তব্যহীন সময়ের ভীড়ে।"

 

 

 

 

 

 

মেট্রো।

 

নগরের নাগরিকের চিন্তায় চিন্তায় কেটে যায় সারাদিন সারাবেলা

নাগরিক দ্বন্দ্বে, নাগরিক সংঘর্ষে, আত্মসংকট এবং বহিঃসংকটে,

সন্দেহে সন্দেহে কেটে যায় অমোঘ বেলা

নগরে তরুণেরা রোজ হতোদ্যম হয়

শহরে তরুণেরা রোজ স্বপ্নগুলোকে কতল করে। 

নগরের ধুলি মেখে তারা রোজ প্রাচীন ঘোড়দৌড়ে নামে।

ঘোড়াগুলা এখন অটো আর মেট্রো বনে গেছে। 

 

একটি নদীর আত্মকথন। 

 

তুমি বললে,স্মৃতি হাতড়ালে শুধু দুঃখের গল্প পাবে।

ভুলে যাওয়াই শ্রেয়। জীবন্ত দাফন দিতে হয় সব স্মৃতিগুলোকে।

আমি বললাম, ভুলেই থাকি।

যেমন ভুলে থাকে পদ্মা হিমালয়কে।

 তবুও, কিছু কিছু মনে পড়ে যায়। পদ্মাও মাঝেমধ্যে বিধ্বংসী হয়। 

তুমি বললে, পদ্মা স্বয়ংসম্পূর্ণ। 

ঝড় বাদলকে সামলে নেওয়ার সক্ষমতা তার আছে।

তা আছে বটে কিন্তু আফসোস হয় খুব মাঝেমধ্যে-

নদী কখনও পিছনে ফিরে যেতে পারে না। 

নদী নতুন সভ্যতার জন্ম দেয় ঠিকই কিন্তু তা হয়ত এখনও পলিমাটিতে দাবানো, একসময়ের প্লাবিত নগরের হারানো সভ্যতায় চেনা গতিপথে নদী কখনও প্রবাহিত হতে পারে না। 

একটি নদীর আত্মকথন।

নদী কখনও পিছনে ফিরতে পারে না। 

 

নগরীর স্বর।

তরুন, পেছনে ফেলে আসা নগরীর সড়কগুলোর সাথে জড়িত আমাদের স্মৃতিগুলোকে একেক করে পেরিয়ে আসি,

 যেন উন্নয়নের ভারে নত শহরে এক বিধ্বস্ত রমনী আমি।

বারবার খুঁজি হারানো কৈশোর। বারবার খুঁজি তোমাকে। 

দৈবাৎ, যদি দেখা পেয়ে যাই তোমার। 

কিন্তু, তুমি কোথাও নেই।

তুমি নেই অলিতে গলিতে।

তুমি নেই ফ্লাইওভারের বাঁকে।

তুমি নেই ফালি ফালি করে কাঁটা বাঁকা চাঁদের মিছে আলোতে।

 তুমি নেই শহরের লেড বাত্তির ঝিলিকে অথবা হর্ণ, ভীড়, জ্যামে ঠাসা শহরের কোথাও আটকে নাই, তুমি চলে গেছ বহুদুরে। 

নেই। নেই। নেই। 

কোথাও নেই তুমি।

 তুমি নেই ভাটিয়ারির লেকে, পতেঙ্গা সৈকতে, বারকোড় ক্যাফেতে।

তুমি নেই সাগরিকায়। তুমি এখন থাকো না পাড়ায়, যেখানে আমার বাস।

 অথচ, একসময় তুমি আমার পড়শি ছিলে।

 আমার মন আর বাড়ির উঠোনে রোজ তুমি যাওয়া আসা করতে। 

 

সমুদ্রের গর্জন।

 

তরুন এই সমুদ্রের গর্জন শুনার জন্য আমি তড়পাচ্ছিলাম,

অথচ, সমুদ্রের কাছে এসে দেখি আগের মত নেই আর পতেঙ্গা সৈকত।

কেমন যেন নগরায়নের বিষে আক্রান্ত বিচ বিষন্ন ভীষণ। 

উজানের স্রোতও আগের মত ডাকে না

শো-পিচের মত সাজিয়ে রাখা বেলে পাথরগুলোর উপরে আঁচড়ে আঁচড়ে পড়ে না। 

পড়লেও আর সজোরে শব্দ করে না। কানে আর মৃদু সুর তুলে না। 

তরুন, তুমি  চলে যাওয়ার পর অথবা আমি তোমাকে ছেড়ে যাবার পর,

শুকিয়ে গেছে একটা সৈকত।

 নগরের নগরায়নে সমুদ্রও নগরায়িত হয়ে গেছে।

 সে খবর তুমি রাখো কি আর?!

বদলে গেছি আমি।

 বদলে গেছে সৈকত।

বদলে গেছে আমাদের চেনা শহর।

একটা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের গল্প আমি পাঠকদের শোনাবো বলে বারবার সেখানে যাই। যারা তোমায় চিনে না, তাদেরকে তোমার চলে যাওয়ার গল্প বলি।

এরপরে, আমাদের আর কখনও দেখা হয় নি। সেদিন, ভোরে ঢেউয়ের তালে তালে হাতে রেখে হাত, এরপরে আর কখনও হাঁটা হয় নি।

 

 

 

রক্তজবা। 

জীবনের কাঁটাতারে আটকা স্রোতে ভেঙ্গে যায় নিছক বালিয়াড়ি

তটের পর তট ভিজতে থাকে- অশ্রু প্লাবিত বানে,

প্রত্যেক ফোঁটা, প্রত্যেক লহমা, প্রত্যেক স্মৃতির চেনা শহরে

ছেড়ে আসা দ্বীপগুলো জানান দেয়

তুমি নাই। বৃথাই করি আশা। 

শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকি হাতে নিয়ে একটি রক্তজবা।

শুধু শুধুই দাঁড়িয়ে থাকি চোখে নিয়ে অন্তহীন অপেক্ষা।

তো কেবলি শুণ্যতা- জানা ছিল না

জীবনের কাঁটাতারে আটকা চোরাস্রোতে বিষাদের চোখে 

স্বপ্নগুলোর মিথ্যে ছায়া গুলা হাতছানি দিয়ে ডাকে

ভাঙতে থাকে ভাঙা দর্পনে আলোগুলোর উৎসবহীন খেলা

সেগুলোর দিকে তাকিয়ে রই মেলে ধরি অপূর্ণতার ভাবনা,

চিন্তাগুলো সব অস্পষ্ট হতে থাকে রোজ,

উড়তে থাকে সেগুলো মনের কোনে 

মেলে পাখনাবিহীন ডানা

অস্পৃশ্য তুমি, বেওয়ারিশ আমি ছুঁই তোমায় কিসের বাসনায়

দাঁড়িয়ে থাকি- শেষ ঠিকানায়,

 হাতে নিয়ে একটি টাটকা রক্তজবা

 

আদম আর ইবলিসের উপাখ্যান।

 

আদমের বেহেস্ত হতে অপসারণে জিতে নাই শয়তান

বরং তার কাঁধে দায়িত্ব বাড়ছে আদমের উত্তরপুরুষরে বিভ্রান্ত করবার,

 শয়তান আদমরে প্ররোচিত কইরা নিজেই নিজের লেজ পুড়াইছে,

 খোদার বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে নামছে,

যার পরিণতি সে জানে, অনিবার্য হার।

এক বেহায়া পতন। 

আদম সন্তানদের আফসোস করবার কিছুই নাই,

আদমের পাপের ভার নিয়া নিছে শায়াতিন শয়তান

আদম পাপ করলেও শয়তান দোষী হয়

খোদার করুণার কত ভার, কত রূপ তার বোঝা দায়

শয়তান এজন্যে ঈশ্বর প্রেমে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী চায় নাই

হিংসায় বিদ্বেষে সে পুড়ে ছারখার

আদতে, আদমকে তৈয়ারের মাধ্যমে খোদা ইবলিসরে যাঁচাই করছিলেন;

 সেইটা ইবলিশ কখনও বুঝতে পারে নাই। 

খোদার প্রেম সার্বজনীন। প্রতিটা সৃষ্টিরে তিনি সমান ভালোবাসেন।

জ্বীনরেও, মানবরেও, ইবলিশরেও সমান ভালোবাসলেন। 

ইবলিশ যদি নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসত খোদারে,

আর খোদার প্রেমে যদি না করত বিদ্রোহ,

ইতিহাস রচিত হইত একটু অন্যরকম

 

ইবলিশ যদি সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্বের আশায় খোদার সেরা প্রেমিক হবার বাসনা যদি না করত, তবে খোদার মর্জি হইত না কাঁদামাটির আদম-হাওয়ারে বানানোর

ইবলিশ যদি সমস্ত ফেরেস্তাকুল,জ্বীন   মানবজাতির সর্দার হবার উচ্চাবিলাসী আকাঙ্খা না করত তবে, সেই হইত এখন পর্যন্ত খোদার সবচেয়ে বিশ্বস্ত!! 

কিন্তু, হায়! সবার মনের কথা জাইনা ফেলান গায়েবে খোদা

জাইনা শুইনা দ্বন্দ লাগান, বাজান তবলা

সে সুর তাল লয়ে নাচে বেবান বিশ্ব ধারা

কারন, সবার মনের ভেতরের মনইতো আসলেখোদা’! 

 

অভিনয়।

 

কিছুই কখনই পরিবর্তিত হয় না,

না ভালবাসা না ঘৃণা,

সবকিছু সুপ্ত থাকে লুপ্ত হয়ে থাকবার জন্যে,

হারিয়ে নতুন করে ফিরে পাওয়ার জন্যে,

কিছুই-কোথাও হারিয়ে যায় না,

না প্রেম না রাগ,না তিক্ততা,

শুধু সময় পাল্টায়-সময়ে সবকিছুর তীব্রতা

মিইয়ে যায়; জিইয়ে রাখতে হয় চলার জন্যে!

এভাবে চলতে পারাটা কে শেখাল?!

কেনইবা এভাবে চলতে হবে?!

বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মত জীবনকে কি ভাসিয়ে দেয়া যায় না?

নদীতেও বাঁধ নির্মিত হয় -আটকে দিতে হয় জোয়ারকে!

বাঁধে কুল চাপিয়ে বন্যা আসে- কুলে হরিৎ শস্যক্ষেত্র,

এক পাশে ক্ষরা, অন্যপাশে সবুজ তৃণভূমিতে চরায় বিবেকহীন মানুষ পশু!

অথচ, ভাবি মাঝেমধ্যে কেবা পশু?!

মানুষ মানুষ হয়ে থাকার অভিনয় করে শুধু,

ভেতরের পশুটাকে ঘুম পাড়িয়ে টাক্সিডো

পরে মার্সিডিজে চড়ে!

তারপর, মার্সিডিজকেই মানুষ মনে করা শুরু করে

আর মানুষকে যন্ত্র,

আর উচু-লম্বা অট্টালিকাকে সত্ত্বা ভাবে,

আর সত্ত্বাকে করে অবদমন অথবা লুন্ঠন।

পঞ্চতলার বৃহৎ পঁয়ত্রিশ ফুটের বিশাল অট্টালিকা,

তোমায় আমার প্রশ্ন,

মানুষ কি এতই সস্তা নাকি?

তুমি কি মানুষের চেয়েও দামি?!

 

প্রশ্ন

 

এবং মনে হচ্ছে এক ডজন শেফালি দিয়ে কেউ নরক সাজিয়েছে,

তাম্রলিপিতে অনবদ্য অক্ষর আবার গেজে উঠেছে,

ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে,

তাই মৃগনাভি বেয়ে উঠেছে যান্ত্রব ফুল।

আকাশ ছেয়ে বিষাদ বজ্রপাতে,হুমড়ি খাওয়া কালো মেঘে,

একপশলা বৃষ্টি,একফোটা জল,

শেষ খেলা, ভেঙে গেছে বালি আর খড়কুটোর ঘর,

অষ্টপ্রহর আর পার্বণে যে পারাবত,

উড়ে যার শঙ্খনীলে, অমিল জোড়বন্ধন।

প্রাপ্যতার ঠিক হিসাব নেই, ধুয়ে গেছে ভেজা তট।

আরো ভিজেছিল শেষবার কবে আর জানা নেই,জানবে কখন?

 

 মৌণ বিপ্লব।

ভেতরের কোলাহল থামে না বাহিরে গিয়ে কি হবে?!

ভেতরকে চুপ করাতে পারি না বাহিরের উন্মত্ততায় কি যায় আসে!

ভেতরের মিছিল থামাতে পারি না,

 বাহিরের মিছিলের শ্লোগান কানে প্রবেশ করবে কি করে?!

ভেতরের আন্দোলন বয়কট করতে পারি না,

 বাহিরের আন্দোলন লোকদেখানো নিছক! স্বার্থে স্বার্থ টানে!

নিঃস্বার্থ হয় কি কখনও কোনো আন্দোলন -যুদ্ধ-বিগ্রহ?!

দ্বন্দ-কলহ?!

তবে কি সব স্বার্থের সংঘর্ষ?!

ভেতরের আন্দোলনে জয়ী হতে গিয়ে বাহিরকে বলি না,

ভেতরটাই যখন এতো দুর্বোধ্য, বুঝি না, বাহিরকে কিভাবে

করব যতন, চিনব কি করে, করব আপন?

যখন ভেতরটাই আবিষ্কারের নেশায় বিভোর তখন

 বাহিরটা চেনা দুরুহ; মুশকিল বড়!

আগে ভেতরটা তো চিনতে হয় পুরোপুরি,

আংশিক কে কবে কার হতে পেরেছিল -বিভ্রান্তি সবই!

আংশিক আমি অস্তিত্বের হলে পুরোটা কিভাবে হব সভ্যতার?!

বিবর্তনের দাবী নিয়ে চোখ মেলে বসে রয়েছি আমি!

ফাঁকা কোটরে দেখি পরিবর্তনের ঈশারা -অমোঘ নিয়মে-

আমূল পরিবর্তন ঘটবে-ঘটতে হবেই!

বিপ্লব হবেই-হোক না তা মৌণ বিবর্তন! 

যা কিছুই শোরগোলের, ছদ্মবেশি বড়,

ছলনাময়ী, এবার হোক কিছুটা সত্যাগ্রহ!

আগুন থেকে যার জন্ম পানির মত শীতল,

কি করে সভ্যতার দাপটে হারাবে  উত্তাপ?

উত্তপ্ত শেকড়, উত্তপ্ত আবহাওয়া, উত্তপ্ত পরিবেশ,

উত্তপ্ত পরিপার্শ্বে নিরুত্তাপ থাকতে পারাটাই একটা বিপ্লব,

সত্যের অন্বেষণ!

তরুণ, তুমি দেখবে এক মৌণ বিপ্লব?!

তোমাকে দেখাব আমি এক নতুন শতাব্দী মৌণতার পদযাত্রায় উদ্ভাসিত!

উচ্ছ্বল তুমি দেখবে এক নতুন ভোর-ভিন্নতার আঙ্গিকে শামিল-বেসামাল হব,

 থামবে তখন ভেতরের সব কোলাহল!

বাহিরের কোলাহলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাব না তবুও ভেতরের অস্তিত্বটাকে!

তবুও শরীক হব;

 বাহিরের দিকেই পদযাত্রার জন্যই ভেতরের দ্বন্দের-আহবানঃ জট খোলো,

ভেতরটা যদি হয় হাইওয়ে, বাহিরটা একটা মিনিবাস,

ভেতরের দুর্গম রাস্তায় পাড়ি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় জীবন সওয়ারি!

 

 

মুক্তি কি?

 

মুক্তি নাকি অবদমন?!

নাকি অবদমনেই যে মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়,বানায় নির্মোহ,

করে না কোনো খায়েশের দাসত্ব তাই প্রকৃত মুক্তির নির্যাস?!

নাকি, মুক্তচিত্তে যা কিছুই গ্রহণ করা হয় তাই আদতে অবদমন,

যেন আত্মাকেই বেছে দেওয়া বেপারির কাছে,

 সেটাইতো আত্মার নির্বিকার অবদমন!

বেপারি তখন বলে, দাম কত?!

আত্মার দাম আকাশ সমান,

এক আকাশ কিনে দিলে পাওয়া যাবে উন্মুক্ত পাখীর বিচরণ,

হায়, আকাশ কবে কার হতে পারে স্রষ্টা ব্যতিত,

পাখিও তাই উড়ে যায় উড়ে যাওয়ার মতন।

উড়তে থাকা যার স্বভাব, ফিরে যায় স্রষ্টা প্রদত্ত আত্মার ডাকে।

উড়তে উড়তে সূদুরে হারিয়ে যায় পাখি,

ঠিক করে নি যে কোনো মঞ্জিল।

 

 

 

ইউটোপিয়া।

 

কারুর কারুর মাসিক বেতন সব মিলিয়ে পঞ্চাশেক হাজার টাকা হয়,

আর কেউ কেউ ঝোঁকের বশে এ টাকা কয়েকদিনে উড়িয়ে দিতে পারে!

জীবনবোধের অভাব থাকলে যা হয়,

যেটা তোমার নিজের থেকে অর্জিত নয়,

সেটা তুমি রক্ষাও করতে পারো না।

আসলে, কিভাবে রক্ষা করতে হয় সেটাই জানো না।

অর্থের প্রাচুর্য দেখে বড় হয়েছে যারা,

 অভাব চেনে নি কোনো কালে,

 তারা কি করে বুঝবে অর্থের মুল্য?!

অর্থের মুল্য বুঝে রাস্তায় তোষক ছাড়া শুয়ে থাকা

রুগ্ন নারী তার পিতৃপরিচয়হীন সন্তান নিয়ে শুষ্ক স্তন মেলে,

পুষ্টির অভাবে যে শিশুর খাদ্য জোটাতে পারে না!

অর্থের মুল্য বুঝে অনাথ জিনিয়া,

টিএসসিতে ফুল যে বেছে, কলুষতার মাঝে শুভ্রতার দাম নিতে চায়,

একটুকরো বেলিফুলের মালার মাধ্যমে পবিত্রতা বিনিময় করতে চায় অসাড় দুপুরে!

অর্থের মুল্য বুঝে পঙ্গু ভিখিরি,

কোনোকালে ট্রাকের চাকার চাপে পিষ্ট হয়েছে যার উপার্জনের একমাত্র অঙ্গ-সম্বলখানি।

অর্থের মুল্য বুঝে পতিতা, পতিতা বলতে আমি নারাজ বলব দেহশ্রমিক,

সক্ষমতা, সহায়তা আর সাহচর্যের অভাবে সমাজের চোখে যে নষ্টা- হতে হয়েছে দেহবেপারি। টানছে পরিস্থিথির বোঝা হরহামেশা।

পরিস্থির ভুক্তভুগীরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারে নি দারিদ্র‍্যের দুষ্ট চক্রের চক্রান্তে!

ভাগ্যের করাল গ্রাস।

 এরাই জান্নাতি।

এরাই, সমাজের কারিগর।

প্রকৃত শ্রমিক।

যাদের অবদানে সমাজ সমৃদ্ধ।

এবং, কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব দিয়েছে এরাই,

এরা না থাকলে কাদের উপর চলত কর্তৃত্ব?!

ক্ষমতার অপপ্রয়োগ?!

 শাসন- শোষণ?!

পশ্চাদপদরাই থাকবে একদিন অগ্রে,

হয়ত কোনো ইউটোপিয়ায়, অথবা কল্পলোকে বা প্রতিশ্রুত বেহেস্তে,

 সময়ে আসবে বিবর্তন,

মহাকালের গহবরে হারাবে সব রতন এবং সব অনাদর!

আমি বসে বসে দেখব তখন এক অমায়িক সভ্যতার হলো সৃজন অবশেষে।

 

 

মিরাকল।

কিছু কিছু মানুষ থাকে কোমল-নমনীয় যেন একটি স্থিরচিত্র,

যারা ধীর-স্থির কিন্তু লুকিয়ে রেখেছে এক বন্য উন্মত্ততা

আদিম প্রেষণে যা লুকায়িত অতি সংগোপনে।

 সংযোজনের অপেক্ষায় নিদারুণ হতাশায়-অপেক্ষা একটি মিরাকল!

ধীরস্থির যেমন-স্থির নদীর নিচের জল,

যেখানে মাছেরা নির্বিঘ্নে সাঁতার কাটে-

 তারা সাঁতার কাটে শ্রেণিহীনভাবে,

সেখানে কে বা ছোট বড়!!

অশান্ত বিশাল সমুদ্রে ডলফিনরা হাপিত্যেশ করে,

অথচ, মানুষকে উপরে তুলতে গিয়ে আমরা ভুলে গেছি-

সাগরের কথা,ডলফিনদের কথা আর মেঘেদের ভারি বর্ষণের কথা!!!

যে মেঘ বয়ে আনে প্রকৃতির কান্না দারুন উত্তাপে!

 ভীষণ, প্রতাপে জমতে থাকে ফোঁটায় ফোঁটায় জলকণা!

এরপর, এরপর- সে জল হয়ে মাটিকে স্পর্স করে।

 যেখান হতে সে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল-ঠিক সেই তল স্পর্স করে।

 সবকিছু কেন যেনবা মুলে ফেরত আসে!

 

 

 

 

 

 

 

 নর্দমা।

অন্ধ কবি সত্য সুন্দর অনুভুতি গুলো প্রকাশ করে, সেখানে কোনো অশ্লীলতা ঠায় পায় না। কারন, অন্ধ কবি চোখেই দেখতে পায় না--অন্ধত্বের জন্যে বুঝতে পারে না এক অন্ধকার সময়ে অন্ধকার জগতে তার বাস, ঠিক নালার পাশে!

অনুভুতিশূণ্য ধরায়-পুণ্যময় অনুভবের প্রকাশের ধারা আবারও অব্যাহত হবে-ভেজালহীন এক অনুভবের জগতে,

যেখানে পৃথিবী এখন বড়ই জটিল-অনুভুতিগুলোও হারিয়ে গেছে কোনো এক ম্যাক্সিম শহরে-যেখানে নোঙ্গর ফেলে অনুভবের নৌকা কোনো এক অরাজক অস্থিথিশীল বন্দরে!!

যুদ্ধ যুদ্ধময় এক দামাল পরিবেশে, তরুণ তুমি আর আমি হাত ধরেছি একজন আরেকজনার, এক অনিশ্চিত পৃথিবীতে অনিশ্চিত যাত্রায় আমরা সঙ্গী হয়েছি তবুও আমাদের মিলন কবে হবে তা অজানা।

 জানি না আমাদের যাত্রাও কি নিশ্চিত নিশিথের চাঁদের মত, রোজ যেটি অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে! এক নিভন্ত সূর্য ঐশ্বর্য বিলায় নিদারুন কৃপায়।

কবি এক মিথ্যে বানোয়াটির সময়ে সত্যের প্রচার করে,

যেখানে অনুভূতি গুলো চাপা পড়ে যায়-ডিসফাংশনাল জটিলতায়!

মুহুর্মুহু পরিবর্তনশীলতায়!!

তবুও, জীবনগরীতে জীবনান্দ বয়ে যায়- তবুও সবাই হেসে খেলে বেড়ায়-নিঁখুত অভিনয়ে-খেলার ছলে অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে ফেলে কত সহযেই-এরপরে সবাই সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।

বিচ্ছিন্ন থাকে যারা ছিল অবিচ্ছেদ্য।

 একাকিত্বে কাটায় যারা সবান্ধব ছিল।

 যে যার মত মুখ ঘুরিয়ে একই রাস্তায় চলতে থাকে এক উদ্দেশ্যহীন মোকামে-নগরীর অলিতে গলিতে-কাঁচা-পাকা রাস্তায়-সুখ নামক এক উদ্বায়ী বস্তু খরিদ করতে ব্যস্ত সবাই।

শহরগুলো সব বিষিয়ে উঠেছে বিষাক্ত কার্বনের ধোয়ায়-তরুণ, তুমি সিগারেট টানো নাকি কার্বনের ধুয়া উড়াও, পেলব মুখ দিয়ে -তা আমি ঠাওর করতে পারি না!

আধুনিকতম ব্যস্ততায়, ভীষণ অসুখে অথবা অব্যক্ত লজ্জাজনক যন্ত্রণায় সবাই ঢেকে রাখে বিষ-করুন সুখের ছলে--ছেঁড়াফাঁটা মানচিত্রের মত জীবনে-কত নগর, কত শহর, কত বন্দর- ঘুরে আসলে তুমি, তবুও তোমার কোনো স্থায়ী ঠিকানা হয় না। এখানে কেউ কাউকে চিনে না। কোনো রাস্তাও পূর্বপরিচিত নয়।

নতুন নতুন হাইওয়ে আর মেট্রোরেলের নির্মাণের রুটে পরিবর্তিত হয়ে গেছে চেনা রাস্তার চেনা চেহারা!! এখন, বাকি সবার মত রাস্তাটাও অচেনা!

তেমনি কি, তরুণ, তুমিও পরিবর্তত হয়ে গেছ-কোনো এক লুকানো বিষাদে-হারিয়ে ফেলেছ সকল উচ্ছলতা?! উদ্যমতা?!

এখানে, রাস্তা গুলোতে বড় বড় গর্ত থাকে নালার মত,

বর্জ্যে ভরা! তুমিও কি পা ফঁসকে পড়ে গিয়েছ, ভুল করে সে নর্দমায়?!

আর, ডুবে গেছ?! সাঁতরিয়ে কুল পাচ্ছ না??!

ময়লায়-আবর্জনায়-কীটে-পতঙ্গে কি ভরে গেছে তোমার পেট,তুমি নিশ্বাস নিতে পারছ না?! তোমার পুরো শরীর থেকে কি এক অদ্ভুত রকমের মাছ-পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে-তা তুমি টের পেয়ে কি আর নিজের দিকে চোখ বুলাতে চাও না?!

তুমি নোংরা শরীর নিয়ে কোনো পূর্বপরিচিত বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাও না। বাল্যকালের বন্ধুরা সব বাল্যেই হারিয়ে গেছে। এখন তুমি, বড় হয়েছ। বড় শহরে থাকো। বড় বড় নালার পাশ দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে যাও।

কখনও, কখনও নিজেকেও একটা নর্দমা মনে করো। অথবা, একটা উভচর কীট- এক ঘোলা দুর্গন্ধময় বর্জ্যের টাঙ্কিতে সাঁতরাচ্ছ!

ভেসে বেড়াচ্ছে তোমার তৈলাক্ত শরীর-আর নালার পানিতেও ভেসে বেড়ায়-তেল,

 যে তৈল তুমি রোজ মর্দন করো ঐ এলিটদের , তা তাদের পায়ুপথ হতে নির্গত হয়ে তোমাকে ভক্ষণ করে-কারন তুমি এক কীট-অতি নগন্য!

 

পারিজাত

আর কেউ ত তোমার মত আমাকে হাসাবে না

তোমার মত ভালোবাসবে না

তোমারমত আগলে রাখবে না

যত্ন করবেনা

তোমার তুলনা শুধু তুমি

তোমার বিকল্প কেবল তুমি পিছে থাকুক না যত ভুল-ত্রুটি

তুমি সেরা, তুমি করো বাজিমাত

আমি তোমার হাতে ফোটা সদ্য পারিজাত

 

 

কর্পূরের সম্পর্ক

 

আমি তোমায় ভালবেসে করেছি মৃত্যুর সুধাপান,

তুমি আমায় দারুন ঠকালে লোক দেখানো ছেলে ভুলানো ভালবাসায়,

অবশেষে, আমি বুঝলাম কেউ কাউকে ভালবাসেনা

সবই প্রয়োজন, তোমার ভালবাসা মিছে বলে আজ সব ভালবাসা

মিথ্যা মনে হয় কারন আমি শুধুমাত্র 

তোমার ভালবাসা সত্য বলে মেনেছিলাম

ভুল ভাঙলো, ভ্রান্তি পরিষ্কার হলো,

মরীচিকা উদাও হলো

দেখতে পেলাম স্বচ্ছ কাঁচের বিপরীতে তোমার 

লুকায়িতরূপ

আমি যাকে ভালবাসা মনে করতাম তা যে ছিল অভিনয়,

মোহ আর উসিলা বুঝতেপারি নি একমুহূর্তও

বড়ই অবেলায় এসেছিলে তুমি, বড় অবেলায় চলে গেলে তুমি,

মাঝখানের সময়টুকু সবই এক ছলনা, বিভ্রান্তির জট খুলল,

দেখা মিলল জোঁক

ঝোঁকের বশে করা অদূরদর্শী কাজে কত টুকু ক্ষতি 

তোমার কিবা আমার?! 

ঝোঁকের বশে আড়াল করা সত্যে কত টুকু সত্য তোমার কতটুকু বা আমার ?!

মোহের বাঁধনে আটকা এ জালে কতটুকু তড়পাচ্ছিলে তুমি,
কতটুকু তড়পাচ্ছিলাম আমি
?! 

মোহের বাঁধনে আটকা এ জালে কে হলো কার বলি?! 

মিথ্যের পসরায় কখনও কি তুমি সত্য বলেছিলে?! 

নাকি আমি পরখ করে দেখেছিলাম?! 

সহযে যে জিনিস আসে সহযেই চলে যায় 

ঠিক কর্পূরের মত

কর্পুরের মত উবে গেল আমাদের মধ্যে যা ছিল 

তার সবকিছু,

কর্পূরের মতই নিভে গেল আগুন, ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেল

কর্পূরের মত একদিন তুমি আমি চলে যাব ছিন্ন করে এ মিছে দুনিয়ার বাঁধন

প্রচ্ছন্নহাসিতে আবার দেখা হলেওপাড়ে মনে থাকবেকি তোমার আমাদের কর্পূরের সম্পর্ক?! 

 

ভয় পাই।

 

ভয়পাইতোমারসান্নিধ্যপ্রিয়,

কাছেআসলেআবারদূরেসরিয়েদিবে,

ভয়পাইতোমারস্নেহ,

বিশ্বাসকরলেআবারযদিভেঙ্গেদাও?! 

তবুও, কাছেআসতেহয়, চেষ্টাচালিয়েযেতেহয়,

তবুও, সবভুলেযেতেহয়, ভুলেযাবারতাগিদে,

প্রকৃতিরঅমোঘনিয়মেবাঁধাআমরা

দূরত্বযেচেপ্রশ্নকরেপ্রশ্নকর্তা৷

 

অবুজ বিসর্জন।

 

যতদূরে থাকই না কেন আমি যোগিনী হয়েই থাকব মাতোয়ারা শুধু তোমার প্রেমে

যতদূরেই থাকনা কেন, বাতাসের সাথেও ভেসে আসে তোমার স্পর্স, শিহরণ জাগে,

এমনেক প্রেমে পাগল আমরা, চৌদ্দশতাব্দী পার হলেও কেউ কাউকে ভুলতে পারবনা 

প্রেম নয়, মোহ নয়, মায়া

এক চিরঞ্জীব মায়া

শীতল-শুভ্র-চিরসবুজ

প্রজাপতির পাখনার মত বর্ণিল এবং ক্ষীণ 

কেঁচোর মত অথর্ব

বিছার মত বিষাক্ত

সাপের দন্তের মত জোরালো

চবির ল্যাবে পাওয়া অজগরের মত পেঁচানো 

সাপের বিষ দিয়ে তৈরি কলমের কালি দিয়ে লেখা হয় যে বর্ণিল সব অর্জনগুলি,

তার কয়টিতেই বা মনে করা হয় ঐ গরীব বেচারি প্রাণীটিকে

বিছারবিষেও যে তৈরি হয় ডিটক্স, কাঁকড়া হয় এত সুস্বাদু

কয়বার স্মরণ করা হয় তাদের অবুজ বিসর্জনকে ?! 

 

প্রেম।

 

বেঁচে থাকার বিফল তাড়না প্রবাহমান সবখানে-

প্রেম চায় সবাই, কিন্তু বেঁচে থাকার জন্যে কেউ কেউ পরিণত হয় খাদ্যে,

কেউ থাকে অজগরের পেটে, কেউ বা মাকড়শার জালে 

তবুও, প্রেম বেঁচে থাকার মত সুন্দর

প্রতিটা সৃষ্টির মত অদ্ভুত সুন্দর

অদ্ভুত কার্যকরী

অসীম দহন 

আচ্ছা, তরুণ, ধরো, আমি তোমার জন্যে কষ্ট পাওয়া ছেড়ে দিয়েছি,

তুমি কি নাখোশ হবে?

আমি যদি কষ্ট পাওয়া ছেড়ে দেই,

তোমাকে আর কেউ স্মরণ করবেনা 

তোমার দেয়া উপহার কষ্টগুলি আমি জমাতে থাকি।

কষ্টগুলো যায়না কখনও,

ছায়ার মত নিত্যসঙ্গী,

একটু প্রশমিত হয় কেবল যাকে আমরা সুখে থাকার ভ্রমের সাথে প্রতিস্থাপিত  করি 

 

 

 

অপেক্ষারপ্রহরএতদীর্ঘহয়কেন?! 

 

কালচে হালকা গাঢ় নীল আকাশের

জ্বলজ্বল করা প্রতিটা তারায় তোমার চাঁদের

মত মুখখানি ভাসে নাকি আমার ঝাপসাচোখে

তোমার আলো দূরথেকেও ভেদ করে,

তোমারই শুভ্র আলো আমার গোলাপি গালে যেন শোভাপায়!

তুমি মানুষ নাকি চাঁদ?! নাকি উভয়ই?! 

নাকি চাঁদের সাথে গোপন চুক্তি করেছ

মঙ্গলের সাথে গোপন অভিসারের?

হাওয়াইদ্বীপপুঞ্জ হতেপলিনেসিয়া পর্যন্ত যেন তোমার বিস্তৃতি,

আমি কখনও সেখানে যাইনি,

কিন্তু তোমার মধ্যে একটা দ্বীপ,

একটা তট আর শান্তির ঘুঘু উড়ে 

তোমার মধ্যে উড়ে যায় শ খানেক সাদা বক

আর ষড়রিপুর শকুন

তোমার মধ্যে বাস করে কুপির মধ্যে জমানো ধুলোবালি

আবার তোমার মধ্যেই কথা বলে পুরোনো বেতারের পুরাতন বেঁসুরোগান,

যেখানে নাই কোনো চাকচিক্য, নাই কোনো রকিং বিটস

 

তুমি অতি সাধারণ, তোমার মধ্যে সব অনিন্দ্যসুন্দর,

তুমি একটা চাঁদ, একটা পুরা পৃথিবী, শুকতারা এবং একটা সাদাবক 

তুমি একটা দ্বীপ, একটা তট, একটা ভাঙা বেতার-

যেটি আমাকে ক্ষনে ক্ষনে আপডেট দিতে থাকে 

 

 তুমি আমার পরনের দামি রোল্যাক্সঘড়ি অথবা

হকারস থেকে কেনা খুব সস্তামানের খেলনা শখের কাঠের বাড়ি,

সময়ের মত তুমি একটা সুন্দর সওয়ারি

মহাকালের মত অভিজাত তুমি।

 

না,না, অবজেক্টিফাই করছি না তোমায়,

তুমি আমার অভ্যাস, প্রতিদিন ঘড়ি পরার মত তুমি জরুরি,

সময়ের মত এক অভিনব সত্য তুমি,

তুমি আমার চোখ খুলার পরে প্রথম দেখা প্রতিচ্ছবি,

তোমার কোনো বিকল্প নাই, তুমি অতুলনীয়, তুমিসব্যসাচীএবংবর্বর

তোমার মধ্যেই সভ্যতা এবং তোমার মধ্যে এক সভ্যতা পতনের ইতিহাস

তুমি একটা শুকতারা, আমি সেটায় তোমার স্মিত হাসি দেখতেপাই

একটা সাদা বেড়াল, একটা সাদাবক এবং একটা সাদা সকাল 

সকল শুচি, সকল পবিত্রতার জলাভূমি তুমি 

 

কাছ থেকে শুধু ভালবাসি তোমাকে।

 

তরুন একটা ঘাসফড়িং ধরে এনে হাতে দিল, বলল,

প্রকৃতিকে ভালোবাসো 

আমি ঝাড়া দিয়ে ঘাসফড়িংটি ফেলে দিলাম,

 তরুন তাতে যারপরনাই অবাক হলো 

আমি তরুনকে বললাম,

আমি প্রকৃতিকে ভালোবাসি দূর থেকে,

সবকিছুই ভালোবাসি দূর থেকে,

শুধু তোমাকে ভালবাসি কাছ থেকে 

 

চোখের চাহনিতে…

 

তোমার চোখ দুটো নিটোল সুন্দর

গভীর-আটলান্টিক মহাসাগর যতটা গভীর

তোমার চোখ দুটো স্বচ্ছ অনেক-

আন্দামান নিকোবরের মত প্রশস্ত

তোমার চোখদুটো এককাব্যিক অভিযান ভেঙ্গে দাও,

চোখের চাহনিতে সব অভিমান 

 

আইওয়াশ।

 

স্বাধীনতা একটা আপেক্ষিক টার্মমাত্র-

ঢুঁঢে দেখ স্বাধীনতার ধ্বজাধারীরা সবচেয়ে বেশি পরাধীন-

তারা, শর্তাধীন স্বাধীন, চুক্তির মত নবায়িত হয় তাদের স্বাধীনতা 

স্বাধীনতা একটা তথাকথিত  হাস্যকর শব্দ-

প্রকৃতপক্ষে কেউই নয় স্বাধীন, স্বাধীন নয় কোনো সীমান্ত 

আইওয়াশ কেবলি, স্বার্থ যতদিন স্বাধীন ততদিন 

স্বাধীনতা একটি কাল্পনিক অস্তিত্ব

মুক্তির লিপ্সায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আকাঙ্ক্ষিত একটা অবস্থামাত্র

স্বাধীনতা, বড়ই আকর্ষণীয়, স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে

কারন, একমাত্র তারাই স্বাধীনতাকামীদের স্বাধীনতার

অথবা স্বাধীন হবার বাসনার ফায়দা লুঠতে জানে

 

ফানুস।

তোমাকে খুঁজতে গিয়ে খুঁজে পাই নিজেকে,

তোমার সাথে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে হেরে যাই

আমি এই দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দে, প্রতিরোধের সাথে আমি না করি

এবং মতামতের মধ্যস্থতায় আসি

তবুও আমরা একথাকি- বৈপরীত্যে! অসারতায়ও অর্থ খুঁজি!

অর্থময় বর্ণময় জীবন যেখানে-শুধুমাত্র জীবনের প্রয়োজনে 

জীবনের প্রয়োজনেই আমরা জীবনকে গুরত্ব দেই!

যা কিছু মানুষ মহান মনে করে আদতে তা খুব সংকীর্ণ

যা কিছু খুব সহয মনে করে আদতে তাই পাওয়া খুব কঠিনভাবে সুচারু

তোমাকে ভালবাসি প্রিয় বর্ণাঢ্য ফানুসের মত

দূরে উড়ে গেলেও তোমার তাপে যা উত্তপ্ত এবং

প্রতিটি যাত্রায় যে তোমাকে নিয়েই উড়াল দেয়

একলা উড়ে গেলে, ত্রিসীমানায় কখনও হারিয়ে গেলে,

তার একমাত্র যাত্রী বিহনে সেওহয় বড় অনুতপ্ত

অনুরণনে থাকে শুধু অনুশোচনা, সে রয় বড় অনুতপ্ত!  

 

কল্পনা।

 

যতবার আমি পৌছুতে চেয়েছি ভেনিস শহরে,

ততবার ঠিক ততবার ক্যাথলিক টাওয়ারের উচ্চতা

আমাকে তোমার হতে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে,

যতবার আমি ঐ গ্র‍্যনেডের বারুদগন্ধ সইতে গিয়ে পুড়ে গেছি,

ঠিক ততবার আমার পোড়া মাংসের গন্ধ বলে দেয় আমি 

এখানকার বাসিন্দা না,

আমি তোমার কেউনা,

যতবার যতবার ঐ গ্রিনিচ-মানমন্দিরে নিজের মান ভেঙেছি 

ঠিক ততবার আমার অপমানগুলো বলে দেয় পশ্চিমে সূর্যঢলে পড়ার খবর ,

সময়ের পর সময় ভাঙছে,

তুমিওআসবে ঠিক একইভাবে 

আমি ঢলে যাওয়ার মুহুর্তে

কিংবা দেখা গেছে শেষ কিরণের মত 

হেলান দিয়ে পড়ে গিয়েছি তুমি আসছ ছুটে

 

 

খাঁচা।

 

সে জানে সে তোমায় খাঁচায়পুরেছে

তাই সর্বত্র সে একটা শেকল নিয়ে ঘুরে

পাখী, তুমি যত দূরে উড়ে যাও

তোমার পায়ের নখ লোহার গারদে আটকে আছে

 

 

চলো দুজনে পৃথক হয়ে অজানা পথে 

পা বাড়াই,

আমি উত্তরে, তুমি দক্ষিনে যাও,

আমরা পরস্পরকে পরস্পরের কাছে হারাই

তারপর গোল সমভুমি ঘুরে,

গিরিপর্বত দেখে,পুব হতেপশ্চিমে কোনো এক ঈশান কিংবা 

অগ্নিকোনে মিলিত হই-হয়ে বন্যভাবে উদ্দাম,

বিচ্ছেদ পরবর্তী মধুচন্দ্রিমায় চন্দ্র অভিযানে যাই

তুমি আদম,আমি ইভ,

দুজনের দেখা হবে মর্ত্য হতে মর্ত্যের স্বর্গে,

স্বর্গ হতে স্বর্গের মর্ত্যে,

শুধু ইবলিশ কিংবা লুসিফারের অভাব,

চলো, গন্ধম ফল খাই

যে পাপ এতসুন্দর,যে পাপে তৈয়ার হলো সভ্যতা,

কেটে গেল সব বর্বরতার অমানিশা,

চলো আমরা প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরের প্রেম করি,

এক ক্রীড়াময় কবিতা লিখি,

তুমি হও চিত্রশিল্পী, আমি কবি,

তুমি হও পিকাসো আমি পিসায় হেলান দিয়ে কবিতা লিখি

যে পাপ এত মধুর সে মিষ্টি পাপে নিমগ্ন থাকি

কে বলেছে পাপ সেটা?! 

মিলনে যত বাধা

মুষ্টিমেয় মানুষ পরস্পরের সাথে সংঘর্ষচায় ,

প্রেম মিটিয়ে যখন থেকে তারা আধিপত্য করা শুরু করল,

তারা ভাব ভুলে বস্তু চিনল,

তারা প্রেমকেওবস্তুতে পরিনতকরল,

আর পাপ-পুন্যের বাটখারা আনল

আমি বলব পাপ হতেই যদি হয় সূচনা,

তুমি আর আমিই জাগতিক কাল ধরে পাপ করব 

এবং তারপরো ,ভুলে যেও না আমরা মহাকালের অংশ!

আমরা সবাই সবার অংশ,

তাইতো অংশের সাথে অংশ হয়ে অংশিদারিত্ব করি,

ক্ষনিক কিংবা চিরকালের জন্য!

ক্ষনজন্মার আবার চিরকাল কি

তোমার জন্য নিবেদন করলাম আমার কুড়ি বছর

এবংকালজয়ী অস্তিত্ব!!! 

প্রেমিক তুমি কি আমার প্রেম রবে

আমার প্রেম হওয়া মানে কষ্ট

আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি যেমন কষ্ট দিতে,

কষ্ট পেতে পেতে কষ্ট দিয়ে ফেলি অজান্তে!!! 

বলো তুমি আমার দেওয়া কষ্টের আছড় ভালবাস কিনা

বলো তুমি আমার ক্রোধের নির্বাপক কিনা

বলো তুমি আমার আগু গলিত সীসা কিনা

বলো তুমি গলে গিয়েও ইস্পাত হবে কিনা

বলো তুমি কি আমার চোখে নক্ষত্র তারা?

বলো তুমি আমি মহাজগত দেখব কিনা

বলো তুমি কি যাবে আমার সাথে প্লুটো দেখতে

বলো তুমি আমার প্লেটনিক কাল হবে কিনা

বলো তুমি আমাকে প্লাটিনামের ধুসর কড়িপরাবে কিনা

জ্বলবে যা আলোর মত,গলবেনা কোনো তাপে,

বলো তুমি আমার প্লাটিনাম হবে কিনা

বলো তুমি আদমের মত শক্তিশালী কিনা

ঈশ্বরের অভিশাপ প্রেমের খাতিরে মাথা পেতে নিয়েছিলে,

অথচ আমি হাওয়ার মত উড়ে উড়ে যাব,

অথচ আমি ইভের মত ইডেন হতে তোমার কাছেই থার হয়ে ফিরব

সইতে পারবে কি ছয় যুগের ব্যবধান

মনে রাখবে কি আমাকে দেবীর মত বিচ্ছেদে

দেবী তিরোধানে চলে যায় বলেই তার এত পুজা,

দেবীর আবির্ভাবের আশায় এত অঞ্জলি, এত ত্যাগ, এতবিসর্জন!

বলো তুমি আমার পুরোহিত হবে কিনা

অথবা আমি উচ্চাসন চাইনা,

হাঁটু গেড়ে বসব তোমার সাথে,

মহাকালকে পুছব দেখাও তোমার মহাসত্তা

যার অবয়ব আমরা অথবা আমাদের অবয়বে সে,

যার মধ্যে আমাদের গুন অথবা তার গুন আমাদের মধ্যে!!! 

 

 

আমার তুমিহীনতার গল্পজুড়েও 

তুমি আছো,তুমি থাক,তুমি থাকবে,

কালের মত

অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যত

তুমিতো আমার অপর,

আত্মার অংশ

ভালবাসা আসলে ভাল সময়ের 

স্মৃতি ছাড়া কিছুই নয়

অনুভুতি ও শিথিল হয়ে যায়

চলো, একসাথে স্মৃতি গড়ে গ্যালাক্সিতে হারাই

 

উন্মত্ত ক্রোধ হতে উৎসারিত কবিতা,

ছাঁইচাপা আগুনে তৈরি যে ছাঁচগুলা,

আকৃতি দেয় অলীক ধ্যানধারণা

নির্ঘুম রাত গুলা কথা বলে অমিত সম্ভাবনার কথা

যেমন সম্ভাবনা আমরা খোলা চোখে দেখতে পারিনা

অথবা খুব পারি অনুভবের পিচ্ছিল রাস্তায় হাঁটলে 

কিংবা অসচ্ছল 

কালের ডোবায় ডুবলে,

সাঁতরে উঠি ডাঙায় তবুও ভুলতে পারিনা

যা সত্য তা মিথ্যে দিয়ে ঢাকা,

সময় বলে অপেক্ষা করো,

আর কত কাল

কত কাল এভাবেই অপেক্ষা করব

চৌদ্দশতাব্দী ধরেই করছি অপেক্ষা

তবুও সময় করে উপেক্ষা

সময়ের দামকে বলে

সময়ও আমাদের গড়া,

ঘটনাগুলোর শুধু ছক কাটা, হাতে আঁকা,

সময় ত সময়হীন, আমরা সময়ের কদর বুঝিনা,

যেমনটা সময় বুঝেনা, ক্ষুদে মানবজমিন আর জমির,

ক্ষুদে জীবনে কত কাল করে খেলা

 

মহাকালের অংশ আমরা,

মহাকালেই মিলে যাব,

কর্মগুলাও মিলিয়ে যাবে,

রেখে যাবে অস্তিত্ব

অস্তিত্ব ? কিসের অস্তিত্ব

আত্মা ? শুধুসত্য,

আত্মারা কথা বলে,জড়ে ফুঁকে দিয়ে প্রাণের অস্তিত্ব

যার অবয়ব আমরা,সারসত্তা

মেঘ বলে বৃষ্টির কথা!

রোদ বলে সূর্যের কথা

পাহাড় বলে দূরত্বের কথা

আকাশ বলে অসীমের কথা

আমরা বলি সে মহাকাল,মহা অস্তিত্বের কথা,

যার অংশ আমরা

 

 

ধ্বংসস্তুপ হতে গড়া সাম্রাজ্যে 

দাঁড়িয়ে আজওভুলি নি অন্ধকার দিন গুলির কথা,

রোদতপ্ত দিনে রুপালি রোদ গায়ে মেখেও 

ভুলি নি অভ্র উজ্জ্বল ধুসর মেঘাচ্ছন্ন ছায়ার কথা!

ভ্রম, ভ্রম, ভ্রম,

মিথ্যেকাল-সবভ্রম!

মিথ্যে সে অপরাজেয় শক্তি অজ্ঞেয়বলে 

মানি ধন

ভ্রম, ভ্রম,ভ্রম,

স্বপ্নগুলো ভ্রমঃএকেকসময় একেকরকম

কাঠে আঁকা কারুকার্যে,

শিল্পীর নৈবদ্যে, চকচকে মেঝেতে দেখতে পাই 

যে ক্ষত বিক্ষত মুখ-কালক্ষেপনঃসবভ্রম; কালেরই দোষ

কাঠে বোঁনা ফুল, কাঠ ঠোকরাদের অভাবে 

বাগানে আজ ফোঁটেনা ফুল, ফোঁটে আমার ব্যালকনিতে,

ক্ষুদ্র আকাশের নিচে ক্ষুদে ঠিকানায় নেহাৎ ক্ষুদ্র আমরা 

করি ক্ষুদ্রতার জয়োৎসব!

ক্ষুদে পিপীলিকা,ক্ষুদে মাকড়শা,ক্ষুদে বালিরঘর,

ক্ষুদে জালে আটকা প্রজাপতি,

ভ্রম,ভ্রম,ভ্রমঃ প্রকৃতির ভ্রম

ক্ষনস্থায়ী যার জীবন মথে জন্ম নেওয়া 

পাতার মতই খসে পড়ে রং ঝরিয়ে,

রংহীন দুনিয়ায়

ভ্রম, ভ্রম,ভ্রমঃমিথ্যেকাল

মিথ্যে বুঁনন

ধ্বংসাবশেষও বলে এমন সভ্যতার কথা,

এমন আবিষ্কারের কথা, হাইপেশিয়ার দেহ

কতকালেই খুবলে খাবলে দেওয়া হয় যত মত

তরঙ্গের মত ভেসেভেসে আসে অদৃশ্য প্রজাপতিরা,

সব এক ভ্রম

 একেকটি জীবন বলে গুটিকয়েক জীবন আর কালের 

অভিজ্ঞতার কথন,

একেকটি জীবন পূর্ণ হয়ে শুন্য হয় নিদারুন শুন্যতার দরুন

পূর্ণতা?!সেও এক ভ্রম!

ভ্রম,ভ্রম,ভ্রমঃসবই এক ভ্রম,

 ভ্রমে বিশ্বাসে বিশ্বাসী জীবন

ফোঁড়ন, বিস্ফোরণ!

 

 

আমি ভালবাসতে গিয়ে ভালবাসা হারাই,

আমি কাছে আসতে গিয়ে দূরে চলে যাই,

আমি দলবদ্ধ হতে গিয়ে দলচ্যুত হই,

আমি সেরা হতে গিয়ে পরাজিত হই,

আমি সামনে দাড়াতে গিয়ে পিছিয়ে যাই,

আমি পেছাতে গিয়ে পিছপা হই,

তবুও আমি এমিবার মত স্লথ গতিতে তোমাদের 

কাছ ঘেঁষি,

তবুও আমিসামাজিক হবার সর্বাত্মক চেষ্টাকরি,

অথচ আমি কি অসামাজিক নাকি একটু ভিন্ন

অথচ আমার শৈবালের মত যেখানে থাকা উচিতনা 

সেখানটায়ও থাকি,

অথচ আমি ইটের গায়েও শিল্প আঁকি,

অথচ আমি গল্প করতে বড্ড ভালবাসি,

অথচ আমার গল্প শোনবার মত নেই কোথাও কেউ,

অথচ আমি হয়ে থাকি সবার মধ্যমনি,

অথচ আমি সবার গল্প শুনি,

কারন আমি জানি একেকটা জীবনের কি মানে,

আমি খুব করে শুনতে চাই অজানা গল্প অচেনাদের মুখে 

অথচ আমি প্রত্যেকের জীবন ঘুরে আসতে চাই যেন 

জীবন থেকে কঠিন সত্য আর কিছু নেই,

অথচ আমি সেইখানে পৌছুতে চাই যেখানে কেউ যেতে চায়না,

অথচ আমার চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই

সত্যি কি চাওয়ার কোনো শেষ হয়

সত্যি কি সবাই সব পায়

যদি পেয়ে থাকে তবুও কেন চায়

যদি চায় কেন তবে পায় না

কেন কেন সে এত চায়?

ভোগবাদী দুনিয়ায় বাড়ছে ভাব, বাড়ছে চাহিদা,বাড়ছে চাওয়া,

ভোগবাদীযুগে সবই কিনতে পাওয়া যায়,

অর্থ বড় অর্থহীন কিন্ত অর্থমেলা কঠিন

অর্থবোধক দুনিয়া আজ অর্থহীন-তাদের কাছে অর্থ, ক্ষমতা 

যাদের করতলে ,

অথচ অনেকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নদেখে,

এক স্বপ্নের জীবন কাটিয়ে,

বুকে স্বপ্নের মরা বীজ রোপন করেই পর পাড়ে পাড়ি জমায়,

স্বপ্নদের উত্তরাধিকার পত্র বিলি করে,

অথচ চাওয়া থেকে যে স্বপ্ন সেটি অধরা হয়ে রয়,

অথচ অধরা যে স্বপ্ন তাকেই ছুঁতে মন চায়,

অথচ সে যা পায় তাতে খুশি নয়,

এভাবেই সে দ্বন্দের জীবন কাটায় দ্বন্দময় প্রকৃতিকে স্বাগত জানায়

 

 

আমি রব আমারই মত 

এভাবে এমন করে চিরকাল

অথচ বদলে যাই প্রতিক্ষনে 

প্রত্যেকবার

আমি স্থির হতে গিয়েও পারি নি ,

পৃথিবী যেখানে গতিশীল,

আমি ধরিত্রীর মত ঘূর্ণায়মান,

 জীবনের আকস্মিকতায় টলমান

এইআছে, এইনাই,

সব আছে তবুও কিছু নেই,

নেই বলে দেখি সব আছে সবের জায়গায়

তবুও অখুশি চিন্ময়,

হয়ে রই প্রকৃতির ধ্যাণে তন্ময়,

সত্যি মানবমন আর মানব আচারের ন্যায় 

পরিবর্তনশীল আর কিছু নেই

 জগতের বিবর্তন,আমি বলব মনের বিবর্তনে 

সব বিবর্তনময়!

 

 

সময়কে সংকোচনের কোনো যন্ত্র যদি আমার থাকত

 তবে একটা বিকাল না হয় কাটিয়ে আসতাম তোমার সাথে নিবিড়ে

তারপর,ডুবে যেতাম নগরের দৈনিক নাগরিক কর্তব্যে!

আমার যদি থাকত একটা প্রাইভেট জেট

তবে, তোমার কাছে উড়ে আসতাম ক্ষনিক সময়ের জন্য

সত্যি, প্রেমের সময় অল্প কিছু সময়ের জন্য

বাকি সময় শুধু অপেক্ষা নয়ত তিতিক্ষা

একে অপরের উপর বিরক্ত না হয়ে চলো সময়কে সংকুচিত করে ফেলি,

 তোমার আর আমার একসাথে করারই বাকি আছে খুব বেশি?! 

 

ব্যাশ,  এভাবেই আমার শুধু একটাই 

কাজ থাকুক,

ব্যাশ ,এভাবেই আমি সপ্রতিভ রই 

তোমায় ভালবাসা প্রিয় তোমার কাছে থেকে,

ব্যাশ,এভাবেই আমি যুগে যুগে জন্ম নেই 

লাল শাপলার মত তোমার বিলেই ফুটে থাকি,

তুমি পাতা দিয়ে আমাকে ঘিরে রাখো

ব্যশ, একটাই আমার ধর্ম হোকঃ ভালবাসা

ব্যশ, একটাই আমার কর্ম হোকঃভালবাসা

ব্যাশ,একটাই শুধু প্রেম থাকুক কালজয়ী

তুমি হও সে প্রেমিক

ব্যশ,একটাই উপাখ্যান লিখব হাজার বছর ধরে 

তোমার নামে,

তুমি আমার প্রেম হও

ব্যশ,একটাই স্বীকৃতি আমার,আমি তোমাকে ভালবাসি

ব্যশ,একটাই অপরাধ আমার,তোমাকে ভুল বুঝি

ব্যশ,একটাই নাম হোক আমারঃভালবাসা

ব্যশ,একটা জিনিসেরই দাম দেইঃভালবাসা

ব্যশ,একটাই ঘর হোকঃভালবাসা

ব্যশ একটাই জীবন হোকঃভালবাসা

আমার নাম হোক ভালবাসা,তুমিও হও ভালবাসা,

আমার চেতনা হোক ভালবাসা,তোমার চেতনা ভালবাসা,

আমার ধ্যাণ ভালবাসা,তোমার ধ্যান ভালবাসা

আমরা হই ভালবাসা

আমরা রই ভালবাসায়,

আমরা হই ভালবাসা,

আমরা রই ভালবাসায়,

আমার জন্য তোমার ভালবাসা,

তোমার জন্য আমার ভালবাসা,

কঠিন ভালবাসা,ঝগড়ার ভালবাসা,

মধুর ভালবাসা,মিষ্টি ভালবাসা,

ব্যাশ,আমার একটাই শুধু কাজ থাকুক 

প্রিয় তোমাকে ভালবাসা

ব্যশ,আমার একটাই সময় থাকুকঃ

তোমার সঙ্গে কাটানো,

তোমাকে নিয়ে ভাবাঃপ্রিয় ভালবাসা

 

বিষাদে ছুঁয়েছে মন,

তুমি নেই পাশে,

তুমিহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত নই আমি,

ভুগি অপূরণীয়পরিতাপে

তোমাকে কাছাকাছি না পাওয়ার অবসাদ

গিলছি রোজ বন্ধনহীন এ শহরে,

তোমাকে না পাওয়ায় ক্লান্ত আমি বিরামহীন

ক্লান্তির ঘোরে কাটিয়ে দিচ্ছি ব্যস্ততম একেকটি দিন,

জীবনের উদ্দেশ্যে

শিথিল বন্ধনের এ শহর রোজ স্মরণ করিয়ে দেয় 

তোমার ভালবাসার কথা,

মোহের গন্ধে টগবগে ঘোড়ার মত চলমান এ শহর 

মনে করিয়ে দেয় তোমার স্পর্সের গভীরতা এবং 

নৈকট্যের প্রশান্ত স্থবিরতা

কি এক অলীক শক্তি এ ভালবাসায়,

যুগলবন্দীতে

সত্যি যারা এ সমীকরণ মেলাতে পারে না তারা অভাগা

দূরত্ব বুঝিয়ে দেয় তোমার কত গুরত্ব!

দুরত্ব বলে দেয় আমাদের ভালবাসার গভীরত্ব

তোমাকে না পাওয়ার বিষাদে মন আজ ক্লেদাক্ত,

মনের আকাশে মেঘ জমেছে,

বর্ষন হচ্ছে রোজ,

তুমি ছাতা হাতে এইখানে এই মরুময় উদ্যানে একটু এসো

আমি তুমিহীনতায় বড় ক্লান্ত

 

 

দেখ আকাশও বলে ভালবাসি,

চোখের মেঘ বার্তা নিয়ে হাসে, ভেসে এসে 

বলে উটকো হাওয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যাব তোমাকে 

দূরপল্লবী ঘেরা সবুজ পাহাড়ের দেশে

বলাকায় চড়িয়ে বলব ভালবাসি, ভালবাসি 

নাহয় তোমাকে শূন্যে তুলে শূলে ঝুলব 

তবুও কন্টকাকীর্ন পথে রক্ত ঝরাতে ঝরাতে 

গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে বলব ভালবাসি,

তুমি কষ্ট করে পাপড়িগুলো কুড়িয়ে নিও,

লেখা থাকবে একটিনাম-তোমার-ভালবাসি

 

 

ভালবাসার দাগ বয়ে বেড়াই চিরকাল 

ভালবাসা তুমি করেছ আমায় মহান

এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে কাটিয়ে দেই জীবন

প্রত্যেকটা মানুশকে ভালবাসতে গিয়ে খন্ডিত হয়ে গেলাম

 

 

পরিবেশ তোমায় গড়ে,

পরিবেশ তোমায় ভাঙ্গে,

পরিবেশের প্রভাবে তুমি ধার্মিক,

পরিবেশের প্রভাবে তুমি অধার্মিক,

পরিবেশের বাছবিছারে আমরা বিশ্বাসী,

সেটার জন্যই আমরা অবিশ্বাসী

একেক পরিবেশে একেক রকম উপাদান,

জল,মাটি,বায়ু,মানুষ,আচার-ব্যবহার, অভিজ্ঞতা,

তাইতো একেক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মানুষ একেকরকম

বস্তুত মানুষের প্রতিষ্ঠা লাভের লড়াই 

পরিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াই

উন্নত পরিবেশে যাওয়ার চিন্তা,

কিন্তু সে ভুলে যায় পরিবেশের প্রভাব হতে মুক্ত নয় কেউ,

এ কারনে সাধু সাবধান, পরিবেশ বাছাইয়ের ব্যাপারে সাবধান,

কিন্তু যে পরিবেশে বেড়ে ওঠাতাকে কিভাবে ত্যাগ করা?! 

মুলত আমরাই পরিবেশের অনুষঙ্গ

পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত উদ্দিপকে উদ্দিপ্ত

মনের গহীন কোনে, প্রতিটি চিন্তা চেতনার অনুরণনে যা লুপ্ত

এবং সক্রিয়

বিশ্বাসে, চেতনায়, ভাবনায়, কর্মে যা প্রতিফলিত

 

সন্ধ্যাতারা 

রাতের সকল সন্ধ্যাতারা সুপ্ত হয়ে থাকে দিনের আকাশে

রোদ্দুরের প্রয়োজনে আলোকিত করবার উদ্যোগে পাহারা দেয় নীরবে

সরব হয় রাতে আবার খোদ বিকশিত হতে!! 

বিকাশই সৃষ্টিশীলতা যেখানে,

সৃষ্টি হয় হয়ত বা বিকশিত হবার জন্যে

নিজেকে মেলে ধরার জন্যে যা এতদিন ছিল সুপ্ত

জেগে উঠে যেন কিসেরই শিহরণে!

 

তরুন, চলো তুমি আমি মিলে

একবুক ভরা ভালবাসার পৃথিবী সাজাই

ভালবাসার চারা রোপণ করে বা গান বানাই,

এরপর ওখানে ভালবাসা নামক জ্ঞান বৃক্ষ হবে,

তারপর ওখানে ভালবাসা নামক ফুল ফুটবে

তারপর ওখানে প্রজন্ম হতে প্রজন্ম শুধু ভালবাসার শিক্ষা 

দেওয়া হবে

সবাই শুধু ভালবাসতে জানবে,

এর বৈকি আর কোনো নফস এরা চিনবেনা

কেমন হবে বলোত

তরুন তুমি কি আমার অভিসারী হবে

এমন পৃথিবী গড়ার কারিগর হবে

শিল্পীর শিল্প অথবা শিল্পের শিল্পী 

কোনটি হবে

তুমিহও, আমিও হয়ে যাই,

হও বললেই কিসব হয়ে যায়?!

তুমি আমাকে ভালবাসা শেখাওআমি কখনও ভালবাসা দেখিনি

 

 

অথচ আমি ভেবেছিলাম সন্ধ্যাতারা

ঠিকই আসমানের ঈশানকোনে একটু উঁকিঝুঁকি মারবে!

আমার খোঁজকরবে

কিন্তু কোথাও দেখিনা কোনো ব্যাকুলতা, সব আকুলতা যেন নিমিষে শেষ হয়ে গেছে!

বিগত যৌবনা সময়, যত এগিয়ে যায়,ততই পিছনে ফেলে যায় মানুশকে!

অথচ, কত কিছু জানার ছিলকত কিছু বলার ছিলএকটা অলিখিত হলফনামায়

হাওলাত করা বাকি ছিল

সন্ধ্যাতারা সাঁজের বেলায় মিলিয়ে গেছে! তুফানের বলয় নিরুত্তাপ হয়ে গেছে

কথা ছিল, সরোবরে নীলপদ্ম হয়ে ফুটবে বাঁধনহারা বন্ধন

বেদনার পথে পা বাড়াই অতি সন্তর্পণে যেন এটাই অভীষ্ট

উচ্চতায় এখনো পৌছা বাকি- শিখর দেখা এখনও হয়নি 

কিছু কথা না হয় থাকুক সময়ের গোপনে,  যেমন গোপন থাকে

কিছু কিছু চাওয়া পাওয়া গোপনীয় সিন্ধুকে

বর্ষণ হয়ে নামবে সেসব অলিখিত চিঠি সুদিন পেরিয়ে আসা

স্মৃতিকাতর বিরহের লগ্নে

কিন্তু, একান্ত অভিলাষবৃষ্টি হয়ে নামার আগে মেঘ হয়ে জমে থাকুক ভালোবাসা

জমে থাকুক কিছু স্নেহ মাখা ভালো লাগা-কিছু পরশ স্পর্সে পরশমনি হবার জন্যে মুখিয়ে থাকে,

বিহবল বাহুডোরে আটকা বন্ধনহীন মায়া যেন কার খোঁজ করে

জলাশয় হতে চাই তাই জমিয়ে রাখতে একফালি রোদ্দুর আর একফালি বৃষ্টি,

 ডুবুরি হয়ে আসো তুমি, লড়াকু সাঁতারু, অনেক গভীরে যেতে হবে হারিয়ে যেতে পারো

এ কথাও মাথায় রেখো 

একান্ত সরোবরে স্থান পাওয়া একটি বিরলপ্রজাতির নীলপদ্ম-

 নিরবিচ্ছিন্নভাবে রয়ে যায় আস্থারচাষে

অথচ, তোমার নাকি গোলাপ পছন্দ কন্টাকীর্ণ বলে

ভালবাসার অভাব হলেও চলবে, একটু খানি মর্যাদার দরকার কেবল

ভালবাসার অভাবে মরে না নীলপদ্মরা, সম্মানের আকালে ঝরে পড়ে সব সুখ 

তুমি বললে, মর্যাদার অভাব হবেনা কখনও

বৃষ্টির মত ছুঁয়ে দিব তোমায় সর্বাঙ্গঅন্তরে যে থাকে সে দূর হয় না কখনও 

কিন্তু, সব আকুলতার একটা শেষ আছেরাতেরওপরে শুভ্র দিন আসেবর্ষাকে ভালোবাসলেও বিজলী কে চায়! ঠিকই, তার গর্জনে বুক কাঁপে

আমি না হয়, দমকা হাওয়ার ঝড় হয়েই তোমার জীবনে এসেই মিলিয়ে যাব

মহাকালে আরেকটি নগর পতনের ইতিহাস হয়ত রচিতহচ্ছে

তুমি বললে, আগমনের আগেই প্রস্থানের চিহ্ন কেন এঁকে দিলে প্রিয়..? 

আমি বললাম তাই তোমায় নাম দিলাম সন্ধ্যাতারাপুব আকাশে যা সুপ্ত থাকে 

 

 

যে বিদ্রোহী শিশু অবাধ্য হয়ে ওয়াকারে না চড়ে নিজের পায়ে হাঁটতে চাইবে পার্কের রেলিং ঘেঁষে

স্বভাবত সে শিশু হোঁচট খাবে, ব্যথায় ছটফট করবে

কিন্তু, ওয়াকারে চড়া খোকাটি কখনওমায়ের কোল ছেড়ে নামতে পারেনাঅন্যদিকে, হোঁচট খাওয়া শিশুটি হোঁচট খেতে খেতেপার্কের ঝরঝরে বালির ভেতর একটা প্রত্নতাত্ত্বিক খেলনা পেয়ে গেছে 

অবাক বিস্ময়ে সে খেলনাটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকেবাচ্চাটি তার বিদ্রোহের প্রথম পুরষ্কার তার মা বাবার হাতে তুলে দেয় 

 

 

তোমার মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা,

তবুও, তুমি চির সুন্দর

ভালোবাসাত একবারই হয়

তুমি আমার চোখে একটু অন্যরকম 

আমাদের প্রথম চুম্বনের শিহরণ এখনওভুলতেপারিনি 

তুমি আছো আমার হৃদয় আর মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরনে নিউরনে,

 ধমনীর রক্তপ্রবাহে 

আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি 

ভালোবাসা থেকে নিস্তার পাবার উপায়?! 

নিরুপায় আমি

কোনো উপায় নেই-যত ক্ষুদ্রতা, যত সংকীর্ণতা,

 যত ছোটলোকপনা, যত অভাব থাকুক

না তোমার ভেতর,

তোমার বিকল্প শুধু তুমি

একসুন্দর দায়বদ্ধতা তুমি!

 

ষড়যন্ত্রকারী তরুণ বলল,

পদ্মার মত বিধ্বংসী হতে চাই

সব গিলে খাব 

স্বপ্নবাজ তরুনেরা বলেছিল, পদ্মাসেতুর মত হব,

উত্তরের সাথে দক্ষিনকে এবার মেলাবো 

ষড়যন্ত্রকারীরা হেসেছিল,

 দম থাকলে পশ্চিম থেকে ভিক্ষা না চেয়ে নিজস্ব অর্থায়নে করে দেখাও 

স্বপ্নবাজ তরুণ বলেছিলো, তাই হোক তবে

তিলে তিলে ধীর পায়ে তরুন তা করেই দেখালো 

অতঃএব, পদ্মাসেতু যেনবা একটা জাতীয় প্রতীক হয়ে উঠল,

পূর্বে সূর্যের মতএকা জ্বলজ্বল করে উদিত হয়েছে

আশা জাগানিয়া আজানের ধ্বনিতে সবার ঘুম ভাঙ্গিয়েছে 

বাঙালি একাত্তুরে পেরেছিল, বাঙালি বাইশেও পেরেছে 

একটা চিতার মত সে দৌড়াচ্ছে 

একটা সূর্যের মত সে একলা জেগেছে 

 

 

মাথার ভেতর সুক্ষ্ণ একটা ঝোঁক আছে,

মাথার ভেতর নাকি মনের ভেতর নাকি আত্মার ভেতর,

কোনটির ভেতর জানিনা কিন্তু কিছু একটার ভেতর একটা 

অপার্থিব ঝোঁক আছে,

এই ঝোঁক পাগলামি নাকি উন্মাদনা নাকি স্থবিরতা 

নাকি উর্বরতা নাকি বিফলতা নাকি সৃষ্টি অথবা ধবংস 

তা জানিনা,তা জানিনা,

মাথার ভেতর একটা ঘুণপোকা আছে,

যেমন ঘুনে ধরা কাঠ, ঘুণেধরা গুনধর সমাজ,

মাথার ভেতরের পোকাটি কুইকুই করে,

কামড়েধরে,

হতাশকরে

ঝাপসাকরে,

মাথার ভেতরে কি দেহের ভেতরে একটা ঝোঁক আছে,

নির্লিপ্ত অবুজ দুর্বোধ্য ঝোঁক আছে,

অনাহারি অতৃপ্ত মন আছে,

বাসনা কামনা লালসা কিছুই নেই অথবা আছে,

প্রকটভাবে বটবৃক্ষের মত মূলে মূলে পাতায় পাতায় 

হাজার বছর ধরে আছে,

মাথার ভেতরের ঝোঁকটি এগুতে দেয়না,

 পিছপাও হতে দেয়না,

সম্পূর্ণভাবে আমাকে আমার হতে দেয়না,

অথবা এই ঝোঁকটিই আমার আসল বেদনা,

আমার স্বরূপ আমাকে আমার করেই রাখে

আর কারুর হতে দেয়না,

আমি যা চাই তা পাইনা,

এই ঝোঁকটি তার কারন,

কারন আমি যা চাই তা সকলে চায়না,

আমি যা পাই তা নিতান্ত আটপৌরে লাগে 

তাতো চাইনা,

এই ঝোঁকটি বারণ করে,

আমার রুচি আমার চাহিদা আমার ইচ্ছা 

আমার দীক্ষা আমার অভিজ্ঞতা,

সবকটিইএই মাতাল ঝোঁকের বশে করা,

আমার ঝোঁক যা আমাকে বাড়তে দেয় না,

আমার ঝোঁক যা আমাকে কমতে দেয় না,

......এতো এক বিস্ময়! এতো এক নির্বিকার 

অর্থময় কিংবা সবচেয়ে নিস্পৃহ অর্থহীন 

দরকারি অথবা অদরকারি বোধ,

এক অনিশ্চিত দীপ্তিময় অথবা তিমির ঘন 

সুচিন্তিত অথবা ভাবলেশহীন,

ভাবালু অথবা ভাবনাহীন,

বিবেকসম্মত অথবা চালচুলোহীন -এক নিবিড় সংযম-এক অবিচল 

চিন্তন-এক অনোন্যপায় পর্যায়-এক কিংকর্তব্য বিমূঢ় অন্তহীন দিকদর্শন-

এত আত্ম নিশ্চয়,এক-পরম্পরা,এক-অন্তর্দশন,এক ধাবমান 

পরিণতি-আমার অন্তর্ধান,আমার অভিজ্ঞা, আমার প্রতিক্ষণ,

আমি যেন স্থির ভাবে চলমান!

গতিতে মৃত,মৃত হয়ে বিমূর্ত,

অপসারণে দক্ষ,গ্রহনেও অতি সতর্ক কিন্তু গ্রহীতা-আজাদ ভুখন্ড!

অথচ সবচেয়ে পরাধীন-নিজের ঝোঁকের কাছে আনত অধীন,

কারন আমি বুঝতেপারিনা ,বুঝেও কিছু করতে পারি না,

এবং জানি না আসলেও জানিনা, তা কি চায় ,কি চায়না,

আমি এক মুর্তিয়মানপ্রতীক,বশবর্তী, প্রতিক্রিয়াশীল

অধীন-ভাবজগতের দৃশ্যমান অলীক পার্থিব উদাস যান -মানবী!

আমার ভাষায় খুঁজো না কোনো অভিধান,

 খুঁজতে যেও না কোনো ব্যাকরণিক ভাষিক জ্ঞান,

আমার কথার অর্থ বুঝো কেবল

খুঁজতে যেও না তাতে দেশ কিবা উপনিবেশ,

তাতেই হবে সাড়া, চলে যাবে ত বেশ!! 

চলে যাবে তাতে বেশ

 

নিখাদ জলের উৎস যেটি- নদীর স্বাভাবিক গতিপথ,

 কে রুদ্ধ করে তারে, কে বাঁধবে তাতে বাঁধ?!বেড়ি বাঁধ?! 

ফারাক্কা অথবা টিপাই মুখবাঁধ?!

আটকে দেওয়া হলো বুঝি তার স্রোতধারা,

প্লাবন হয়ে ভাসায়, করে সে সর্বশান্ত, দিশেহারা

 

অন্ধকার কক্ষের দরজা দমকা হাওয়ায় খুলে যায়,

অন্ধকার কেটে যায়,

ঘর আলোয় ভরে যায়,

আবার কেউ দরজা আটকে দেয়,

আলোর পথকে রোধ করে,

আলোকে টুটি চেপে মেরে ফেলে

কি সুন্দর-আলোর যাত্রার গতিবিধি অন্ধকারের হাতে?

অন্ধত্বের রাজত্ব,

অন্ধকারের দাপট,

কি সুন্দর অন্ধকার বলে আমি সর্বত্র,

কিছুই করতে পারবেনা আমার,

মুক্তি?

কিসের মুক্তি?! 

সেতো অন্ধকারের হাতে-আলোর মুক্তি

অন্ধকারের কথন

 

 

তুফান ধেয়ে এসেছে,

অথচ রোদও উঠেছে,

রোদ-তুফান তুফানি বাতাস ছেড়েছে,

মনের মধ্যে ঝড়,প্রকৃতিতেও ঝড়,

ঝড় সবখানে,

মরুর বুকেও ঝড়,

মরুঝড়,

সমভুমিতেও ঝড়, জলোচ্ছ্বাস

আরবন্যা,

অথচ এইখানে মেঘেদের সাথে রোদহাসে,

অথচ এখানে রোদের সাথে বৃষ্টি নামে,

অথচ এখানে রোদের সাথে সাইক্লোনের প্রকোপ পড়ে,

আমার পথ রোধ করে কে?

ঝড়,তুফান,সাইক্লোন,বন্যা,জলোচ্ছাস,খরা

নাহ,সবইতো এক সমান্তরাল রেখায় চলে

সবকিছু আসে ধ্বংস করার জন্য,

আবাদি ফসল নষ্ট করার জন্য,

মেহনত লব্ধশ্রম,সোনালি মাঠকে চূর্ণ করার জন্য,

সবখানে শুধুই আহাযারি,

কার ক্রন্দনকে শুনে?

কার হবে সময়?

ব্যস্ত সবার ছোটাছুটি দেখি,

ব্যস্ত সবাই হন্য হয়ে ঘাট,মাঠ,প্রান্তর চষে বেড়ায়,

গরুর মত? তৃণপ্রানীর মত?

না, তা কেন হবে নিছক অর্থে তাদের এ ছোটাছুটি নয়

তারা ছোটে তাদের একটা স্বপ্ন আছে,

সে স্বপ্নের তরে,

তারা ছোটে তাদের একটা গৃহ আছে,

সেটার টানে,

তারা ছোটে তাদের উচ্চাশা আছে,

 মোহ আছে,

সেটার পিছনে,

তারা ছুটে তাদের ছোটার কারন আছে

কেউ কেউ এমনি ছোটে শুধুই ছোটার জন্য

আমি কিসেই দলে ছোটার চড়ুই নাকি না ছোটাদের দলে?

কই,সব ঝড়েই তো ছুটে বেড়াই আনমনা আপনমনে

 

 

 

তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি,

তুমি কাঁদলে আমার হিয়া কাঁদে,

পাথরের ফাঁক গলে নহরের মত অশ্রু 

ঝরে,তুমি কাঁদলে তোমার সাথে আমিও কাঁদি,

দূর হতেও তোমার আমার ভালবাসার তরঙ্গ 

সমস্তধরা,কসমিক জগতকে কাঁপিয়ে দেয়,

হয়তবা প্রকৃতি যেমন ভাবে আমাকে তোমাকে এক করেছিল

তেমনিভাবে প্রকৃতি ও বিরুপ হয়ে যায় আমাদের বিচ্ছেদের 

বিরহে,ভালবাসি এবার বলবনা প্রমান করব,

কোনো কিছুতে অশুদ্ধতা থাকলে তবেই প্রমান করতে হয়,

আমি প্রমান করব আমার ভালবাসা বিশুদ্ধ একটু অবুঝ এই আরকি-

তোমার ভালবাসা পবিত্র

তুমি জিতে গিয়েছ,

আমি হেরে গিয়ে জিতে গিয়েছি

কারন ভালবাসার কাছে হেরে যেতে হয়,

ভালবাসা মানে না কোনো পর্বত

ধরা হতে ধরায় জানিয়ে দেব তুমিশ্রেষ্ঠ 

তোমার ভালবাসা উত্তম-একমাত্র বৃহৎআকাশই 

পারে মেঘকে ধারণ করতে,সইতে মেঘে-মেঘের সংঘর্ষ,

একমাত্র আকাশই পারে তার বুক পেঁতে দিতে,

ছিঁড়ে ফেলে  বজ্রযানী,সয় বজ্রধ্বনি,

বজ্রপাতের উৎস এবং ধারক রহস্য!

নিনাদ শুনেও আকাশ বুক মেলে বলে 

তুমি আমার অংশ,

মেঘ,বাষ্প,বৃষ্টি,আলোকপাত এসবই প্রকৃতির অঙ্গ

 

সব বিচ্ছেদ হতাশাজনক না,

কিছু কিছু বিচ্ছেদ আশা প্রদায়ক,

সববিচ্ছেদ মানেই শেষ না,

অন্তের পরও থাকে অন্তমিল,

কিছু কিছু বিচ্ছেদ আসে জোড়া দেওয়ার জন্য

যা ভেঙে যাচ্ছিল,

কিছু কিছু বিচ্ছেদ হয় সাময়িক চিরকাল এক থাকার জন্যে

ভালবাসার সাতটি অবস্থা,সাতটি ধাপ------

ভালবাসার প্রথমধাপ-ভাললাগা,মোহ,আকর্ষণ,

ভালবাসার দ্বিতীয়ধাপ-যোগাযোগ,সান্নিধ্য,

ভালবাসার তৃতীয়ধাপ-একসাথে সময় কাটানো,

ভালবাসার চতুর্থধাপ-পরস্পরের সন্নিকটে আসা,

স্পর্স,গন্ধ,গল্পের মাধ্যমে একে অপরকে জানা,

পরস্পরে বুঁদ হয়ে থাকা,

ভালবাসার পঞ্চম ধাপ-মিলিত হওয়া

ভালবাসার ষষ্ঠ ধাপ-সিদ্ধান্ত নেওয়া

ভালবাসার সপ্তম এবং সর্বশেষ ধাপ বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়া

দেহের সাথে দেহের মিলনের পরে যদি আত্মার সাথে আত্মার 

আত্মিক মিলন না ঘটে তবে বুঝে যেতে হবে তা ছিল ক্ষনস্থায়ী ভালবাসা আর আত্মার সাথে আত্মার সংঘর্ষ ঘটবার পরও যেটা 

টিকে থাকে সেটা অদম্য ইচ্ছাশক্তির ভালবাসা একধরনের মাদকতা

তুমি নিশ্চয় তার আত্মা কে ছুঁতে   পেরেছ যার জন্য সে তোমাকে ছাড়তে অনিচ্ছুক,ব্যতিক্রম শুধু সে তোমার আত্মা স্পর্স করতে পারেনি,

এক পক্ষীয় ছোঁয়াছুঁয়ি কি সম্ভব?

কিছু কিছু বিচ্ছেদ হয় আত্মার পরীক্ষন,

পরীক্ষা করা হয় যে অপরজন এত দিন দেহকে পাওয়ার জন্য 

যেমন কাতর হয়েছে,মনের উপর রাজত্ব করেছে,

সে ঠিক কতটা বেপরোয়া হতে পারে আত্মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য,

আত্মিক উন্নতি ঘটানোর জন্য

আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলার জন্য

বিচ্ছেদ পরবর্তী সিদ্ধান্ত হয় আসলে কে কার জন্য তৈরি ছিল

কে কার বিধান হয়ে ধরায় এসেছিল

 

 

 

যেখানে একপক্ষের ভালবাসা অনেক 

ঢের থাকে সেখানে আরেকপক্ষ শীতল 

হলেওগলে যায়,

গলে যেতে বাধ্য হয়

ঠিক ত খুব চালাক নাহলে কেউ ভালবাসা অর্জন 

করতে পারে না,

ঠিক ত খুব বোকা নাহলে কেউ কাউকে ভালবাসেনা

বোকা থেকে চালাক হয়ে গেলেই সব সমস্যা,

যে ভালবাসা নিতে জানে সে কখনও চাইবে না 

তুমি চালাক হও,

আর যে ভালবাসা দিতে থাকে সে কখনও বুঝতেপারে না 

সে খুব বোকা,দিয়েই যাচ্ছিল কেবল

ভালবাসা এক জটিল ধাঁধা,সবচেয়ে কঠিন ক্রীড়া,

কে কখন কোথায় জিতল কে কখন কোথায় কেন হারল 

কেউ বলতে পারে না,

ভালবাসা নিয়ে গবেষনা?পরীক্ষণ-নিরিক্ষা তা চলে না!

তুমি কেন ভালবাসো তা যেমন তুমি জানো না তেমনি 

তুমি কেন ভালবাস তা জেনে ফেললেও কেন ভালবাসতেই 

থাকো তাও তুমি জানো না,

হয়ত বা তুমি নিরুপায় কিংবা উপায় থাকলেও তুমি যাকে 

একবার ভালবেসে ফেলেছ তাকে কষ্ট দিতে চাইলেও পারো না,

তুমি স্বাধীন হতে চাইলেও ভালবাসার গন্ডিতে আবদ্ধ থেকে স্বাধীন 

হতে চাও একে মন আপাত বিরোধী কথাবার্তা!

তুমি দুটোই চাও,

এক স্বাধীনতা,

দুই ভালবাসা,

হয় তুমি দুটোই একসাথে পাওয়ার মত যোগ্য র্জন করো

এবংকৌশলি হওঅথবা তুমি একটির কাছে আরেকটি ত্যাগ করে ফেল,

বস্তুত এভাবেই তুমি পরাজিত হও

ভালবাসা একটি পরীক্ষা,

পরীক্ষায় সফল হতে হলে ক্রমাগত প্রস্তুতি নিতে হয়,

যারা প্রস্তুতি নেয় না তারা অকৃতকার্য হয়,

যারা সর্বদা প্রস্তুত থাকে তা রাজিতে যায়

ভালবাসায় জিততে হলে সমান ভাবে খেলতেহয়,

একপক্ষ জিতে যাবে আরেক পক্ষ হেরে যাবে তা হয় না,

আত্মিক মৃত্যু ঘটে যায়,

তাই ভালবাসার আগে নিজেকে ভালবাসার মর্যাদার জন্য 

প্রস্তুত করতে হয়,আগে নিজেকে গড়তে হয়,তারপর অপরকে

ভালবাসতে হয়,

তুমি যদি নিজেকেই না চেন অপরকে চিনবে কিভাবে?

তুমি যদি নিজেকেই না ভালবাসো অপরকে কিভাবে ভালবাসবে?

তোমার কাছে যদি ভালবাসা নাই থাকে দেয়ার মত তুমি কাকে কি দিবে?!

তুমি যদি নিজেই অসম্পূর্ণ হও তুমি অন্য কাউকে কিভাবে সম্পূর্ণ করবে?

তুমি যদি জীবনের সব খেলায় হেরে যাও ভালবাসার মানুষের কাছে 

জিতে যাবে এটা কিভাবে ভাবতে পারো?

তুমি যদি প্রতিকুলতার কাছে নতি স্বীকার করো তবে ভালবাসার মত 

মহৎ ত্যাগ তুমি কিভাবে করবে?

তুমি যদি ভালবাসো তবে বিচ্ছেদ এবং ত্যাগ স্বীকার করার ক্ষমতা 

তোমার মধ্যে থাকতে হবে,

সববিচ্ছেদ মানে অন্তিম বিদায় না,

কিছু কিছু বিচ্ছেদ সংঘঠক,

তোমাকে গড়ার জন্য অনুশাসন অথবা পরীক্ষন,

তাতে তোমার সফল হতেই হবে,

যদি না হও তবে তুমি হেরে গেছ,

প্রথমত জীবনের কাছে,

দ্বিতীয়ত যাকে জীবন মনে করেছ তার কাছে

©®

অতীতের শিখা তোমাকে বর্তমানেও 

পোড়ায়,তুমি দগ্ধ হয়েও আরো পুড়তে চাও,

আসলে আগুনের স্পর্স একবার পেলে তুমি 

আগুন হতে চাও,

হয়ে যাও আগুনের স্পর্সমনি,

তুমিআগুনকেছুঁতেকয়লাখনিতেযাও

সেখানে হীরা খুঁজে পাও কিন্তু তোমার হীরা সম্পর্কিত 

জ্ঞান কম থাকায় তাকে কাঁচ ভেবে ছুঁড়ে ফেলে দাও

তুমি আগুন খুঁজতে থাকো,আগুন জ্বালাতে চাও

কিন্তু সে আগুন তোমার ঘরবার পুড়িয়ে দিলে 

তুমি আগুনকে দোষ দাও,

কিন্তু বিধ্বংসী আগুন ধরল কিভাবে তা তুমি 

জানতে পাওনা,জানতে চাওনা

যে আগুন জীবন আনে সে আগুনে জীবন প্রদীপ নিভে যায়,

যে আগুন উত্তাপ দেয় সে আগুনেই সব ঝলসে যায়

অতীত তেমনি একটা আগুন যা তোমাকে নিভতে দেয়না,

অতীত তেমনি একটা আগুন অদুর ভবিষ্যতেও যার উত্তাপ 

কমবেনা,

অতীত তেমনি একটা আগুন বর্তমানকে পুড়িয়ে দিচ্ছে,

বর্তমানকে বাঁচাতে হলে আগুনকে ঠান্ডা করতে হবে

শীতলীকরণ

কিন্তু বর্তমান আশা করে পরিবর্তন

বর্তমান বলে আর নয় উত্তাপ এবার জলের 

 এবংহাওয়ার সাথে হোক আগুনের মিতা,

প্রকৃতির মৌলিক তিনটি উপাদান হোক বন্ধুত্ব সুলভ

মাটিতেই যেখানে জলের আবির্ভাব,

মাটির নিচেই যেখানে জমে থাকে লাভা,উপরে হাওয়া 

আর যে হাওয়া আগুন বাড়ায়,

প্রত্যেকে মিলে এক হোক বন্দনা করুক তবুও থাকুক 

পরস্পর বিরোধী, তবুও বিপরীত হয়েই কাজ করে যাক,

তবুও বিপদ না হলে জল আগুনের পথে না আসুক,

হাওয়া উস্কানি না দিক আগুন বাড়ার,

আগুন আর না পোড়াকআর কত পোড়াবে?

কিন্তু পোড়ানোই যার ধর্ম তাকে কিভাবে পরিবর্তন করবে?!

আগুন ভয়ংকর

সচেতনতা সর্বাগ্রে হতে হবে,

আগুন নিয়ে খেলা কোনো জল খেলা নয়,

জলের সমুদ্রে,গভীর খাদে সাবধানে সাঁতার কাটতে হবে

ঝড়ের প্রকোপে পড়া যাবে না,

প্রকৃতির সাথেকে যুদ্ধ করে?!

যেখানে তুমি নিজেই প্রকৃতির অংশ,

প্রকৃতিকে কিভাবে হার মানাবে??!

তরুন, কিভাবে বুঝবা তুমি এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে জড়িয়ে গেছ?! 

তুমি তোমার প্রতিটা কাজে তাকে অনুভব করো

তার উপস্থিতি কামনা করো 

 

তরুন, তুমি কিভাবে বুঝবে তুমি কাউকে নিজের অংশ বানায়া ফেলছ?! 

তুমি তার ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারো না, একবার শুধু তার থেকে দূর হয়েই দেখ!! 

তরুণ, কিভাবে বুঝবে তুমি কাউকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলছ?! 

তুমি, তাকে দেখা ছাড়া অন্ধ!! 

এবং, বেঁচে থাকার সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেল 

ভালোবাসার উপর হতে সমস্ত অস্তিবাচক বিশ্বাস হারিয়ে ফেল!! 

 

 

তুমি এমনেকটা ঢেউ যার জন্য ভেঙে গেছে নদীরতট

এমনভাবে ভাঙল নদী

ভাঙল সাঁকো

ভাঙল পাড়,

দ্বিতীয়বার, আর নদীর সাহস হয় নি জোড়া দেবার !! 

 

 

 

ভালোবাসি ভালোবাসা অনেক বেশি

অনেক অনেক বেশি

মরে যাব, মরে যাব, মরেই যাব,

হারালে তোমায় আমি হারায়ে যাব

হারায়ে যাব!!! 

 

শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমারে কাছে চাই,

তোমার হাতেই আমি মারা যাব

তোমার কারনেই আমার মওত হইবে 

 

আমিমরেযাব, তোমারেহারালে

আমিমরেইযাবমরেযাব৷

 

তোমারবিনেএকসেকেন্ডওহায়াতনাদিকখোদা,

আমিতোমারেছাড়ামরেইযাব!! 

কতবারমরছিজানো?!! 

 

মরতেমরতেবেঁচেগেছি, সেখবরকিরাখো?! 

 

©® ফারহিনন্যান্সি

তুমিএমনেকটাগোলকধাঁধা,

যারউত্তরবেরকরতেগিয়েসবপ্রশ্নহারায়েগেছে,

হারায়ে গেছে ইতিহাস,

হারায়ে গেছে সভ্যতা,

হারায়ে গেছে উপাখ্যান

ফেরানোর মত কাল কখনও ফিরে আসে নি!! 

 

 

তুমি এমনেকটা নাটকের অংশ যেটার চরিত্রায়ন করতে

গিয়ে নাট্যকার ভুলে গেছে গল্পের কথা

ঘটনা কোথা থেকে কোথায় গিয়ে মেলালো সুর

কোথা থেকে শুরু হয়ে হলো কোথায় শেষ?! 

দাঁড়ি, কমা, কোলনের জুড়ি মেলানো হলো ত বেশ!

 

গোলমেলে হয়ে গেল পর্ব,

গোলমেলে হয়ে গেল অঙ্ক,

গোলমেলে হয়ে গেল চিত্র,

গোলমেলে হয়ে গেল কাহিনি,

 গল্পের নামল ঢল

 

তুমি এমনেকটা কাব্যের পদ,

যে কবিতা লিখতে গিয়ে কবি হয়ে গেল হতাহত,

 রক্তাক্ত হলো হাত,

এরপর, অনেক সময় গড়ালো,

অনেক ঝড়, অনেক বসন্ত আসল গেল

তোমার কোনো পরিবর্তন হলো না

 

পরিবর্তিত হলো শুধু আমার তোমাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি 

অতপর, আমি আবিষ্কার করলাম,

 শুধু এই দেখার তরিকা বদলানোর মধ্যে নিহিত থাকে সব চিন্তাশক্তি-বাস্তবতার অভিমুখ!! 

 

আমার বিশ্বাস ছিল যে আমি তোমাকে পরিবর্তন করতে পারব,

আমার বিশ্বাসের উপর বিশ্বাস রেখে ঠিকই আমার বিশ্বাসকে জিতিয়ে

দেবার জন্য তোমাকে শত সালাম

আমার বিশ্বাস ছিল একদিন সব সুন্দর হবে

বিবর্ণ বিকাল সোনালি অর্জনে পরিণত হবে,

তাই হইলো

 

আমার বিশ্বাস ছিল এসব অমানিশা কেটে যাবে

পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে, আমরা নগরের নাগরিক ঠিকই 

ছাঁদের কার্নিশে জ্যোৎসা বিলাসে মজে থাকব 

তাই হইলো

 

আমার বিশ্বাস ছিল এসব আমি-তুমি

তোমার-আমার করা একদিন বন্ধ হয়ে যাবে,

সত্যি, তাই হইলো

আমি তুমি তোমরা থেকে আমরা আমাদের হলাম কিভাবে কিভাবে যেন!! 

 

হয়তবা, ভাবের সমন্বয়ে অথবা  চিন্তনের সম্মিলনে পরস্পরের মিলনকে খাপে খাপ খাওয়া বলে নাকি মানবমনের রূপান্তর বলে ঠিক জানি না, একটু কনফিউজিং বটেই!  

 

অথবা, আমরা আজীবনই একে অপরের মতই সাদৃশ্য পূর্ণ ছিলাম,

যেন কাটা কম্পাসের দুটি কাটা, তাই এতটা কাছে আসতে পেরেছি 

সময়ের পরিক্রমায় কেবল নিজেদের 'অহম'কে জেতানোর জন্য আমরা কিছুকাল বিচ্ছিন্ন হয়েছি!! 

 

অতঃপর, মিথ্যে "অহং" এর দমনে আমরা খোদকে চিনতে পেরে নিজেদের হতে পেরেছি,

যা আমরা শুরু থেকেই ছিলাম আজীবনের জন্য 

অবশেষে, বুঝতে পারলাম, ভেতরের 'অহম' আর 'স্বল্পবোধ'কে মেরে ফেললেই বুঝি খাঁটি হওয়া যায়

বাদবাকি সব কিছুত কেবল খোলস মাত্র!!! 

খসে পড়ে যায় হলদে পাতার মত!!

 

 

আজকের 'হিরো' আগামীর 'এন্টিহিরো',

'এন্টিহিরো' সম্মানিত 'হিরোর' আসনে!

পার্থক্য শুধু চিন্তনে

সময়ের ব্যবধানে চিন্তন যে বারবার রূপান্তরিত হয়

তারই ধারাবাহিকতায় ঘোষিত হয়

কে কতটুকু উপযুক্ত, কার উপযোগ কত কম বা কত বেশি

 

 

আমি কল্পনা করি এখনও,

আমার হাতের তালুতে তোমার বরফের মত সাদা চাঁদ মুখটা চোখ পিটপিট করে 

নিষ্পাপী ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে আমার পানে 

আমি কল্পনা করি......! 

 

মানুশের কল্পনা যে কত বিস্ময়কর, অথচ আমার করতল জুড়ে শুধুই কলমের কালি!

আমার করতলে শুধুই রেখাদের আঁকিবুঁকি

আমার করতল যে ফাঁকা পকেটের মত খালি!!! 

 

 

 

সবকিছু ঠিক চলছিল,

আমি পালটে গেছি ,

সবকিছু ঠিকভাবে চলছিল ,

আমি অন্য পথ ধরেছি,

ইলেকট্রন-ইলেক্ট্রন জোড়ায় জোড়ায় থাকে 

কক্ষপথে ঘূর্নিতে সকল অভিযানে,

আমিতো এখন প্রোটন হয়ে গেছি!

তোমার সাথে তো বাঁধবে ভালোই!

কারন তুমি আমাকে ঘড়ির কাটার অভিমুখে

চলতে বলো,আমি চলি বিপরীতে,

বৈপরীত্য যার স্বভাব,

কিভাবে তাকে শেলে আটকাবে?

ইলেক্ট্রনের গতিবেগে ছুটছি,আলোক কনিকা হতে চলেছি,

পেছনে তোমাকে পরিত্যাক্ত "ব্ল্যাকহোলে" পরিনত করে 

ফেলে এসেছি

এখন তুমি অন্ধকার,সব আলো শুষে নিবে,

এখন থেকে তুমি তিমির অধিরাজ এটাই তোমার 

উপাধি, নিয়তি তা বলে দেবে,

হিলিয়াম,নিয়ন,আয়নের যত সাংঘাতিক আলপনা,

তারচেয়েও বেশি আমার নিয়ক্লিয়ার শক্তি,আমি এক বোমা,

আমাকে ফাঁটিয়েও না!

নিহত হবে

 

দুর্বল হৃদপিন্ড,

জরাগ্রস্থ পৃথিবী,

অসুখ,

অসুর,

অনিয়ম,

অন্যায়,

শোষণ,

কোনোটাই আমাকে থামাতে পারবেনা,

আমি মারা যাব না এতটা সহযে!

আমি একবার মরব বারবার না!

একবারই মরব সেদিন,

যেদিন আমার লেখা থেমে যাবে,

যেদিন আমার সৃজনশীলতা রুখে যাবে,

যেদিন আমার কল্পনা শক্তি হার মানবে,

যেদিন আমার নোটপ্যাড হারিয়ে যাবে,

যেদিন আমি আর অভ্রকীবোর্ডে লিখবনা,

যেদিন আমি আর কোনোশক্তি অনুভব করবনা,

আমি সত্যি সেদিন চোখ বন্ধ করে ফেলব,

আমি সত্যি সেদিন ঘুমিয়ে যাব,

আমি সত্যি সেদিন আর প্রাণ মেলে তাকাবনা,

উচ্ছাসের হাসি হাসবনা,

ভালবাসব না

আমি কখনও একদেশে,একস্থানে,

আমি তো যাযাবর!

আমি কখনও একজনার জন্য লিখিনি,

আমিত যাদের দেখেছি, যাদের দেখিনি 

এবং হয়ত বা যাদের কখনও দেখবনা,

তাদের জন্যও লিখেছি!

আমি থাকলে আমার লেখারা উত্তরোত্তর বাড়বে,

আমি না থাকলেও আমার লেখারা আমার কথাই বলবে!

আমার অনুপস্থিতির উপস্থিতি জানান দিবে!

বিদায় পৃথিবী!

বিদায় আমার শৈশব!

বিদায় আমার দগ্ধ হৃদয়!

 

কাঠেরপুতুল

 

এক পুরা পৃথিবী স্তব্ধ হলে তবে কি 

তুমি আমার হবে?

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলে কিভাবে 

তুমি আমার হবে?

আমাকে পাবে?

আদৌ তুমি কি পেতে চাও 

তাই তো বুঝতে পারিনা,

আদৌ আমি কি চাই 

তাও জানি না

এক পৃথিবী ভরা রহস্য বুকে পেঁতে রই,

রহস্যের চাঁদরে ঢাকা থেকে হেসে খেলে বেড়াই,

পদ্য সাজাই,

আসন বিন্যাস করি,

স্বপ্ন দেখি,

স্বপ্ন দেখাই,

মানবতার ফেরিওয়ালাকে কখনো হতে পারে না 

সবাই যার যার জমিনে দেউলিয়া,

বিলিয়ে দিয়েই অর্জন অর্জিত সুখ,কাঠের মত নিথর             

আর ঘুন পোকার মত অসুখ

ঠন-ঠন-ঠাস-ঠাস শব্দে এমনি এমনি 

পোকা কাঠ কাটে?

শব্দের মাধ্যমে জানান দেয় তার অস্তিত্ব 

নাহয় কে শুনে কে দেখে তাদের ব্যথা? তাদের অব্যক্ত কথা?

কাঠ পোকাদের অসুখ, কাঠের পুতুল

 

 

ইতিহাস দেখি নি বলে আজ স্বাধীনতা 

কিভাবে অর্জিত হলো তার চিত্র ধারণ 

করতে পারছিনা,

শালার! সব মুখস্ত -ফিল আসছেনা,

ফিলিং আনতে হলে হওয়া লাগবে কি আমার 

রাজাকার অথবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান?

নাকি সাধারণ হয়েও বুঝতে পারব-সাধারণদের ব্যথা?

সাধারণরা যেভাবে করেছিল যুদ্ধ? হেনেছিল? এনেছিল-বয়েছিল-স্বাধীনতা?

আমি কি স্বাধীন নাকি পরাধীন?

আমি কি দেখব স্বাধীনতার যুদ্ধ?

কিন্তু কার চোখে?

কে মুক্তিযোদ্ধা কে রাজাকার?

কে আসল কে নকল?

কে মুক্তিযোদ্ধা-কেন সে মুক্তিযোদ্ধা?

কে রাজাকার-কেন সে রাজাকার?

কে যুদ্ধ করেছিল?কে ফল এনেছে?

কে মুক্তিযুদ্ধ করেনি-কে ফল পেয়েছে?

তরুন যুবার প্রশ্ন-অশথীপররা সব কবরে ডুঁকেছে,

বেঁচে যারা আছে গর্তে প্রবেশ করেছে,

কিংবা উজ্জ্বল তারকা যারা গায়ে শাল পেছিয়ে-মানী সেজেছে-

গাম্ভীর্য ধরে রেখেছে-বড়ই সৌন্দর্য-

বড়ই সৌন্দর্য এমন কম জানাতে আমি তাদের কাছে বড়ই কৃতার্থ!

বড়ই কৃতজ্ঞ-আমাকে অন্ধই রাখা হয়েছে,

চশমা পরেও লাভ কি?

অন্ধ জাতির অন্ধ যুবা অন্ধ থাকব সেঁদে-আর দেখবনা

দেখতে চাইনাবিকৃত ইতিহাসের বিক্রিতপণ্য-তুমি আমি আমরা সবাই

কেঁদে কেটে দিবসে দিবসে প্লাবনে বুক ভাসাই

 

 

 

 

 

 

 

স্বাধীনতা তুমি এতটা কৃপন বলেই 

তোমাকে পাওয়া হয় নি ঠিকঠাক মতো 

এবং কাছ থেকে দেখা হয়নি 

সত্যিকারের তোমার স্বরূপ,

তাই স্বাধীনতা তুমি আপামর 

হয়েও আপননা,

তুমি বিশাল হয়েও প্রশস্ত না,

তুমি অবাধ তারপরো আমি সন্ত্রস্ত-ভীত,

তুমি এত কথিত হয়েও অচেনা,

তুমি এত সুদৃশ্য হয়েও অদৃশ্য ,

কোথায় নেই তুমি-পতাকায়, সাইনবোর্ডে, দলিলে-দস্তাবেজে,

টেলিভিসনে,সংগীতে,নৃত্যে-সাজে-পোষাকে,

তবুও তুমি থেকেও নেই

নেই চিন্তাচেতনায়,মুক্তধারায়,অশনিসংকেতে,

তবুও,তুমি আছো,তুমি আছো মৃত্যুনদীর ওপাড়ে,

সাঁতরে যারা গেছে-যারা এনে দিয়েছে এ তথাকথিত স্বাধীনতা-মন্দের ভালো,তুমি আছো তাদের বুকের হিম করা রক্তে-অদৃশ্য সে রক্ত,

তুমি আছো আমাদের অস্থিতে,মজ্জায়,স্বাধীন চলাফেরায় অথবা অধীনতায়-স্বাধীনতা তুমি রয়েছ তবুও আত্মগ্লানি থেকে মুক্ত-তুমি আজ স্বতন্ত্র, হলেও দেশ পরের আমি কি হতে পারতাম আমার একান্ত?

হলেও দেশ নিজের আমি কি আদৌ আমার ?হয়ে যাই নি কি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত?

এতো স্বাধীনতার ক্রান্তি,

এতো স্বাধীনতার ক্লান্তি,

কিছু নাহলে থাকত না অবশিষ্ট,

কিছু না ঘটলে আসত না বিপ্লব-পরিবর্তন-উন্নয়ন-ধীরগতি-অধীর-উন্মুক্ত,

স্বাধীনতা তুমি না আসলে,ঘোষিত এবং রক্তের চুক্তিতে অর্জিত নাহলে,

ইতিহাস রচিত হত না,এসময় পেতাম না,হতো না আমার জন্ম,

জানতাম না আমার জনকের পরিচয় বাঙালি কি না হতাম না কখনো শিষ্ট!

 

 

 

বাঁধনহারা অলসতায় ভরাদুপুরে
খুব বড় হয়ে যাবার স্বপ্ন দেখা স্বাধীনতা,
তারপর,তারপর একদিন নি:শ্বেষ হয়ে মিলিয়ে
যাওয়ার পর অবশিষ্ট ভাবতে থাকাও স্বাধীনতা
জীবনের সুক্ষ্মসুক্ষ্ম গড়পড়তা,
হিসেব নিকেষ ও স্বাধীনতা
তোমার আমার মনের কথন কালির আছড়
পাওয়া ও স্বাধীনতা
অত্যাচারিত হয়ে অত্যাচারের অমোঘ নিয়মের
প্রতি সোচ্চার হওয়াটা এক প্রস্তাবনা,তাও স্বাধীনতা,
লাল লোহুর বদনে চর্বির স্ফটিক হটিয়ে প্রজ্ঞার কনিকার মিশেল বাঁধানো
একটি বড় স্বাধীনতা
২৭.০৩.১৮

আমার জীবনের সব যুদ্ধ 

আমি দেখে ফেলেছি,

যুদ্ধ অবতরণ করেছি,

আহত হয়েছি দারুন ভাবে কিন্তু নিহত হইনি,

এতটুকু ধী শক্তি এখনো বাকি আছে আসলে 

তা কখনও ফুরোবারওনা,

যুদ্ধ.....যুদ্ধ....যুদ্ধ......!

সবখানে সবপরিস্থিতে সবার সাথে যুদ্ধ........!

আমি হেরে যাই নি কাউকে হারতেও দেই নাই,

পরাজয়ের কি কষ্ট!

তাই পরাজিত হই না আবার বিজিতও হতে পারিনা!

যেখানে নিযে হেরে গেলে এত ক্রুদ্ধ এত হতাশ লাগে,

সেখানে অপরকে কিভাবে হারতে দেই?!

তাই তারা আমাকে আঘাত করে,বেশভালোই!

আমি ব্যথা পাই,যন্ত্রনায় ছটফট করি ,

কিন্তু আবার উঠে দাঁড়াই,

হয়তবা লোহার মেরুদণ্ড নিয়ে জন্মেছিলাম -হার মানা শিখি নাই

সবকটা যুদ্ধই অন্তর্বর্তী,

সবকটা যুদ্ধই একান্ত অধীন,

সবকটা যুদ্ধের দৃশ্যপট অদৃশ্য,

সবকটা যুদ্ধের কাহিনী অলিখিত-অবিদিত,

তা কারুর জানবার কথা নয়,

তা কারুর শোনবারও কথা নয়,

সবকটা যুদ্ধই জীবনের,

উপহার

সবকটা যুদ্ধই নিজের সাথে নিজেরই

সবকটা যুদ্ধের ঘোষক এবং সেনাপতি আমি,

আমার একার লড়াই

আমার জয়-পরাজয়,

স্বাধীনতা-পরাধীনতা,

অবশেষে বুঝতে পারলাম..

যে সবকটা যুদ্ধই আগে নিজের সাথে লড়ে তারপর অন্যের সাথে লড়তে হয়

ভিতরের যুদ্ধ আগে আসে,বাহিরের যুদ্ধ তাতোএকটা বিচ্ছিন্ন চিত্রমাত্র!

 

 

বঙ্গবন্ধু সেতো অগ্নিঝরা দুপুরের দাবদাহের নাম,

বঙ্গবন্ধু সে এক অমানিষা দূরকারী ত্রাণকর্তার নাম,বঙ্গবন্ধু এক লহমায় শিশির ভেঙ্গে কুয়াশায় ঢাকা এক বজ্রপাতের নাম,

যেই বজ্রপাতের বজ্রধ্বনিতে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি সবুজ চত্বরের নাম জেগেছিল,

সেই বজ্রপাতের আলোড়নে সে ই সবুজচত্বরে লাখো বীরের রক্ত জ্বলেছিল শিখা চিরন্তনের মতো,এখন সেই সবুজে লাল মিশে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ,তোমরা কি জানো সেই বজ্রপাতের লোহা গরম ধ্বনি কেমন ছিলো?

তোমরা কি শুনতে চাও ,স্বাধীনতার বাণী?

তোমরা কি জানতে চাওনা,সে গর্জনের প্রতিধ্বনি কেমন করে প্রতিটি ঘরে জালিয়েছিল মশাল?

কিভাবে দেশের প্রতিটি সাধারণ মাসে দিন প্রস্তুত হয়েছিলেন একেকটা আজাদ তৈরীতে?

কোন সাহসে,কোন মন্ত্রধ্বনীতে শহীদ জননীর  চোখে জল আসেনি,তার রুমি তাকে আর;"মা,ভাতদাও,ক্ষুদা লেগেছে" বলে বলবেনা জেনেও কেন মা তাকে বিদায় জানিয়েছে?

কেন সেদিন সেই শাপলা তোলা বোনটি আর ভাইকে আবদার করে বলেনা,নীলচুড়ি এনে দাও,

তার বদলে আজ দাউদাউ করে জ্বলছিলো তার চোখে প্রতিজ্ঞা,কচি হাতে আজ নেই চুড়ি,আছে অস্ত্র,বলে সে হুংকার ছেড়ে;বেয়নেট দিয়ে ভাই খুঁচিয়ে মারো,

মারো,মারো আরো মারো,ঐ হানাদারদের জোরে মারো,রক্তে হায়েনাদের নকশা পালটিয়ে দাও,একপাট্টাতে রাক্ষুসের চোয়াল ঝুলিয়ে দাও,

শিয়ালের আস্তানায় গুল্লি মারো,

তাহলে ভাই,প্রতিজ্ঞা দিলাম আমিও যুদ্ধে নামব

শুনবে কি বন্ধু তুমি,সেই অমোঘবাণী?

যে কথায় বৃদ্ধ বাবার কুজে যাওয়া পিঠে শক্ত কশেরুকা জন্মেছিল?

যেকথায়,পত্নীর বেনারসি পুড়ে যাবে জেনেও সে

প্রিয়কে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল?

যে কথাশুনে,অনাগত শিশুরা স্বপ্নে একটি স্বাধীন দেশের ভ্রুণ দেখতে পেত?

যেকথায়,মাঝি-জেলে-মুটে-কৃষক এতদিনের ধুলো ঝেড়ে হঠাৎ হিংস হয়ে ওঠে?

কে তাদের অধিকারের কথা বলেছিলো?

কে তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিল?

কে তাদের সোনালি ফসল এনে দিয়েছিল?

কে তাদের সোনার বাংলা গড়ে দিয়েছিল?

কে তার প্রিয় রাসেল,হাসিনা,কামাল,রেহানাকে

ত্যাগ করেছিল একমুঠো বাংলার মাটি হাতেপুরার জন্য?

কে তার পরিবারের অশ্রুকে লাখো মানুষের হাঁড়কাপা অশ্রুর সাথে মিশিয়েছিল?

কে বছরের পর বছর তোমাদেরকে স্বাধীনতা দেওয়ার সংগ্রামে অন্ধকারে পরাধীন হয়েছিল?

কে বারেবারে, লাঞ্চিত-শোষিত-অপমানিত হয়েছিল তোমাদের সম্মান বয়ে আনতে?

কে ছিল সে; যে স্বাধীন বাংলায় বড্ড স্বাধীন ভাবে সপরিবারে খুন হয়েছিল স্বদেশি হায়েনার হাতে?

কার পরিবার এত শক্ত ছিলো?

ইতিহাস কথা বলে;এমন ইতিহাস কেউ দেখেনি কখনো, আর দেখবেওনা,

তোমাদের বলিষ্ট বানাতে যিনি হয়েছেন নির্মম পরিহাস,তোমাদের আব্রু দিতে যিনি হয়েছেন বেয়াব্রু,বিশ্বাসের মুল্য যিনি এত বেশি দিয়েছেন,

তিনি সেই বঙ্গবন্ধু,

যার বজ্রকন্ঠ সেদিন গেয়েছিল,লাখো মানুষের ফরিয়াদ,যার একাগ্রতায় বাংলাদেশ বিশ্বেরদরবারে পরিচয় পেয়েছিল,যার বলিষ্ঠ ভুমিকায় শ্রেণিহীন মুক্তিবাহিনী গড়েছিল;

এখন কি তোমরা কেউ আরেকটা মুক্তিবাহিনী গড়তে পারবে?

পারলেও কি তা অতটা শক্তিশালী হবে?

সেদিনের মত কি লাখো মানুষের কন্ঠ এক হবে?

সেদিনের মত কি সবাই আবার এক হবে?

হবে না,তা আর হবে না,আবার শ্রেণীবিভক্ত আকাশে বজ্রপাত আনতে হবে,

কোটি বছরে একবার একটি মাত্র বঙ্গবন্ধু জন্ম নেয়,যেই বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিল,এখনো শুনতে পাই সে বজ্রধ্বনি;

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম,

তাইতো,আমরা স্বাধীন হয়েছি

কিন্তু,আমাদের সংগ্রাম শেষ হবে কবে?

আমাদের বজ্রধ্বনি কে শোনাবে অমন করে?

বায়ান্নোর,বাষট্টির,চৌষট্টির,ঊনষত্তুরের,

একাত্তুরের বঙ্গবন্ধুকে দাও এ বাংলায় ফিরিয়ে

 

একাত্তুর

মিথ্যে বলবে?স্বাদের মিথ্যা?

আর কত?হ্যা,আর কত?

তোমাদের ভাণ,মিথ্যে ভরা 

ভণিতা সবজানা আছে

অশ্লীল কথা বলে মনে কর ঢেকে দিতে পারবে

তুষারময় সাদাসাপটা কথাবার্তা,

কি পাবে অন্ধের রাজত্ব করে?

ঠুনকো, ঠুনকো,সব ঠুনকো,

ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানো না,

অথচ তলে তলে ঠিকই শিকার করে বেড়াও,

তোমাদের মিথ্যে ভরা চাহনী,মিথ্যে ভরা শপথ,

আডষ্টের ঢংতো কপিলাও করেছে বটে,

তাতে কি হয়ে যাবে তোমরা রাজসন্ন্যাসী?

দুদিনের ভাতেরে কওঅন্ন সোহাগী,

তিলকে তাল বানানো তোমাদের স্বভাব নয়কি?

বিলাসিতার স্নেহ করাকি কাম্য?

তোমাদের অন্তর জুড়ে যে মিথ্যার শ্লোগান,

তার স্বর কি বড় নিচু নয়?

কি বলতে চাও?কিসের দাপট দেখাও?

ফালতুর অহংকার,ঘৃন্যতিরষ্কার,নিজেকে বড় করার দুষ্ট অভিযান,

অযথা প্রতিযোগিতা,

হানাহানি,মারামারি,রেষারেষি, দ্বন্দ আর কত?

আর কিসের জন্য জানোকি?

ভুলে যাও আকাশ দখল করার,মিথ্যার কুয়াসা

কখনো দিগন্ত ছুঁতে পারেনা,

তা কি জানা নয়?

এভাবে তাকিয়েও না আমার দিকে,কারন 

আমি দাপটের চোখকে ভয় পাই না,

আমি কোনো শোষনকে ভয়পাই না,

আমাকে চেন না,আমি শৃঙ্খল, আমিই বাঁধন,

আমি অদৃষ্ট,আমি অন্ধকার ঠাসা প্রদীপ,

আমি চিলেকোঠার রোদ,আমি স্রোতের উজান,

আমি ভয়,আমি ত্রাস,আমাকে আর কি দমিয়ে রাখবে?কিসের ভয় দেখাবে?

ভয়কে আর কি ভয় দেখাবে?

আমি জানি কোথায় তোমাদের দুর্বলতা,

আমি জানি স্বাধীনতাই তোমাদের নিশানা,

মনে কি হয় করি কি আমিহীনতার পরগনা?

আছে কি পুড়ে যাওয়ার পরোয়া?

হায় হারিয়ে যাবে ধুলিতে,মিটে যাবে হদিস ক্রন্দনের বাতাসে,

এক সাইক্লোন আসবে,তছনছ করতে তোমাদের

পাপের আস্তানা,

অন্যায়কে যখন প্রথম না করেছিলাম

তখন কি টের পাও নি ঢেউ?

জলোচ্ছ্বাস কি নামে নি বুকে?

মনের ব্যগ্র খায় নি কি ক্ষনে ক্ষনে?

ক্ষমতার চাঙা ওস্তাদ তুই হানাদার,

মনে রাখবি এখনো রক্তের রঙলাল,

জেগে আছি আজও অশ্রুনিপাতে,

মরেনি শপথগুলো কোলাহলে,

আয় আরেকটিবার,

দেখিয়ে দেই তুই কোন....**রব**

কারন,রক্তের আদিমটান এখনো

ডাকে আমায়,পেটের দায়ে দৈনিক সংগ্রামে

 

 

কখনও কোনো মাছকে দেখেছ 

জালে আটকা পড়লে কেমন ছটফট করে?

ছোট একুরিয়ামের ছোট মাছ 

জলবিহীন কেমন করে কাতরায়?

কেমন করে তড়পায়?

তুমি সাজ-সজ্জার জন্য তাকে নিয়ে আসো 

তুমি তার লাফানো,ছটফটানো,তড়পানো 

দেখে খুব মজা পাও,

হাত্তালি দাও,

চোখ তোমার তখন লইট্টা মাছের মত 

হয়ে যায়,লোভাতুর পিচ্ছিল অসৎ অচ্ছুত

তুমি তাই মাছ শিকার করো,

তুমি তাই গৃহে একুরিয়াম আনো

তুমি তাই মাছের সাথে হেসে খেলে খেলা করো,

তার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করো

কিন্তু তার প্রস্থানের জন্য নয় বরং 

সে তোমার চক্ষু আর চিত্তকে আনন্দ দিতেপারছে না বলে,

তার ছটফটানি,লাফানি,তড়পাতড়পি দেখতে পারছ না বলে,

তুমি আসলে কখনো মৎস্যজীবী ছিলে না ছিলে মৎস্যহন্তাকারী,

তুমি আসলে সুন্দরের পুজারী নয় সুন্দরের ধ্বংসকারী,

তুমি আসলে মাছকে পুষো নাই তাকে গিলে ফেলেছ 

একটু একটু করে তাকে নিঃশ্বেষ করেছ

 

 

আর কাজ করে না বোধ,

আর কাজ করে না উদ্দিপনা,

আর কাজ করেনা ঝোঁক,

আর কাজ করে না প্রেরণা,

পৃথিবীতে সব ভালবাসা মরে গেলে 

আর ভালবাসতে না পারলে,

ভালবাসার অক্ষমতা 

হার মানিয়ে দেয় সবকিছুকে,

সব কর্মোক্ষমতাকে,

নেশাখোরের মত মড়ার মত 

উদ্ভ্রান্তের মত সারাদিন ঘুমুলে,

বাস্তবজগত থেকে পৃথক হয়ে সারাদিন 

অনিশ্চিত অন্ধকারে চোখ মুদে থাকলে,

এর নামই তো মৃত্যু

বেঁচে থাকার নাম করে মৃত্যুবরণ করা,

আড়ালে,

অথবা সবার সামনে,

কেউ কেউ জানে তোমার সমস্যার কথা,

কারন তুমি জানিয়ে রেখেছ,

মৃত্যুর আগে অথবা কোনো

অঘটনের আগে সবকিছু জানিয়ে যেতে হয়,

জানিয়ে যেতে হয় রেখে যেতে তোমার চিহ্ন,

তুমি কোনো ভুল করো নি,

তুমি কোনো অপরাধ করো নি,

শুধুই ভালবেসেছ,

জানিয়ে যেতে হয় 

ভালবাসাই তোমার অপমৃত্যুর কারন,

ভালবাসাই তোমাকে শেষ করেছে অথচ গড়ার কথা ছিল

 

তুমি একটা জ্বলন্ত আগুন, গলিয়ে দিতে পারো এন্টার্কটিকার সমস্ত পাহাড়,সমস্ত পর্বত!

তুমি একটা চুম্বক, তীব্রভাবে আকৃষ্ট করতে পারো লৌহ শকট

তুমি একটা যুগপৎসংবিধান, প্রতিটা রায়ের বর্ণমালায় যেটির থাকে ন্যায়ের বিধিবদ্ধ অভিধান

তুমি একটা সরল অথচ গভীর ভাবের অর্থবোধক  কিতাব, তোমাকে পাঠে অতিবাহিত হয়ে যায় তপস্বীর দিনকাল!! 

ভালোবাসি অবিরাম ভালোবাসা

দুইশতাব্দী একসাথে কাটালেও কমবেনা এ বীত-রাগ

এক সহস্রাব্দের যে কালোত্তীর্ণ ভালোবাসা, তবুও কেন মনে হয়তা এতটা অপর্যাপ্ত?!  

অফুরন্তভাবে ভালোবাসি ভালোবাসা তোমায় শুধু!!! 

পরিচিত হব তোমার অর্ধাঙ্গিনীরূপে কেবল,

আমার প্রতিটা অস্তিত্বের রবে মিশে থাকো তুমি-গাও একই সুরের কলতান

আমার নাম জপবে তোমার আপেল রঙা ওষ্ঠ হরদম-সময় এখনো বিপন্ন!!

বিপ্লব ঘটাবে ভালোবাসা

বিপ্লবে ভাসাবে ভালোবাসা,

কারন, ভালোবাসাদের রক্ষা করার জন্যই বিপ্লবীরা বিপ্লব করে!

তুমি হও, তেমনি একটা বিপন্ন-বিস্ময়ের বিপ্লব!

তুমি হও, তেমনি একটা প্রেমিক বিপ্লবী- হুংকারে যার কাঁপে বিশ্ব

 

 

প্রত্যেকবার তুমি পাহাড়ে চড়ো 

তারপর একটা নুড়ি বা বেলে পাথরে 

হোঁচট খেয়ে গড়িয়ে পড়ো,

উচ্চতা থেকে নেমে পড়ো,

আকাশ থেকে বৃষ্টি যেমন 

মাটির দিকেই ধাবিত হয়,

তেমনি তুমি ঐ মাটিতেই দুমড়ে পড়ো,

মাটির গড়া পাহাড় হতে সমতলের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ো,

এটা আসলে তোমার সিদ্ধান্ত,

তুমি সমতলে থাকবেনা বলে পাহাড়কে বেছে নিয়েছ,

পাহাড়ে চড়তে গিয়েও তাই হোঁচট খেয়েছ,

কারন তুমি বেলে পাথর গুলো দেখনি,

দেখলেও এদের গুরত্ব বুঝ নাই,

বুঝলেও আমলে নাও নি,

আসলে তুমি পাহাড়কে ভালবাসায় অন্ধ ছিলে

আর আকাশের অন্ধভক্ত ছিলে

 এবং পাহাড়চড়াকে স্বপ্ন ভেবেছিলে,

তাইতো সেই পাথরগুলোর সাথে ও সখ্যতা গড়েছিলে,

তুমি কখনও ভাবোনি বন্ধুর পথে বন্ধু কেউ হয় না,

তুমি কখনও ভাবোনি কিছুই কখনও উদ্দেশ্যহীন হয়না,

পাহাড়ও চায়না তুমি এত সহযেই চূড়ায় পৌছে যাও,

আকাশও চায়না তুমি চোখ মেলে তার দিকে তাকাও,

পাখীরা চায় না তুমি তাদের মত উড়ো,

তাইতো পথে পথে বিছিয়ে রেখেছে সেই তার দোসর

পাথর নামক অঙ্গ,

তুমি কখনও তাই পাবে না;পেতে পারো না তার সঙ্গ!

 

 

একটি অনিশ্চিত কিন্তু নতুন 

সুন্দর অথবা অসুন্দর 

স্বয়ংসম্পূর্ণ অথবা ভয়ংকর ভবিষ্যতের আশায় 

তুমি বসে আছো,

ফাঁকা বেঞ্চিতে ,শুন্যদৃষ্টিতে,হিমেল বাতাসে 

গা মিলিয়ে তুমি  শুধু অপেক্ষা করো,

অপেক্ষা করো তোমার রক্ষাকর্তার,

অপেক্ষা করো তোমার উদ্ধারকারীর,

অপেক্ষা করো তোমার স্বপ্নদ্রষ্টার 

যে তোমাকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে,

যে তোমাকে দুঃসময়ে স্বান্তনা দিয়েছে,

যে তোমার বিপদের আঁচ অনুধাবন করেছে,

তোমাকে মুক্ত হওয়ার জন্য বলিষ্ঠ হতে বলেছে,

তুমি এবার মুক্ত হও,

তুমি এবার মুক্ত হও,

তুমি এবার মুক্ত হও,

ভয়ংকর সুন্দর থেকে,

অন্যের মন মর্জি থেকে,

অন্যের জীবন,অন্যের স্বপ্নের বোঝা,চাহিদা,

তাৎপর্য থেকে মুক্ত হও,

ওখানে তোমার জন্য কিছু নাই,

ওখানে তুমি অপূর্ণ,তোমাকে সম্পূর্ণ 

দেখানোর ভাণ করা হয় আদতে তুমি 

রোদ পোহানোর এক চিলেকোঠা মাত্র,

সর্বোচ্চ চিমনি হতে পারো,

ধুঁয়া বের করার জন্য,

অন্দর মহল স্বচ্ছ রাখার জন্য,

তুমি আসলে কিছুনা এর সমষ্টি সবকিছুর জন্য

 

এই যে উত্তরীয় বাতাস বয় তরুণ, তুমি তার কতটা উত্তরণ দিতে পারো?! 

কতটা সইতে পারো শীতলতা?! হাড়ে হাড়ে কি টের পাও কম্পন-নতুন ঋতুর আগমনীর মত নতুন শিহরণ?!  তরুণ, তুমি প্রত্যেক বসন্ত অপচয় করো আর প্রত্যেক শীতে অপেক্ষা করোএ এক দীর্ঘ অপেক্ষাতুমি এক অন্ধকার কুয়োতে অবস্থান করো এবং সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকোআলোর অপেক্ষায় অন্ধকারে আশায় বুক বাধোকিন্তু, আলো জালানোর জ্বালানী খুঁজে বার করোনাকিন্তু,তুমি অন্ধকার মিটানোর চেষ্টা করোনাআলো জ্বালোনা 

অতঃপর, তুমি জন্মগ্রহণ  এবংমৃত্যুবরণ করো,জন্ম-মৃত্যুর এ চক্রে তুমি হারিয়ে যাও,

যেমন প্রত্যেক ঋতু হারিয়ে যায়,আবার আসে বছরে বছরেতুমি এবং তোমরাও, চক্রের মত ঘুরতে থাকো

এই যে উত্তরীয় বাতাস বয় তরুণ, তুমি তার কতটা উত্তরণ দিতে পারো?! 

কতটা সইতে পারো শীতলতা?! হাড়ে হাড়ে কিটের পাও কম্পন-নতুন ঋতুর আগমনীর মত নতুন শিহরণ?!  

 

তরুণ, তুমি প্রত্যেক বসন্ত অপচয় করো আর প্রত্যেক শীতে অপেক্ষা করোএ এক দীর্ঘ অপেক্ষাতুমি এক অন্ধকার কুয়োতে অবস্থান করো এবং সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকোআলোর অপেক্ষায় অন্ধকারে আশায় বুক বাধোকিন্তু, আলো জালানোর জ্বালানী খুঁজে বার করো নাকিন্তু, তুমি অন্ধকার মিটানোর চেষ্টা করো নাআলো জ্বালো না 

 

অতঃপর, তুমি জন্মগ্রহণ  এবং মৃত্যু বরণ করো,জন্ম-মৃত্যুর এ চক্রে তুমি হারিয়ে যাও,

যেমন প্রত্যেক ঋতু হারিয়ে যায়,আবার আসে বছরে বছরেতুমি এবং তোমরাও, চক্রের মত ঘুরতে থাকো

চোখ তার টলমল যেন আন্দামান-নিকোবরের  আস্তানা,

মন তার উড়ুউড়ু যেন এলবাট্রসের পাখনা

হাসি তার স্মিত যেন সাগরের উত্তাল ঢেউ,

কন্ঠ তার অমায়িক যেন আমাজনের গভীরতা

প্রতিটা শব্দে যেন ঝরে অনুকম্পা,

লাবণ্য-মৌনতা

চুপ কি তুমি কখনও থাকতে পারো

আমার টুকটুকে এলার্ম ঘড়িটা

সময়ের আগে দ্রত বেগে ছুটে চলা ঘোড়াটা

এতটা মহৎ, এতটা উদারতা, এতটা বোধ,

আমি কোথাও কারুর মধ্যে দেখি না

বিবেকবোধে আনে যে ভালবাসা মিছে হয় কি করে তার বিস্তৃতি তাড়না?! 

 

হয়ত বা আমার ভাগ্য ভালো ছিল কি খারাপ,

আমি তোমার দেখা পেয়েছি

জানোত, আমি ছিলাম অসহায় একলা পথিক

ছোট্ট জগতে কেউ ছিলনা আমার

তাই, তোমাকে দেখার পরেই আমি তোমাকে 

আমার জগত বানিয়ে ফেলি 

সেই জগতে ভালবাসা নামের একটা চারা রোপণ করি, চারাটিতে রোজ স্নেহের জল ঢালতে ঢালতে তা মহীরুহে রুপান্তরিত হলো যখন তুমি তার শিকড় উপচে ফেলতে শুরু করলা,

এরপর, তার সুমিষ্ট ফল ভোগ করতে শুরু করলা বিনা ক্লেশেই

তুমি গাছে জল না ঢেলেই ফল খেতে চাইলা, অতঃপর 

আমাদের ভালবাসার গাছে পোকা ধরে গেল

তুমি ঘূনাক্ষরেও টের পেলে না

পাবে কি করে

ভালবাসার চারাটি তো আমি রোপণ করেছিলাম

আমার জগতে একলা

আমি ভুলে গেছিলাম অনাথদের কখনো ভালবাসতে হয় না

আমি ভুলে গেছিলাম একলা পথিকদের স্বপ্ন দেখতে হয় না,

আমি ভুলে গেছিলাম বাস্তুহারাদের জগত বিনির্মান করতে হয় না

আমি ভুলে গেছিলাম, জগতটা বড় ঠুনকো

এখানে কেউ কারুর হয় না

যে চারা আমি রোপণ করেছিলাম, আজ আমিই 

তা উপড়ে ফেললাম গোড়া থেকে

কারন, পোকে ধরা ফল সমূলে বিনাশ করতে হয়

তা অন্য গাছদের বেড়ে উঠতে দেয় না

অবশেষে, আমি ভুল করে ভুলভাবে ভালবেসে বুঝতে পারলাম,

 আমাকে ত কেউই কখনও ভালবাসেনি, কেউই আপন করে চায় নি কখনও

তাই, তোমারও কোনো দোষ নাই

যাও মাফ করে দিলাম

অন্তত, তুমি চেষ্টা করেছিলে আমাকে ভালবাসার যাকে কখনও করেনি

অথবা করেছে

এখানেও সংশয়!  

কারন, নিঃস্বার্থ ভালবাসা কি তা আমি জানি না

কখনও দেখি নি

 

 

তুমি হলে আমার সে ঔষধ

যা না নিলে ব্যামো উঠে যায় কঠিন দুরারোগ্য

তুমি হলে আমার জীবনে সে প্রভাবক যা বিনে 

এগোয় না কোনো বিক্রিয়া, সচল হয় না কোনো অনু-পরমানু

তুমি হলে সেই ধাক্কা যা ছাড়া গাড়ি সামনে চলতে পারে না,

তুমি হলে সেই মহাকর্ষয শক্তি যা ছাড়া পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে পারে না

অথচ, তুমি কোনো মোহ নয়, নয় কোনো ট্রানসেকশান,

কিংবা আমাদের মধ্যে নেই কোনো পুঁজিবাদী লেফাফাদুরস্ত 

বিনিময়ের সম্পর্ক

ভিন্ন নয় কি তবে তা অনন্য?!

তুমি শুধু একজন মহাপুরুষ যার উপস্তিতিই যথেষ্ট!  

আমার মুখে স্মিত হাসি ফুটানোর জন্যে

উতলা মন স্থির করে দেয়ার জন্যে

বিষন্নতাকে প্রসন্নতায় রূপান্তরিত করার জন্যে,

শুধু তোমার উপস্থিতি যথেষ্ট

সমস্ত কক্ষ তোমার আলোকসজ্জায় আলোকিত!

তোমার ঘ্রাণে সুরভিত

তোমার উপস্থিতি শক্তিশালী

তোমার কেয়ারই আমার জন্যে যথেষ্ট!  

সমস্ত দুঃখকে ঝরিয়ে দাও তুমি সুখের বেদনায়,

এমন কষ্টিপাথর তুমি, ঠিকঠাক মতন যাচাই করো

হয়ত তুমি সম্পূর্ণনও

হয়ত তুমি কখনও কখনও সঠিক নও,

ভুল তুমিও করো

কিন্তু এটাই তো মানুষের সৌন্দর্য!  

একমাত্র মানুষই পারে ভুল করে ভুলকে শোধরাতে

একমাত্র মানুষই পারে ভুল থেকে শিখে মহান হতে

একমাত্র মানুষই পারে ভুল থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে!

একমাত্র মানুষই পারে ভুল করে অনুতপ্ত হতে, আরো জোরে ভালবাসতে

ভুল থেকেই যদি সুন্দর কিছু তৈরি হয় তবে ভুল করাই শ্রেয়তর!  

তুমি আমার জীবনের করা সবচেয়ে সুন্দর ভুল এবং তোমাকে ভালবাসার ভুলটি করার জন্যে আমি নই অনুতপ্ত

 

 

প্রচন্ড জ্বর উত্তাপে, ভীষণ অন্ধকারে, সবচেয়ে ভয়াবহ বিভীষিকায় আমার তোমাকে দরকার, আমার তোমাকে দরকার

অথচ, তুমি কোথাও নেই....এ এক অথর্ব শুণ্যতা, কৃত্তিম জটিলতাসমস্ত হাহাকারেও তুমি নেই 

জ্বরের ঘোরে আর্তনাদে -কিংবা মৃত্যুর সময় অস্ফুট গোঙ্গানিতেপ্রথম নাম যার ঠোঁটে আসেঅবচেতনভাবে---তুমি সেই! তুমি সেই প্রেমিক নয়, প্রয়োজন আমার---বেঁচে থাকার জন্যে দরকার যেমন অক্সিজেনের 

প্রেম বারবার হয়, প্রেমিকরা আসে যায়-কিন্তু রুহতে, যার নাম সিল দেয়া থাকে-আত্মা যে ছোঁয়, তেমন মহান প্রেমকে আত্মিক প্রেম কি বলা যায়?! 

সকল শূন্যতায়ও তুমি, সমস্ত কোনায়---সমস্ত অস্তিত্বের কলবজুড়ে তুমি, তুমি না থাকলে কাছে, যেমন তোমাকে মনে পড়ে, তুমি থাকলেও যেন তা কম হয়ে যায়কম মনে হয়

 

ইচ্ছে করে, বুকের ভেতর আগলে রাখি তোমাকেকোথাও যেতে পারবে না তুমি, হৃদয়-পিঞ্জিরায়---আটকএখানেই, হোক তোমার যাবজ্জীবনপ্রেমই হোক তোমার-আমার দন্ড---এক অসম দ্বন্দে আমরা হেরে যাই---দূরে রইবড়ই নিষ্প্রয়োজন 

কই, কোথাও ত তোমার মত সুন্দর কিছু নেই! সুন্দর কেউ নয়! তুমি স্রষ্টার গড়া-উত্তম শিল্প---আমার চোখ তাতে বড় তৃপ্ত হয়

 

তুমি চলে আসো ঠিক ততটা কাছাকাছি, যতটা কাছে আসলে আর উত্তরীয় বাতাস শীত ধরাতে পারবে না,

তুমি চলে আসো ঠিক ততটা কাছাকাছি, যতটা কাছে আসলে দুটি দেহে আর কোনো উত্তাপ থাকবেনা 

প্রলাপ নাকি কল্পনা...!? 

 

উভয়ই--- তোমার বুকে আমার কোনো অসুখ হয় না  

 

একটা সময়ে কথা না হতে হতে সব 

কথা হারিয়ে যাবে

জানোইত কথা হলো মনের ভাষা

মন কথা বললে তা ভাষা হয়ে বের হয়

কিন্তু ভাষা হারিয়ে যাবার পরেও মনের কথা হয় 

কিন্তু তা কেউ শুনতে পায় না

ঐ যে ভাষা হারিয়ে গেছে,তাই কথা হয় না

তুমি আর আমি যোজন যোজন দূরে

দূরেই ছিলাম, দূরত্ব আরো বাড়ে!

একটা সময় জানো তো, মনও কথা বলা বন্ধ করে দিবে, মন আর বলবেনা তুমি ছিলে, তুমি আছো, বা তুমি থাকবে, কারন মন ত বারবার উঁকি মারে কার সাথে হয় মনের লেনদেন

এভাবেই একদিন তুমি থেকেও নাই হয়ে যাবে

এভাবেই তুমি সবকিছু থেকে বিস্মৃত হয়ে যাবে

এভাবেই তোমার কোনো ব্যাপারেই 

আমাকে ভাবাবে না,

এভাবেই, তুমি আছো কি নাই তাতে আমার কিছু যায় আসবে না

এভাবেই জানো, তুমি একদিন পাশে বসে থাকলেও 

আমার কিছু মনে হবে না

আমি তোমাকে আর খুঁজব না, সবুজ বাতিটি জ্বলে কিনা, তুমি ঘুমিয়েছ কিনা

আমি তোমাকে আর খুঁজব না, তুমি দুপুরের খাবারটি খেয়েছ কিনা

জানো তো, ভীষণব্যস্ত হয়ে পড়ব আমি

তোমার খোঁজ নেয়ার সময় থাকবেনা,

আর ইচ্ছাও করবে না

আর এভাবেই, আমি তোমার সকল স্মৃতি আস্তাকুঁড়ে 

নিক্ষেপ করে, তোমাকে ভুলে যাব চিরতরে

ব্লকলিস্টে থাকবে তোমার নাম

ফোনের স্ক্রিনে আর আসবে না তোমার কল

শুনতে পাব না তোমার ধ্বনি কিংবা কোনো আহাজারি অথবা গালাগালি

কারন, আমি এখন স্বাধীন

তোমাকে ভালবাসার দায় হতে স্বাধীন 

অপ্রিয় কে কিভাবে ভালবাসে বলো প্রিয়?! 

তুমি তো আমার প্রিয় হতে বড্ড অপ্রিয় হয়ে গেছ,

তুমিত আসল থেকে নকল হয়ে গেছ

আমি তোমাকে চিনে ফেলেছি,

প্রিজমের কাচ ভেঙে আমি তোমার রশ্মির বিকিরণ 

ঘটিয়েছি এবং সাতটি রঙ আবিষ্কার করে দেখি

প্রতিটা রঙই একটা কথা বলে- মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে 

তুমি আর তোমার ভালবাসা

তাই, আমিও আজ জোরে চিৎকার দিয়ে বলে ফেললাম অবশেষ-সবাই শুনুক-আমি তোমাকে আর ভালবাসি না

 

 

আমার হৃদয়ের বহ্নি জ্বালা,

মিটাব কিসে?নাকি পুড়তে পুড়তে 

কয়লা হবে,কয়লার মত উড়িয়ে দেখবে সব ছাঁই,

নাই-কিছু-নাই!

আমার হৃদয়ের শুন্য চিলেকোঠায়,

সর্বদা যুদ্ধ,সর্বদা লড়াই,

আসবে কোথা হতে,কোন দিকের সেনাপতি-সেপাই?!

আমার হৃদয় টুকরো টুকরো করে খানখান 

করে দেয় সব তালপাতার সেপাই!

কোথাও নেই কোনো বীর,কোথাও দেখি না 

বাহাদুর,দেখ আমার হৃদয়ের ভাঙা ভাঙা টুকরো 

এখন করছে একেকটা সেনা মোতায়েন!

তোমাকে পরাজিত করবার জন্য,

কারন আমি পরাজয়ের পারিজাত,

হার মানতে জানি নাকো,

শিউলিফুল,বকুলফুল,কাঁঠালচাপা,

যাই দাওনা কেন-খোঁপা বাঁধব না ,

হরিতকী ,আমলকী,মায়াবতী,

যাই বলো না কেন আমি গলব না,

তবুও গলে যেতে হয়,

আরে পাথরওতো গলে ক্ষয় হয়,

ক্ষয়িত হওয়ার জন্য আমরা ভালবাসি,

হারিয়ে ধরে রাখা তখন শিখি,

কিন্তু এই হারানো মানে-স্বকীয়তা হারানো নয়,

তোমার জন্য আমাকে অনেক বদলেছি,

আর না!আমার মত আমাকে থাকতে দাও,

আমার স্বাধীনতা!

স্বাধীনতার যুদ্ধে আমি পরাজিত হতে পারি না!

আফসোস লাগে আমরা সবসময় নিজেদের অংশের সাথেই 

আগে  যুদ্ধ করি,বিদেশের সাথে পরে করি,

অপর?ভিনদেশ?সেতো ইতিকথার অনেক পরের কথা!

 

এত আগে আগুন জ্বালাতে হয় না 

বাতাসের সংস্পর্সে ধপ করে নিভে  যায়,

এত আগে প্রকাশ করতে হয় না,

ছেৎ করে বিগত নক্ষত্রের মত খসে পড়তে হয়,

এত  আগে চলতে হয় না,

মাঝ পথে থেমে থাকতে  হয়,

এত আগে সব বলে দিতে হয় না,

সব কথা বলা হয়ে গেলে তোমার 

সাথে দেখা করার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়!

 

ভালবাসার বর্ণমালায় আমি 

আনপড়-অশিক্ষিত,

কোনো ফর্মুলা মনে রাখতে পারিনা,

নতুবা অতিব শিক্ষিত,

কোনো প্রথা মেনে চলতেপারি না,

উচ্চশিক্ষা কোনো বিশ্বাস ধরে রাখেনা,

ভালবাসার শিক্ষায় মধ্যমপন্থি হওয়া ভালো,

ভালবাসার শিক্ষায় কম শিক্ষিত হওয়া ভালো,

কিছুই বুঝতে না পারা,

তুমি যখন অনেক কম জানো,

অল্পতেই খুশি হয়ে যাও,

তুমি যখন কম বুঝো,

অনেক সুখে থাকো,

তাই তো বলি,

যতদিন কিছু বুঝতাম না 

ততদিন ভালো ছিলাম,

কোনো শঙ্কা ছিলনা!

যতদিন কিছু পরখ করি নি,

আসল-নকল চিনতাম না!

ভালোই ছিলাম,

ভালোই ছিলাম,

আর নেই সেদিন!

 

আসলে সব সম্পর্কই অর্থনৈতিক,

তুমি প্রেমিককে বাবু,বাবু করে মাথায় 

তুলে সত্যিকারের বাবু সাহেব বানাও,

ঐএকটা কারনে,

প্রয়োজন শেষ হলে তারপরে 

লাটসাহেবকে লাত্থি মেরে ঘাড় থেকে নামাও 

ঐএকটা কারনে,

আসলে তুমি কখনওপরিবারকে মনে রাখোনা,

তাদেরকে বিপদের সময় মনে পড়ে,

তোমার কিছু প্রয়োজন হলে,তুমি তাদের খোঁজ নাও,

তুমি সম্পদের হিসসা চাও বলে তাদের হিসসা হয়ে রও,

আসলে তুমি বন্ধুকেও চাও না,

সময় কাটানোর প্রয়োজন হলে,

কোথাও একলা চলার ভয় হলে,

পথঘাট না চিনলে,মৌজ-মাস্তি করতে না পারলে,

মনোরঞ্জনের জন্য বন্ধু পাতাও,

শক্তি প্রদর্শনের জন্য জোট খুলো,

মাস্তির দিন শেষ হলে,অশান্তির দিন শুরু হলে 

তুমি কার বন্ধু,কে তোমার বন্ধু ভুলে যাও!

আসলে তুমি কখনও ভালবাসো না,

নিজেকে ভালবাসো,

যাই করো নিজের খাতিরেই করো,

নিজের প্রয়োজন মেটাবার জন্য!

 

আমি তোমাকে সমান আসন পেতে দেই,

যেন তুমি হাফ ছেড়ে বসতেপারো,

যেন তুমি তোমার বিগত জীবনের 

সব কষ্ট ভুলে যাও,

তুমি সংখ্যালঘু বলে তোমাকে একাসন 

ছেড়ে দেই,

আমি ফ্লোরে থালা পেতে অন্ন খাই,

তোমাকে টেবিল চেয়ারে বসাই,

আমি খাই সাদা ভাত,

নাহয় শুকনা রুটি,

তোমাকে খেতে দেই মাছ-ভাত,শস্য তরকারি,

বিভিন্ন পদের তোমার পছন্দনীয় ভর্তা,

তবুও তুমি আমার নামে বদনাম রটাও 

পেছনে আড়ালে আবড়ালে,

তোমার মতই নিন্দুকের সাথে,

নিন্দুকের সাথে নিন্দুক জুটে,

যেখানে জ্ঞানীরা এক হলে নিজেদের 

কথা বর্জন করে সমস্ত জগতের কথা বলে,

যেখানে নিজেদের কথা তুলে রেখে ওরা সবার 

হিতের কথা আলোচনা করে,

ইশ! শুনতে পেতে যদি তুমি সেই হৃদয় গ্রাহী আলাপ,

নিশ্চয় তা সমালোচনা,নিন্দা,কুৎসা থেকে মাধুর্য মন্ডিত,শ্রেয়!

তুমি অন্য জাতের,অন্য ধর্মের,অন্য লোকের,

কি অন্য দেশের আমি তা দেখিনি,

কোনো বাচ বিচার করিনি,

এক আবাসে আমরা যেহেতু রয়েছি,

তারমানে আমরা সবাই সমান,

সম্প্রীতিরবন্ধন গড়ে তুলতে চেয়েছি এবং 

প্রথম ধাপ আমিই নিয়েছি,

কিন্তু তুমি আমার সাথে চলার প্রতি ভেটো দেখিয়েছ,

তুমি আমার আমন্ত্রণ গ্রহন করোনি,

কতটা নিচু!

কারন তুমি ভুলতে পারো না তোমার দেবতাকে,

অথচ আমি আমার রুহানী খোদার সাথে তোমার দেবতাকেও 

মানি,সম্মানকরি,

তোমাকেওপুজা পাঠ করতে কি দেই,এটা তোমার অধিকার 

ধর্ম যার যার,মানুষ এক প্রকার,

কিন্তু তুমি আমাকে অন্তর থেকে ঘেন্না করো,

আমি তা বুঝতে পারি যা তুমি তোমার ঈষৎবাঁকা চোখের 

আড়ালে,মিষ্টি হাসির অন্তরালে, এবং ষড়যন্ত্রের অতীব দক্ষ 

কুটিলতায় লুকিয়ে রাখো,

আমি যখন থাকিনা,

তুমি তখন ষড়যন্ত্র করো,

আমি যখন সৃষ্টিশীলতায় নিমগ্ন থাকি,

তুমি আমার জন্য বিপদের ছক আঁকো!

অথচ আমি তোমারও মঙ্গল চাই,

অথচ আমি তোমার জন্যও ভাবি 

এবং সব বুঝেও চুপ রই,

ব্যাপার না!ওসব কিছুই না!

অবশেষে বুঝতে পারলাম তোমার আমার পার্থক্য কোথায়!

না ধর্মে,না জাতে,না প্রথায়,না শ্রেনিতে,না রুপের ব্যবধানে,

পার্থক্য শুধুইঐ অন্তরে

যা দেখা যায়না,যা ছোঁয়া যায় না,

যার কথা আগাম বলা যায় না!

 

 

সবকিছু ঠিক চলছিল,

আমি পালটে গেছি ,

সবকিছু ঠিকভাবে চলছিল ,

আমি অন্য পথ ধরেছি,

ইলেকট্রন-ইলেক্ট্রন জোড়ায় জোড়ায় থাকে 

কক্ষপথে ঘূর্নিতে সকল অভিযানে,

আমিতো এখন প্রোটন হয়ে গেছি!

তোমার সাথে তো বাঁধবে ভালোই!

কারন তুমি আমাকে ঘড়ির কাটার অভিমুখে

চলতে বলো,আমি চলি বিপরীতে,

বৈপরীত্য যার স্বভাব,

কিভাবে তাকে শেলে আটকাবে?

ইলেক্ট্রনের গতিবেগে ছুটছি,আলোককনিকা হতে চলেছি,

পেছনে তোমাকে পরিত্যাক্ত "ব্ল্যাকহোলে" পরিনত করে 

ফেলে এসেছি

এখন তুমি অন্ধকার,সব আলো শুষে নিবে,

এখন থেকে তুমি তিমির অধিরাজ এটাই তোমার 

উপাধি, নিয়তি তা বলে দেবে,

হিলিয়াম,নিয়ন,আয়নের যত সাংঘাতিক আলপনা,

তারচেয়েও বেশি আমার নিয়ক্লিয়ার শক্তি,আমি এক বোমা,

আমাকে ফাঁটিয়েও না!

নিহত হবে

 

তুমি আর আমি কাছাকাছি এসেছিলাম

দুজনে অসম্পূর্ণ ছিলাম সম্পূর্ণ হব বলে,

অথচ, কি অদ্ভুত

একসাথে হবার পরে দেখি, তুমি আর আমি 

যোজন যোজন দূরে,

মিল না হয়ে অমিল হয়ে গেল, বড্ড অমিল

অতঃপর, আমরা একত্রিত হবার পরে

একজন আরেকজনকে সম্পূর্ণ করার চেয়ে 

অসম্পূর্ণ করতে থাকলাম আরো বেশি

শূন্য করতে করতে দেউলিয়া করে দিলাম

ফাঁকাস্থানে আরো ফাঁকা,

 আরো নির্জন করে দিলাম,

অথচ, আমাদের একে অপরের পরিপূরক

 হবার কথা ছিল!

অথচ, আমরা একত্রিত হবার পরে

একজন আরেকজনের অসম্পূর্ণতাকে ঘিরে 

বাড়াবাড়ি শুরু করলাম,

যেন সম্পূর্ণ হওয়ার জন্যে নয় অসম্পূর্ণ রওয়ার

জন্যেই একে অপরের হাত ধরলাম 

যেন পাশাপাশি হাঁটার জন্যে নয়, বিপরীতমুখী চলার জন্যেই আমাদের মিলন,

যেন পরস্পরের সহায় না দুর্বলতা হওয়ার জন্যে সান্নিধ্যে আগমন

অথচ,একদিন তোমাকে পরমবন্ধু ভেবেছিলাম,

তুমি এখন কালসাপ

আর কতটা বিষাক্ততা ছড়াবে?!

হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কে পীড়ন 

অন্তরে অবদমন, চক্ষুতে জ্বালা পোড়া

বিবেকে প্রশ্ন করে, একি তবে ভালবাসা?!

উত্তর, ভালবাসা বলতে কিছুই নেই যা কিছু 

হয় সময়ের প্রয়োজনে ভ্রান্তিতে, সময় ফুরোলে 

কঠিন বাস্তব

ভ্রান্তি কখনও সত্য আনে না নাকি মোহ!

ভোগ বিলাস কখনওপরম মুক্তি সুখ আনতে পারে না,

যা আনে তা সময়ের অসুখ!

 

ষড়ঋতুর মত শতগুন বেশি ভালবেস…

 

শোন, তুমি কি গ্রীষ্ম ভালোবাসো?

তাহলে, আমার খনিজে পোড়া মনের রুদ্ররূপ ভালোবেসো,

অগ্নিশর্মা হয়ে অত্যুক্তি করা তোলপাড়ের অপভ্রংশ ভালোবেসো,

তুমি কি শীত ভালোবাসো?

তবে, আমার সমস্ত রাগ অভিমানের ঝরে পড়া রুঢ়তা ভালোবেসো,

তরুণ, তুমি কি চৈত্র ভালোবাসো?

ভালো কি বাসো ফাগুন?

তাহলে, আমার কড়া দুপুরে স্নাত উদ্দাম তেজ- বিরক্তি সহ্য করো,

বলো, তরুণ তুমি কি পৌষ ভালোবাসো?

তাহলে, এই সোনালি বদন,

কামনায় ভরা অতৃপ্ত লেলিহান চিত্ত,

চাঁদমুখকে জোছনায় ভরে তোল।

শূণ্য হতে অতলে, দিবাযামিনী ভালবেসো,

তুমি কি হেমন্ত ভালোবাসো?

তবে, আমার প্রিয় সুর, প্রিয় কবিতা, প্রিয় অভ্যাস,

অর্থাৎ, আমাকেই ভালোবেসো,

তুমি কি বসন্ত ভালোবাসো?

তারমানে, তুমি আমার সদালাপ, চিরসত্য মন,

বিভক্ত দ্যোতনা,সুচারু অধ্যবসায়,

এসবই ভালোবাসো।

তরুণ, তুমি কি বর্ষা ভালোবাসো?

তাহলে, তুমি এইখানে- এই মরুতে, কাঞ্চনজুঙ্ঘা,

গিরিখাত, শৈবলিনী, স্রোতস্বতী, খরস্রোতা,

মোহিনী সবুজ জ্ঞানের দিঘনিকায়া,

এই চঞ্চল শোভিত আশ্চর্য রকমের অন্তর্মুখী

পাতাবাহার লজ্জাবতী অথচ সুকঠিনভাবে দৃঢ এই চিত্তে,

এই আমায় পতিত হও।

তরুণ, আমায় তুমি ষড়ঋতুর মত শতগুন বেশি ভালবেসো।

 

 

মুক্তি।

মুক্ত আমি, বৈরি আকাশ থেকে মুক্ত,

যে আকাশে পাখা মেলা পাপ,

সে আকাশ  থেকে মুক্ত।

মুক্ত আমি, নেশাখোর সমুদ্র থেকে মুক্ত,

সতেজ প্রাণ যেখানে কুকড়ে জীর্ণ,

মুক্ত আমি, নেশাখোর সমুদ্র থেকে মুক্ত,

চূড়ায় উঠবার পথ যে করেছিল শ্বাসরুদ্ধ।

মুক্ত আমি, আমি স্বাধীন আলবাট্রস,

কারন অতিক্রম করেছি আমি সাগর, গিরিপথ,

ভুল সময়ে পৃথিবীর কড়া নেড়ে দেখে ফেলেছি

অনেককিছু, যা না দেখলে আমিও হতাম

ভোরের শিশিরের মত স্নিগ্ধ, আমিও হতাম স্ফটিকের

মত শুভ্র হাঁস যে দেখে নি জঙ্গলের আদিম উন্মাদ,

আমি হেঁটে এসেছি কিঙ্কর পাথরের পথ,

মসৃণ ছিল না কোনোকালে যা কখনও,

পদে পদে দিয়েছে আঘাত, তারপরও,

মন বলত এ সঠিক পথ।

ক্লান্ত হইয়ো না, আর একটু পেয়ে যাবে গন্তব্য,

গন্তব্য হয়ত হিকই পেয়েছিলাম অন্যপথ ধুরে,

ভুলে ছিলাম আমি ঐ পথটি কখনও ছিল না আমার,

ডাকে নি আমায়।

মুক্ত আমি, অশথীপর মায়া হতে মুক্ত,

অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে মিছে হাতছানি দিয়ে যে করেছে ছিন্ন,

মুক্ত আমি, দ্রাবীড় কোলাহল থেকে মুক্ত,

অসুস্থ মোহ, ষড়যন্ত্রের প্রতিযোগিতা থেকে মুক্ত,

প্রাণে লাগে নি দোলা যেখানে,

একমুহুর্তও ছিলাম না সেখানে যুক্ত,

মুক্ত আমি, শ্বাপদ আবাসিক থেকে মুক্ত,

হাল ছাড়ে না কখনও যারা সৃষ্টিশীলতায় অনুরক্ত।

মুক্ত আমি, ভয়ংকর সুন্দর থেকে মুক্ত,

তোমাদের শোষণ, বঞ্চনা, লালসাতে হয় নি অন্ধ,

মুক্ত আমি, তোমাদের গড়া শৃঙ্খল-কারাগার থেকে মুক্ত,

মুক্তি চেয়েছিলাম আমি সব বাঁধন থেকে আজীবন,

মুক্ত আমি, তবুও ছাড়ি নি জীবনসংগ্রাম,

জীবনের দেনাপাওনা বাকি আছে, দেব নগদ।

রঙিন ফানুসের উড়াউড়ি শেষে দিব্যচোখ বেছে কিনেছ

গোলামির আস্তানা।

 

আদিপাপ।

 

আচ্ছা, দ্বিতীয় বলে কিছু আছে নাকি?

প্রেম কি আবার হয় নাকি?

যে কামনায় কাছে আসা,

ঠিক সেই হতাশায় দূরে চলে যাওয়া,

আচ্ছা, একবার প্রেম হয়ে গেলে,

আকর্ষণ চলে যায় নাকি?

আর প্রেম হয় না;

পৃথিবীর তাবৎ অভিকর্ষণ কি বিলীন হয়ে যায়

ঐ একজনাতে যে হৃদয় আর ক্ষরিত হয় না,

ঐ মধুবাক্যালাপ, ঐ রাতজেগে নিষিদ্ধ কাজ করবার

মত দূরন্ত নিস্পন্দে জেগে তার ছবি আঁকা,

তার ললাটে চুম্বন করা, স্বপ্ন দেখা,

তারপর, হঠাৎ দেখা হওয়া,প্রচন্ড প্রচন্ড জোরে

ধাক্কা খাওয়া, এরপরে চোখাচোখি হওয়া,

তারপর, এক উত্তাল ঝড়ের মত,

মাতাল সন্ধ্যার মত, উদ্দাম বল্লরীর মত,

হঠাৎ চুম্বন হওয়া,

দুই ঠোঁঠের সাথে দুই ঠোঁঠ আর

দুই দেহের সাথে দুই দেহের মিল হওয়া,

আদম-ইভের ছন্দপতনে প্রজাপতিরা স্বাগত জানায়,

সেদিন বাগানের প্রথম চুম্বনের মত এমন সত্য,

এমন সুন্দর, এমন স্বর্গীয় আর কি হতে পারত যে

ঈশ্বর একে শয়তানি আর মানবপ্রেমকে নিশিদ্ধ

ঘোষনা করে দিল, ঈশ্বরের বান্দারা মানবপ্রেমকে

আদিপাপ বলে নামকরণ করল।

তবুও থেমে রয়েছে কি আত্মার মিলন?

(দেহজ নয় তাই যদি হয় আত্মা, তার মানে প্রেমও একধরণের আত্মা)

যে প্রেম স্বর্গ হতে শুরু তাতে মর্ত্যে কিসের মানা?

নিয়মের যত সংবিধান তাতেই ভাঙা গড়া,

যতবার যতদেশে অনিয়মকে বলবৎ করে খসড়া বানানো হয়েছে,

ততবার স্বাধীনতার পরোয়ানা হয়েছে জারি,

ততবার ঠিক ততবার মানুষ নিয়ম ভেঙেছে,

খুলেছে লোহার শেকল,গড়িয়েছে কত জল কত পানি,

মানবপ্রেম স্বর্গীয়, এ প্রেম আমার মা-বাবার,

এ প্রেম আমার অনাগত সন্তানের,

এ প্রেম বিশ্বধরার, নেই কোনো সন্দেহ,

নেই কোনো সন্দিগদ্ধ বিপদ, নেই কোনো আদেশ,

তবেঁ, কেন নেই কোনো সমীহ?

আছে শুধু নিদর্শন, চেয়ে দেখ কতদিকে কত ফুল শোভা পায়

কত উদ্যানে, কত গালিব গালিচা মালঞ্চে,

লোকে বলে বেহেস্তে নাকি ওমন উদ্যান থাকে,

চেয়ে দেখ আমাদের পৃথিবীতেও উদ্যানেরা এখনো বেঁচে আছে।

কারন যে প্রেমে প্রকৃতির শুরু, সে প্রেমের অন্ত হবেও প্রকৃতির ধ্বংসে,

যেদিন খোদা প্রকৃতি মেটাবে সেদিন এই আদিপাপের বিনাশ হবে।

খোদা তুমি অপেক্ষা করো, নাহয় ক্রিড়নক হয়ে অলিম্পিক দেখ,

ছড়িয়ে আছে তোমার দর্শকবৃন্দ,

মর্ত্যের কষ্টে, শিশুর ক্রন্দনে, নারীর জিহাদে,

বোমা বারুদে এত্তুকু কাঁপে না খোদার আসন,

এই ধান্দাবাজিতে দালালেরা খুঁজে নিত্যনতুন পাপের তালিকা,

তাতে রসদ যুগিয়ে নাম লেখাক,

হাজার হাজার নিষ্পাপ,

কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিক টাইগ্রিস, ভাসিয়ে দিক ইফ্রেটিস,

ভাসিয়ে দিক জর্ডান নদী,

এই কান্নাতে বাদ না যাক সিন্ধু নদ এবং তার পরবর্তী,

সুবিধাবাধীরা দেখে যাও আদমের বংশধরের লীলাকীর্তি,

করুক তারা আদিপাপ মোচন,

থাকুক, থেকে যাক নতুন বিশ্বের নতুন নিয়মের আমজনতা অনাহারী।

 

 

 

 

 

ইস্পাতের নখ।

 

কতদিন কবিতা লিখি না,

কতদিন শব্দ বুঁনি না,

কতদিন বড় আশা নিয়ে আমার নোটপ্যাডটি চেয়ে রয়েছে,

আমি তাকে ছুঁইয়ে দেখি না,

জীর্ণ আস্তিনে ময়লা কবাটে ধুলো জমে

জমে স্তুপ হয়েছে, কিঙ্কর তুমি আর কত বড় হবে?

আশাবাদীদের আশা ছেড়ে দিয়েছে,

মেহনতিরা কোদাল নামিয়ে রেখেছে,

অগ্নিবর্ষীয়ানরা নিভে গেছে,

নিজেদের প্রতিভার আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে গেছে।

আহা! কোথাও তো মেঘ নাই,’

কোথাও মসৃণ শাপলা নাই,

কোথাও প্রাণ নাই,

এই কোলাহলে কোনো শব্দ নেই,

কেন কাউকে চিনি না নাকি আমি এ শহরে আগুন্তক,

আগ্নেয়গিরির মত লাভা ছড়িয়ে কি আমি সুপ্ত হয়ে গেছি।

নাকি এ বড় শুহরে আমার পিঠ ঠেকে গেছে,

রাস্তা পেরুতে ভুলে গেছি,

এই শহরে ঝাড়বাত্তি জলে না,

এই শহরে মন ভুলে না,

এই শহরে নরম ঘাসে শুয়ে থাকা যায় না,

গুনগুন করে বেসুরো কন্ঠে গান গাওয়া যায় না,

অপরিপাঠি জামা পরে বের হওয়া যায় না,

অধিকার দেখিয়ে খুব জোরে কাউকে বকা দেওয়া যায় না,

এই শহরের জলে কলিজা ভিজে না,

এই শহরে অতীতেরা তবুও বিভীষিকা ছড়াতে ভুলে না,

বরং, প্রলয় হয়ে ধেয়ে আসে মাতাল সন্ধ্যা আরেকটিবার সর্বনাশ করতে।

জানো তরুণ, আমাকে তুমি ধর্ষন না করলেও পারতে,

আমার সম্মান দিনের আলোর মত এখনও পরিষ্কার,

শুধু তুমি অন্ধ, তোমার জগত অন্ধকার,

তাই তো, চশমা পরা চোখে অন্ধ পাটাতনে অট্টহাসির চোঁটে আক্কেল

দাঁতটিও দেখাতে যে ভুলো নাই, তা আমি ভুলি ন।

আমিও হেরে যায় নাই,

নখের আছড়ে, দাঁতের কামড়ে চামড়া ছিঁড়েছে,

দেহ বেঁকেছে, চোয়াল ভেঙেছে,

কাঁচা মনঃ ভাঙে নি।

ধর্ষিতা নই শোন ধর্ষকের সন্তান,

তোর অপরাধের হিসাব মেটাতে হবে,

তৈয়ার হো মাস্তান।

ভেবেছিলি তোর দেয়া চপেটাঘাতে আর কখনও মুখ তুলব না,

অপমানে নত মাথাটা আর উঁচু করব না,

আবেগে কবিতা লিখব না,

অনুভূতির শিরা খেয়েছ কিন্তু স্পন্দন থামাতে পারো নি,

দুর্গন্ধময় বীর্যের মাধ্যমে যে বিষ ঢেলে দিয়েছ তাতো ফণা তুলবেই,

অদম্য লোহার সাঁকোতে হাঁটছি যন্ত্রমানব হয়ে,

নিস্পন্দ বুকে তারাগোনা রাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছি,

যন্ত্রণাকাঁতর রাতে হাঁসফাঁস আর কত?

অশ্রুহীন চোখে শ্লেষ আর কত?

বিড়ম্বনাময় নিরুৎসাহিত জীবনে তিমির আর কত?

ভোর হবে কবে জানো?

এলার্ম ঘড়িটির নিরপরাধ ঘন্টাধ্বনি থামবে কবে?

কবে জেগে উঠব মৃত্যুযোগ হতে?

বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলে তবু শস্য হয়,

মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত হয়,

এখনো বিংশ শতাব্দীর মাটিতে ফসিল পাওয়া যায়,

ইট বালির শহরে নোংরা কাঁদাজলে তবু ফোটে কন্টকহীন ফুল

বিরহের অনলে,

মানুষ তবুও স্বপ্ন দেখে,

বেঁচে থাকে দুর্নিবার সংগ্রামে,

এই কালোপাহাড়ে দাঁড়িয়ে শেষবারের মত শপথ করছি,

আমিও বাঁচার মত বাঁচব, ক্বলপ পরে তবুও ঢাকব হয়রানি যত,

মেঘেদের পানে চেয়ে সাগরে পা ভিজাব,

সবুজ তেপান্তরে প্রিয় সুরের সাথে উন্মাদ

গীতিতে ঢেকুর তুলব তবুও এ গানটি আমি গাইব,

লোহার জ্যাকেট, লোহার চীর,

লোহার ওড়না, লোহার পোশাক,

গায়ে দেব।

ইস্পাতের নখ নিয়ে এগিয়ে আসব,

দুমড়ে মুচড়ে সব আছড়ে দেব,

ইস্পাতের নখ নিয়ে এই দেখ এগুচ্ছি,

ইস্পাতের নখ দিয়ে ভাত মাখছি,

ইস্পাতের নখের ডগায় ভালবাসছি,

ইস্পাতের নখ তোকে নাগাল পাবেই,

ইস্পাতের নখ নিয়ে আসছি,

তোকে খামছে ধরবার জন্যে।

 

 

 

 

নীলতিমি।

 

এই বদ্ধভূমিতে শব পড়ে আছে,

কাক, চিল, শকুন খুবলে খুবলে খাচ্ছে,

কেউ নেই চারপাশে।

কেউ নেই এই পাড়ায়,

হৃদয়ের নীলাভ সমুদ্রে এক বিশাল তিমি আছে,

সেই তিমিটি রোজ সায়ানাইডের বিষে জলঘোলা করে,

আমি সক্রেটিসের হেমলক পান করেছি,

জ্ঞানী না হওয়া সত্ত্বেও,

আমি গ্যালিলিওর কারাদন্ড ভোগ করেছি

কিছু আবিষ্কার না করেও,

আমি নেপোলিয়নের মত নির্বাসিত হয়েছি,

দেশবিদেশ জয়ের পূর্বেই,

আমি হ্যাংলা গুয়েভারার মত গুলিবিদ্ধ হয়েছি,

বিদ্রোহ না করেই,

কারন, এই সময়ে স্পষ্ট কথা বলাটা,

প্রকাশ করাটাই পাপ,

এই সময়ে স্বাধীনভাবে হেঁটে চলাই অপরাধ,

এই সময়ে যে আমি বেঁচে আছি তাই বড় সংগ্রাম।

এই সময়ে যে আমি টিকে আছি তাই যেন আদতে ছন্দবদ্ধ মনোগ্রাফ,

আমার কি এই দুর্ভিক্ষের সময় টিকে থাকা জরুরি,

আমিইবা কেন স্বপ্ন দেখি?

আমি কি খুব বেশি হতাশ হয়ে যাচ্ছি?

আমি কেন এত প্রশ্ন করি?

এই সমাজ আমাকে চায় না,

আমার কথা শুনতে চায় না,

আর আমিও শুনাতে চাই না,

এই সমাজ আমার প্রতিভাকে নাকচ করে দেয়,

দুমড়ে মুচড়ে কাগজ খামচে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়,

কিংবা, সবচেয়ে অবহেলিত চোখে বাঁকা মুখে আমাকে গ্রহণ করে।

পেছন হতে আরো পেছনে ঠেলে দেয়,

এই কিউ আদতে কে তৈরি করেছে?

কারা থাকবে সামনে?

এখন ত সক্রেটিসকে বিষপান করে মরতে হয় না,

কারন এই যুগে সক্রেটিসের বড় প্রয়োজন।

তার উপযোগিতা মিটিয়ে রসদ যুগিয়ে পেছনের সারিতে

দাঁড় করিয়ে ভন্ডদের সামনে আনা হইয়,

ত্যক্ত পরিত্যাজ্য করে তিক্ত বৈষম্যে তাকে জাগতিক

বিষবায়ুতে শ্বাস নিতে বলা হয়,

এবং ধীরে ধীরে অসম্মানে প্রবীন ধীবর হয়ে রগকাটা কিংবা

পঙ্গু হয়ে ধুকে ধুকে মরতে বলা হয়,

তারপর, আয়োজন করে তার নামে মৃত্যুপরবর্তী মিলাদ,

শোকযাত্রা, মিছিল দেওয়া হয়,সভার গোলটেবিলে আরেক

ধান্দা করা হয়,

আজকের দিনে সক্রেটিস জন্মালে তাকে আর মরতে হতো না,

বেঁচে থেকেই তিনি মারা যেতেন।

আজকের দিনে নবাগতরা কান্না করে না,

কারন তারা জানে এ অশ্রু তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে,

আজকের দিনে আমার শিশু চাঁদমামা খুঁজে না,

চাঁদে চলে যায়,

আজকের দিনে কেউ শিখে না সবাই শেখাতে চায়,

আজকের দিনে কেউ গুরু না শুধু লভে নিতে চায়,

আজকের দিনে জ্ঞানীর দেখা মিলে না,

পথেঘাটে বানিজ্য চলে ভাই,

আমি গতকালের কথা ভাবতে চাই না,

কারন, এখনো বুকের নীলনদে একটি তিমি

হুংকার ছাড়ছে বেরিয়ে আসবে বলে,

পণ নিয়েছে সে কবে।

 

কবির সন্ধানে।

 

আমি গদ্য লিখি না নিরাকার ছন্দে,

অন্ধ বুঁননে মাতাতে পারি না ত্রিলোক

এবং মাতোয়ারা পাড়ায় কেবলি গুঞ্জন,

এসে গেছে, এসে গেছে, লেখক সাহেব,

উপন্যাশ নিয়ে এসে গেছে,

এক আস্তিক, এক নাস্তিক,

এক পরহেজগার, এক হিন্দুর দুর্নিবার

প্রেমের গল্প লিখে পাতার পর পাতা

আমি হালাল কিতাব ছাপাতে পারি না।

কারন আমি কবি, অস্তিত্বে হাঁড়গোড়ে কবিতা

বয়ে যায় কত শত অনাহারী সবিতা,

তবুও ভাবতে থাকি এ কেমন গড়পড়তা?

লোকে বলে আমি কিংবদন্তি

দ্রোহের গান লিখে চলি,

আমি বলি, বিশ্বপ্রেমিক বরাবরই প্রেম খুঁজি।

তবুও কিছু পাই, কিছু হারাই,

এই আছে, এই নাই,

সব ভাসিয়ে দেই উজানে, ঋদ্ধতার কোলেপিঠে মানুষ হই।

আমি মরীচিকা চোখে মেখে মরুভুমিতে হেঁটে যাই,

পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সাগর তলে ঘুড়ে বেড়াই,

কিন্তু মুক্তার আড়ালে আদলে শামুক থেকে মধু পান করে

সেই দিন বুঝতে পারি ক্ষুদাকি,

তারপর থেকে আমি ক্ষুধার্ত হয়ে ভিখারিদের গান লিখি,

যাযাবর এই জীবনে ভরশা খুঁজি

সূর্য যেমন চন্দ্র কে খুঁজে, আর তাপের ভার সইতে না পেরে,

সব ঢেলে দেয় তার’পরে,

আমিও খুঁজেছি অস্তিত্ব অনাসক্তির চেতনা বলে,

বৃহৎ বঙ্গদেশে লুটায়ে পড়ি,

শিখিয়েছে অন্ন দুটির দাম এবং ঐ অন্ধকার ,ঐ রাক্ষুসী চোপড়

না আসলেও বুঝতাম না জীবনের মানে কি,

বিভীষিকা তোমাকে স্বাগতম,

দৃশ্যগত অন্ধ বানিয়েছ, কিন্তু খুলে দিয়েছ ত্রিনয়ন।

এজন্যে আমি কবিতা লিখি,

ছন্দহীন কবিতা লিখি, গদ্য নয়।

এ সত্তার ভার বড়ই কঠিন,

আকীর্ন দ্রোহের ভাষায় সবাই প্রেম খুঁজে না।

 

বন্ধুত্ব।

কোথায় গেল সেই সোনালি দিনগুলো

যখন খুব সহযে বন্ধুত্ব হতো,

খুব সহযে মনের সাথে মনের মন মিলে যেত,

কোথায় গেল সেইসব মেলামেশা,

ক্লাস বাঙ্ক করে পুকুরপাড়ে বসে থাকা,

খুব সহযে অট্টহাসিতে ফেটে পড়া,

খুব সহযে মনের কথাগুলো বলে ফেলা,

খুব সহযে ভুল স্বীকার করা,

খুব সহযে দৌড়াদৌড়ি করা,

একজন আরেকজনকে বিভিন্ন নামে

ডাকাডাকি করা,

একজনের চোখের পানি আরেকজন মুছে দেয়া,

কোথায় পাব অমন আত্মার বন্ধন,

কোথায় পাব আবারো তেমন বন্ধুত্ব?

এখন সেই সময় আর নাই,

ভীড়েও একদম একলা,

যারা থাকে তারাও মৌমাছি,

তাদের সাথে মনের কথা বলা যায় না,

মন খুলে হাসা যায় না,

বিবাদ ঝগড়া খুনসুটি করে রাগারাগি করা যায় না,

খুব কি বড় হয়ে গেছি?

একদম ফর্মাল হয়ে গেছি আর সবকিছুতে চাপিয়ে

দেই আমরা আদর্শিক ফর্মানগিরি,

খুব কি জ্ঞানী হয়ে গেছি আমরা সম্পর্কের টানাপোড়েনে

ম্যাকানিজম খুঁজি?

অন্ধকার যুগে সবচেয়ে প্রখর আলো থাকে,

বর্ষাস্নাত দিনে ব্যাঙেরা ডাকে,

কাঁচা কাঠে ঘুণ ধরে বেশি

অল্প সময়ের বিশ্বাসে চিড় ধরে খুব তাড়াতাড়ি,

বন্ধুত্ব নামের এমন সুতোয় প্রতিবার ভুল মালা গাঁথি,

সম্পর্ক তৈরিতে করি যে হুড়োহুড়ি,

বিশ্বাসের বড় মুল্য চুকিয়েছি বহুবার,

কলাপাতার নৌকায় পদ্মা পাড়ি দেয়া যায়-

এমন দিবাস্বপ্নও একসময়ে দেখেছি।

 

কৃষ্ণচূড়া।

 

একবার নয়, বারবার,

পৌছে যাই এই রেখায়,

পরিধি কিংবা বৃত্ত, কেন্দ্রবিন্দু বোধ হয় একটাই।

জ্যামিতিকভাবে আমাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে,

যার যত বেশি প্রতিভা সে ততবেশি অবহেলিত,

এই পটভূমিতে ঝাড়বাতিগুলা বেশি আলো ঝরায়,

জোনাকগুলা মিটিমিটি করে আর জ্বলে না,

থাকে কিছু তারা রাতের অন্ধকারেও মলিন হয়ে,

থাকে কিছু স্বপ্ন অধরা, অস্পস্ট হয়ে,

থাকে কিছু প্রেম অব্যক্ত কিংবা উপেক্ষিত,

থাকে কিছু শব্দ পদদলিত,

এই যে, দাঁড়িয়ে আছি মরুভূমিতে,

এইখানেই তো আমার জন্ম,

জন্মের সময় বোধ হয় এতটাই নিগৃহীত ছিলাম

বলে এখনও অস্তিত্বের খোঁজে সবখানে পরিত্যাজ্য,

আমি যখন ঐ মন্ত্রমুগ্ধ মেঘহীন আকাশকে ভালোবাসি,

সে আমার উঠোন কালো মেঘের ছায়ায় ভরিয়ে দেয়,

যেন ভালোবাসাটা অপরাধ আর ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রকাশ করাটা

ভুল ছিল, ভালবাসার দন্ড পাচ্ছি অনবরত,

এই শ্রেনিসংগ্রামে বারবার শ্রেনিহীন হচ্ছি,

কোথায় দাঁড়াব?

এক টুকরা জমিন ছিল আমার তাও এখন অন্যের দখলে,

আমি ফোটাতে চাই কৃষ্ণচূড়া, তারা বলে গোলাপ ফোঁটাতে,

আমি গোলাপ ফোঁটাতে পারি না, কন্টকিত হই,

গোলাপ ত সবাই চায়,

মাটির মত, ঘাসের মত, কাঁশফুলের মত কৃষ্ণচূড়া কে চায়?

অবশেষে, আমি আবিষ্কার করলাম আমি একটা অস্ফুট কৃষ্ণকলি,

যার ফোটবার সময় এখনও হয় নি।

 

প্রেমিকের প্রতি…

এই দেখো তুমি আমার কতখানি জীবন জুড়ে,

এতটাযে আমার সমস্ত কবিতার চরণজুড়ে তুমি-আর শুধুই তুমি

খুশি কি তুমি-এমন একাধিপত্যে?! 

ভালবাসার ক্ষেত্রে দ্বৈততা চলে নাঃ এককত্বেরই হয় রাজত্ব

কতখানি জুড়ে তুমি আমার তা কি তুমি বুঝতে পেরেছ?! 

এতখানি যে আমার সব লেখা, সব গান, সব ছন্দ

তোমার হয়ে বের হয়- তোমার নামে। 

লাবণ্যের মত জীবিত তুমি আমার সব কাব্যে

সব কাজে, সব চিন্তনে, সব ঘটন-অঘটনে

তোমার জন্য আমি গড়ি, তোমার জন্য আমি লড়ি

তোমার জন্যই আমি ভাঙচুর করি। 

কারন, তোমাকেই শুধু আমি দেখিয়েছি-ভগ্ন এই আমিকে।

যে আমিকে শুধু বাহির থেকেই দেখতে চায় মানুষ

অন্তঃসারশূন্যতা অথবা শূন্যতায় পরিপূর্ণতার মানে যারা বুঝেনা

তোমাকে আমি দেখিয়েছি-আমার সবলতা-দুর্বলতা!  

তোমাকেই আমি করেছি আমার জীবনের অধ্যায়। 

তা, পাঠে কেন হব বিরাগভাজন-রচয়ণ যখন আমারই হাতে

তুমি এক কল্পলোকের ছায়াবৃত্ত

বাস্তবে তা কখনও কখনও হতাশাব্যাঞ্জক

যেন তোমার সৃষ্টিই হয়েছে আমার কবিতা লেখার সারবস্তু হবার জন্যেই,

যেন তোমাকে এভাবে শুধু আমি করি সৃজন,

প্রতিদিন নতুনরূপে-নতুন আঙ্গিকে

এত খানি ত্যাগ আর বিশ্বস্ততার চড়াই-উতরাই না থাকলে 

এবং এককত্বের পূর্ণাঙ্গ বন্দনা না থাকলে

ভক্তির সাথে মায়ার আবহ এবং অকল্পনীয় গভীরতা না থাকলে

কেউ কাউকে নিয়ে কবিতা লিখতে পারেনা!

 

ভালো থেকো ধুমকেতু।

 

আমি বসে রই হতাশ চোখে শূণ্য দাপটে,

খুঁজে বেড়াই স্মৃতিতে তোমার আল্পনাকে,

সবুজ ঘাস মাড়ানো ভোরে সেদিন হেঁটেছিলাম 

আমরা হাতে রেখে হাত ক্লেদাক্ত তৃনে,

তুমি ছিলে উত্তম বন্ধু, সহযোগী ও সারথি

যার সাথে করতাম সবধরনের পাগলামি,

আমি ছিলাম তোমার অধরা স্বপ্ন যা  তুমি

কখনো তারাদের কাছে হারাতে চাইতেনা,

অথচ তুমি ছিলে আমার কাছে অলস সময়,

যার জন্য আমি কখনও থামবনা,

আমি তোমাকে চেয়েছি ঠিক ততটুকু,

যতটুকু চাঁদ চায় জোছনাকে,

কিন্তু তুমি আমাকে চেয়েছ সূর্যের মত,

সমস্ত গ্রহানু, ছায়া পথ ঘিরে ,

তোমাকে কখনো অনুভব করিনা তারমানে

এই না যে আমি তোমায় ভুলে গেছি,

ভুল করে হলেও উদ্ভট শরৎে তুমি দমকা 

হাওয়ার মতো এইমনে এসে উড়িয়ে দাও 

বাঁধনহারা শেফালি,

উলটাস্রোতে ভাসে তখন আমার সব নীতি,

ঝরাপাতার মত উপড়ে ফেলতে চাই তোমাকে

সমূলে, তবুওপারিনা,

কেন তোমাকে পুরোনো প্রিয়গানটির মতই

বারবার শুনতে চাই,

পুরোনো স্মৃতির মত আগলে রাখতে চাই।

সানগ্লাসের ধুলোতে তোমার নাম লিখতে চাই,

ঘুমানোর আগে তোমার কথা ভাবতে চাই,

এবং কেন এটা কল্পনা করি,

আমাদের আবার দেখা হলে কেমন হবে

তোমার আমার মাঝে প্রতিক্রিয়া,

জ্বলবে কি আগুন আগের মত নাকি

ভস্ম হয়ে যাবে সবকিছু,

হয়ত কিছুই হবে না,

তুমি আমাকে দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে যাবে,

আমি পিছনে শূণ্যদৃষ্টিতে বিপরীতপথ ধরব,

এটাইত প্রাপ্য, বিধিতে লেখাছিল,

তুমি আবারো অনুরোধ করবে,

এক জোড়া নুপুর দিলে কি পরবে?

আমি বলব, এখন আর সম্ভব না,

সব হারিয়ে গেছে,

আমাদের পথ আলাদা হয়ে গেছে,

এবং আমার অঙ্গীকারনামা আছে,

বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তিকে ফেরতপায়?

একবার লুট হলে হীরণ-দ্বীপকে তার ঠিকানা পায়?

বিলুপ্ত সংস্কৃতির জন্য কে যুদ্ধ করে?

কিছু কিছু সভ্যতা হারানোর জন্য উত্তলিত হয়,

তোমাকে আমি কখনো চাইনি, চাইওনা,

তুমি আমার কাছে সেই শিশিরের মত;

ভোরে মিটে যাবে, কিন্তু কোথায় রেখে গেছ তোমার দাগ?

রগরগেদাগযেতোমায়ভুলতেপারিনা,

তোমার থেকে ভালো আছি আমি,

খুঁজে পেয়েছি সত্ত্বা, গড়েছি পরিচয়,

নবজমিনে চাষ করেছি কিছু সফলতা,

নতুন আবাসন পেয়েছি পুরোনো নিয়মে,

এবার এইটাই আমার স্থায়ী ঠিকানা,

যেটি আগের এবং পরের একশত বছরের চেয়ে

ভালো, তবুও কেন মনে পরে সেদিনকার কথা?

কেন ঈষানকোনে মেঘ জমেছে অকালবর্ষণের দিল পরোয়ানা,

আমি ত ভিজতে চাই নাই সেই বৈরীবৃষ্টিতে,

তবুও কেন অহংকারী সত্ত্বা ভিজে যায় বারবার,

হয়ত শৈবালকে ক্ষুদ্রকণা ভেবেছিলাম,

ভাবি নি তা দীঘির জল ভরে ফেলবে,

ভাবি নি তোমার কথা, তুমি একদিন পাহাড় ছুঁবে,

কেবল নিজের কথাই ভেবেছি,

জয় করেছি সকল বাধা, ডিঙিয়ে উঠেছি সেই পর্বতে,

যা একদিন আমাদের কিন্তু তুমি ত আরো দূরে চলে গেলে,

আমি তোমাকে দেখতে চাইনা

এত ভাল হয়ে তোমার দূরে চলে যাওয়াটাই

আমার শাস্তি, তোমাকে দোষ দিতেপারিনা।

ভালো থেক তুমি ধুমকেতু,

ভালো থেক তুমিওপাড়ে,

জয়ে নিও সব বাধা।

 

 

প্রতিযোগিতা।

তোমরা আমাকে ইট, পাটকেল, ছোরা, সুই,

বেত দিয়ে বাড়ি মারো,

তবুও আমি গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে যাব,

তোমরা আমাকে কাঁটাতার দিয়ে আটকাও,

ব্যারিকেড় দিয়ে আমার পথ রোধ করো বা

শেকল দিয়ে হাত বেঁধে রাখো,

আমি ঠিকই নিজেকে মুক্ত করব।

যত তিরষ্কার করো না কেন,

যত হাসাহাসিতে উড়িয়ে দাও

আমার সংবেদনা,

আমি তবুও মন খুলে হাসব।

হয়তবা, কোনোদিন আমি নিজেকে ভাবব পতঙ্গসম,

কখনওবা, ভাব নিজেকে ছাঁই সমান,

কখনওবা, উৎসবমুখর পরিবেশ থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নিব,

কয়েকদিনের জন্যে আড়ালে আবডালে চলে যাব,

হাসি-খুশি প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল তরুণী থেকে হঠাৎ উবে যাব ন্যাপথালিনের মত,

হারিয়ে যাব যেমন প্রত্যেক শীতে হারিয়ে যায় সাদা সারসরা,

তবুও কারুর করুণা ভিক্ষা করব না,

তবুও কখনও হেরে যাব না,

আমি কয়েক সিড়ি উলটে পালটে উথলে পড়ে যাব,

কলা ভবন থেকে হাকিম চত্বরে হাঁড়কাপা শীতে দৌড়ে যাব,

তবুও আমি সেই মিহি অফসেট পেপারের দৌরাত্ম্য পার করব,

যে পেপারে লেপ্টে থাকে মানব জমিনের লঘুতরো অপরাধের গুরতরো দন্ড,

যে কাগজে দাগ কাটা থাকে সামন্তবাদের স্বাক্ষর,

যে কাগজে স্বাধীনতা আটকা পড়ে,

যে কাগজের উত্তরণের নেপথ্যে প্রান্তিকেরা ছিঁটকে পড়ে,

যে কাগজের প্রতিটি কথায়, প্রতিটি কলমে বৈষম্যের নতুন

দাগের আছড় দেয়া থাকে,

যে কাগজের কালির লেপনে শুধু হতাশা থাকে,

সে প্রতিযোগিতার কাগজ প্রত্যাখান করলাম।

শিক্ষার নামে আজকাল সে কাগজে বিপনন চলে,

শিক্ষার নামে আজকাল সে কাগজের কাগুজে বাঘেরা দাপট চালায়,

শিক্ষার নামে এই কাগজে ইদানিং জ্ঞান দখলদারি চলে,

শিক্ষার নামে এই কাগজে শ্রেনিবিভাজন চলে,

এই কাগজে দেখবে তুমি হীনমন্যতা,

এই কাগজের কাছে হেরে যাবে সৃষ্টিশীলতা,

ষড়যন্ত্রের চালে এই শিক্ষার নামে,

তোমাকে শেখানো হবে মাথা নোয়ানো,

শেখানো হবে গঠনতান্ত্রিক লেফাফাদুরস্তি,

এবং, জানো তোমাকে দিয়ে দেয়া হবে

কিছু প্রসিদ্ধ! উপাধি যেমন নারী, অক্ষম, দুর্বল, কলঙ্কিত

এবং না জানি নিত্যনতুন কতকিছু!

যাতে তুমি এই শ্রেণির উত্তরণ ঘটাতে না পারো,

যাতে তুমি স্বীকার করে নাও তুমি ভুল-তারা সঠিক,

এখন হাঁটতে শেখার পর জেনে নেওয়া প্রয়োজন কোথায়

তোমার গন্তব্য, তাদের পদে পদ মেলাতে পারলেই তুমি সফল

নাহয় তুমি কেবা কিবা তোমার পরিচয় এ বিশ্বসভ্যতার নিকট!

কেন জানি ইদানিং ছায়াকেও মনে হয় শেখানো পড়ানো অবয়ব,

কখন কার কি হয় কি জানি,

ইদানিং নিজেকে গরিব মনে হয়,

নেমে পড়ি মুক্তিযুদ্ধে,

নেমে পড়ি আত্মপদ আবিষ্কারে,

মনে হয় যেন প্রতিযোগিতায় নামি,

কিন্তু প্রশ্ন কার সাথে?

উত্তর-অজানা,

কারন, তোমার জন্মদাত্রীও এখন এই দাবানলে দাঁড়িয়ে

লভ্যাংশ খুঁজে, পার পাবে না তার কাছেও,

প্রতিযোগিতা হয়তবা সেখান থেকেই শুরু।

প্রতিযোগিতা সেই প্যালোজয়িক কাল থেকে ধাবমান,

তুমি-আমি-আমরাতো একবিংশ শতাব্দীর নেহাতি শিশু।

 

মন্বন্তর।

আমার দহনে তুমি পুড়ে কেন হচ্ছো মগ্ন?

কেন বারবার দ্বিধায় ভুগছ?

কেনইবা উষ্ণতা বাড়াচ্ছ?

কেনইবা থার্মোমিটারের কাঁটা কাঁপাচ্ছ?

আমার প্রজ্জ্বলিত আগুনে হবে তুমি ভস্ম,

তরুণ, প্রস্তুত থেকো তুমি হতে চলেছ মরুর ভাস্কর।

কিছুই হলো না, কিছুই হলো না,

আলো আধারির খেলা হলো শুধু,

তুমি আমার পানে চেয়ে রইলা,

আমি তোমার দিকে,

ঠোঁঠ এগিয়ে দিলাম,

তুমি দ্বিধায় করলে না চুম্বন,

আমি পশ্চাদপদ হয়ে গেলাম,

তুমি স্ট্যাচু বনে গেলা,

এবার আমার পিছু পিছু ছুটলা,

কিন্তু ততক্ষণে উদ্দাম আমি পেয়ে গেছি নতুন উন্মাদনার ভোর,

সে ভোরের আগের রজনীতে তার ঠোঁঠের রক্তিম আভায় নতুন ভোরের রজঃভঙ্গের  মিশেল,

তুমি আর পেলে, আর রক্ষে হলো না মিনতির,

আমি রয়ে গেলাম অধরাই,

সাধনটুকু চর্চা করেই বিমোহিত হয়ে রইলাম তোমার গুনে আরাধ্য দ্যোতনায় খুঁজি মন্বন্তর,

আজব খেলায় মত্ত সবাই পরাধীনতার  দৌড়।

 

আর্টিক বরফ।

তুমি যেন একটা আর্টিক বরফ,

তোমার রূপান্তর দেখে আমি খুশি,

তোমাকে কখনও কঠিন, কখনও তরল,

কখনওবা বায়বীয় বানাতে যেন আমি রোদ্দুর ঢেলে দিতে চাই স্নিগদ্ধ বিকালেও

তোমার পাড়ের বাতাস হয়ে মুহুর্মুহ স্পন্দন জাগাতে চাই,

হয়ত, কৃপনতা করে ফেলেছি,

ওম দিয়ে রেশমের উপযোগিতা বাড়াচ্ছি,

হয়ত তুমি ভাবছ  এ কেমন বন্ধুত্ব?

আন্দামানে৩র যাত্রায় গাছ গোনা,

তবুও বলব তুমি শান্ত বরফ,

তোমার তিনরুপেই খুশি আমি,

তোমাকে আবিষ্কারে আমি কলম্বাস হয়ে অভিযান নামব,

তোমার আমার নামে দ্বীপ গরব।

হয়ত সেদিন তুমি ভাববে প্রয়োজন নেই এ দ্যোতনা,

হারিয়ে যাবে খুব ছোটবেলায় দেখা ধুমকেতুটির মত,

কিংবা খুব প্রিয় জিনিসটির মত,

আমার যে শখ পূরণ হয় নি কখনো,

অর্থ-সময়, সাধ্য, কৌশলের অভাবে,

তোমাকে হারিয়ে ফেলা মানে হবে সেই আরাধ্য শখটা

হারানোর মত যার সাধণা আমি করতে পারি নি কখনও,

তুমি সেদিন প্রশ্ন করার সব অধিকার হারাবে,

উত্তর দেয়ার প্রয়োজন আমি মনে করব না।

দাম্ভিকতায় কলম ছুঁড়ে মারব,

বলপয়েন্টের গ্লাইকোল সব তোমার শার্তে ছিটকে পড়বে,

তুলতে পারবে কি সে দাগ ঘষে ঘষে,

হয়ত পারবে, হয়তবা পারবে না,

মলিন হয়ে পড়ে থাকবে শার্টটি,

যেমনটা সতেজ তোমার মন আমার দাপটেভরা চোখের ঝলসানিতে ক্লেদাক্ত

বনে গিয়েছিল, যেমনটা ক্ষ্মতার প্রভাবে জন্মের উত্তরাধিকারে মেধার বিপননে দৃশ্যগত এলিট

আদতে একটুকরো বর্জ্য- তোমাকে স্প্রিং এর মত ঘুরিয়েছিলাম।

সে ক্ষত আজও তাজা,

তপ্ত রোদে, উঠোনের গরমে পান্তিক তুমি হবে আর ভাজা ভাজা,

বড় অফিসারের চেয়ারে বসা আমি তখন বলি দম্ভ করে-

তেল চেয়েছি, দাও নি তো, বুঝি তোমার আভিজাত্য আছে, চেহারায় সুফিয়ানা ভাব আছে,

গায়ের রঙ সুন্দর আছে, ভাষাশৈলি ভাল আছে, মধ্যম আয় আছে,

তাতে কি? নামে দামে আমি মনীষী, চেয়ার বাঁচাতে হবে,

তোমার উদাত্ত আহবানে করুন জিন্দেগানিতে আমার ববকাটা চুলে ইলেকট্রিক

গতিতে নিউরাল অভিব্যক্তি ঘটবে না,

তোমার সময়ের প্রয়োজনে আমার সময়কে প্রশ্নাত্মক করব না,

বুঝ না কেন, সময় তোমার আসে নি, আসবেও না,

শুধু শুধু অধিকারের কথা বলে, বড় বড় স্বপ্ন দেখে, এক বুক আশা নিয়ে,

আখের গোছাতে থাক, চেয়ার তোমার বাপের ছিল না, তাই তোমারও হবে না,

দুই শ্রেনি এ সমাজে বিদ্যমান,

শোষক অথবা শোষিত,

তুমি কোনট্রা হবে বেছে নাও,

নাহয় মধ্যবিত্ত রও-

তুমি প্রেম খুঁজো না অনশনের দিনে,

তুমি ভালোবাসা পাবে না এ অর্থদ্বন্দ, শ্রেনীসংগ্রামে, হ্যাজিমনি

এখন সবার নয়নের মনি,

ফিলোসোফিকে আমরা কবেকার কিনে উলঙ্গ করে বেছে দিয়েছি,

এখন উদোরপুর্তির নেশায় চাবুক মেরে বিডিএসএমের স্বাদ মেটাচ্ছি,

তুমি তারচেয়ে বরং হয়ে যাও নপুংসক,

দূর থেকে দেখবে ছুঁতে পারবে না,

তুমি বরং বন্ধ্যা হয়ে যাও,

শুরাণু তোমাতে প্রবেশ করবে না,

তুমি বরং হাজার হাজার প্রলিতারিয়েত জন্ম দাও,

ধুকে ধুকে মরুক,

তুমি নাহয় হও ক্যারিশমা,

গর্দান থাকবে কিনা সন্দেহ,

তুমি হয়ে যাও এ শতাব্দীর যিশু,

তুমি হও গ্যালিলিও,  গাজ্জালি,

তুমি নাহয় হো রাজবিমুখ বেকন,

নাহয় দাম্ভিক গালিব,

আমাকে শুদ্ধ কর, পারলে আমাকে শুধরাও,

কিছুই করতে পারবে না তুমি,

কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তোমার শ্রেনি,

মনোভাব, স্বপ্ন, পেশা, আশা, ভালবাসা,

এ সভ্যতার সবচেয়ে নষ্ট কীট পোকা তুমি,

নষ্ট পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক জন্ম নাও এবার,

ভন্ড প্রেমিক সেজে অভিসারে মেত না চুপিসারে,

আর কামনায় মত্ত উদ্দাম উষ্ণতায় ভরে না দেহ প্রাণ মনঃ,

করো না অভিসম্পাত, হবে না বীর্যস্খলন, খুলবে না দেহ দুয়ার।

 

পরাস্ত ভালবাসা

 

আমি ভুলতে পারি না অপমান,

জানালার ফাঁকে রদ্দুর দেখা সেসব বিবাদের দিনে,৩

আমি ভুলতে পারি না, গদ্যময়  আলপনা ছদ্মবেশি ছাঁচে,

আমি ভুলতে পারি না,

অনবদ্য লিখন মায়ার কম্পনে শুধুই সমাবেশে,

আমি ভুলতে পারি না, আজও এনিগমার অমিতাভে,

আমি কি ভুল করেছিলাম যে জুটেছে৩ কৌশলগত অপমান, উন্মনা ব্যবিচার,

পদদলিত আত্মাভিমান,

বারবার প্রায়শ্চিত্ত, বারবার হতবাক,

আমি কি ভুল করেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে আলগোছে ক্ষুদেবার্তায়,

মেসেঞ্জারের নীল চৌকিতে চৌকস সব বার্তায় বারবার অকিঞ্চিৎ ক্ষমাপ্রার্থনায়,

তুমি অদেখা করেছ সব আহবান, তোমার উপহাসের অট্টরোল আর লকদেখানো ছলাকলায়

নিজেকে দুর্বল করে, বারবারে লেলিহানে দিব্যি মিটে গিয়ে, মেরদন্ডহীন হয়ে, বুঝে নিয়েছি

সব অপ্রাপ্যতা  হিসাবের গড়মিলে, আমি ত তোমাকে হারাতে চাই নি,

বরং, তুমি আমাকে হেনস্তা করেছ, গলা টিপে টুটি চেপে মেরেছ, নাহ,

সত্যি মারো নি, কিন্তু ষড়যন্ত্রের অপঘাতে পরাস্ত করেছ, মায়াবী কথার জালে আটকে করাঘাত করেছ,

চূর্নবিচূর্ন করেছ অমলিন মহিমাকে,

আমি কি বলি নাই, চাই না ফানুসে উড়া শত আশার মিথ্যেভরা আকাশ বেবাক স্বপ্ন,

চেয়েছিলাম শুধু একটু স্থান তোমার হৃদয়ে আর তুমি ওই আবক্ষলম্বিত কালে শুধুই ছঁক একেছ

কিভাবে কিভাবে আমাকে বিপদে ফেলবে, কিভাবে আমাকে পথ থেকে বিচ্যুত করবে,

আমি কি বলি নি, আমার পথ , তোমার পথ আলাদা, তবুও ত আমরা পাশাপাশি চলতে পারি,

নদীর মোহনায় মিলতে পারি,

এবং আমরাও দেখা করতাম সাদা-নীল ঐ সুদানে,

ওই গিরতট খার্তুমে,

কিন্তু তুমি ত বুঝ নাই,

শুধু শুধু ধিক্কার দিয়েছ,

কষ্ট দিয়েছ,

আমি আর চাই না তমার ঠুনকো ভালোবাসা,

আমি আর চাই না তোমার শুনতে তোমার মনভুলানো মায়াবি কথা-

আমিও স্বার্থপর হব, আর তার জন্যে যা যা লাগে তাই করব, জানো কেউ কেউ সফল হয়-

অনলে পুড়ে, কেউ কেউ অদম্য ইচ্ছায়, আমি সফল হব তোমার দেয়া বেদনায় সিক্ত হয়ে,

ভুলে কি গেছ আমায়? ভুলে  যেও না,

আবার আসব আমি,

তোমার কাছে নয়, তমার দুনিয়ায় নয়,

আমার পরিচয়ে, আমার কৈলাসে ভাঙবে তোমার ভগ্ন হৃদয়,

তোমার থেকে বড় হব, ঐ গৌরবের চাঁদ অন্যের চাঁদরে মোড়া অহংকারী সত্তাকে শত শত প্রিজমের আলোয় বিলীন করে দেব,

 এ টিলা উচু হবে, দেখবে না সূর্য,

এ পাথর গহবর হবে, মনে রেখ,

এ সাম্পান তোমার ঢেউ লাগানো খিলি দেওয়া ভুমধ্যসাগরে ভাসবে, দেখে নিও,

শুষে ফেলব সব অক্ষমতা, নক্ষত্র বীথি কনা,

আমাকে তুমি ভুলে যেও না,

কারন আমিও তোমার চোখের অশ্রু,

আমি হরিষ শস্যে তমার নাম লিখাব ধমনীর রক্ত দিয়ে কেবলি তমার দেওয়া ধীক্কার চিরঞ্জীব রাখতে,

যেকোনো দিনে বুহবে নিষ্ঠুর তুমি আমার পতনে লুকানো ছিল তমার প্রতি গভীর ভালোবাসা,

বুকের নদীতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে এখনো সেই পরাস্ত ভালোবাসা।

 

সেইসব দিনের কথা।

 

আমি যখন মেঘ ভালোবাসি,

মেঘও আমায় ভালবাসে দেয় উঁকিঝুঁকি,

হঠাত এ৩কদিন দেখি থমকে গেছে আকাশ,

বিষাদে ধরেছে তার মনঃ,

বৃষ্টি হইয়ে ছুঁয়েছে আমায়,

কাঁটার মত বিঁধেছিল প্রতিটা ফোঁটা,

আমি যখন গোলাপ ভালোবাসি,

পাঁপড়ি ছেঁড়া পাপ বলে ফুলকে চুমো দেই,

সেও সলজ্জিত হয়ে আমায় চুমোয় নেতিয়ে মুচকি মুচকি হাসে,

আমি তার রুবির মত মখমল দেহ স্পর্স করে যাই,

হঠাত একদিন সেও শুকিয়ে যায়,

হিংসার বিষন্ন রঙ তাকেও ছেঁয়ে যায়,

আমি যখন উন্মনা খোলা রাস্তা ভালোবাসি,

সেও ভালোবেসে আমাকে পথ দেখায়,

হঠাত একদিন সেও পথ বদলে ফেলায়,

আমার জন্যে পথ থামিয়ে দেয় শুন্যের দোরগোড়ায়,

তখন দেখি বাধার ব্যারিকেড,

বুঝি এতটাই অসহ্য লাগে?

আমি যখন সুন্দর হাসিটা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি,

হঠাত দেখি সেও উবে যায়,

গোমড়ামুখে অভ্যর্থনা জানায়,

আমি যখন তোমাদের ভালোবাসি ,

তোমরা মিছে অভিনয় করো,

ঠিক সেই গোলাপের মত,

ঠিক সেই মেঘের মত,

ঠিক সেই আদিম উন্মাদনার মত,

কংক্রীটের দেয়ালে হাতুড়ি মারো,

তোমরা কি জানো এ পোড়ামন লাভায় ছেঁকা দেয়া?

তোমরা কিভাবে জানবে আমি অগ্নিকন্যা?

তোমরা কিভাবে বুঝবে এ মরমী সাধনা?

কারন তোমরা দেখ নি পতনের গভীরতা,

খাদ থেকে উঠে আমি চূড়ায় উঠি,

মেঘ হতে মেঘে মিলে আমি বাষ্প হয়ে উড়ি,

সোপান হতে সোপান বেয়ে আত্মহত্যা করি,

আমি আঘাত পাই, আমি ভালোবাসি,

আমি সুন্দর নির্মলকে তবু ভালোবাসি,

আমি শিলার দিনে বিশ্বাস করি,

আমি তারপরও অভিমান করে নিজেকে খুঁজি,

আমি অতল সাগরে সাগরে নিটোল কঠিন সত্তা ঢুঁঢে বেড়াই,

আমি শেকলের প্রতিটা ফাঁকে স্বাধীনতা খুঁজে ফাঁক-ফোঁকরে হারাই,

আমি বারবার ভুল করি,

বারবার ভালোবাসি,

বারবার ফিরে আসি,

প্রত্যেকবার নতুন কিছু শিখি,

প্রত্যেকবার নতুন আমি হয়ে,

প্রত্যেকবার নতুন নিয়ম মেনে,

কারন ধ্রুবতাই আমার পরিচয়,

কারণ মাতৃকোটরের অন্ধকার

থেকে আলোর দিকে যাত্রাবেলায়

এ পৃথিবী আমাকে কিছু একটা দেবার আশ্বাস দিয়েছিল তাই,

যা ভুল বোধে ভুল কালে আজও ভুলি নাই।

 

 

পেন্ডুলাম

 

জীবন মানে ঝুলন্ত পেন্ডুলাম,

আমি পেন্ডুলাম, তুমি পেন্ডুলাম,

আমরা সবাই একেকটা যাযাবর পেন্ডুলাম,

সময়ের আঁকে-বাঁকে, ঘড়ির কাটার ঘুর্ণিতে বেগ পালটায়,

গতিপথ পালটায়, ভরবেগ পালটায় না,

আমি পেন্ডুলাম, তুমি পেন্ডুলাম, জাতি পেন্ডূলাম,

একেকটা নাট্যমঞ্চে অভিনীত সঙ সব,

ধূলিসাৎ করে রাঙাবালিতে দলায়মান জীবনযাপন,

আহারে জীবন! আহারে জীবন!

কথায় রইলি মগ্ন হয়ে, কোথায় হারালি কোন বাঁকে,

কোথায় কোন অপাশে কুড়াচ্ছিস ডালিম ফল,

আমি ত দেখি নি,

শুধু সময়ের গতিতে, স্বপ্নের পরিবর্তনে,

আশার কুয়াশায় মোড়ক নিয়ে নতুন লেবাসাসে নতুন ঠিকানায়

খুঁজি শুধু বেহালার সুর,

সেই করুন সুর, তোর সুর আজ বড় বেসুরো,

জীবন বল ত দেখি কি করে হইলি তুই এত পর, এত আনমনা?

পেন্ডুলামের মত দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিস  কোথায় কোন লোকে,

জানি নাতো, সময়ের হিসাব,

সফলতার মোড়কে দিয়ে যাচ্ছিস উপহার ফালি ফালি যন্ত্রণা,

আহারে জীবন! নিষ্ঠুর জীবন,

পথ বদলায়ে যায় নিমিষে,

তুই হতচ্ছাড়া, আমি নাছোড়বান্দা,

ছাড়ুব না কোনো দান,

এবার রুখে দাঁড়াব এন্টিক্লোকে,

পেন্ডুলামের মত ঘূর্ণায়মান জীবনে

লিখে রাখছি প্রতিটা পাতা হিসেব কষে,

আয় বেজন্মা, আয় কপালপোড়া, আয় মাছের মায়েদের দল,

দেখিয়ে দেই তোদের মধ্য অঙ্গুলি,

দেখিয়ে দেব ঘূর্ণিঝড়, নিয়ে রাখলাম পণ,

আহারে জীবন! আহারে কলি! ফুটতে দিলি না অমোঘ বেলায়,

আমার সাজ চুরি করে তোর ময়দান দেখবি হবে ফাঁকা উন্মনা হবি তুই গৃহহীন ছন্নছাড়া,

আয় দূষিত বায়ু, আয় মিথ্যে মিথ্যে শপথ,

আয় রাঙা চোখ, আরেকবার চোখে চখ মিলাই,

আয় ধুলিকনা, আয় লোহু দাপটভরা,

কেঁটে দেই সেই নাভী যেথায় জন্মেছিলি,

ঘূর্ণনের ঘুর্ণিপাকে, ঝড় হাওয়ার ল্যাম্পপোষ্টে কাগজ দিয়ে রুখছি আলো,

রুখছি বাতাস, থামাচ্ছি কোলাহল, দেখছি ধেয়ে আসছে অতল থেকে নিম্নচাপ,

রচিত হবে আবার কালজয়ী উপন্যাস, এই একবিংশের মন্বন্তরে বাঁচতে পারবি কি শিয়াল?

কোন খেয়ালে পালালি বন্ধু?

দেখ তোর আতশবাজি-হাওয়াই লস্করের দুয়ার এখন বন্ধ, কেন তবেঁ উঠেছিস দাঁড়বিহীন খেয়ায়,

কেন তবে রাঙ্গিয়েছিল কালো হাতে রাঙা আল্পনায়?

কেন তবে স্বপ্নের জালে আটকেছিস স্বপ্নকে?

কেন হঠাত কাছে ডেকেছিলি হেনস্তা করার অভিপ্রায়ে?

পেন্ডুলামের মত জীবনযাপন,

পেন্ডুলামেই তুলে রাখলাম,

সময় নিবে সময়ের বদলা,

জীবন- কষ্ট দিয়েছিস কষ্ট বিলি করে কষ্ট কুরে নিয়েছি আঁতুড়্গহর থেকে, সেই কষ্ট বয়ে বেড়াই

আজও পেন্ডুলামের মত ঝুলন্ত জীবনে।

 

প্রেমের কথন

আমি দ্রোহের ভাষায় প্রেমের গান লিখে যাই,

তুমি চিরায়ত ভাষায় প্রেম রচনা অরো,

আমি শ্লেষের পথ বেছে নেই,

কারণ প্রেমও এক প্রকার সংঘর্ষ,

সমস্ত অবিশ্বাসকে এক পাশে রেখে তোমায় বিশ্বাস করে

বারবার আমি প্রেমকে জিতিয়ে দিলাম,

ভালবেসে নিজেকে হারিয়ে তোমাকে স্বাধীন করে দিলাম।

দৈনিক সংগ্রামে কয়জনায় পারে পারে প্রেম টিকিয়ে রাখতে,

কয়জনায় পারে আলুভর্তার সংসারে ভালোবাসার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে তপস্যার অন্ধকারে?

তখন অনেকে বলে ভালবাসা জানালা দিয়ে পালায়,

সত্তার জাগরনে দেহের ক্ষিতিশ কিছু উত্তেজনায় যৌন চেতনায় লীন হয়ে যায়,

প্রেমের পরাজয় দেখার জন্যে এ সমাজ লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে,

চেয়ে থাকে অবক্ষইয়ের সমাজ।

প্রেমকে আজকাল বড় সস্তা করে দিয়েছে মডার্নিজমের অর্গ্নিজমে,

প্রেমকে বড় সহয করে দিয়েছে শব্দ দালালেরা সাহিত্যের পাতায়,

প্রেমকে বড় সহয করে দিয়েছে কেবল দেহের বর্ননা দিয়ে,

রংছটায় মহীমায় আজকাল মানুষ আবেশকেই প্রেম মনে করে।

অথচ কোনো কালে এ প্রেম সস্তা ছিল না,

কোনো কালে প্রেম ছিল না স্ফটিকের মত স্বচ্ছ,

কোনো কালেই দুর্বলেরা প্রেম করতে পারে নি,

প্রেম ছিল না এতটা সহযল্ভ্য,

আমার কাছে জগতের সব ছায়ার নিচে,

সংরামের আড়ালে, মেঘের গর্জনে লুকানো আশ্রয়হীন সত্য,

কিছু কপোত-কপোতির অপারগ চেষটার ফলাফল প্রেম লাগে,

প্রেম-প্রেমময় আদিখ্যেতার জন্য এখন সময়ের সময় নেই কারন

প্রকৃতিও আজ বৈরাগ্য ধরেছে,

দেখ না ঋতু আজকাল কেমন একঘেয়ে,

মাঘের মাসেও বৃষ্টি নামে,

স্বাভাবিকতা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে,

বিরহকেই যেন প্রেম লাগে,

বেঁচে থাকার সংগ্রামে, স্বপ্নপুরনের অধ্যবসায়ে একজনের হাতে কলম

আরেকজনের মাথার ঘাম পায়ে প্রেম লাগে,

আমার কাছে যাবতীয় কষ্ট, অনাচার, চোখের অশ্রু পুতপবিত্র লাগে,

তাতেই মনে সন্তুষ্টি আসে,

তাতে মনে ভালোবাসার পরশ লাগে।

আমি সব আক্রোশে, সব পরাজয়ে, সব চেষ্টায়, সব সাফল্যে

প্রেম খুঁজে যাই নিখাদ চোখে।

 

Comments

Popular posts from this blog

July Revolution and Gen-Z’s March to mass political awareness: A generation’s evolution from apolitical to political entities.

Deconstructed love

The fate of the mountain and the fountain